অনিশ্চয়তার মুখোমুখি আরও একবার

in hive-120823 •  last month 

IMG_20241228_133035.jpg

"গতকালকের কিছু মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

সকাল আটটার বেশ কিছুক্ষণ আগে এসে পৌঁছেছি। এইমাত্র এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে দেখা করে এলাম শ্বশুর মশাইয়ের সাথে। গতকাল দুপুর থেকে এই এমসির ইমারজেন্সির সামনেই আমাদের বসার ঠিকানা।

পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়িত করার আপ্রাণ চেষ্টাও কখনো কখনো ব্যর্থ হয় পরিস্থিতির কাছে। এমন ঘটনার সম্মুখীন যে গতকাল প্রথম হয়েছি, এমনটা নয়। এর পূর্বেও এমন ঘটনা ঘটেছে আমার জীবনে। বলতে পারেন গত দু'বছর ধরে বেশিরভাগ সময়ই জীবনে এইরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছি।

আপনজন হারিয়েছি, আপনজন হারানোর ভয় পেয়েছি, হতাশা, খারাপ লাগা ঘিরে ধরেছে চারিদিক থেকে। তবে এতো খারাপের মধ্যেও যেটা ভালো হয়েছে সেটা হলো, অনেকটা পরিণত হয়েছি। খারাপ পরিস্থিতিতে ধৈর্য্য ধরতে শিখেছি, এমনকি জীবনের বাস্তবতা গুলোকে খুব কাছ থেকে দেখে, তা সহজে মেনে নিতে শিখেছি।

মৃত্যু আমাদের জীবনের চরমতম সত্যি, এ কথা আমরা সকলে জানি। কিন্তু সেই মৃত্যুর পূর্বে আপনজনের প্রতিমুহূর্তে কষ্ট পাওয়া, তাদের অসুস্থতা, তাদের সেবা করা, এই সমস্ত কিছু সহ্য করা আরও বেশি কঠিন বলে মনে হয় মাঝেমধ্যে।

তবে এটাই জীবনের বাস্তবতা, যা মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের কাছে কোনো অপশন থাকে না। আর পাঁচটা দিনের মতন গতকাল শুভ অফিসে যাবে এমনটাই ঠিক ছিলো, তাই যথাসময়ে ঘুম থেকে উঠে আমি রান্না বসিয়েছিলাম। তার পাশাপাশি শুভকে ও শ্বশুরমশাইকে চা করে দিলাম।

IMG_20241227_134124.jpg

"কল্যানি যাওয়ার পথে"

IMG_20241227_134120.jpg

"গাড়িতে আমরা, সামনে বসা শুভ"

চা খাওয়ার পর শ্বশুরমশাই এসে বললেন ওনার ইউরিন এর সাথে আবার ব্লাড আসছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে এমন সমস্যা হয়েছিলো, তাই আমি তেমন একটা আমল দিই নি। জানি অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে আবার এটা ঠিক হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ বাদে শাশুড়ি মা উঠে বললেন একবার আমার দিদিকে ফোন করতে।

আমার দিদি ডাক্তার না একথা সত্যি, কিন্তু এমএসসি পর্যন্ত পড়তে পড়তে কিছু জিনিস বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারে। দিদিকে ফোন করে বিষয়টা জানানোর পর, ও জানালো পরবর্তীতে বাথরুম করলে সেটাকে একটা পরিষ্কার জারে স্যাম্পল হিসেবে রাখতে, যাতে ভিডিও কলের মাধ্যমে ও দেখতে পারে। তেমনটাই করা হলো। তবে সত্যি কথা বলতে শ্বশুর মশাইয়ের ওই ইউরিন দেখা থেকে এখনো পর্যন্ত আমার ভেতরে একটা অস্বস্তি কাজ করছে।

যাইহোক ইউরিন দেখে দিদি যেটা বলল এই মুহূর্তে হসপিটালে ভর্তি করা উচিত। কারণ এতো বেশি ব্লিডিং হলে বাড়িতে রাখা একেবারে ঠিক নয়। সত্যি বলতে শ্বশুর মশাইয়ের কিডনির অবস্থা যে একেবারেই খারাপ সেটা আমরা প্রত্যেকেই জানি। পাশাপাশি ইউরিন ইনফেকশন, ও লিভারের টিউমারের বিষয় সম্পর্কেও আমরা অবগত।

এরপর আমার ননদের সাথে কথা বলা হলো। ওনাকে আমাদের বাড়িতে আসতে বললাম। আসলে বাবা মায়ের শরীর । সন্তানরা পাশে থাকলে বোধহয় মনের জোর অনেকখানি বেড়ে যায় আর আমার শ্বশুর মশাইয়ের যে কোনো রকম অসুস্থতায় সব সময় ননদ পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই তার ডিসিশন ছাড়া আসলে কোনো কিছু করাই শোভনীয় নয়।

IMG_20241227_135955.jpg

"কল্যাণী এইমস"

IMG_20241227_135953.jpg

৩ নম্বর গেট"

এরপর সকলে একত্রিত হয়ে আদেও ওনাকে কোন হসপিটালে ভর্তি করা হবে, কি করা উচিত, এই নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ আলোচনা পর্ব চললো। তবে যেমনটা হয় একেক জনের একেক মত। শেষ পর্যন্ত শশুর মশাইয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করার পর, সকলের সম্মতিতে আমরা আবার কল্যাণী এইএমসে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা করলাম।

IMG_20241227_140002.jpg

"এইমসের ভিতরের পরিবেশ"

IMG_20241227_135958.jpg

"I ❤ aiims লেখা-রাতে বেশ সুন্দর লাগে লেখাটা"

এর পূর্বেও একবার নিয়ে আসা হয়েছিল কিন্তু তখন ভর্তি রাখেনি। তবে এইবার ইউরিনের যে অবস্থা ছিলো, সেটা দেখে দিদিই জানিয়েছিল যে কোনো হসপিটালে নিলে অন্তত এমার্জেন্সিতে ওনাকে ভর্তি রাখবেই, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

সিদ্ধান্ত এটাও নেওয়া হয়েছিলো, যদি কোনো কারণে এখানে ভর্তি না রাখে, তাহলে এখান থেকে আমরা সোজা এসএসকেএম নিয়ে যাবো। এরকমই চিন্তা ভাবনা নিয়ে আমরা বাড়ি থেকে সবকিছু গুছিয়ে রওনা করলাম কল্যাণীর উদ্দেশ্যে এবং সৌভাগ্যবশত এখানে এসে পৌঁছে আমাদের একটা ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো, যার মারফত শশুর মশাইকে emergency তে ভর্তি করা সম্ভব হয়েছে।

IMG_20241227_141613.jpg

"এমারজেন্সির সামনে"

IMG_20241227_141608.jpg

"এমারজেন্সির সামনে"

IMG_20241227_140513.jpg

"গাড়িতে থাকাকালীন তোলা ছবি"

IMG_20241227_154944.jpg

"ভর্তি করার বেশ কিছুক্ষণ পরে তোলা ছবি"

ভর্তি করার পরে বেশ কিছু প্রসেসিং থাকে, সেইগুলো করার জন্য ভিতরে আমি আর শুভ অলটারনেটিভ ভাবে ছিলাম।যেহেতু শশুর মশাইয়ের সমস্ত ওষুধ আমিই দিই, সেই কারণে আমাকে ভেতরে ডাকছিলো। এরপর শুরু হল ব্লাড ওয়াশ করার প্রসেস, যেটা কাল সারারাত ধরে চলেছে।

IMG_20241227_162853.jpg

" ফুলগাছ দিয়ে সাজানো এমারজেন্সির সামনেটা"

IMG_20241227_162121.jpg

"দূরে এখনও অনেক কাশফুল ফুটে আছে"

IMG_20241227_200937.jpg

"রাতের পরিবেশ"

IMG_20241227_163623.jpg

"সূর্য ডোবার পূর্ব মুহুর্ত"

তবে রাতের বেলায় যেহেতু এখানে কাউকে দেওয়া হয় না, সেই কারণে আমরা প্রায় রাত সাড়ে নটা নাগাদ হসপিটাল থেকে বেরিয়েছি। শুভর মামা বাড়ি এখান থেকে ২৫ মিনিটের দুরত্ব। এই কারণে রাতে সকলে সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কারণ সকাল আটটার ভিতরে আমাদেরকে আবার এখানে এসে পৌঁছাতে হবে।

আমরা যখন গিয়েছি তখনও শশুর মশাইয়ের ইউরিনের সাথে ভালোই ব্লাড আসছিলো। যাইহোক সমস্ত ওষুধ এখানে কিনে জমা করে, আমরা মামার বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিয়ে বিশ্রাম করেছিলাম।

সন্ধ্যা বেলায় শুধুমাত্র বুমিং সংক্রান্ত কাজ ছাড়া আমি তেমন কিছু করে উঠতে পারিনি। তাই রাতের দিকে কয়েকটা পোস্ট ভেরিফাই করতে বসেছিলাম। সেগুলো কমপ্লিট করে দুটো নাগাদ শুয়ে পড়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু সেভাবে ঘুম হয়নি।

আবার পাঁচটা নাগাদ শশুর মশাইরের জন্য যে আয়া রাখা হয়েছিলো, সে হঠাৎ ফোন করাতে ঘুম ভাঙলো। জানতে পারলাম সারারাত শশুর মশাই এতোটুকুও ঘুমাননি। ৫ থেকে ৬ বার স্যালাইন খুলে ফেলেছেন এমনকি ক্যাথিডারও খুলে ফেলার চেষ্টা করছিলেন। রাতে আরও কিছু মেডিসিন প্রয়োজন ছিলো, যেগুলো হসপিটাল থেকে দেওয়া হয়েছে।

তারপর কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে আবার উঠে পড়লাম। তৈরি হতে হবে হসপিটালে আসার উদ্দেশ্যে। এভাবে চলল কালকের সারাটা দিন। আজ সকাল থেকে আবার সেই একই যুদ্ধ শুরু, জানিনা দিনটা কেমন ভাবে কাটাবো। এই মুহূর্তে শুভ ভিতরে আছে, তাই বাইরে বসে আমি আপনাদের সাথে পোস্টটা শেয়ার করলাম। যাইহোক সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আশা নেই জানি, তবে কিছুটা যেন সুস্থ থাকে এটুকু প্রার্থনা করবেন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপু আপনার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম, আপনি কতটা মানসিক এবং শারীরিক চাপে আছেন। পরিবারের জন্য আপনার আন্তরিকতা এবং দায়িত্ববোধ সত্যিই প্রশংসনীয়।

এই কঠিন পরিস্থিতিতেও আপনার ধৈর্য্য এবং শক্তি অটুট থাকুক। শ্বশুর মশাইয়ের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আল্লাহ আপনার পরিবারকে এই বিপদের সময় শক্তি দিন। ভালো থাকুন।

1000002812.jpg

We look for quality posts and comments.
Curated by @solaymann

Thank you so much @solaymann sir

আপনাদের সকলের শুভকামনায় এখন শশুর মশাইয়ের শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। তবে তার সুস্থতা সাময়িক এটাও আমাদের জানা। সত্যি বলতে ধৈর্য্য ধরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। থাকলে হয়তো আমি সেই পথটাই অবলম্বন করতাম। তবে ধন্যবাদ আপনাকে মন দিয়ে আমার পোস্ট পড়ে, এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্যে। ভালো থাকবেন।

TEAM - 3

image.png

দিদি শুনে খুব খারাপ লাগলো, আপনার শশুর মশাইয়ের অবস্থা অনেক খারাপ। আপনি নানাভাবে মানসিক চাপে রয়েছেন। আমি দোয়া করি সৃষ্টিকর্তা জেনো খুব দ্রুত ভাবে । আপনার শ্বশুরকে সুস্থ করে তোলে। আপনার পরবর্তী পোস্টে হয়তো বা জানতে পারবো, আপনার শ্বশুর মশাইয়ের কি অবস্থা। নিজের প্রতি খেয়াল রাইখেন দিদি, আর দুলাভাইকে সান্ত্বনা দিয়েন। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

Loading...

দুনিয়ার এই জীবনটা আসলে বড়ই অদ্ভুত। সৃষ্টিকর্তা অল্পদিনের এই জীবনটাকে কতইনা নাটকীয়ভাবে সাজিয়েছে। সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, সুস্থতা অসুস্থতা, পাওয়া না পাওয়া সব মিলিয়ে দুনিয়ার এ জীবনটাকে তিনি গড়ে তুলেছেন এক রহস্যময় বাস্তবতায়। সকল কিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই সকল বিষয়ে সৃষ্টিকর্তার উপর ধৈর্যের সাথে আমাদের ভরসা করা উচিত। তিনি যা করেন আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেন।

আপনার শ্বশুর গুরুতর অসুস্থ বিষয়টি পড়ে খুব খারাপ লাগলো। কি করবেন বলেন পৃথিবীর সকল মানুষকে একদিন কোনো না কোনোভাবে চলে যেতে হবে। এটাই চরম বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতার সম্মুখীন প্রতিটি মানুষকে একদিন হতে হবে।
তাই আপনি অযথা ভেঙ্গে না পড়ে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখুন এবং তার কাছেই তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করুন।
আমরাও সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন উনাকে সুস্থতা দান করে। এবং এই পরিস্থিতিতে আপনার পরিবারকে মানসিকভাবে দৃঢ় রাখে।