"আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ- প্রথম পর্ব"

in hive-120823 •  7 days ago 
IMG_20250216_121612.jpg
"আপনার অন্নপ্রাশনের দিন ক্যামেরাবন্দি কিছু মুহূর্ত"

Hello,

Everyone,

আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল ১১ ই ফেব্রুয়ারি। তার জন্মের পর থেকে এই প্রথমবার সামনাসামনি দুজনের পরিচয়। এর আগে অবশ্য ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছে। আমি তাকে ছবির মাধ্যমে দেখেছি, সেও আমাকে দেখেছে ভিডিও কলে। কিন্তু বুঝতে পারিনি আমি কে।

কারণ মোবাইলের আলো ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও, ফোনের মধ্যে থেকে মানুষকে চেনার মত বয়স তার তখনও হয়নি। কারণ সে এখন মাত্র ছয় মাসের। আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি কার কথা বলছি?

IMG_20250216_113336.jpg
"আদরের অহনা"

আসলে আমি আমার বোনের মেয়ের কথা বলছি, যে আজ থেকে প্রায় ৬ মাস আগে এই পৃথিবীতে এসেছে। তবে তার সাথে সামনাসামনি দেখা করতে যাওয়ার সুযোগ এর মধ্যে আর হয়ে ওঠেনি। তাই একেবারে তার অন্নপ্রাশনের দিন তার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। আজকে সেই দিনেরই গল্প আপনাদের সাথে এই পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করবো।

প্রথমে আমার জামাইবাবুর ব্রেন সার্জারি ও পরের দিকে শ্বশুরমশাইয়ের শারীরিক অসুস্থতার কারণে এতটা ব্যস্ত ছিলাম যে, গত ছয় মাসের মধ্যে সময় করে একটা দিনের জন্য মাসি বাড়ি যাওয়া সম্ভব হয়নি। বোন মানে আমার মাসির মেয়ে। ডেলিভারি হওয়ার পর ও আমার মাসির বাড়িতেই ছিলো।

যখনই ভেবেছি যাবো, কোনো না কোনো কারণে ঠিক বাধা পেয়েছি তবে ফোনে কথা বলতে প্রায়শই, তাই পরিস্থিতি সম্পর্কে ওরাও অবগত ছিলো। তাই কখনো জোর করেনি। তবে যতবারই কথা হয়েছে আমার বোন শুধু বলতো, অন্তত যেন অন্নপ্রাশনে যাওয়ার চেষ্টা করি।

1739685563628.jpg
"স্টেশন বসে ‌ট্রেনের জন্যে অপেক্ষার মুহুর্ত"

আমিও বলেছিলাম যদি পরিস্থিতি ঠিক থাকে এবং আমি সুস্থ থাকি, তাহলে যেভাবেই হোক অন্নপ্রাশনে অবশ্যই যাবো। তাই সেই কথা রাখতেই ১১ তারিখ অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য পৌঁছে গিয়েছিলাম বোনের শ্বশুরবাড়িতে, কারণ অন্নপ্রাশনের আয়োজনটা সেখানেই করা হয়েছিল।

1739685563606.jpg
"ট্রেন ঢোকার মুহূর্ত"

দিদিও অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলো। সকলে মিলে একসাথে একটা দিন আনন্দ করে কাটাবো তাই। আমরা এগারোটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলাম। তারপর ট্রেনে করে মছলন্দপুর স্টেশনে নেমে, হাটা পথে পৌঁছে গিয়েছিলাম বোনের বাড়িতে। সাথে তিতলি, তাতান, শুভ, দাদা, ও দিদি ছিলো।

IMG_20250211_125506.jpg
"এই গলিপথ বড়ো চেনা"
IMG_20250211_125453.jpg
"বোনের বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটার মুহুর্ত"

চলতি পথে অনেক কিছু দেখতে দেখতে পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করেছিলাম আমরা। কারণ বোনের যেখানে বিয়ে হয়েছে সেই জায়গাগুলো আমাদের অতি পরিচিত। তাই সেই সকল জিনিসের সাথে আমি শুভকে, আর দিদি দাদাকে পরিচয় করাতে করাতে পৌঁছে গেলাম বোনের বাড়ি।

গিয়ে প্রথমবার সামনাসামনি দেখলাম আমাদের অহনাকে। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, আমার বোনের মেয়ের নাম রেখেছে অহনা। তবে আমরা সবাই যে ওকে কি কি নামে ডাকছিলাম, সেটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। তবে আমার মাসি ওকে আদর করে ডাকে রাধেবুনু। নামটা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ হাসাহাসি চলল নিজেদের মধ্যে।

IMG_20250211_130740.jpg

IMG_20250211_130734.jpg

IMG_20250211_130659.jpg

IMG_20250211_130632.jpg

"ছোট্ট বোনের সাথে তিতলির কাটানো কিছু ‌সুন্দর‌ মুহুর্ত"

ওখানে গিয়ে সব থেকে খুশি হয়েছিল আমাদের তিতলি। কারণ বোনকে কোলে নিয়ে ঘুরবে, এই আনন্দেই সে সারা রাস্তা পার করেছে। তার বক্তব্য ভাইয়ের থেকে বোন বেশি ভালো, কারণ ওর ভাই নাকি বেশি দুষ্টু, আর ওর কথা একেবারেই শোনে না। কিন্তু বোন হলে নাকি কথা শুনত।

যাইহোক বোন খুব চেয়েছিল আমরাও শাড়ি পড়ে যাই। তবে ট্রেনে শাড়ি পড়ে যাওয়াতে আমার বেশ ভয় আছে, তাই সেই চান্স নিই নি। তবে সেখানে পৌঁছে খানিক আফসোসই হলো।

IMG_20250216_120236.jpg
"দিদির চুলের খোঁপায় জুঁই ফুলের মালা"

কারণ প্রত্যেকে শাড়ি পড়েছিল এবং বোন আমাদের সকলের জন্য ফুলের মালা নিয়ে এসেছিলো। যাতে আমরা শাড়ি পড়ে চুলে মালা দিয়ে ছবি তুলতে পারি। কারণ এই সমস্ত দিনের এই ছবিগুলোই আসলে স্মৃতির পাতায় জমা থাকে। তবে শাড়ি পড়ে না গেলেও, চুলের মধ্যে জোর করে মালা ও পরিয়ে দিয়েছিলো।

IMG_20250211_133759.jpg
"মাসির সাথে ‌বোনেরা"

এরপর এক এক করে অনেক আত্মীয়দের সাথেই দেখা হলো, যাদের সাথে এই অনুষ্ঠান হলেই দেখা হয়। কারণ ব্যস্ততার কারনে সকলের বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয় না, এমন কি ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা কখনো কখনো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে এমন পারিবারিক অনুষ্ঠান গুলিতেই সকলে একত্রিত হয়ে একে অপরের সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করার সুযোগ পাই।

যাইহোক এরপরে আমরা কি কি ভাবে সময় কাটিয়েছিলাম সেগুলো অবশ্যই পরবর্তী পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। সকলে অহনার জন্য অনেক আশীর্বাদ করবেন, যাতে ও সুস্থ থাকে। পরবর্তী অংশ নিয়ে পরের পোস্টে কথা হবে, ততক্ষণ সকলে ভালো থাকুন। সকলের আজকের দিনটি খুব ভালো কাটুক, এই প্রার্থনা রইলো।


"পোস্টে ব্যবহৃত কিছু ছবি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নেওয়া, আর এডিট করার কারণে তারিখ পরিবর্তিত দেখাচ্ছে"

1737773973212.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

প্রথমেই ছোট্র অহনার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা রইল। আসলে ছোটরা যখন আমাদের পরিবারে আসলে সবাই খুশিতে মেতে উঠে। আপনে অনেক সুন্দর ভাবে মাসির বাড়ী যাওয়ার মুহূর্ত গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। গত সাত মাস আগেও আমাদের বাড়ীতে আমার বোড় বোনের মেয়ে জন্ম নিয়েছে। তাকে নিয়েও আমরা এভাবে আনন্দে কাটিয়েছি। ধন্যবাদ দিদি এতো সুন্দর ভাবে পোষ্টটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য৷ দোয়া করি এভাবেই সব সময় সবাইকে নিয়ে হাসিখুশি থাকেন।

ধন্যবাদ আপনাকে ভাই অহনাকে ভালোবাসা দেওয়ার জন্য। কোনো বাচ্চা পৃথিবীতে আসা মানে অনেক আনন্দ সাথে নিয়ে আসা। তার আসার খবর শোনার পর থেকে, তাকে ঘিরে পরিবার পরিজন সকলে অনেক কিছু কল্পনা করে, অপেক্ষা করে দীর্ঘ নয় মাস। আর অবশেষে যখন সে পৃথিবীতে আসে তখন আনন্দ আরও দ্বিগুণ হয়ে যায়। আপনার বড়ো বোনের মেয়ের জন্যেও আমার তরফ থেকে অনেক ভালোবাসা রইলো। ভালো থাকবেন।

অহনার সঙ্গে প্রথম দেখা, আপনার লেখার মধ্যে যেভাবে আবেগ এবং স্নেহ প্রকাশ পেয়েছে, তা সত্যিই অনবদ্য। পারিবারিক অনুষ্ঠানে সবাই একত্রিত হলে যে আনন্দ হয়, তা আপনার পোস্টে খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। ছোট্ট অহনা যেন ভবিষ্যতে অনেক সুখী ও সুস্থ থাকে, এই কামনা রইলো। আপনার পোস্টটি পড়ে ভালই লাগলো দিদি। আপনার জন্য সব সময় শুভকামনা রইল

ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মন্তব্যের জন্যে। আমার পোস্ট আপনার ভালো লেগেছে জেনে সত্যিই খুশি হলাম। পারিবারিক অনুষ্ঠানের আনন্দ সত্যিই আলাদা। বহুদিন বাদে সকলে একত্রিত হলে অনেক ভালো মুহুর্ত তৈরি হয়। আমিও অহনাকে সেদিন প্রথম দেখেছি, তাই আমার ভিতরে একটু বেশিই আবেগ কাজ করছিল, একথা অস্বীকার করবো না। সবমিলিয়ে বেশ ভালো সময় কাটায়েছিলাম। ভালো থাকবেন।

Loading...

অন্নপ্রাশনের দিনে আহনাকে বেশ মিষ্টি লাগছে। অন্নপ্রাশনের প্রতিটি মুহূর্ত একটি শিশুর থেকে তার পরিবারের কাছে খুব আনন্দের ও খুব হৃদয় স্পর্শী হয়। কারণ এই দিনেই শিশু প্রথম অন্ন গ্রহন করে। আর এই অন্ন গ্রহণের মুহূর্তে শিশুর আপনার জনারা কাছে থাকলে তা যেন আরো পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।সকলের আশীর্বাদ ও ভালোবাসায় শিশুর জীবন ভরে ওঠে। শিশু যেহেতু এই মুহূর্তগুলি অনুভব করতে পারে না তাই সে যখন বড় হয় তখন এই মুহূর্তের চিত্রগুলি যখন তার সামনে পরিবেশিত হয় তখন যেন সে এক সুন্দর আনন্ঘদন মুহূর্তের
প্রতিচ্ছবি দর্শন করে।

অহনার জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল সৃষ্টিকর্তা তাকে সব সময়ই সুস্থ রাখুক এই কামনা করি।অহনার সাথে প্রথম সাক্ষাতের পর্ব আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। এটা আপনি ঠিক বলেছেন মোবাইলের মধ্যে খুব ভালো বোঝা যায় না মানুষের চেহারা। আমরা মানুষের সামনা সামনি যতটা ভালো ভাবে দেখি বা বুঝতে পারি মোবাইলের মধ্যে ততটা দেখতে পায় না। তার পাশাপাশি অহনার এখনো সেই বয়স হয় নাই সে আপনাকে ভালো ভাবে চিনবে। অবশ্যই একটি সময় আপনাকে অনেক ভালো ভাবে জানবে সে। যাইহোক সুন্দর একটি লেখা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

এইটুকু বয়সে মোবাইলের ওপাশ থেকে আপনাকে দেখে চিনবে এটা তার এখনো হয়ে ওঠেনি যখন হয়ে উঠবে তখন আপনাকে মোবাইলের অফার থেকেই ডাকা শুরু করবে আপনার বোনের মেয়ে আজ থেকে ছয় মাস আগে পৃথিবীতে এসেছে যাকে আপনারা এই প্রথম দেখতে গিয়েছেন।

ওর প্রতিটা মুহূর্তে আপনি চমৎকারভাবে আমাদের সাথে উপস্থাপন করেছেন আসলে প্রিয় মানুষের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো অনেক বেশি সুন্দর আর সেগুলো স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ফটোগ্রাফি আপনার দিদির খোপায় জুঁই ফুল দেখতে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় মানুষের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।