![]() |
---|
"সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মতোই জীবনের শুরু ও শেষ আছে "
Hello,
Everyone,
কেমন আছেন আপনারা সকলে?
আশা করছি সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটি অনেক ভালো কেটেছে।
গতকাল রাতে নিজের পোস্ট লেখা হয়নি, এমনকি আজ সারাদিনের মধ্যেও পোস্ট লেখার মতন সময় করে উঠতে পারিনি। এখন ঘড়িতে রাত ৮.৪০ মিনিট, তাই ভাবলাম নিজের লেখা কিছুটা এগিয়ে রাখি। তবে শেষ কখন করতে পারবো জানিনা।
গতকাল পয়লা বৈশাখ ছিলো, বাড়িতে ননদরা এসেছিলো। সবার সাথে ভালো সময় কাটালেও, শ্বশুরমশাইয়ের শারীরিক অবস্থা গতকাল রাত থেকে খারাপ হতে শুরু করেছে এবং আজকে সকাল থেকে সেটা অনেকটা বেশি খারাপ হয়েছে। সারাদিন অনেক বেশি ব্যস্ততা ও চিন্তার মধ্যে কেটেছে।
"বার্ধক্য" আমাদের সকলের জীবনে একটি অবশ্যম্ভাবী পর্যায়। ঠিক যেমন বাল্যকাল, কৈশোর কাল ও যৌবনকাল।
আর এই সমস্ত পর্যায় গুলির অভিজ্ঞতা আমরা আমাদের জীবনকালে এক এক করে অর্জন করতে থাকি। তাই যারা এই মুহূর্তে যৌবনকালে রয়েছে, তারা বাল্যকাল ও কৈশোর কালের অনুভূতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করলেও, তাদের কাছে বার্ধক্যকালীন অনুভূতি আজও অজানা।
আমার ক্ষেত্রেও তাঁর অন্যথা নয়। আমি হয়তো আমার শৈশব ও কৈশোরকালের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি সম্পর্কে আপনাদের সাথে অনেক তথ্য শেয়ার করতে পারবো, কিন্তু বার্ধক্যের অনুভূতি আজও অনুভব করিনি। তাই সেই সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারব না।
![]() |
---|
"বার্ধক্য আমাদের জন্য সূর্যাস্তের পূর্ব মুহুর্ত"
কিন্তু চোখের সামনে নিজের ঠাকুরমা, বাবা ও শ্বশুরমশাই, সকলকে দেখে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আজ বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে নিজেকে। গত দু-তিন বছর ধরে আমি এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলেছি, যেখানে কিছুদিন বাদে বাদেই খুব কাছের মানুষের অসুস্থতা আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
বাবার শারীরিক অসুস্থতা, আমাকে প্রথম অনাথ হওয়ার অনুভূতি বুঝিয়েছে। আমার দিদির হ্যাজব্যান্ডের ব্রেন সার্জারি ও তারপর তার সুস্থ হয়ে ওঠার পুরো সময়টা, আমাকে শিখিয়েছে শারীরিক অসুস্থতার কাছে মানসিক ভাবে হেরে যেতে নেই, ভিতর থেকে সুস্থ হওয়ার ইচ্ছে ত্যাগ করতে নেই, আর তার এই পজিটিভ চিন্তাভাবনাই তাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে, অনেকখানি সাহায্য করেছে।
তবে যেদিন থেকে শ্বশুরমশাই অসুস্থ হয়েছে এবং তার সেবা যত্ন করতে গিয়ে, আমাকে যে ভাবনাটা সবথেকে বেশি ভাবিয়েছে, সেটা হলো সামাজিক নিয়মের তারতম্য। যে বিষয়টা মনের মধ্যে সবথেকে বেশি খারাপ লাগা দিয়েছে সেটা হলো, যতটা সেবা আমি আমার স্বামীর বাবা অর্থাৎ শ্বশুর মশাইয়ের করছি, ততখানি সেবা আমি আমার বাবাকে করি নি।
অথচ আমার জীবনে আমার বাবার যা প্রতিদান, তার সিঁকি ভাগও আমার শ্বশুর মশাইয়ের নেই। শুধুমাত্র সমাজের নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তৎপর হয়ে, আজ আমি তার সেবা করে চলেছি। কিন্তু যখন বাবার পাশে থাকাটা সবথেকে বেশি জরুরি ছিলো, হয়তো সেভাবে থাকতে পারেনি।
সমাজের এই অদ্ভুত নিয়মের কারণে, যে বাবার জন্য এই পৃথিবীর আলো দেখা, তার থেকেও বেশি সময় দিতে হয় এমন একটা সম্পর্ককে, যার সাথে রক্তের সম্পর্ক নেই। তবুও এই মানুষটির সেবায় শারীরিক পরিশ্রমের মূল্যায়ন কখনোই কেউ করে বলে আমার মনে হয় না।
যতখানি পরিশ্রম শ্বশুর মশাইয়ের শারীরিক সুস্থতার জন্য করি, তার চার ভাগের এক ভাগও যদি বাবার জন্য করতাম, তাহলে আমার শারীরিক কষ্ট বাবা ঠিক অনুভব করতেন।
কিন্তু এক্ষেত্রে চিত্রটি একদমই ভিন্ন। আমি কি করলাম সেটা মনে রাখার মানুষের বড্ড অভাব। তবে কি করিনি এই বিষয়টি মনে রাখার জন্য এক নয়, একাধিক মানুষ রয়েছে।
তবে আমি বরাবরই আমার বাবা-মায়ের শিক্ষা নিয়ে পথ চলেছি। জানি এতে জীবনে হারিয়েছি অনেক কিছু, পাওনার ঘরও শূন্য। কিন্তু তবুও যা পেয়েছি তা হল আত্মতুষ্টি।
আজও কোনো কিছুই, কারোর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশায় করি না। যতটুকু মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য করার কর্তব্য, ততটুকু করার চেষ্টা করি। বাকি পাওনার হিসাব করার জন্য ওপরে সৃষ্টিকর্তা আছেন বলেই আমার বিশ্বাস।
তবে হ্যাঁ আমিও মানুষ, তাই খারাপ লাগা আমার মধ্যেও রয়েছে, সেটা স্বীকার করতে আমার কোনো আপত্তি নেই। খারাপ তখন লাগে, যখন এই মানুষগুলিই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। যাদেরকে নিজের শ্রম দিয়ে, সময় দিয়ে ভালো রাখার চেষ্টা করে চলেছি নিরন্তর, তারা সেই সব কিছুর মূল্যায়ন করেন না।
আজ শ্বশুর মশাইয়ের শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, পরিচিত অনেকের কাছেই খবর পৌঁছাতে হয়েছে আমাদের। হয়তো বা আগামী দিনে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন, আমিও সেটাই চাই। তবে কি বলুন তো বার্ধক্য এমন একটা পর্যায়, যেখানে চিরস্থায়ী সুস্থতা বোধহয় আর পাওয়া সম্ভব নয়।
করা বিধি নিষেধের মধ্যে চললে যদিও বা শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ থাকা যায়। কিন্তু সমস্ত বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে নিজের মতন করে চলতে শুরু করলে, একটা সময় শরীর ও জবাব দিয়ে দেয়। আমার শশুর মশাইয়ের ক্ষেত্রে ঠিক এমনটি হয়েছে।
দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়াবেটিস ছিল ওনার, কিন্তু যখন ওনার শরীরে জোর ছিলো, তখন তিনি এই জিনিসটাকে গুরুত্ব দেন নি। ফলস্বরূপ আজ একসাথে শরীরের অনেকগুলি অঙ্গ অনেকটাই অকেজো হয়ে পরেছে। তাই তাদের সাথে লড়াই করার এক দীর্ঘ চেষ্টা তিনি করে চলেছেন অনেকদিন যাবৎ।
একটা সময় হয় উনি জিতবেন, অথবা উল্টো দিকের অসুখগুলো। কিন্তু মাঝখানে যে মানুষটি অত্যন্ত পরিশ্রম করলো ওনাকে সুস্থ রাখার, তার পরিশ্রমের মূল্যায়ন করবে না কেউই। বরং সেই সময় আশেপাশের মানুষগুলো সেই সব কারণ খুঁজতে ব্যস্ত থাকবে, যে গুলো দিয়ে সেই মানুষটিকে আরও বেশি হেয় যায় যে, তার সমস্ত টুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে অসুস্থ মানুষটিকে তার বার্ধক্যকালীন লড়াই গুলো লড়তে।
![]() |
---|
"সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নতুন প্রানের সঞ্চার হয় পৃথিবীর বুকে। আর এইভাবে চলে আমাদের জীবনচক্র"
যেদিন থেকে কিছু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হবে, সেদিন থেকে হয়তো অনেকেই, আমার মতন চিন্তাভাবনা গুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবে। তবে তা কবে হবে তার উত্তর শুধু ভবিষ্যৎ দিতে পারবে।
আমার লেখা সম্পূর্ণ আমার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। কাউকে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে আঘাত দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, তবে যে বিষয়টি আজ উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম, সেটি সম্পর্কে আপনাদের নিজস্ব মতামত অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে শেয়ার করবেন। ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।
TEAM 1
Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator04. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags.Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মাঝে মাঝে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছে করে। কবে এই পৃথিবীতে নারীদেরকে একটু সম্মান করা হবে। তবে আমি যদি বলি, তাহলে আমাদের ধর্মে একবার নয় বরং তিন বার নারীদের সম্মান অনেক উঁচুতে রাখা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সমাজে নারীদের কাজের বা সম্মানের কোন মূল্যায়ন দেয়া হয় না।
একজন মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন তার পরিবারের উপর কতটা প্রেসার আসতে পারে। সেটা আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারি। কেননা মাঝে মাঝে এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমাকেও যেতে হয়। তবে আমরা যখন বৃদ্ধ হয়ে যাব। আমাদেরকে পরিবারের মানুষের চাইতে নিজে, বেশি সচেতন হতে হবে।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আপনার শ্বশুর খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক। কিন্তু আপনি যে পরিশ্রম টা করে যাচ্ছেন, সেটা আসলেই খুব কষ্টকর। আমাদের কিছুই করার নেই। কারণ আমরা নারী। আমাদেরকে সবকিছুই মেনে সংসারে টিকে থাকতে হবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। তিনি যেন আপনার ধৈর্য বাড়িয়ে দেন। ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যিই আপনার সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আপনাদের বাসায় ননদরা এসেছিল। এদিকে কিছুদিন থেকে আপনার শশুর মশাই একটু অসুস্থ। আসলে পরিবারের কেউ অসুস্থ থাকলে কোন কিছুই ভালো লাগেনা।
বার্ধক্য নিয়ে আপনি খুব সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit