সাহরীর সময় ঘুম ভেঙেছে আজকে ছেলের ডাকে। উঠেই বিড়ালটার কাছে গেলাম। অন্যসময় হলে ওর কাছে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হতো না। ও নিজেই উঠে চলে আসতো। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকেই ওর শরীরটা খারাপ। গতকাল ভেট এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন ওর জ্বর ছিল ১০৩ এর উপরে। তিনি এন্টিবায়োটিক ও জ্বরের ওষুধ দিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু তেমন একটা পরিবর্তন চোখে পরে নেই। সময় লাগাটাই স্বাভাবিক। বাচ্চাটার কাছে গিয়ে দেখলাম ঘুমাচ্ছে। আমাকে দেখে চোখ মেলে তাকালো।
আমার পরিবারের বাকি সদস্যরাও অন্যদিনের মতোই স্বাভাবিকভাবেই সেহরি করে নিলো। সবকিছুই স্বাভাবিক চলতে ছিল। এর মাঝে সিম্বা মানে আমাদের বিড়ালছানাটাকে সোফা থেকে নেমে ওর লিটারবক্স এর দিকে এগিয়ে যেতে দেখলাম। লিটারবক্স থেকে বের হবার সময় দেখলাম ওর একটা পা ভেঙে পরে গেলো। কিন্তু পরমুহূর্তেই স্বাভাবিকভাবে বের হয়ে আসলো। ওর পরে যাওয়াটাকে দুর্বলতাই ভেবেছিলাম। লিটারবক্স থেকে বের হয়ে ও আমার ছেলের রুমে গিয়ে ঢুকে পরলো।
'ওকে রুম থেকে বের করে দেই ,না'হলে সাদাত যদি এসি ছাড়ে তাহলে ও জমে যাবে ' এই কথা বলে আমার বড়ো ছেলেকে রুমের দিকে এগিয়ে যেতে দেখলাম। কিন্তু পরবর্তীতে যা ঘটলো সেটার জন্য মোটেও মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।
এই কি হয়েছে...কি হয়েছে বলে ছেলেকে দেখলাম ওকে কোলে নিয়ে বের হচ্ছে। এর পর শুরু হলো ওর খিঁচুনি। ওকে ডাইনিং টেবিলের উপরে শুইয়ে দিলো।
আমার ছেলে ওকে চেপে ধরে রাখতে পারতে ছিল না। মনে হচ্ছিলো যে ওর হাড় সব ভেঙে যাচ্ছে। পায়ের নখগুলিও বের হয়ে যাচ্ছিলো ,সেই সাথে মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছিলো।হাতে পানি নিয়ে ওর মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। ওর পায়ের ধাক্কায় পানির বোতল ছিটকে পরে যাচ্ছিলো। বাচ্চাটাকে এত্ত কষ্ট পেতে দেখলাম চোখের সামনে। আমরা অসহায়ের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম শুধু। এরপর আস্তে আস্তে কিছুটা নরমাল হলো ও।
সকালে ও স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছে কিন্তু ওর চাহনি দেখলাম কিছুটা উদভ্রান্তের মতো। কয়েক মিনিট পরেই সারাবাড়ি লাফানো শুরু করলো। তখনই বুঝলাম যে আবারো হয়তো ও এট্যাক আসতে চলেছে। যা ভেবেছি সেটাই হল।ওর আবার খিঁচুনি শুরু হলো।
কিছু সময় পরে দুই ছেলে ওকে নিয়ে ভেট এর কাছে গেলো আবারো । আমি কিছুটা অসুস্থ থাকার কারণে ওরা আর আমাকে যেতে দেয় নাই।
ছেলে কল দিয়ে জানালো যে ভেট ওর ফ্লু এর টেস্ট করেছেন কিন্তু ফ্লু নেগেটিভ এসেছে আল্লাহর রহমতে। সেই সাথে ওকে স্যালাইন ও ইনজেকশনও দেয়া হয়েছে। এরপর এক্সরে করতে নিয়ে গেছে।
হোয়াটস্যাপ থেকে নেয়া |
---|
কিছুক্ষন পরে এরই মাঝে ছেলে আমার হোয়াটস্যাপএ ওর এক্সরের ছবি পাঠালো। আমাকে মেসেজে জানালো যে ,ডক্টর এসে কথা বলবেন।
এর প্রায় ঘন্টা দেড়েক পরে দুই ছেলে ওকে নিয়ে বাসায় এসে পৌছালো। কিন্তু ওরা যে দুঃসংবাদ দিলো এটা শোনার পরে আমি মানসিক ভাবে অনেকটাই ভেঙে পরেছি বলা যায়। ওরা জানালো যে ,ওর মারাত্মক রকমের নিউমোনিয়া হয়েছে। ওর লাংস অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ।
সেই সাথে পরপর দুইবার খিঁচুনির কারণে ওর ব্রেইনও ড্যামেজ হয়েছে অনেকটাই। যা আর কখনোই ভালো হবে না হয়তো । এরপরে যদি সাতদিন ওর শরীর যুদ্ধ করতে পারে তাহলে হয়তো বেচে যাবে।
Edited by Canva |
---|
সবচেয়ে খারাপ খবর হলো ওর বডি মুখে খাওয়া কোনোধরনের ওষুধ আর গ্রহণ করতেছে না। এখন সাতদিন ওকে দুইবেলা করে ক্লিনিকে নিয়ে স্যালাইনের মাধ্যমে ওষুধ দিতে হবে। সেটাও ওর শরীর গ্রহণ করবে কিনা জানা নেই। এককথায় ওর বাঁচার সম্ভবনা খুবই কম। ইদানিং নাকি এধরণের সমস্যা বেড়ে গেছে কয়েক সপ্তাহ যাবত। একধরণের অজানা ভাইরাস আক্রমণ করেছে ।
সত্যি বলতে ওকে আমি আমার নিজের সন্তানের মতোই ভালোবেসে ফেলেছি এই কদিনে। এটা খুবই কষ্টকর একটা বিষয় যে প্রিয় কারো মারা যাওয়া ও বেঁচে থাকার মাঝামাঝি অবস্থান করা। আমার পরিবারকে কয়েকবছরের মাঝে কয়েকটা মৃত্যু দেখতে হয়েছে । সিম্বাও এখন আমাদের পরিবারের সদস্য। ওকে হারানোর কথা কল্পনা করতেও ভয় লাগে।
যারা এই লেখা পড়বেন তাদের কাছে একটাই প্রার্থনা যে সৃষ্টিকর্তার কাছে ওর বেঁচে থাকার জন্য একবার হলেও একটু দোয়া করবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
@muzack1, Thank you so much for your encouraging support, sir.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit