মাশরাফি বিন মর্তুজা, একটা ভালোলাগার নাম , একটা আবেগ, একজন নেতা, একজন দেশসেরা পেসার।

in hive-121930 •  3 years ago 


image.png
Image

২০০১ সালের ৮ নভেম্বর বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হয় এক কৈশোর পেরোনো তরুণের। প্রতিপক্ষ ছিল তখনকার শক্তিশালী জিম্বাবুয়ে ,যে দলে আন্ডি ফ্লাওয়ার ,গ্রান্ট ফ্লাওয়ার , হেনরি ওলোঙ্গা ,সহ অনেক বড় বড় তারকা ছিলেন,যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ সহজেই ইনিংস ব্যবধানে হারতো । অভিষিক্ত তরুণ বোলারটি শুরু থেকেই গতির ঝড় তুললেন ,বাউন্সারে বেসামাল করে দিলেন, যদিও খেলাটি টেস্ট এবং তাকে প্রতিপক্ষ সহীম করেই খেললো। প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংসে ই ৪ উইকেট শিকার করলেন । বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শেষ ইনিংসে জিম্বাবুয়ের টার্গেট ছিল মাত্র ১১ রান ,সে ১১ রান তুলতেই মাশরাফি ঝড়ে দুই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। প্রথম ম্যাচেই পেয়ে যান তারকাখ্যাতি,পেয়ে যান নড়াইল এক্সপ্রেস তকমা , কেউ বলে বাংলাদেশের স্পিড স্টার , কেউ অতিরঞ্জিত করে বাংলাদেশের শোয়েব আখতার ও বলেছেন সে সময়। মুলত রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস নাম অনুসারেই তাকে নড়াইল এক্সপ্রেস বলা হতো।


image.png
Image

মুদ্রার অপর পিঠ দেখতে সময় লাগে নি সে তরুণ কৌশিকের , জানুয়ারীতে নিউজিল্যান্ড সফরে যায় বাংলাদেশ দল , সেখানে সুযোগ পায় সেই তরুণ,যাকে আমরা মাশরাফি বলেই চিনি। সে সিরিজে প্রাকটিস ম্যাচেই আগুন ঝড়ানো বোলিং করলেন,এক কিউই ব্যাটসম্যানকে বাউন্সারে আহত করে হাসপাতালে পাঠালেন , এলেন কিউই মিডিয়ার আলোচনায়। টেস্টে ও দারুন বোলিং করছিলেন , ঠিক কত উইকেট পেয়েছিলেন সে সিরিজে আমার আজ সেটা মনে নেই, তবে আমাদের অধিনায়ক একটু বেশিই উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে গিয়েছিলেন,অন্য বোলারদের অসফলতার দরুন টানা মাশরাফিকে দিয়ে বোলিং করালেন , অনভিজ্ঞ কৈশোর পেরোনো তরুণের পেশি এত চাপ নিতে পারলো না, পারবে কি করে আগে যে কখনো ফাস্ট ক্লাস ম্যাচ ই খেলেননি ,হুট করেই এডি বারলোর পছন্দে তাকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক করানো হয় , মাত্র ছয় মাসের মধ্যে এক প্রান্ত একটানা বোলিং ,যার কারনে বড় ইনজুরিতে পড়েন । ২০০২ সালে আমাদের বিসিবির এমন রমরমা অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল না , তখন ক্রিকেটাররা এত সুযোগ সুবিধা, জিমনেশিয়াম , প্রাকটিস ফ্যাসিলিটিজ ছিল না, এমনকি বিশ্বমানের ফিজিওথেরাপিস্ট ও ছিল না, ভালো চিকিৎসক ছিল না বিসিবির, অথবা ছিল কিনা সেটাই সঠিক বলতে পারি না, ইনজুরি হলে নিজেদের টাকায় চিকিৎসা করতে হতো ,আর এখনকার মতো বেতন ও ছিল ক্রিকেটারদের ‌।যে কারণে অনেক ক্রিকেটার হারিয়ে গেছে,যেমন মেহরাব হোসেন অপি , ইনজুরিতে ভুগে পরে আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার মত ফিটনেস পাননি।


image.png
Image

চিকিৎসার পর দীর্ঘদিন বেডরেস্টে থাকতে হয় তাকে ,তখন অনেকদিন বিছানা ছেড়ে উঠেও দাড়াতে পাতেন না, সে সময় তাকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন , আবার কি ক্রিকেটে ফেরার স্বপ্ন দেখেন কি না? জবাবে মাশরাফি বলেন , আপনি যদি বাজি ধরেন , আমি এখনী বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের চারপাশ দৌড়ে আসবো , ভাবতে পারেন,কত খানি মনের জোর থাকলে এভাবে কথা বলা যায় । আবার ফিরেন ক্রিকেটে , সেভাবে মেলে ধরার আগেই আবার ইনজুরিতে । ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট , বোলিং করে ঝাপিয়ে পড়ে বল থামাতে ড্রাইভ দেন এতেই হাটুর লিগামেন্ট ছিড়ে যায় ,। আবার মাঠের বাইরে ,২০০৪-সালে আবার ফিরেন , এ বছর প্রথম ভারতকে বধ করে বাংলাদেশ ,ম্যাচ সেরা মাশরাফি। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অসাধারণ সেই জয় , আশরাফুল সেঞ্চুরি করেন বলেই সব কৃতিত্ব আমরা আশরাফুলকে দেই , কিছুটা অবদান বোলারদের দিতেই হয় ,তাপস ,তালহা নাজমুল হোসেন সবাই মোটামুটি ভালো বল করেছিলেন সে ম্যাচে , কিন্তু শুরুটা করেন মাশরাফি, নিজের প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে শিকার করেন গিলক্রিস্টকে । সেই চাপে অন্য প্রান্ত থেকে উইকেট আদায় করা সম্ভব হয়। একজন পেসার ৩ উইকেট পেলেও ৬৯ রান খরচ করে , তবুও ২৫০ রানে আটকে যায় অস্ট্রেলিয়া । ২০০৬ সাল মাশরাফির সেরা বছর ,সে বছর প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে বছরের সেরা উইকেট শিকারি হন তিনি ,এই বছরে ৪৯ উইকেট শিকার করেন মাশরাফি ,এর মধ্যে ক্যারিয়ার সেরা ২৬/৬ ও আছে ।


image.png
Image

এই বছরে বেশ কয়েকটি সিরিজ জিতে বাংলাদেশ হাবিবুল বাশার সুমনের নেতৃত্বে , শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম জয় ও এ বছর। ২০০৭ বিশ্বকাপ,প্রথম ম্যাচে বিশ্বকাপের হট ফেবারিট ভারতকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ , শচীন,শেবাগ ,সৌরভ,দ্রাবিড় ,ধোনীদের নিয়ে গড়া শক্তিশালী ভারতকে ২০০ রানের আগেই আটকে দেয় , মাশরাফির নেতৃত্বাধীন বোলিং লাইন আপ। ২০০৯ সালে প্রথম বার অধিনায়ক হন মাশরাফি , ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েন এবং শেষ হয়ে যায় তার অধিনায়কত্ব। সাকিব আল হাসান ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে প্রথম বারের মত বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয় করেন। ২০১১ বিশ্বকাপ খেলা হয়নি ফিটনেস জটিলতায় । ২০১৪ সালে আবার অধিনায়কের দায়িত্ব নেন এবং বাংলাদেশ দলকে বদলে দেন পুরোপুরি, টানা ৬ সিরিজ ঘরের মাঠে জয় করেন , অথচ তার আগে হারের বৃত্তে ছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ দল মাশরাফির নেতৃত্বে ই। তার অধীনে বেশ কয়েকটি এশিয়া কাপ ফাইনাল ও খেলে বাংলাদেশ ,প্রথম ত্রিদেশীয় সিরিজ ও জয় করেন তিনি ।


image.png
Image

তার হয়তো নেই কোন আইসিসি ট্রফি, নেই এশিয়া কাপের ট্রফি , কিন্তু তবুও বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক হিসেবেই তিনি বিবেচিত হবেন আরো অনেক বছর। হ্যা ,এত এত ইনজুরি ,৭/৮ বার দুই হাঁটুতে অপারেশন, তবুও অদম্য মনোবল,আর ইচ্ছে শক্তির জোরে এত বছর ধরে খেলে গেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের সর্বাধিক উইকেট শিকারি,আর পেসার হিসেবে তার ধারে কাছে এখনো কেউ নেই , সাড়ে তিন শতাধিক আন্তর্জাতিক উইকেট তার ,২০০ উইকেট ও আর কোন বাংলাদেশী পেসারদের নেই ।মাশরাফির ক্যারিয়ার সেরা বোলিং কেনিয়ার বিপক্ষে ৬/২৬, ২০০৬ সালের সেই সিরিজে তিনি একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে টান তিন ম্যাচে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন, হয়েছিলেন সিরিজ সেরাও। কোন সন্দেহ ছাড়াই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা পেসার এখনো তিনিই, বাংলাদেশের সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক ও মাশরাফি বিন মর্তুজা।



Contribution to the community.
image.png
Screenshot

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Great bro