গোরা উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বৃহত্তম এবং অনেকের মতে শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। আমারও তাই মনে হয় । ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ব্রাম্ম সমাজ আন্দোলন, হিন্দু সংস্কার আন্দোলন, দেশ প্রেম, নারী মুক্তি, সামাজিক অধিকার আন্দোলনের প্রেক্ষা পটে এই গোরা উপন্যাসটি রচিত। এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু মহাকাব্যের আদর্শে পরিকল্পিত। এটি বুদ্ধিবৃত্তিপ্রধান ও বিশ্লেষণধর্মী উপন্যাসের পর্যায়ে পরে। গোরা উপন্যাসের নায়ক গোরা সিপাহি বিদ্রোহের টালমাটাল সময়ে নিহত এক আইরিশ দম্পতির সন্তান। এক ব্রাম্মন পরিবারের গোয়ালে তার জন্ম। জন্মের পর পরেই মা-বাবা মারা গেলে হিন্দু ব্রাম্মন দম্পতি কৃষ্ণদয়াল ও আনন্দময়ী তাকে মা বাবার পরিচয়ে বড় করে তোলে। গোরা নিজের জন্ম পরিচয় জানে না। তার পালিত মা বাবা না চাইলেও সে হিন্দু ধর্মের অন্ধ সমর্থক হয়ে ওঠে।
কাল ক্রমে গোরা ইংরেজ বিরোধী বড় হিন্দু নেতা হয়ে যায়।
ইংরেজ-বিরোধী বড় হিন্দু নেতা হয়ে যায়। গোরা যথেষ্ট জ্ঞানী হলেও কট্টর অনুসারী। গোরার অন্তরঙ্গ বন্ধু বিনয়। তবে গোরার ছায়াতেই যেন ঢাকা পরে যায় বিনয়ের মেধা আর পরিচিতি। ঘটনাক্রমে গোরা ও বিনয়ের সাথে পরিচয় হয় পরেশ বাবু ও তার পরিবারের। পরেশ বাবুরা হিন্দু নয়, ব্রাহ্ম। তার পরিবার বেশ মুক্তচিন্তার অধিকারী। পরেশ বাবুর দুই মেয়ে ললিতা ও সুচরিতার আধুনিক চেতনার প্রতি বিনয় আকৃষ্ট হয়।
একই সাথে গোরা ও সুচরিতার সাথে নিজের ভাবনা বিনিময় করে। অবশ্য কথাবার্তা কিছু ক্ষেত্রে বাদানুবাদ আর মান অভিমানের পর্যায়ে গিয়ে পৌছায়। সত্যযুগ ফিরিয়ে আনার জন্য ইংরেজ-বিরোধী আন্দোলন করে গোরা জেলে গেলে তার মনে হয় নানান বেজাতের সাথে থেকে তার জাত চলে গেছে। তাই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সে জাতশুদ্ধি করবে বলে ঠিক করে। বিশাল মাঠে তার সব চ্যালাদের নিয়ে সেই শুদ্ধির আয়োজনে সে ব্যস্ত। এ দিকে গোরার পালিত বাবা কৃষ্ণদয়াল তখন মৃত্যুশয্যায়। সে গোরার মা আনন্দময়ীকে বলে, কোনো অব্রাহ্মণ জাতশুদ্ধি করতে পারে না, এ অধর্ম, তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি অনেক সহ্য করেছি কিন্তু তুমি গোরাকে না ফেরালে আমি তাকে বলে দিতে বাধ্য হব যে সে ব্রাহ্মণ তো নয়ই, হিন্দুও নয়। গোরা আড়াল থেকে সব কিছু শুনে ফেলে। গোরার ওপর পুরো বিষয়টি আসে কঠিন এক ধাক্কা হিসেবে। এত দিনে চিন্তা আর বিশ্বাস কি সবই ভুল? সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। পরে ঘটনার প্রতিঘাত পেরিয়ে সে পৌঁছে যায় এক মহা ভারতবর্ষের আদর্শের দিকে। নির্দিষ্ট ধর্ম থেকে মানবতার ধর্মে নিজেকে সে নতুনভাবে আবিষ্কার করে। শুরু হয় জীবনের এক নতুন অধ্যায়। গোরা উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের দিকে একবার আলো ফেললে বোঝা যায় রবীন্দ্রনাথ আমাদের সমাজের ঠিক কতটুকু গভীরে পৌছে যেতে পেরেছিলো। গোরার সব চরিত্রই অদ্বিতীয়, এদের প্রত্যেকেই একে অন্যের থেকে আলাদা। গোরা উপন্যাসে চরিত্র রূপায়ণে দক্ষতাই সব নয়, বরং যে উদ্দেশ্য নিয়ে গোরা লিখিত হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য পূরণে ঠিক এই চরিত্রে দরকার ছিল। এমনকি তাদের প্রতিটি কাজ বা বক্তব্যের সাথে সামগ্রিকভাবে পুরো উপন্যাসের গতিরও একটা পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। যেন সব চরিত্র নিজভাবে এবং সবাই একসাথে একই পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গোরায় দুই বন্ধু গোরা ও বিনয়ের মধ্যে মিলের থেকে অমিলই বেশি। তাদের নামই তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকাশক। গোরা তার আদর্শের ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন, নিঃসন্দেহ এবং আত্মবিশ্বাসী। অন্যদিকে কোনো ব্যাপারই বিনয়ের কাছে সন্দেহাতীত নয়। বিনয়ের কাছে তার কাছের মানুষদের গুরুত্ব বেশি। তার আদর্শের থেকে অনেক বেশি মূল্যবান তার কাছের মানুষ। কিন্তু গোরার ক্ষেত্র বিষয়টি ঠিক উল্টো। গোরার আদর্শ তার কাছের মানুষদের সর্বদাই ছাপিয়ে ওঠে। ঠিক এজন্যই শেষ পর্যন্ত হিন্দু বিনয়ের পক্ষে সম্ভব হয় ব্রাম্ম ললিতাকে বিয়ে করা। অন্যদিকে গভীর টান থাকলেও গোরা কিছুতেই সুচরিতার কাছে যেতে পারে না। গোরার গোরামি অবশ্য অযৌক্তিক, কিন্তু এই গোরামিই আবার তার শক্তি। এই গোরামির কারনেই সে তার দেশকে ভালোবাসতে পারে, প্রান্তিক মানুষ দের কাছে গিয়ে তাদের পাশে দাড়াতে পারে। তাদের জন্য জেল ও খাটতে পারে। কিন্তু আবার তাদের হাতের খাবার খাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয় না। গোরা ও বিনয়ের মত ললিতা ও সুচরিতাও দুজন দু মেরুর মানুষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ উপন্যাসে দেখাতে চেয়েছেন, ভারতবর্ষ বা সমগ্র মানবতার মুক্তির একমাত্র উপায় সব ধর্ম মতের ঊর্ধ্বে থেকে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা।
সর্বোপরি উপন্যাস টি পড়ে আমার ভালো লেগেছে, আপনারাও পড়তে পারেন।
ধন্যবাদ
আপনি কমিউনিটি রুলস ভঙ্গ করেছেন। আপনি নিজের ফটো অথবা কঁপিরাইট ফ্রী ফটো ছাড়া আপনার পোষ্টের মধ্যে ব্যবহার করতে পারবেন না।
কমিউনিটির নিয়মাবলী :
https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-16-aug-22
যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।
Discord server link: https://discord.gg/ettSreN493
Gora by Rabindranath Tagore Pdf
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ওহ, দু:খিত। ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit