অজানা এক ছেলে
একটা শান্ত গ্রাম, যেখানে মানুষ একে অপরকে চেনে, সেখানে একদিন হঠাৎ করে হাজির হলো একটা অজানা ছেলে, বয়স হবে ১২-১৩ বছর।
তার পরনে ছেঁড়া কাপড়, মুখে মলিনতা, চোখে অভাবের ছাপ। কিন্তু সেই চোখে ছিল একটা অদ্ভুত কৌতূহল, যেনো কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে।
গ্রামের মানুষেরা তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
ছেলেটি তাদের গ্রামে প্রথমবার এসেছে, তাই সবাই তাকে চিনলো না। ছেলেটি গ্রামের এক কোনে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলো, তখন গ্রামের প্রধান, মুরুব্বি আবদুল করিম মিয়া তার কাছে এলেন।
কি নাম তোমার, বাবা? মুরুব্বি জানতে চাইলেন।
ছেলেটি একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বলল, “আমার নাম রাহাত।”
“তুমি কোথা থেকে এসেছো?” মুরুব্বি আবার জিজ্ঞেস করলেন।
“জানি না,” রাহাত উত্তর দিলো, “মনে নেই।”
মুরুব্বি করিম মিয়া কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিনি বুঝলেন, রাহাতের গল্পের পেছনে কিছু রহস্য আছে।
গ্রামের মানুষেরা প্রথমে রাহাতকে সন্দেহ করলেও, পরে তার সরলতা ও নম্রতা দেখে সবাই তাকে ভালোবেসে ফেললো। গ্রামের স্কুলে ভর্তি হলো রাহাত, তার পড়াশোনা শুরু হলো। সে ছিলো অসাধারণ মেধাবী, যা সবাইকে মুগ্ধ করলো।
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে রাহাত নদীর তীরে একটা মাটির পুতুল বানাতে শুরু করলো। সে পুতুলটা এমনভাবে বানাচ্ছিলো, যা গ্রামের কেউ কখনো দেখেনি। একজন বয়স্ক লোক, যিনি গ্রামের কারুশিল্পী, রাহাতকে দেখে অবাক হলেন।
“এই পুতুল তুমি কোথায় শিখলে বানাতে?” লোকটি জানতে চাইলেন।
রাহাত মৃদু হাসি দিয়ে বলল, “মনে নেই।”
কিন্তু কারুশিল্পীর চোখে দেখা গেলো একঝলক স্মৃতি। তিনি বললেন, “এই শিল্পকর্ম আমার বাবার কাছ থেকে শেখা। তিনি আমাদের ছেড়ে গেছেন অনেক বছর আগে। তোমার এই শিল্পকর্ম দেখে মনে হলো, আমার বাবার হাতের কাজ যেনো ফিরে এসেছে।”
রাহাতের মুখে একটা চিন্তার ছাপ পড়লো। সে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর বলল, “আমার মনে হচ্ছে, আমি এখানে এসেছি কিছু খুঁজতে, কিন্তু সেটা কী, এখনো জানি না।”
কারুশিল্পী মাথা নাড়লেন। “সম্ভবত তুমি ঠিকই বলেছো। কখনো কখনো আমাদের ভাগ্য আমাদের এমন পথে নিয়ে আসে, যেখানে আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।”
কিছুদিন পর, রাহাত গ্রামের সবার প্রিয় হয়ে উঠলো। সে সবাইকে সাহায্য করতো, সব কাজে দক্ষতা দেখাতো। তার উপস্থিতি গ্রামে একটা নতুন জোয়ার নিয়ে এলো। গ্রামবাসীরা বুঝতে পারলো, রাহাতের আগমনে তাদের জীবনে এক নতুন আলোর সঞ্চার হয়েছে।
রাহাত নিজেও বুঝতে পারলো, সে যে কিছু খুঁজতে এসেছিলো, সেটা সে খুঁজে পেয়েছে, একটা পরিবার, একটা ভালোবাসার স্থান।
রহস্যময় সেই অজানা ছেলেটি গ্রামবাসীদের কাছে হয়ে উঠলো তাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং তার গল্প রয়ে গেলো তাদের হৃদয়ে চিরদিনের জন্য।