---

কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সকলেই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।আজকে আমি আসলে আমার নিজের নিয়মিত কন্টেন্টের বাইরে কথা বলবো। কী নিয়ে, সেটা বলার আগে আমি কিছু ঘটনা দিয়ে শুরু করি।

কিছুদিন আগে আমি আমার বন্ধুদের সাথে একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যাই, তো সেখানে যাওয়ার সময় আমার এক বন্ধু বাকিদের থেকে একটু পেছনে ছিলো, যার সুযোগ নেয় আশেপাশে থাকা কিছু পথশিশু। তারা আমি ও আমার সব বন্ধুদেরকে রেস্টুরেন্টে ঢোকার সিঁড়ি পর্যন্ত যেতে দিয়ে আমার সেই বন্ধুকে ঘিরে ধরে, আর তারা “দুপুরে খাওয়ার জন্যে” কিছু টাকা চায়। আমার সেই বন্ধু স্বভাবগতভাবেই মানুষদের সাহায্য করতে অনেক পছন্দ করে, কিন্তু ঐদিন তার কাছে ঐ বাচ্চাগুলোকে দেবার মতো খুচরো টাকা ছিলো না, আর তারা তাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিলো যে সে যে তার টাকা ভাঙ্গিয়ে আনবে তার-ও কোন উপায় ছিল না। আর তাকে যেভাবে ঘিরে রেখেছিলো, তার কাছে অন্য কাউকেও আসতে সেই বাচ্চারা দিচ্ছিলো না, কারণ তা নাহলে আমরা বাকিরা তাকে সাহায্য করতে পারতাম। শেষ পর্যন্ত আমার সেই বন্ধু একটি বড় নোট বাচ্চাদেরকে দিয়ে কোনমতে আমাদের সাথে রেস্টুরেন্টে ঢুকতে পারে। এই পুরো সময়ই ওর একমাত্র ভাবনা ছিল যে টাকা গেছে যাক- সে অন্তত কিছু বাচ্চাকে সাহায্য করতে পেরেছে, যে ধারণাটা ভাঙে খাওয়া শেষে বের হওয়ার সময়। তখন ঐ বাচ্চারাই তাকে একপ্রকার উপহাস করে বলে যে তারা “বেশ মজা করে খেয়েছে”, কিন্তু তারা যে আসলে এই টাকা মোটেও ভালো কোন কাজ কিংবা খাওাদাওয়ায় ব্যয় করে নি, তা তাদের মুখভঙ্গিই বলে দিচ্ছিলো।

সংগ্রহশালা

পরের ঘটনাটি আমার নিজের সাথেই ঘটে গেছে। যেহেতু আমরা ঢাকায় থাকি, আর ঢাকার যানজট যেহেতু সারাবিশ্বে “বিখ্যাত”, সেই সুযোগ কিছু বিশেষ মানুষ নেয়। আমি একটি রিকশায় করে জ্যামে বসে ছিলাম, তখন আমার দিকে বেশ কিছু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এগিয়ে আসেন, এবং দোয়া ও আশীর্বাদের বিনিময়ে কিছু ভিক্ষা দাবি করেন। তারা আসলে বেশ বিপজ্জনক, কেননা তারা প্রকাশ্যে মানুষের সব ধরণের শ্লীলতাহানি করেন, কিছু ক্ষেত্রে যদি তাদেরকে ভিক্ষা না দেওয়া হয় তখন তারা হুমকি প্রদর্শন এমনকি ভয় দেখিয়ে ও জিম্মি করেও টাকা আদায় করেন, যার জন্যে আসলে সবাই-ই তাদের থেকে বেশ সাবধানে থাকতে চায়। আমার ক্ষেত্রে, আমি জ্যামের একদম প্রথমদিকে ছিলাম, আর তাই জ্যাম ছেড়ে দেওয়ার পরেও আমার ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে দেরি হচ্ছিলো দেখে আশেপাশের কোন যানবাহনকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিলো না। এরপরই জিনিসটা আমাকে একটু ভাবাতে শুরু করে, আমরা যে ভিক্ষা প্রদান করি, এতে কি আসলেই কারো কোন লাভ হচ্ছে?

এখন, আমি জানি, ব্যতিক্রম কখনই উদাহরণ হতে পারে না। এজন্যে আমি আসলে ভিক্ষার মূল বিষয়টা নিয়ে একটু আলোচনা করতে চাই।

ভিক্ষা হচ্ছে কোন দরিদ্র বা অভাবগ্রস্ত মানুষকে খাদ্য, অর্থ বা অন্য কোন বাহ্যিক সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করা। ভিক্ষার মূল যে ধারণা তা সব ধর্মেই উপস্থিত; সনাতন ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, ইসলাম ধর্ম ও খ্রিষ্টান ধর্মে দান ও ভিক্ষা প্রদানের বিষয়গুলো সরাসরি বিদ্যমান, এবং উৎসাহিত করা হয়েছে। প্রত্যেক ধর্মেই স্বেচ্ছায় দান অন্যতম পূণ্যের একটি কাজ, আর এটাই মূলত ভিক্ষার মূল ভিত্তি।

এবার আসি ভিক্ষার কিছু সুফলের দিকে। ভিক্ষার সবচেয়ে বড় সফলতা হলো আপনি একজন অভাবগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে পারছেন, আপনার দ্বারা একজন মানুষ উপকৃত হচ্ছে। ভিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আমরা নিজেরা নিজেদের বাহ্যিক সম্পদের মায়া কমিয়ে অন্যদেরকে সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ হই, এবং ঈশ্বরের দৃষ্টির সমতার বহির্প্রকাশ আমরা নিজেদের জীবনে ঘটাতে পারি। দানের মাধ্যমে আবার আরেকটা জিনিসের ক্ষেত্রে আমরা মানুষকে সহায়তা করতে পারি, আর সেটা হচ্ছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী ভেদে বিভিন্ন সমস্যায় যাদের জীবন জর্জরিত, তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি আমরা।

এখন যদি আমরা ভিক্ষার কিছু মন্দ দিকের দিকে তাকাই, তখন প্রথমেই আমাদের চোখে যা পড়বে সেটা হলো ভিক্ষা মানুষকে অলস ও দূর্বল করে তোলে। নিয়মিত ভিক্ষা পেলে একজন মানুষ নিজে কাজ করে খাওয়ার স্পৃহা হারিয়ে ফেলে, তখন তার আত্মসম্মানবোধ ও আত্মমর্যাদা হারিয়ে যায়। নিয়মিত ভিক্ষা প্রদানের ফলে সাধারণ মানুষ শুধু মানুষকে সাহায্য করার দিকেই মনোযোগী হয়, কিন্তু কি জন্যে তার সাহায্য দরকার হলো সেই কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধান করতে তারা মোটেও আগ্রহ দেখায় না। তাছাড়া জিম্মি করে ভিক্ষা আদায় করা একটি সামাজিক ব্যাধির পর্যায়ে পরে বলে আমি মনে করি, কারণ এতে দানকারী যেমন দানের তৃপ্তি পায় না, গ্রহণকারীও মনেপ্রাণে দানকারীর জন্যে কোন কৃতজ্ঞতা দেখায় না।

সংগ্রহশালা
দুই দিক যদি আমরা বিবেচনা করি, তাহলে আমরা একটি সাধারণ তথ্য দেখতে পাবো। আর তা হলো যে, ভিক্ষার মূল ইচ্ছা ও সারমর্ম বেশ সুন্দর, কিন্তু তার অপব্যবহার করি আমরাই। এজন্যে আমি নিজে কিছু সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি, আর তা হলো সর্বদাই সরাসরি টাকা দেওয়ার চেয়ে খাদ্য কিনে দেওয়া অধিকতর ভালো উপায়, আর যারা নিজেরা যুবক, কর্মক্ষম, যাদের কোন শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা নেই, তাদের আসলে ভিক্ষা দেওয়া প্রকৃতপক্ষে অনুচিত, কেননা এতে তাদের লাভের থেকে তাদের পরবর্তী জীবনে ক্ষতিই হয় বেশি। আমরা আসলে দেখতে পাই, যে ভিক্ষা আসলে মানুষের জন্যে কল্যাণ যেমন বয়ে আনতে পারে, তেমনি জীবনে আলস্য ও অচলাবস্থা ডেকে আনতে পারে। আশা করি আপনাদের আমার কথাগুলো ভালো লেগেছে, আর এ বিষয়ে আপনাদের মন্তব্যও জানাবেন।

ধন্যবাদ

_{Posted using SteemPro Mobile}