আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু।
হায় বন্ধুরা
কেমন আছেন?
বাংলা ভাষার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করার একমাত্র ব্লগিং সাইট "আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সম্মানিত সকল সদস্যরা আশাকরি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে ভালো আছেন। আপনাদের দোয়ায় আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার জীবনে প্রথম মোবাইল পাওয়ার অনুভূতিটুকু শেয়ার করতে যাচ্ছি।
২০০৪ সাল এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি হবে।আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল পায়েল। সে দারুল আহসান ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স এ পড়তো।আমরা বিকেল বেলা আরো কিছু বন্ধুরা মিলে একসাথে ঘুরে বেড়াতাম।একদিন বিকেল বেলা পায়েল আমাদের সকলকে বলে সারপ্রাইজ দিবে।
আমরা বললাম কি সারপ্রাইজ বন্ধু?তখনই সে তার পকেট থেকে একটা মোবাইল বের করে আমাদের দেখায়।এর আগে আমরা কখনও মোবাইল দেখিনি। তাই সবাই অবাক দৃষ্টিতে মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষন।
আমি পায়েলকে জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে এইটা কিনলি।এত টাকা কিভাবে পেলে বন্ধু ।কারণ আমরা তখন ছাত্র। এত টাকা তো ওর কাছে থাকার কথা না।অবশ্য ওর এক বড় ভাই তখন দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় দুই মাস আগে গিয়েছে এবং ওকে খুব আদর করতো।তাই ওর জন্য টাকা পাঠিয়েছে এবং সেই টাকা দিয়ে মোবাইলটা কিনেছে।যা পরে ওর কাছে শুনতে পেয়েছিলাম।আমরা বন্ধুরা প্রায়ই যখন একসাথে হাঁটতাম। তখন সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে হাঁটত। আমরা সকলেই তখন ওর মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মনে মনে ভাবতাম কি অদ্ভুত যন্ত্র রে বাবা! দূর থেকে কথা বলা যায়।তখন থেকেই এমন একটা যন্ত্র আমার লাগবে মনে মনে চিন্তা করতাম।
একদিন পায়েলকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলাম আম্মুকে ওর মোবাইলটা দেখানো জন্য যাতে আম্মু আমার জন্য একটি মোবাইল এর ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু আমাদের অবস্থা তখন তেমন ভালো ছিল না। বড় ভাই ছিলো বেকার,আমার ছোট ভাই পড়ে স্কুলে আর একমাত্র বড় বোন আমার দুই ক্লাস উপরে ছিল।কিন্তু আমার বন্ধুকে আম্মুর কাছে নিয়ে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল তখন আমার এক মামা মালেশিয়াতে ছিল।
মা আবার তাদের ভাই বোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল।তাছাড়া মা ছোট মামাকে কিছু বললে,মামা তা আবার না করতে পারে না।কিন্তু মামার কাছে মার মাধ্যমে মোবাইল চেয়ে ও চিন্তায় ছিলাম। কারণ আমার আত্মীয়স্বজন থেকে আবার কিছু পাবার রেকর্ড বেশি ভালো না।
কারণ আমি ছিলাম মাঝারো,তাই কেউ কিছু দিলে প্রথমে বাড়ির বড় সন্তান হিসেবে বড় ভাইকে দিতো।না হলে ছোট ভাইকে দিতো।আর সেটাও না হলে একমাত্র বোনের জন্য আনতো। কিন্তু আমি সবদিক দিয়ে বাদ পরে যেতাম। সেজন্য মনে অনেক কষ্ট ও লাগতো।কিন্তু কিছুই করার নেই।কারন আমি যে ফাটা বাঁশের মধ্যে আটকা।কয়জনকেই বা দেওয়া যায়।এভাবে কয়েক মাস কেটে গেল।
একদিন সেই কাঙ্ক্ষিত মোবাইলটি মামা ডাকের মাধ্যমে আমাদের বাসায় পাঠালেন।একেবারে প্যাকেট করানো ছিল।মোবাইলটি ছিল নকিয়া -৩২২০ মডেল এবং রেড কালার। অবশ্য মা মোবাইলটা আমার জন্য চেয়ে এনেছিলেন।অবশ্য আমার জন্য চাওয়ার ও একটা কারন ছিলো।অল্প কিছুদিন আগে বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাইয়ের বিদেশে যাওয়ার জন্য কথা হচ্ছে।আর ছোট ভাই মাত্র হাইস্কুলে লেখাপড়া করে। তাই মা ও বাবা যেহেতু মোবাইল চালাতে পারে না। তাই আমার কাছে থাকলে সবার সাথে যোগাযোগ করতে সুবিধা হবে।
যাইহোক সেই কাঙ্ক্ষিত মোবাইলের প্যাকেট হাতে নিয়ে বসে আছি। কিভাবে খুলবো বা খুলতে গিয়ে যদি নষ্ট হয়ে যায়। তাই আর খোলার চেষ্টা করিনি।কিন্তু সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমার সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু পায়েলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কারন ওর কাছে ছাড়া আমাদের এলাকায় কারো কাছে তখন মোবাইল ছিল না।ছিল কিছু বাসায় তখন টি এন টি লাইন। তা ও দুই এক বাসায়।পায়েল যেহেতু অনেকদিন হলো মোবাইল ব্যবাহার করছে তাই সে এটা ভালো জানে।
সেদিন যেন সময় শেষ হয় না।সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৪০-৫০ বার ওদের বাসায় গিয়েছি।ইউনিভার্সিটি থেকে বাসায় এসেছে কিনা তা দেখার জন্য।অবশেষে সন্ধ্যার সময় যখন পায়েল বাসায় আসে।তখন ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসি।মামার পাঠানো মোবাইলের প্যাকেটটা পায়েলের কাছে দেই।
প্যাকেট থেকে মোবাইলটা খুলে বের করে।এরপর মোবাইলে ব্যাটারি ভরে অন করে আমার হাতে দেয়। আমি যেন আকাশের চাঁদটা হাতে পেলাম।আমার বন্ধু পায়েল ও মোবাইলটা দেখে খুব প্রশংসা করলো।তখন আমার কোন সিম কাড ছিলো না। তাই বন্ধু বলল তুমি সিমকার্ড আনলে আমি আবার লাগিয়ে দিবো।এরপর কিছুক্ষন মোবাইলটা চার্জ দিয়ে সাথে নিয়ে ওর সাথে হাটঁতে বের হলাম।
এবার আমার সাথে আমার মোবাইলটা নিয়ে নিলাম। এবার আমার বন্ধু আমার মোবাইলটা ওর কাছে নিয়ে বারে বারে দেখে।যদিও তখন মোবাইলে সিম ছিল না।তারপর ও মোবাইলটি অন অফ করে বারবার দেখে। এরও একটা কারন ছিল।যখন মোবাইলটি অফ করে অন করা হতো দুই পাশ দিয়ে রিংটনের সাথে আলো জ্বলে উঠতো।যা দেখতে খুব ভালো লাগতো।
তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসলাম।কারন মোবাইলটি ফুল চার্জ দিতে হবে।ঐ দিন সারাটা রাত একটু ও ঘুমাই নি।একটু পরপর এসে মোবাইলটা দেখতাম এবং হাতে নিতাম।যেন সাত রাজার ধন হাতে পেয়েছি।
আমার মোবাইলটিতে তখন সুন্দর সুন্দর রিংটন ছিল যা পায়েলের মোবাইলে ছিল না।তাই এরপর যখনই আমরা বিকেল বেলা হাঁটতে বের হতাম তখন পায়েল আমার মোবাইলটা ওর হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতো এবং ওর মোবাইলটা আর পকেট থেকে বের করত না এবং আমার সকল বন্ধুরা আমার মোবাইলটার দিকে চেয়ে থাকতো। এটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগতো।
আর পায়েলের কাছ থেকে কিভাবে মোবাইল চালাতে হয়,কিভাবে নম্বর সেভ করতে হয় তা শিখে নিই।সেদিনের সেই মোবাইলটি পাওয়া যে কত সুখ,আনন্দ ও স্মৃতি বিজারিত ছিলো তার হয়তবা খানিকটা প্রকাশ করতে পেরেছি।কারন এমন কিছু মুহূর্ত ও উপহার থাকে যা পুরোপুরি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আজ এ পর্যন্তই।
আমার পরিচিত
আমি আনিসুর রহমান।আমার ইউজার আই ডি @anisshamim.আমি মুন্সিগজ্ঞে বসবাস করি।আমি নিজেকে একজন বাংঙ্গালী হিসেবে গর্ববোধ করি।আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে কবিতা ও গল্প লিখি, ফটোগ্রাফি করি।নিত্য নতুন কিছু রান্না করা আমার প্রচন্ড শখ।ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার জীবনে প্রথম মোবাইল পর হাতে পাওয়ার অনুভূতিটি পরে অনেক ভালো লাগলো। আপনার অনুভূতিটি আমাদের সাথে সুন্দরভাবে শেয়ার করেছেন।
এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে উৎসাহিত করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাই আপনার প্রথম মোবাইল পাওয়ার অনুভূতি পড়লাম আসলে এগুলো পড়লে কাল্পনিক মনে হয়। আমার বেলায় এরকম হয়েছিল। কিন্তু এগুলো পড়লে আমার খুবই হাসি পাচ্ছে। আর একদমই কাল্পনিক মনে হয়েছে আসলে এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে এগুলো কাল্পনিক কি মনে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার এই গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিকই বলেছেন ভাই,এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে সেই সময়ের ঘটনা কাল্পনিক মনে হবে।আমার ও সেই সময়ের কথা মনে হলে হাসি পায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার প্রথম মোবাইল পাওয়া অনুভুতি টা পড়ে ভাল লাগল ।আসলে যে জিনিস চাই ঐ জিনিস যদি পেয়ে যায় মনের তখন আনন্দ জোয়ার বয়ে যায় ।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার অনুভুতিটা আমাদের মাঝে শেয়ার করে নেয়া জন্য ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু, এত সুন্দর ও চমৎকার মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে উৎসাহিত করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বেশ ভালো লাগলো আপনার জীবনের প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি। আপনার জীবনে প্রথম পাওয়া মোবাইলটি ছিল নকিয়া -৩২২০ মডেল এবং রেড কালার । আসলে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এর অনুভূতি অন্যরকম, সে অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতিটুকু আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো। আসলে ঠিকই বলেছেন একেক জনের অনুভূতি একেক রকম। সত্যি বলতে সেই সময়ের স্মৃতিগুলো মনে হলে নিজের মনের অজান্তেই হাসি চলে আসে।আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit