আমার জীবনের গল্প: "অপারেশন থিয়েটারের নরক যন্ত্রণা"

in hive-129948 •  7 months ago 


হ্যালো..!!
আমার সুপ্রিয় বন্ধুরা,
আমি @aongkon বাংলাদেশের নাগরিক

আজ- ১২ই ফেব্রুয়ারি, সোমবার, ২০২৪ খ্রিঃ

আমি আশা করি, আপনারা সবাই সুস্থ এবং সুন্দর আছেন। আমার মাতৃভাষা বাংলার একমাত্র ব্লগিং কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ফাউন্ডার, এডমিন প্যানেল, মডারেটর প্যানেল এবং সকল সদস্যসদস্যাদের আমার অন্তরের অন্তরস্থল থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন রইল।



আমি আছি আপনাদের সামনে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি প্রতিনিয়ত আমার বাংলা ব্লগে নতুন নতুন পোস্ট শেয়ার করতে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। প্রতিটি মানুষের জীবনেই গল্পের মতো প্রতিটা সময় কোনো না কোনো ঘটনা ঘটতে থাকে মানুষের জীবনে আর এসব ঘটনাগুলোই গল্প হয়ে রয়। মানুষের জীবনে সুখ দুঃখ কষ্ট সবকিছুই বিরাজমান। আমাদের সবার জীবনেই আজকে সুখ আছে তো কালকে দুঃখ থাকতে পারে আবার আজকে দুঃখ আছে তো কালকে আবার সুখ আসতে পারে। আমাদের মানুষের জীবনটা পুরোই রূপকথার গল্পের মতোই হয়।

স্টিমিটে যেমন ৩ সেকেন্ড পর পর প্রতিটি ব্লক চেইনের আকারে যুক্ত হয় আর এই প্রযুক্তিকেই বলা হয় ব্লকচেইন প্রযুক্তি। তেমনই আমাদের মানুষের জীবনে প্রতি সেকেন্ডে আমাদের ব্রেইনে এরকম ব্লক জমা হচ্ছে। আর এই সকল তথ্যগুচ্ছ বা ব্লক গুলো আমাদের জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকে। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে, দুই মাস আগে আমার আঙ্গুলের সমস্যার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অপারেশন করিয়েছিলাম। এখন আমি অপারেশন থিয়েটারের ভেতরের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করি।

Pixabay

আমি প্রথমে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল‌ থেকে আমার আঙ্গুলের অপারেশন করাতে চেয়েছিলাম। তারপরে আমার পিসিমণির সাথে কথা বলে পরবর্তীতে অপারেশনটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে করানোর সিদ্ধান্ত নেই। অপারেশনের দিনে খুব সকালে বন্ধু রাহুলকে সাথে করে নিয়ে প্রথমে গেলাম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দিয়ে মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে আগের দিনের রিপোর্ট নেয়ার জন্য। তারপর এখান থেকে রিপোর্ট নিয়ে সোজা চলে গেলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে আমার মাসিমনি নার্সিংয়ে চাকরি করে। আমার মাসীমণি আগে আমার জন্য সিরিয়াল দিয়ে রেখেছিলো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ দেখানোর জন্য। তারপর আমরা গিয়ে প্রথমে মেডিকেল অফিসার এবং তারপর সার্জারি বিশেষজ্ঞ দেখানোর পরে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে সকল রিপোর্ট কমপ্লিট করা হয়েছে কিনা! আমি তারপর ডাক্তার মহাশয়কে বললাম যে, আমি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল থেকে সকল রিপোর্ট করিয়ে এনেছি।

তখন তিনি প্রেসক্রিপশন এর উপরে ইমারজেন্সি অপারেশন থিয়েটারের রুম নাম্বার লিখে দিল এবং বললো যে, এখান থেকে অপারেশন করাতে হবে। তারপর আমি রিপোর্টটি নিয়ে সোজা চলে গেলাম অপারেশন থিয়েটারের সামনে। কিন্তু রোগীর প্রচন্ড চাপের কারণে অপারেশনের সিরিয়ালও দিতে পারছিলাম না। কারণ ক্রিটিকাল রোগীর অপারেশন তারা সকালে এবং দুপুরে করে আর অন্যান্য যেসব রোগী আছে তাদের অপারেশন গুলো বিকালের দিকে করে।

তারপর বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে সিরিয়াল দিয়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলাম। জীবনের প্রথম কোন অপারেশন থিয়েটারে ঢুকবো সত্যিই মনের ভিতর ভয় না করলেও একটু অন্যরকম লাগছিলো। অপারেশন থিয়েটারে ঢুকার পরেই আমাকে একটি বেডে শুয়ে পড়তে বললো। তারপর আমি সেই বেডে তাদের কথা শুনে শুয়ে পড়লাম। আর ততক্ষণে অপারেশন থিয়েটার ভেতরে থাকা নার্স এবং ডাক্তাররা অপারেশন করার জন্য অস্ত্রপাতি গুলো ঠিকঠাক করছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে একটা অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে পাশাপাশি দুই থেকে তিনটা অপারেশন করানো হয় একসাথেই। আমি যে বেডে শুয়েছিলাম তার পাশের বেডেই একজন মুমূর্ষ বৃদ্ধ রোগীকে বেশ সিরিয়াস একটা অপারেশন করছিলো। আমার নিজের অপারেশনের থেকে এটা দেখে আমার কাছে সব তখন বেশি চিন্তিত লাগছিলো। ওই মুমূর্ষ রোগীর গলা থেকে পেট পর্যন্ত শরীরটা ভায়োডিনের রক্তের মত ওষুধ দিয়ে ম্যাসেজ করছিলো।

আর শরীরের বিভিন্ন অংশে কিছু একটা লাগানো ছিলো আমার সেটার নাম জানা নেই। আর মুখে ছিল অক্সিজেনের নল। আর সেখানে যে মেইন ডাক্তার অপারেশন করছিলো বেলুনের মত কি যেনো একটা আছে সেটা বেশ চাপাচাপি করছিল আর কম্পিউটারের পর্দায় সিগন্যাল গুলো দেখছিল বারবার। এরকম অবস্থা দেখে নিজের অপারেশন করানোর আগে মনে ভয় লাগছিলো একটু। আসলে বাইরে থেকে আমরা অপারেশন থিয়েটারকে যেমনটা ভাবি অপারেশন থিয়েটারের অবস্থা তার থেকেও অনেক গুণ বেশি খারাপ থাকে।

তারপর একটা ইয়াং ডাক্তার আমাকে বলল যে, অবশ করার ইনজেকশন দেবো একটু সহ্য করিও। আমি তখন বললাম যে আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই। তারপর যখন অবশ করার চার-পাঁচটা ইঞ্জেকশন গুলো আঙুলে করলো তখন আমি আর আমার নিজের ভেতরে ছিলাম না। তখন মনে হচ্ছিলো পৃথিবীটা আমার কাছে পুরো নরকময় হয়ে গেছে এত কষ্ট সহ্য করার থেকে হয়তো মরে যাওয়াও অনেক ভালো। তখন আঙুলের অসহ্য যন্ত্রণাতে কাতর হয়ে গিয়েছিলাম।

তারপর অবশ করা হয়ে গেলে আমার আঙ্গুলের অপারেশন শুরু করে। আমি ভেবেছিলাম যে, অবশ করলে আঙ্গুলের অপারেশন করলে কিছুই টের পাওয়া যাবে না। কিন্তু আঙ্গুলের অপারেশন করার সময় আমি সবকিছুই অনুভব করতে পারছিলাম। আমার শরীর অনুভব করতে না পারলেও আমার ব্রেইন ঠিকই আঙ্গুলের অপারেশন করার সময় সব যন্ত্রণা অনুভব করছিলো। যখন আঙুলের ভেতরে পচে যাওয়া মাংসগুলো কাটছিল আর ছেঁড়া হচ্ছিলো তখন চোখ মুখ বুজে সব যন্ত্রণা গুলো সহ্য করছিলাম।

আর তখন মনে হচ্ছিল যে, অপারেশনটা শেষ করলেই বোধহয় বেঁচে যাবো। আমার কাছে মনে হয় অপারেশনের থিয়েটারকে জড়জাগতিক নরক বললেও ভুল হবে না। কারণ আমি অপারেশনে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে যত সময় ছিলাম ঠিক তত সময় হয়ে আমি নরক যন্ত্রণা ভোগ করছিলাম। তারপর আমার অপারেশন সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আমি ডাক্তারের দিয়ে প্রেসক্রিপশন লেখায় সাথে সাথেই কাঁপতে কাঁপতে বাইরে বের হয়ে আসি।

তারপর বন্ধু রাহুলের সাথে হাসপাতালে সামনে গিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করি তখনও আমার আঙ্গুলের ভেতর যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তারপর যখন যন্ত্রণাটা কমলো তখন বন্ধু রাহুলের সাথে বাইকে করে বাসায় চলে আসি।



পোস্টের বিবরন

পোস্ট ধরণজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি এফ-৫৪
লোকেশনমোহাম্মদপুর,ঢাকা


প্রিয় বন্ধুরা,

আমি স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে প্রতিনিয়ত আমার সৃজনশীলতা দিয়ে ভালো কনটেন্ট শেয়ার করে এই কমিউনিটিকে সমৃদ্ধ করতে চাই এবং উচ্চতার শিখরে নিয়ে যেতে চাই। আমার ব্লগটি কেমন হয়েছে আপনারা সবাই কমেন্টের মাধ্যমে অবশ্যই মন্তব্য করবেন, সামান্য ভুল ত্রুটি অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সুপরামর্শ দিয়ে পাশে থাকবেন। আবার দেখা হবে নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে শীঘ্রই, ততক্ষণে সবাই নিজের খেয়াল রাখবেন সুস্থ এবং সুন্দর থাকবেন এটাই কাম্য করি।



আমি কে !

20230826_112155.jpg

আমি অংকন বিশ্বাস, আমার ইউজার নেম @aongkon। আমি মা, মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমিকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি। আমি হৃদয় থেকে ভালবাসি সৃষ্টিকর্তা ও তার সকল সৃষ্টিকে। আমি বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে সিভিল টেকনোলজিতে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে লেখাপড়া করছি। আমি ভ্রমণ করতে, গান গাইতে ও শুনতে, কবিতা লিখতে ও পড়তে, আর্ট করতে, রান্না করতে ও ফটোগ্রাফি করতে খুবই পছন্দ করি। "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব "আমার বাংলা ব্লগ" আমার ভালোবাসা। আমার নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে "আমার বাংলা ব্লগে" আমার আগমন। এই স্বল্প মানব জীবনের প্রতিটা ক্ষণ আমার কাছে উপভোগ্য। আমি মনে করি, ধৈর্যই সফলতার চাবিকাঠি।



সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
@aongkon



VOTE@bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png
OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

standard_Discord_Zip.gif

Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

অপারেশন করা কত ভয়ংকর হয় এটা আমি দুইবার সম্মুখীন হয়েছি। দুইটা মেয়েদের সিজারের সময় বেশ খারাপ অবস্থায় ছিল। এতটা খারাপ লাগে মনে হয় যে জীবনটা সেই দিনই শেষ হয়ে যাবে। আপনার আঙ্গুলের অপারেশন করিয়েছেন শুনে খারাপ লাগলো। যাক তারপরও হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করা মানেই ভয় কাজ করে। বিশেষ করে যখন অবশ করার জন্য ইনজেকশনটা দেওয়া হয় তখন বেশি খারাপ লাগে।

হ্যাঁ আপু অপারেশনের আগে অবশ করার সময়ই যে ইনজেকশন দেওয়া হয় সেটাই সবথেকে বেশি ব্যাথা লাগে। অনেক সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

Posted using SteemPro Mobile

অপারেশন মানে যন্ত্রনা অপেক্ষা জানিনা কি হবে তারপরও করাতে হবে। কারণ রোগ থেকে যে মুক্তি পেতে হবে। শত যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে এবং রোগাক্রান্ত জায়গাটিকে করতে হবে। বেশ ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা সম্মুখীন হয়েছো দেখছি বন্ধু। আমিও তো তোমার সাথেই ছিলাম শেষে তোমার যে অবস্থা হয়েছিল আমিই ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম

Posted using SteemPro Mobile

হ্যাঁ বন্ধু অপারেশনের অভিজ্ঞতাটা বেশ ভয়ঙ্কর ছিল।অনেক সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile