দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব (সংস্কৃত: दुर्गा पूजा) হল দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে ভারত উপমহাদেশে প্রচলিত একটি হিন্দু উৎসব।[৩] এটি সারা বিশ্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বারা পালিত হয়, তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা, বিহার, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ (পূর্বাঞ্চল) এবং বাংলাদেশে ঐতিহ্যগত বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। এটি বাংলা বর্ষপঞ্জির আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।[৪][৫] দুর্গাপূজা মূলত দশ দিনের উৎসব,[৬][৭] যার মধ্যে শেষ পাঁচটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ।[৫] আশ্বিনের নবরাত্রির পূজা শারদীয় পূজা এবং বসন্তের নবরাত্রির পূজা বাসন্তিক বা বসন্তকালীন দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কলকাতার দুর্গাপূজা ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করা হয়
দুর্গাপূজা ভারত, বাংলাদেশ, নেপালসহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকে। তবে সনাতনী বাঙালীর প্রধান উৎসব হওয়ার দরুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ও বাংলাদেশে দুর্গাপূজা বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এমনকি ভারতের আসাম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মণিপুর এবং ওড়িশা রাজ্যেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবাসী বাঙালি সনাতনীগণ ও স্থানীয় জনসাধারণ নিজ নিজ প্রথা মাফিক শারদীয়া দুর্গাপূজা বা নবরাত্রি উৎসব পালন করে।
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে "দুর্গাষষ্ঠী", "দুর্গাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া; এই দিন সনাতনীরা তর্পণ করে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা। এই দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। কোথাও কোথাও পনেরো দিন ধরে দুর্গাপূজা পালিত হয়। সেক্ষেত্রে মহালয়ার আগের নবমী তিথিতে পূজা শুরু হয়। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে, কালিকা পুরাণে বলা হয়েছে, অষ্টাদশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী উগ্রচণ্ডা তথা দশভুজার বোধন করা হবে কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে, ষোড়শভুজা ভগবতী ভদ্রকালীর বোধন করা হবে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে এবং চতুর্ভুজা ও দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী বিগ্রহের বোধন করা হবে যথাক্রমে শুক্ল প্রতিপদে এবং শুক্লা ষষ্ঠীতে। আবার মহাকাল সংহিতার বিধানে প্রতিমাভেদে উগ্রচণ্ডার কৃষ্ণনবম্যাদিকল্পে, ভদ্রকালীর প্রতিপদাদি কল্পে ও কাত্যায়নী দুর্গার ষষ্ঠ্যাদি কল্পে পূজার অনুষ্ঠান বিধেয়।
পারিবারিক স্তরে দুর্গাপূজা প্রধানত ধনী পরিবারগুলোতেই আয়োজিত হয়। কলকাতা শহরের পুরনো ধনী পরিবারগুলোর দুর্গাপূজা "বনেদি বাড়ির পূজা" নামে পরিচিত। পারিবারিক দুর্গাপূজাগুলোতে শাস্ত্রাচার পালনের উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়। পূজা উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয়-সমাগম হয়ে থাকে। অন্যদিকে আঞ্চলিক স্তরে এক একটি অঞ্চলের বাসিন্দারা যৌথভাবে যে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন তা বারোয়ারি পূজা বা সর্বজনীন পূজা নামে পরিচিত। ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সময় সর্বজনীন পূজা শুরু হয়। মূলতঃ দেবী দুর্গাকে মাথায় রেখেই দেশমাতা বা ভারতমাতা বা মাতৃভূমির জাতীয়তাবাদী ধারণা বিপ্লবের আকার নেয়। দেবী দুর্গার ভাবনা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দে মাতরম গানটি রচনা করেন যা ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী নেতারা বিভিন্ন সর্বজনীন পূজার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। এখন সর্বজনীন পূজায় "থিম" বা নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক মণ্ডপ, প্রতিমা ও আলোকসজ্জার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। থিমগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে "শারদ সম্মান" নামে বিশেষ পুরস্কারও দেওয়া হয়। এছাড়া বেলুড় মঠসহ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বিভিন্ন শাখাকেন্দ্র এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘের বিভিন্ন কেন্দ্রের সন্ন্যাসীরা দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। তবে, ঝাড়খণ্ডের নিকটবর্তী পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির চা-বাগানে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী অসুর জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা এই সময়টা শোক হিসেবে পালন করে।
অকালবোধন
অকালবোধন হল দুর্গাপূজার প্রারম্ভিক অনুষ্ঠান। কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই সময়টি তাদের পূজা যথাযথ সময় নয়। অকালের পূজা বলে তাই এই পূজার নাম হয় "অকালবোধন"।
পৌরাণিক উপাখ্যান
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ
মূল নিবন্ধ: ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, কৃষ্ণ প্রথম দুর্গাপূজা করেছিলেন। কৃষ্ণের মূর্তি, কুমারটুলি পার্ক সর্বজনীন, কলকাতা, ২০১০।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ-এ কৃষ্ণকে দুর্গাপূজার প্রবর্তক বলা হয়েছে। বিভিন্ন দেবদেবীরা কীভাবে দুর্গাপূজা করেছিলেন, তার একটি তালিকা এই পুরাণে পাওয়া যায়। তবে এই প্রসঙ্গে কোনো পৌরাণিক গল্পের বিস্তারিত বর্ণনা এই পুরাণে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে:
প্রথমে পূজিতা সা চ কৃষ্ণেন পরমাত্মনা।
বৃন্দাবনে চ সৃষ্ট্যাদ্যৌ গোলকে রাগমণ্ডলে।
মধুকৈটভভীতেন ব্রহ্মণা সা দ্বিতীয়তঃ।
ত্রিপুরপ্রেষিতেনৈব তৃতীয়ে ত্রিপুরারিণা।।
ভ্রষ্টশ্রিয়া মহেন্দ্রেন শাপাদ্দুর্বাসসঃ পুরা।
চতুর্থে পূজিতা দেবী ভক্ত্যা ভগবতী সতী।।
তদা মুনীন্দ্রৈঃ সিদ্ধেন্দ্রৈর্দেবৈশ্চ মুনিমানবৈঃ।
পূজিতা সর্ববিশ্বেষু বভূব সর্ব্বতঃ সদা।।
অর্থাৎ, সৃষ্টির প্রথম যুগে পরমাত্মা কৃষ্ণ বৈকুণ্ঠের আদি-বৃন্দাবনের মহারাসমণ্ডলে প্রথম দুর্গাপূজা করেন। এরপর মধু ও কৈটভ নামে দুই অসুরের ভয়ে ব্রহ্মা দ্বিতীয় দুর্গাপূজা করেছিলেন। ত্রিপুর নামে এক অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে শিব বিপদে পড়ে তৃতীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। দুর্বাসা মুনির অভিশাপে লক্ষ্মীকে হারিয়ে ইন্দ্র যে পূজার আয়োজন করেছিলেন, সেটি ছিল চতুর্থ দুর্গাপূজা। এরপর থেকেই পৃথিবীতে মুনিঋষি, সিদ্ধপুরুষ, দেবতা ও মানুষেরা নানা দেশে নানা সময়ে দুর্গাপূজা করে আসছে।
পূজা মন্ত্র
সনাতম ধর্মের যেকোনো পূজার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সংস্কৃত মন্ত্রগুলি। দুর্গাপূজা মহাপূজা,(কারণ এতে মহাস্নান-পূজন-হোম-বলিদান - এই চারটি কর্ম জড়িত) এখানে পূজামন্ত্রের সঙ্গে শ্রীশ্রী চণ্ডীও পঠিত হয় । ঢাক-ঢোল-খোল-করতাল-শঙ্খ-ঘন্টা বাদ্যের সম্মিলিত ঐকতান, ধূপ-ধুনোর সুগন্ধী ধোঁয়া, ফুল-মালা-নৈবেদ্য-চন্দন-অগুরু-কস্তুরী-কর্পূরের মিলিত সুবাস, তার সাথে মন্ত্রোচ্চারণ ও মন্দ্রস্বরে চণ্ডীপাঠ এক ভাবগম্ভীর পবিত্র পরিবেশের সৃষ্টি করে। পূজায় প্রচলিত দেবী দুর্গার ধ্যানমন্ত্র:
“
জটাজুটসমাযুক্তামর্দ্ধ্বেন্দুকৃতশেখরাম্।
লোচনত্রয়সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্।।
অতসীপুষ্পবর্ণাভাং (তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভাং ইতি পাঠান্তরম্) সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্।
নবযৌবনসম্পন্নাং সর্ব্বাভরণভূষিতাম্।।
সুচারুদশনাং তদ্বৎ পীনোন্নতপয়োধরাম্।
ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাং মহিষাসুরমর্দ্দিনীম্।।
মৃণালায়তসংস্পর্শদশবাহুসমন্বিতাম্।
ত্রিশূলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খড়্গং চক্রং ক্রমাদধঃ।
তীক্ষ্ণবাণং তথা শক্তিং দক্ষিণে সুবিচিন্তয়েৎ (বাহুসঙ্ঘেষু সঙ্গতাম্ ইতি পাঠান্তরম্)।
খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমঙ্কুশমেব চ (পাশং চাঙ্কুশমূর্দ্ধ্বতঃ ইতি পাঠান্তরম্)।।
ঘন্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ (ঘন্টাঞ্চ পরশুঞ্চাপি বামেহধঃ প্রতিযোজয়েৎ ইতি পাঠান্তরম্)।
অধস্তান্মহিষং তদ্বদ্বিশিরিষ্কং প্রদর্শয়েৎ।।
শিরশ্ছেদোদ্ভবং তদ্বদ্দানবং খড়্গপাণিনম্।
হৃদি শূলেন নির্ভিন্নং নির্য্যদন্ত্রবিভূষিতম্।।
রক্তারক্তীকৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্।
বেষ্টিতং নাগপাশেন ভ্রূকুটিভীষণাননম্ (ভ্রূকুটীকুটিলাননম্ ইতি পাঠান্তরম্)।।
সপাশবামহস্তেন ধৃতকেশঞ্চ দুর্গয়া।
বমদ্রুধিরবক্ত্রঞ্চ দেব্যাঃ সিংহং প্রদর্শয়েৎ।।
দেব্যাস্তু দক্ষিণং পাদং সমং সিংহোপরি স্থিতম্।
কিঞ্চিদূর্দ্ধ্বং তথা বামমঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি।।
শত্রুক্ষয়করীং দেবীং দৈত্যদানবদর্পহাম্।
প্রসন্নবদনাং দেবীং সর্ব্বকামফলপ্রদাম্।।
স্তূয়মানাঞ্চ তদ্রুপমমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ।
উগ্রচণ্ডা প্রচণ্ডা চ চণ্ডোগ্রা চণ্ডনায়িকা
চণ্ডা চণ্ডবতী চৈব চণ্ডরূপাতিচণ্ডিকা (চামুণ্ডা চণ্ডিকা তথা ইতি পাঠান্তরম্)।।
আভিঃ শক্তিভিরষ্টাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতম্।
চিন্তয়েজ্জগতাং ধাত্রীং (চিন্তয়েৎ সততং দেবীং ইতি পাঠান্তরম্) ধর্ম্মকামার্থমোক্ষদাম্।।
”
দুর্গা পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার মন্ত্র:
“
১) ওঁ আয়ুর্দ্দেহি যশো দেহি ভাগ্যং ভগবতি দেহি মে।
পুত্রান্ দেহি ধনং দেহি সর্ব্বান্ কামাংশ্চ দেহি মে।।
এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সায়ুধবাহনসাঙ্গাবরণপরিবারসহিতায়ৈ মহাঘোরায়ৈ কোটিযোগিনীপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ।
২) ওঁ হর পাপং হর ক্লেশং হর শোকং হরাসুখম্।
হর রোগং হর ক্ষোভং হর মারীং হরপ্রিয়ে।।
এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সায়ুধবাহনসাঙ্গাবরণপরিবারসহিতায়ৈ মহাঘোরায়ৈ কোটিযোগিনীপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ।
৩) ওঁ মহিষঘ্নি মহামায়ে চামুণ্ডে মুণ্ডমালিনি।
আয়ুরারোগ্যং বিজয়ং দেহি দেবি নমোহস্তুতে।।
চন্দনেন সমালব্ধে কুঙ্কুমেন বিলেপিতে।
বিল্বপত্রকৃতাপীড়ে দুর্গেহহং শরণং গতঃ।।
এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সায়ুধবাহনসাঙ্গাবরণপরিবারসহিতায়ৈ মহাঘোরায়ৈ কোটিযোগিনীপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ।
”
দুর্গা প্রণাম মন্ত্র:
“
সর্ব্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে।।
”
মূর্তিতত্ত্ব
বাংলায় দেবী দুর্গার যে মূর্তিটি সচরাচর দেখা যায় সেটি পরিবারসমন্বিতা বা সপরিবার দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মধ্যস্থলে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী; তার মুকুটের উপরে শিবের ছোট মুখ ,দেবীর ডানপাশে উপরে দেবী লক্ষ্মী ও নিচে গণেশ; বামপাশে উপরে দেবী সরস্বতী ও নিচে কার্তিকেয়।কলকাতায় সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার ১৬১০ সালে এই সপরিবার দুর্গার প্রচলন করেন । তবে দুর্গার রূপকল্পনা বা কাঠামোবিন্যাসে যতই বৈচিত্র থাকুক, বাংলায় দুর্গোৎসবে প্রায় সর্বত্রই দেবী দুর্গা সপরিবারে পূজিতা হন। এই প্রসঙ্গে স্বামী প্রমেয়ানন্দের উক্তিটি স্মরণীয়ঃ
“ ...ধনদাত্রী লক্ষ্মী, বিদ্যাদায়িনী সরস্বতী, শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কার্তিকেয়, সিদ্ধিদাতা গণেশ ও তাঁদের বাহন-সকলের মূর্তিসহ মহামহিমময়ী দুর্গামূর্তির পরিকল্পনা ও পূজা বাংলার নিজস্ব।
দুর্গা
হিন্দু শাস্ত্রে ‘দুর্গা’ নামটির ব্যাখ্যা নিম্নোক্তরূপে প্রদত্ত হয়েছে:
“ দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।
”
সিংহ
কালীবিলাস তন্ত্র-এ দুর্গার বাহনকে বলা হয়েছে বিষ্ণুরূপী সিংহ।[৩০]
সিংহের প্রণামমন্ত্রে বলা হয়েছে:
“
ওঁ সিংহস্ত্বং হরিরূপোহসি স্বয়ং বিষ্ণুর্ণসংশয়।
পার্ব্বত্যা বাহনস্ত্বং হি অতঃ পূজয়ামি ত্বামহম্।। ”
কালিকাপুরাণ অনুসারে, মহামায়া কামাখ্যার বাহন হওয়ার জন্য শিব শবদেহ, ব্রহ্মা রক্তপদ্ম ও বিষ্ণ সিংহের মূর্তি ধারণ করেছিলেন।
মহিষাসুর
মহিষাসুর অসুর, অর্থাৎ দেবদ্রোহী। তাই দেবীপ্রতিমায় দেবীর পদতলে দলিত এই অসুর ‘সু’ এবং ‘কু’-এর মধ্যকার চিরকালীন দ্বন্দে অশুভ শক্তির উপর শুভশক্তির বিজয়ের প্রতীক। স্বামী প্রমেয়ানন্দের ভাষায়,
“ সাধকের পক্ষে অসুর অবিদ্যা। বিদ্যারূপিণী মা অবিদ্যা বিনাশ করে মহামুক্তির বিধান করেন। সাধারণ মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট, ভয়-ভীতি, আপদ-বিপদ – এ-সকলই আসুরিক শক্তির কার্য। পরমকরুণাময়ী মা নিরন্তর অসুর বিনাশ করে সন্তানের কল্যাণ বিধান করছেন।
পূজাকালে মহিষাসুরের প্রণাম মন্ত্রে তাই বলা হয়
“
মহিষস্ত্বং মহাবীর শিবরূপ সদাশিব।
অতস্ত্বাং পূজয়িষ্যামি ক্ষমস্ব মহিষাসুর।।
”
গণেশ
গণেশ কার্যসিদ্ধির দেবতা। হিন্দু পুরাণের নিয়ম অনুসারে, অন্যান্য দেবতার আগে গণেশের পূজা করতে হয়। গণেশের পূজা আগে না করে অন্য কোনো দেবতার পূজা করা শাস্ত্রে নিষিদ্ধ। স্বামী প্রমেয়ানন্দ লিখেছেন,
“ গণশক্তি যেখানে ঐক্যবদ্ধ সেখানে কর্মের সকল প্রকার বাধাবিঘ্ন দূরীভূত হয়। দেবাসুর-যুদ্ধে দেবতারা যতবারই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসুরদের সঙ্গে লড়াই করেছেন ততবারই তাঁরা জয়ী হয়েছেন। গণেশের আর এক নাম বিঘ্নেশ, অর্থাৎ বিঘ্ননাশকারী। বিঘ্নেশ প্রসন্ন থাকলে সিদ্ধি নিশ্চিত।
সরস্বতী
সরস্বতী বাণীরূপিণী বাগদেবী; তিনি জ্ঞানশক্তির প্রতীক।
“ দেবীর হাতে পুস্তক ও বীণা। পুস্তক বেদ শব্দব্রহ্ম। বীণা সুরছন্দের প্রতীক নাদব্রহ্ম। শুদ্ধ সত্ত্বগুণের পূর্তি, তাই সর্বশুক্লা। শ্বেতবর্ণটি প্রকাশাত্মক। সরস্বতী শুদ্ধ জ্ঞানময়ী প্রকাশস্বরূপা। জ্ঞানের সাধক হইতে হইলে সাধককে হইতে হইবে দেহে মনে প্রাণে শুভ্র-শুচি।
কার্তিকেয়
দেবসেনাপতি কার্তিকেয় বা কার্তিক সৌন্দর্য ও শৌর্যবীর্যের প্রতীক।
“ যুদ্ধে শৌর্য-বীর্য প্রদর্শন একান্ত প্রয়োজনীয়। তাই সাধক-জীবনে এবং ব্যবহারিক জীবনে কার্তিকেয়কে প্রসন্ন করতে পারলে শৌর্য-বীর্য আমাদের করতলগত হয়...
পূজা উদ্যাপন
পশ্চিমবঙ্গ
শরৎকালীন দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের প্রধান হিন্দু উৎসব। বাংলা পঞ্জিকার আশ্বিন বা কার্তিক মাসে (সেপ্টেমর-অক্টোবর মাসে) এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণে রাবণ বধের জন্য রামের দুর্গাপূজার পৌরাণিক কাহিনিটি উল্লেখিত হয়েছে। দুর্গার পূজা বসন্তকালের উৎসব হলেও, রাম শরৎকালে তার পূজা করেছিলেন। এই পূজা অকালবোধন নামে পরিচিত।[৫৮] তাই বাসন্তী পূজা এখনও প্রচলিত থাকলেও, শারদীয়া দুর্গাপূজাই মহাসমারোহে পালিত হয়।
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত দুর্গাপূজা পালিত হয়। বাঙালি হিন্দুরা এই উৎসবকে হিমালয়ে দেবী দুর্গার বাপের বাড়ি ফেরার অনুষ্ঠান হিসেবেই দেখে। বাঙালি হিন্দু সমাজে এই পূজা উপলক্ষে নতুন পোশাক পরার চল রয়েছে। পূজার সময় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে প্রতিমা দর্শনও বাঙালি হিন্দুদের একটি বিশেষ প্রথা।
বাংলাদেশে দুর্গাপূজার দৃশ্য
ময়মনসিংহ শহরের শিববাড়ি মন্দিরের মন্ডপে দুর্গাপূজায় পুরোহিত ব্যাতিত সকলেই নারী।
টাইপ: চৌর্যবৃত্তি।
এ ধরনের পোস্ট আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি Allow করে না। নতুন ইউজার হওয়ার কারণে শুধুমাত্র আপনার পোস্ট Mute করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আবার একই ধরনের কাজ করলে আপনার একাউন্ট কমিউনিটি থেকে ব্যান করা হবে।
কমিউনিটির নিয়মাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন
https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-16-aug-22
যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।
Discord server link: https://discord.gg/ettSreN493
Source: https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A7%82%E0%A6%9C%E0%A6%BE
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit