তারিখ : ১৬.০৬.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার।
শুভদিন বন্ধুগণ, আসসালামু আলাইকুম / আদাব ।
আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি ভালো আছেন । বর্ষাঘন এ দিনে সকলকে কদম ফুলের প্রতীকী শুভেচ্ছা জানাই, সাথে শুভাকাঙক্ষা অফুরান যাতে আমাদের সকলের জীবন মহৎ, সুন্দর ও সফলতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক।
আজকের দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি আনন্দের দিন। আগামীকাল বর্ণাঢ্য নান্দনিকতায় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাংলা ও বিশ্বের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলজুড়ে মহাসমারোহের মধ্য দিয়ে পালিত হবে, উদযাপিত হবে এ দিনটি। "ঈদ" শব্দের আভিধানিক অথবা পারিভাষিক শব্দের অর্থ হলো - আনন্দ । এ ঈদুল আযহার মর্মার্থ হলো ত্যাগের আনন্দ, যার মধ্য দিয়ে অনুভব করা যায় একটি ঐশ্বর্য ও শাশ্বত পরিতৃপ্তি, অর্জন করা যায় সন্তুষ্টি ।
যা হোক, আজ এই আনন্দঘন দিনের ঊষালগ্নে প্রার্থনা ও অভিপ্রায় ব্যক্ত করি, যাতে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য মঙ্গল বয়ে আসুক, সকল ভেদাভেদ, বৈষম্য, অমঙ্গল ও ক্লেশ- দুঃখবেদনাকে অতিক্রম করে মহিমান্বিত একটি নবযুগ আবির্ভূত হোক। সকলের সমবেত প্রাপ্তিযোগের মধ্য দিয়েই এই মহান ঈদের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হবে।
আজকের ব্লগে আমি তুলে ধরতে চাই একটি সময়োপযোগী বিষয়, যা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় বাস্তবতার সম্মুখীন করবে এবং একটি বিশেষ দিকে দৃষ্টি আরোপ করে সমাধানমুখর একটি দিকে নিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। সকলের উপকার সাধন এবং কিছু দৃশ্যপটের সংস্কার সাধনের মধ্য দিয়েই ছোটবড় উদ্যোগ সার্থক হয়, যদি কিছু মানুষের মনে সচেতনতাবোধ সৃষ্টি হয় - তাহলেই লেখার পরিপূর্ণতা পাওয়া সম্ভব হবে।
আমরা কমবেশি সবাই জানি, বাংলা জুড়ে বিভিন্ন শাষন পরিক্রমায়, সেই মোঘল আমল পার হয়ে ব্রিটিশ পিরিয়ড, তারপর স্বাধীনতার একটি পালাক্রম শেষে নতুন করে আমরা নবযুগে প্রবেশ করেছি। পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য তা দীর্ঘ ২৩ বছরের পশ্চিম পাকিস্তান কলোনিয়াল শাষনের ধারাবাহিকতায় প্রায় দুই যুগ পর স্বাধীনতা হস্তগত হতে শুরু করে। সর্বোপরি বাঙালি জাতিসত্তা পার করে এসেছে দীর্ঘকালের শোষণ আর পরাধীনতা, শেষ পর্যন্ত নতুন যুগে প্রবেশ করেও কিছু ব্যাপারে এখনো আমরা সন্তুষ্টিজনক অবস্থানে পৌঁছাতে পারি নি।
যে ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলছি সেটি হলো নিরাপদ সড়কের যে বিষয় সামনে চলে আসে। বাংলার ঋতুপ্রকৃতিতে ও ভৌগোলিক দিক থেকে নদী নালা, খাল বিল ও জলপথের প্রাচুর্য ছিল, এখনো তা আছে। নদীপথে বাণিজ্য হতো, লোক পারাপার যোগাযোগ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য নৌকা, বোট,লঞ্চ -স্টিমার, বাষ্পচালিত নৌকার প্রচলন ছিল, যা দিনকে দিন আধুনিকতর রূপ লাভ করেছে।
তারপর আসে স্থলপথের কথা। কংক্রিট আর পিচঢালা পথ এখন প্রায় সবখানেই দেখা গিয়েছে, নিজ নিজ সরকারি দপ্তর থেকে বিভাগ স্থাপন করা হয়েছে, নিজেদের অবকাঠামো উন্নয়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তদারকি করেছে, বর্ধিত করেছে, সম্প্রসারণ ও মেরামত করে গড়ে দিয়েছে মাইলের পর মাইল রাস্তা। একটি জেলার সাথে অন্য জেলার সংযোগ স্থাপনে জনজীবন গতিশীল পথে সমৃদ্ধি লাভ করেছে।
এটি আমার একটি ব্যক্তিগত উপলব্ধি যে, যখনই একটি সমাজ নানা পেশা, বৃত্তি ও মেধাশক্তির সমন্বয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় - তখন মূলত রাষ্ট্রীয় অথবা সামাজিক এ দিকগুলোর উন্নতির মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়ে ওঠে। যেমন : রাস্তার অবকাঠামো আর যানবাহনের প্রয়োজন অনুসারে নিয়োজিত করার মধ্যে একটি অন্তর্নিহিত তাৎপর্য লুকিয়ে আছে যা কিছু বছরের পর টের পাওয়া যায়।
প্রায়শই দেখা যায় - মানুষজন বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে মফস্বলে স্থানান্তর করার জন্য অল্প সময়ে খুব দ্রুত পার হতে চায়। আমি নিজে যখন সরেজমিনে বিভিন্ন পরিবহনে রাজধানী শহর থেকে পার্শ্ববর্তী জেলায় পথ পাড়ি দিয়েছি, রাজপথে প্রচুর ভীড় আর যানবাহনের আধিক্য টের পেয়েছি।
প্রায়শই ছোটবড় যানবাহনে বলা হয়, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি, অথবা একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না, ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের স্লোগান, যার দ্বারা মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। পরিবহন সেক্টরের মালিকপক্ষ কখনো নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য অযোগ্য, লাইসেন্সবিহীন চালকদের বাস কিংবা যানবাহন পারাপারের জন্য নিযুক্ত করায়, যার খেসারত দিতে হয় বিভিন্ন দূর্ঘটনায়,অঘটনে যা জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে।
নিরাপত্তা নাগরিক জীবনের একটি বিষয়, মৌলিক চাহিদা যা যেকোন নাগরিক তার জীবনে আশা করে রাষ্ট্রের থেকে। কিন্তু কখনো দেখা যায় তা ঠিকভাবে পালন করা হয়ে ওঠে না। ভুক্তভোগী যারা হয় কয়েক ঘন্টার বেপরোয়া ভুলের মাশুল দিতে হয় গোটা একটি পরিবারকে, বিপর্যস্ত হয়ে যায় পরবর্তী ভবিষ্যৎ জীবন, কখনো কয়েকটি পরিবারের অর্থনৈতিক চাকা বন্ধ হয়ে যায় যার কোন সমাধান রাষ্ট্র এনে দিতে পারে না।
তাহলে, জনসচেতনতা কি জিনিস ?
নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়, বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় রাস্তার ধারে মাঠেঘাটে, টার্মিনালে, জলপথে বন্দরে জাহাজঘাটে, কখনো সড়ক ও জলপথের নৌ কর্তৃপক্ষ, সরকারি বেসরকারি মহল থেকে ; কিন্তু দিনশেষে এক কানে প্রবেশ করে অন্য কানে তা বের হয়ে যায়। এমন বাস্তবতায় জনসচেতনতার কথা ক্ষেত্র বিশেষে হাস্যকর ঠেকে।
আমি বলি সচেতনতা তখনই সম্ভব যখন মানুষ সোচ্চার হয়, ভুল থেকে শিখতে পারে। ফেসবুকে মিম, রিলস ও পোস্ট ওয়ালে মুখ নাক বাঁকা না করে নিজেরা একটি সামাজিক সংস্কার গড়ে তুলতে পারে। তার জন্য আহামরি উদ্যোগী হতে হয় না, বরং চিন্তার স্বচ্ছতা ও পরিবর্তন জরুরি যার মধ্য দিয়ে একটি বড় ধরনের মনোস্নায়বিক পরিবর্তন আনয়ন করা সম্ভব।
বাংলার বিপুল জনসংখ্যা একটি বড় সমস্যা ছিল, এখনো আছে, তা ভবিষ্যতে থাকবে এ আশা করাই যায়। তবে পথচারী পারাপার কিংবা আইন প্রয়োগে সরকারি মহল কি কি ভূমিকা রাখবে তা নিজেরাই ঠিক করতে পারে। মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযান কিংবা মানিয়ে নেয়ার বিভিন্ন উদ্যোগ পেশাজীবি মহলে নেয়া যেতে পারে, যার প্রতিফলন সহজেই চোখে পড়বে।
তবে সব মিলিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করাটাই বড় ভূমিকা রাখে এ সকল সামাজিক সংস্কারে। আমি মনে করি এ ধরনের সামাজিক বিষয়ে গতিশীল উদ্যোগ নেয়া সম্ভব মানবীয় বোধ ও জনসচেতনতাকে উপজীব্য করে। বিরাট পরিবর্তন তখনই আসবে যখন বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করা যাবে,আর সে অনুসারে একটি সংষ্কারের পীঠস্থান তৈরি হবে।
সবার জন্য শুভকামনা রইলো আর ধৈর্য্য ধরে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।নিজের মতামত জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে আর যেকোন গঠনমূলক মতামত সাদরে গ্রহণীয়।