অ-পূর্ণতা | একটি সমিধ জীবন ভাবনা

আমার সহযোগী লেখক ও ব্লগারবৃন্দ,

আসসালামু আলাইকুম / আদাব। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা প্রিয় এই কমিউনিটিতে যুক্ত আছেন, আর যারা ভারতীয় বাংলা তথা পশ্চিমবঙ্গ থেকে সংযুক্ত আছেন - প্রত্যেককেই বিশেষভাবে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিবেদন করি। পাশাপাশি আশা করি আপনারা সুস্থ ও ভালো আছেন।

এ পৃথিবীতে কিছু জিনিস কখনোই অর্থ কিংবা প্রভাব প্রতিপত্তি কিংবা ক্ষমতা দিয়ে কেনা যায় না। আর্থিক সক্ষমতার একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে আর এর বাইরে যে ব্যাক্তি হাত বাড়াতে চায়, প্রতিদানে শূন্যতা ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না। সবার ক্ষেত্রেই কখনো কেউ সম্পদশালী হয়ে উঠতে পারে, আবার নিজেকে একটু উন্নত অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাই-ই কমবেশি চেষ্টা পরিশ্রম করতে পারে।

Src

এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, নিজেকে আরেকটু উদ্যমী কিংবা জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চ অবস্থান সৃষ্টি করে নেওয়া। তবে সবকিছুই একসময় কারো কাছে অর্থহীন মনে হয় কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থকড়ি থাকার পরেও, আবার কারো অর্থের অভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও জীবনের কিছু অমূল্য জিনিস হারিয়ে যেতে থাকে।

জীবন যেখানে যেমন।

এইতো কিছুদিন আগে নিজের ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধুকে দেখতে গিয়েছিলাম, সে একটি হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করছে। নানা রকম অসুখে বিসুখে কাবু মানুষকে দেখতে পেলাম যারা নিজেরা আরেগ্য লাভের চেষ্টা করে চলেছে । ডাক্তার, নার্সরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন আর তারই মাঝে স্বজনদের সেবা শুশ্রূষার মাধ্যমে অল্প অল্প করে রোগী সেরে ওঠার দিকে এগিয়ে চলেছে।

অর্থকড়ির অভাবে কিছু মানুষ সুচিকিৎসা বঞ্চিত হয় আর কিছু মানুষ বিপুল টাকাকড়ি থাকা সত্ত্বেও সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে প্রত্যাশা করে কিভাবে এ সুন্দর পৃথিবীর আলো বাতাসে মুখরিত নন্দন কাননে আরো দীর্ঘ সময় প্রিয় মুখের সান্নিধ্যে থেকে জীবনের সাধ অর্জন করে নিতে পারেন। দুটো ক্ষেত্রে অর্থকড়ির দুটি বিপরীতমুখী ভূমিকা - কিন্তু লক্ষ্য একটাই।

Src

আমি বিষয়টি নিয়ে খুব ভালোভাবে ভাবতে শুরু করলাম। সত্যিই তো, প্রত্যেকটি মানুষের চাওয়া পাওয়ার গন্ডি আলাদা, আর একই জীবনে -পৃথিবীতে ভিন্ন আকাঙ্খা, জীবন সমীকরণ ও বিচিত্র। আর এ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পার্থক্য কত বেশি। পু্ঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্পদের মেরুকরণে দৃশ্যপট ক্রমশ নাজুক হয়ে চলেছে। তাতেই যত সংঘাত, বৈষম্য।

তবে সেসব যা-ই হোক, আমি অবশ্য ভাবছি - সময়ের চাহিদার সাথে চলতে পারাটাই হলো বড় একটি ক্রেডিট। তার জন্য নিজ লক্ষ্য পানে ধেয়ে চলাতেই সুখ নিহিত আছে। অর্থ যদিও পুরো পৃথিবীতে সম্পদগুলোর হিসাব আর মূল্য মেপে চলে, তবুও অর্থ হারানো সময়কে তো আর ফিরিয়ে দিতে পারে না, পারে কি ?

ঝলমলে রূপালী আলো ফকফকে সবুজ মাঠে ঢলে পড়ছে আর তখনই রাস্তার ধারে দেখতে পেলাম, তা হাসপাতাল থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটি প্রৌঢ়ত্বে উপনীত ব্যাক্তি অফিস শেষে রাস্তার একপাশে থাকা মাঠের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেখানে ছেলেরা ফুটবল নিয়ে খেলছে, কৈশোরের হৈ-হুল্লোড়ে ব্যস্ত হয়ে।

ব্যক্তিটির চাহনিতে কিছুটা স্মৃতিকাতরতার বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে, হয়তো তিনি ভাবছেন দীর্ঘ এক ক্লান্ত পরিশ্রান্ত একঘেয়ে কিছু কর্মঘণ্টার শেষে এসে - স্কুল কিংবা কলেজের পাঠ চুকিয়ে এসে বিকেলের সময়ে তারা ফুটবল হাতে নেমে পড়েছে। কয়েক যুগ সময় আগে তার জীবনও তো এমনই ছিল।

Src

ছিল না কোন ব্যস্ততা, দুশ্চিন্তা, সাংসারিক পারিবারিক ঝামেলা আর কিছু উটকো একঘেয়ে জীবনের কালো দিক। তার হয়তো সম্পদ আছে ঢের, হয়তো বিশাল বাড়ি, একটি মার্সিডিজ গাড়ি, বিস্তৃত বন্ধুমহল ও শুভাকাঙ্ক্ষী ; কিন্তু নেই মুক্ত জীবন যখন বাউন্ডুলে ঘুড়ির মতো যখন তখন যার তার আকাশে উড়ে উড়ে প্রিয় প্রতিবেশীনীর ছাদে এসে পড়া। সেসব এই চালসের বেশি বয়সে এসে ভাবা যায় না !

সময় সব বদলে দেয়, দিয়ে এসেছে চিরকাল।

সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে আমারও কিছুটা জীবনের এ দিকটা নিয়ে ভাবনা চিন্তার উদয় হলো। যৌবনের মাঝামাঝি এসে এখন কৈশোরের বা নবযৌবনের প্রান্তে যাওয়ার উপায় নেই, তাছাড়া সে দিনগুলোও ফিরে আসবে না। কিন্তু ফুটবল হাতে এখনো তো মাঠে নেমে যেতে পারি, বৃষ্টিতে ভিজে সারা বেলা হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠতে পারি। সময়ের রঙ তো এখনো বাকি !

কিছু সময়ে অর্থের চেয়ে জীবনের সময়টাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। অর্থ বা টাকা নয়, ক্ষমতা প্রতিপত্তি নয়। শুধু কিছু বছররে দিনগুলোতে স্থির না থাকার আক্ষেপ। সময়ের সাথে তা চওড়া হয়ে যায়, সাথে স্মৃতিকাতর করে দিয়ে যায় অনেককে। এমনি এক নিরালা বিকেলের মতো যখন সূর্য ঢলে ঢলে পড়তে চায়, ক্রমশ স্তিমিত হয়ে আসে।

সমাপ্ত ।