আজ ও তোমার অপেক্ষায়
বসন্তকালের এই মাস টা যেন অন্য মাস গুলোর থেকে একেবারে অন্যরকম।বসন্ত কালের দখিনা হাওয়া গাছে গাছে ফুল-ফল আর কোকিলের ডাকে মনটা একেবারে মুগ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আমার মনে তেমন কোনো আলাদা অনুভূতি কাজই করে না, কারণ আমি তো ভালোবাসা কি জিনিস সেটাই বুঝি না। মনে ভালোবাসা থাকলে তো সব কিছুকে আপন করে নেওয়া যায়। কিন্তু আমি তো কাউকে আপন করতে পারিনা। সারাটা দিন যেন আমার একেবারে অসহ্যকর মনে হয়। কোনোকিছুই যেন ভালো লাগে না। এমনকি কোকিলের এই মিষ্টি সুরে গানও আমার বিরক্তিকর মনে হয়। আমার চারপাশের লোকজন সারাদিন কত আনন্দ ফুর্তি করে, কিন্তু আমি খাঁচায় আটকে থাকা একটি পাখির মত সারাদিন ঘরের কোনে বসে থাকি।
আমি মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি যে আমি কেন এরকম?কেন আমি অন্যদের মত হাসি খুশি থাকতে পারিনা? এই অসহ্যকর দিন নিয়ে চলতে লাগল আমার জীবন। কিন্তু হঠাৎ একদিন। অচেনা এক ব্যক্তি আমার কাছে এসে বলে তুমি কি আমার বন্ধু হবে? আমিও ভাবলাম এই অসহ্য কর জীবনটা আমার আর ভাল লাগছে না। আমিও এবার নিজেকে একটু অন্যভাবে পরিবর্তন করতে চাই। আমিও অন্যদের মত হাসিখুশি থাকতে চাই। তাই অচেনা লোকটির পরিচয় না যেনেই বন্ধুত্বের প্রস্তাব গ্রহণ করে ফেলি। এখন সে শুধু আমাকে হাসায়, অনেক ভালো ভালো কথা বলে। আর আমার অনেক অনেক প্রশংসা করে। অন্যের মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে বেশ ভালই লাগে।
এখন আমি একেবারে বদলে গেছি। আমার আর একা একা থাকতে ভালো লাগে না। সারাক্ষণ শুধু হাসতে ইচ্ছে করে, খেলতে ইচ্ছে করে। মানুষ আর মিষ্টি কণ্ঠে গান গাওয়া পাখি গুলো সহ সবাই যেন আমার অনেক আপন ও অনেক কাছের হয়ে গেছে। এভাবেই দেখতে দেখতে পুরো একটি বছর কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। যে আমাকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিয়েছিল আমি তাকেই একটু একটু করে ভালোবাসতে শুরু করি। আমি এখন চিনেছি ভালোবাসা কাকে বলে?ভালোবাসা কি জিনিস? দেখতে দেখতে আরও দুবছর পার হয়ে গেল। কিন্তু একদিন সে আমার বাসায় আসে , কফি খেতে খেতে কথা বলতে বলতে হটাৎ তার মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কথা শুনে সে যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলতে লাগলো আমাকে এখনই যেতে হবে একথা বলেই সে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে।
আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। যাইহোক আমিও এই বিষয়টা নিয়ে আর মাথা ঘামাইনি। ভেবে ছিলাম হয়তো জরুরী কোন কাজে বেরিয়েছে। হয়তো কাজ শেষে আমার কাছে ফিরে আসবে। এখন আমি শুধু তার এবং তার ফোনের অপেক্ষায় , সে কখন আমাকে ফোন দিবে আর কখন তার সাথে আমার কথা হবে। এই ভেবে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে পুরো দু'ঘণ্টা পার হয়ে গেল। কিন্তু তার কোন ফোন বা মেসেজ আমার ফোনে আসে না। এভাবে দেখতে দেখতে দিন থেকে সপ্তাহ "সপ্তাহ থেকে মাস "মাস থেকে বছর কেটে গেল কিন্তু এখনও তার কোন খবর আমার কাছে নেই।
কে ছিল সে, কেনই বা আমার জীবনে এসেছিল? আর কেনই বা আমার জীবনে এসে আবার চলে গেল?ঐদিন সে কার সাথে কথা বলেছিল আর কি বলেছিলো যার কারণে তার এভাবে চলে যেতে হলো ? আর কেনই বা আজ পর্যন্ত একটা ফোন বা খবর নেয়ার ও প্রয়োজন মনে করলো না ? এ প্রশ্ন গুলো নিয়ে আমি কাটিয়ে দিয়েছি পনেরো বছর। কিন্তু আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না "যে' সে কি সত্যি আমার জীবনে এসেছিল নাকি এটা শুধুই একটা স্বপ্ন ছিল। যাই হোক,, সে যেই ছিল সে আমাকে চিনিয়ে গেছে ভালোবাসা কাকে বলে। সে আমাকে হাসতে শিখিয়েছে। ভালো থাকতে শিখিয়েছে, জীবনের মানে বুঝিয়েছে। এখন আমি তার দেওয়া এই ভালোবাসা নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই। আর সে!! শুধু এক রঙ্গিন স্বপ্ন হয়েই বেঁচে থাকবে আমার জীবনে। আর আমি ও তার অপেক্ষায় কাটিয়ে দেব বাকিটা জীবন।
সমাপ্ত
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
_
আপু আপনার লেখাগুলো পড়তে পড়তে কখন যে অন্য এক জগতের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম বুঝতেই পারেনি। হয়তো এভাবেই কিছু কিছু মানুষ জীবনে আসে আবার হঠাৎ করেই হারিয়ে যায়। নতুন করে হাসতে শেখায় কিংবা ভালবাসতে শেখায়। এরপর আবারো হঠাৎ করে জীবন থেকে বিলীন হয়ে যায়। তবুও যেন আমরা তারই প্রতীক্ষায় বসে থাকি। কিংবা প্রতীক্ষার প্রহর গুনি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মনের মধ্যে একটা না একটা কষ্ট রয়েই যায়। সে কে ছিল? কেন ই বা আর এলো না?? কি এক অতৃপ্ত মন। যে মানুষটির কোন অস্তিত্বই নেই তার জন্য এতটা বছর পার করে দিল। 😔
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আজকের গল্পটি খুবই সুন্দর ছিল আপু। সে অচেনা লোকটি ভালোবাসা শিখিয়ে গেলেও তার পরিচয় না জানতে পাওয়ার কষ্টটা সারা জীবন থেকে যাবে। প্রশ্নটা সারা জীবন থেকেই যাবে, সে কে? আর কেনই বা এসেছিলো জীবনে?
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit