গ্রাম্য অতিথির ফটোগ্রাফি।

in hive-129948 •  last year 



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ মঙ্গলবার। ১৬ ই মে, ২০২৩ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি।

IMG_20230515_091401_758.jpg



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, গ্রাম্য অতিথি হয়ে কয়েক বছর পর পর বৈশাখ মাসের শেষে অথবা জৈষ্ঠ মাসের প্রথমে হনুমান আমাদের গ্রামে আসে। অন্যান্য গ্রামের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, হনুমান গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলে ছোট বড় অনেক মানুষ হনুমানকে তেড়ে গ্রাম ছাড়া করে দেয়। কিন্তু আমাদের গ্রামের ক্ষেত্রে কখনোই এমনটা কেউ করে না। আমাদের গ্রাম্য অতিথি হয়ে আসা হনুমান নিশ্চিন্তে আমাদের গ্রামের প্রধান রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিল। এমনকি রাস্তা ঠিক মাঝখানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। হনুমান একটা বন্যপ্রাণী। এই প্রাণীকে দেখার জন্য অনেকেই টিকিট ক্রয় করে চিড়িয়াখানায় যায়। কিন্তু আমাদের গ্রামের প্রধান রাস্তা দিয়ে একটা জ্যান্ত হনুমান ঘুরে বেড়াচ্ছিল কিন্তু দেখার কেউ নেই।

IMG_20230515_091246_912.jpg



হনুমান অন্যান্য প্রাণীর থেকে আলাদা হলেও এদের বুদ্ধিটা প্রায় মানুষের মতই। হনুমান খুব সহজেই বুঝতে পারে যে, কোন এলাকাটা তার জন্য নিরাপদ। আসলে হনুমানের উপর যেখানে অত্যাচার হয় সেই এলাকাতে হনুমান থাকতে চায় না। আমাদের গ্রামে হনুমানটি পুরো গ্রাম্য একটি গৃহপালিত প্রাণীর মতো হেঁটে বেড়াচ্ছিল। হনুমানের আশপাশ দিয়ে কয়েকটা ভ্যান গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল চলে যাচ্ছিল।কিন্তু হনুমানের মধ্যে কোন ধরনের ভয়ের প্রকাশ পাচ্ছিল না। এরকম মাঝেমধ্যে আমাদের গ্রামে হনুমান এসে ঘুরে বেড়ায়। শেষবার হনুমান এসেছিল ২০১৮ সালের জৈষ্ঠ মাসে। এবারও সেই একই সময়ে এসেছে কিন্তু দীর্ঘ বেশ কয়েকটি বছর পরে। শোনা যায় যে, আম ফলটি হনুমানের খুবই প্রিয় একটি খাবার। তাই আম ফল খাওয়ার জন্যই নাকি হনুমানরা জঙ্গল থেকে বিভিন্ন গ্রামের দিকে বেরিয়ে পড়ে।

IMG_20230515_091252_030.jpg



সকাল বেলায় আমি আমার বিলের পুকুরে মাছের খাবার দিয়ে আমার বাড়ির দিকে আসছিলাম। মাঠ থেকে রাস্তায় উঠতে দেখতে পেলাম হনুমানটি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তাই একটু তড়িঘড়ি করে বাড়িতে চলে আসলাম। তারপর স্মার্টফোনটি হাতে নিয়ে হনুমানের ফটোগ্রাফি করার জন্য দ্রুত রাস্তায় চলে আসলাম। রাস্তায় এসে দেখলাম হনুমানটি রাস্তার ঠিক মাঝখানে বসে আছে। প্রথমে হনুমানের ফটোগ্রাফি করার সাহস হচ্ছিল না আমার। কিন্তু হনুমানের ভাবভঙ্গিটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছিল। তাই বুকে সাহস নিয়ে হনুমানের একটু সামনে চলে গেলাম। তারপর সামনে থেকে হনুমানের বেশ কয়েকটি ফটোগ্রাফি করে ফেললাম। আমি হনুমানের এতটাই সামনে চলে গেলাম যে, হনুমানকে দেখে আমার ভয় করছে। কিন্তু আমাকে দেখে হনুমানের মধ্যে কোন ভয়ের প্রকাশই পাচ্ছে না।

IMG_20230515_091254_914.jpg

IMG_20230515_091255_657.jpg



হনুমানকে ফটোগ্রাফি করার সময়, হনুমানটি আমার দিকে কেবল কয়েক পা ফেলেছি। আমি ভয়তে সঙ্গে সঙ্গে লুঙ্গি ধরে এমন দৌড় দিয়েছি, মনে হচ্ছিল হয়তো হনুমানটি আমার দিকে তেড়ে আসছে। কিন্তু একটু দূরে গিয়ে পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, হনুমানটি ভদ্র মানুষের মতো আস্তে আস্তে রাস্তার ঠিক মাঝখান দিয়ে হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছে। তারপর হনুমানটি কিছুটা সামনের দিকে এসে পুনরায় রাস্তার মাঝখানে বসলো। আমি তখন পুনরায় বুকে সাহস নিয়ে হনুমানের পেছন দিক থেকে কয়েকটা ফটোগ্রাফি করতে লাগলাম।

IMG_20230515_091344_788.jpg

IMG_20230515_091342_833.jpg

IMG_20230515_091343_954.jpg

IMG_20230515_091337_841.jpg



হনুমানটির পেছন দিক থেকে ফটোগ্রাফি করার পরে আমার সাহসের মাত্রাটা আরো একটু বৃদ্ধি পেল। তখন বুকে আরো সাহস নিয়ে হনুমানের প্রায় কাছাকাছি চলে গেলাম। হনুমানের কাছাকাছি গিয়ে আরও বেশ কয়েকটি ফটোগ্রাফি করলাম। হনুমানের এত কাছাকাছি যাওয়ার পরও হনুমানটি কোন ভয় পাচ্ছিল না। তখন আমার কাছে মনে হলো, হয়তো হনুমানটি কোন এক সময় কোন মানুষের পোষা প্রাণী হিসেবে থাকতো। যার কারণে মানুষ দেখে হনুমানটি একেবারেই ভয় পাচ্ছে না।

IMG_20230515_091425_858.jpg

IMG_20230515_091431_404.jpg

IMG_20230515_091418_770.jpg

IMG_20230515_091421_376.jpg

IMG_20230515_091404_999.jpg

IMG_20230515_091435_194.jpg

IMG_20230515_091401_758.jpg



হনুমানটির আচরণ এবং চলাফেরা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছিল। আমি ইচ্ছা করলে হনুমানের আরো কাছে গিয়ে একটি সেলফি তুলতে পারতাম। কিন্তু একেবারেই সাহস পেলাম না। কেননা হনুমান হলো একটি বন্য প্রাণী। যেকোনো সময় মানুষের সাথে তারা খারাপ আচরণ করতে পারে। তাই নিজেকে নিরাপদ জায়গায় রেখে হনুমানের ফটোগ্রাফি গুলো করেছিলাম। রাস্তায় কিছুটা সময় বসে থাকার পরে হনুমানটি আমাদের গ্রামের একটি বড় আম গাছে এক লাফ দিয়ে উঠে পড়লো। বড় আম গাছটি ছিল একটি জঙ্গলের মধ্যে। তাই সেখানে আর যাওয়ার প্রয়োজন মনে করলাম না আমি। এ ধরনের হনুমান প্রাণীগুলো অনেক সময় মানুষের উপর হিংস্র হয়ে ওঠে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রাণীগুলোকে গ্রামে ঢুকতে দেয়া হয় না কিংবা গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের গ্রাম এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। আমাদের গ্রামে এমনিতেই হনুমান আসে। আবার এমনিতেই কোথায় যেন চলে যায়, পরে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।



Camera 📸 Smartphone.

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমার আজকের হনুমানের সমস্ত ফটোগ্রাফি গুলো আমার নিজ গ্রাম থেকে তোলা হয়েছিল। তাই ফটোগ্রাফির লোকেশন দেখতে👉এখানে ক্লিক করুন



পোস্ট বিবরণ



শ্রেণীফটোগ্রাফি
ক্যামেরাস্মার্টফোন
পোস্ট তৈরি#bidyut01
কান্ট্রিবাংলাদেশ


সুপ্রিয় বন্ধুগণআমি আশা করি, আমার আজকের ফটোগ্রাফি পোস্টটি আপনাদের নিকট অনেক অনেক ভালো লেগেছে। আবারো আগামীকাল নতুন একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের নিকট হাজির হব। ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

দাদা গ্রামের এই নতুন অতিথিকে একটু খাওয়া-দাওয়া দিতে পারতেন। বাড়ি দেকে একটু অতিথি আপ্যায়ন করতে পারতেন কিন্তু। কিন্তু সাহস করে সামনে যাবেন না। তাহলে কিন্তু তারা করবে। যাইহোক আজকে আপনার পোস্টটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আর উপরের কমেন্ট একটু মজা করলাম।

ভাইয়া খুবই সাহস করে ফটোগ্রাফি করেছি। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার মতো সাহস আর হয়নি।

ভাইয়া গ্রাম্য অতিথিকে তাহলে খুব ভালো ভাবেই স্বাগত জানানো হয়েছে। আপনার প্রতিটা ফটোগ্রাফি অসাধারণ হয়েছে। আপনি কাছ থেকে কিভাবে এত সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছেন। হনুমান আমি চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখে ছিলাম। যাই হোক আপনার এত সুন্দর ফটোগ্রাফি দেখে ভালো লাগলো।

আমার পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

গ্রামের নতুন অতিথি বলে কথা ভালো রেস্টুরেন্টে নিয়ে ভালো আপ্যায়ন করে দিয়েন।
বেচারা এমনভাবে মাছ রাস্তায় বসে আছে মনে হচ্ছে সে গ্রামের রাজা। রাজ্য পরিচালনা করবে সভা মিটিংয়ে ব্যস্ত।।
যাহোক দৌড়ানি তো একটা খেয়েছেন লুঙ্গি ধরে ভো দোড় দিয়েছেন।

জি ভাই ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে একটু দৌড়ানি দিতে হয়েছিল।

হনুমান তো দেশ ভদ্র দেখা যাচ্ছে দেখে তো অনেক ভালো মনে হচ্ছে। যেহেতু বছরে ১ বার আসে আম খাওয়ার জন্য তাহলে কয়েকটা আম নিয়ে গেলে পারতেন আপনি। বন্য পশু প্রাণী গুলো মানুষের এমনিতে ক্ষতি করে না যারা বুঝে থাকেন তবে মানুষ যদি ডিস্টার্ব করে তাহলে তো আক্রমণ করবে সেটা স্বাভাবিক। আপনি তো বেশ ফটোগ্রাফি নিলেন হনুমান বেচারার তাহলে তো আপনাকে আম খেতেই দিতে হবে।

সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে হনুমান ও ভদ্র হয়ে গেছে।

ভাই আপনাদের এলাকায় গ্রাম্য অতিথি হিসেবে হনুমানকে দেখছি সাদরে গ্রহণ করেছেন। যেহেতু আপনারা এলাকাবাসী কেউই এই হনুমানকে তাড়িয়ে দেননি, এতে বোঝাই যাচ্ছে যে গ্রাম্য অতিথি আপনাদের কাছে বেশ আদরেই রয়েছে। আর এই গ্রাম্য অতিথি আপনাদের এলাকায় বছরে একবার এসে দেখা দিয়ে যায়। ভাই, আপনাদের গ্রাম্য অতিথি হনুমানের অনেকগুলো ফটোগ্রাফি করেছেন দেখে খুবই ভালই লাগলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে হনুমানের সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করার জন্য।

চমৎকার মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার সাহস দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ঐদিন আমিও হনুমান দেখেছিলাম কিন্তু আপনার মত সাহস করে ফটোগ্রাফি করার সাহস পাইনি। আসলেই আমাদের গ্রামটা অন্য সকল গ্রামের থেকে ব্যতিক্রম।

খুব সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।