আমার ছাত্র জীবনের মধুর স্মৃতি // পর্ব- ০২

in hive-129948 •  7 months ago 



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ শনিবার। ০৪ ইং মে, ২০২৪ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।


butterflies-1127666_1280.jpg

Source



বাসের মধ্যে যখন অধিকাংশ আমাদের বড় আপুরা নাচ ও গানে ব্যস্ত তখন বাসের ড্রাইভার কিছুটা বিরক্ত বোধ করলো। বাসের ড্রাইভার বাস গাড়ি কিছুটা ধীরে চালাতে লাগলো এবং সকলকে সহনীয় পর্যায়ে থেকে নাচ গান করতে বললো। এদিকে বাসের ড্রাইভার এর কথায় কেউ কর্ণপাত না করে সকলেই ব্যস্ত তুমুল নাচ ও গানে। আমাদের ওই সময় এন্ড্রয়েড ফোনের ব্যবহার আমাদের মধ্যে ছিল না। গান শোনার জন্য আমরা ছোট মোবাইল ফোন এবং ক্যাসেট ব্যবহার করতাম। একই সাথে বাসের ছাদের উপরে ব্যবহার করতাম বড় ঢাল বিশিষ্ট মাইক। যাহোক, বড় আপুদের সাথে নাচে ও গানে একেবারেই মশগুল হয়ে গেল আমার বন্ধু রাশিদুল। ঠিক এমন মুহূর্তে বাস ড্রাইভার বাস গাড়ি রাস্তার একটি পাশে রেখে বাস থামিয়ে ফেললো।

বাস থামানোর সাথে সাথে কয়েক মিনিটের জন্য সকল প্রকারের গান-বাজনা ও নাচ থেমে গেল। তারপর ডাইভারকে জিজ্ঞেস করলে ডাইভার উত্তর দিল, এতটা গান-বাজনা ও নাচের মধ্যে তার বাস পরিচালনা করতে বেশ ঝামেলা হচ্ছে। বাস ড্রাইভার আরো বললো, হয় গান-বাজনা ও নাচ থামাতে হবে নয়তো বাস চালাতে পারবো না। এদিকে আমাদের যেতে হবে খুলনা বাগেরহাট। আমাদের পিকনিক স্পটটি বেশ দূরের পথ। কয়েকজন শিক্ষক আমাদের সকলকে চুপ থাকার জন্য নির্দেশ দিলেন এবং শুধুমাত্র গান বাজানোর নির্দেশ দিলেন। শিক্ষকের নির্দেশ শুনে সকল বড় আপুরা শিক্ষককে বললো, আজকে আমরা আনন্দ করবো নাতো-- আবার কবে আনন্দ করবো। শিক্ষা সফরের যাত্রাপথে বড় আপুরা-শিক্ষক ও ড্রাইভারের একটা ঝামেলা তৈরি হয়ে গেল। এদিকে আমি সহ আমার কয়েকজন বন্ধু শুধুমাত্র তাদের কথা শুনছি।

কারণ আমরা তো একেবারেই ছোট ছিলাম অর্থাৎ ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। তাই আমাদের কথা বলার মতো কোন সাহস ছিল না। বাস থামিয়ে রাখার আর দশ মিনিট পরে সমাধান এলো। আমাদের একজন সিনিয়র শিক্ষক ডাইভারকে ডেকে বললেন, আপনি দয়া করে বাস আপনার আয়ত্তের মধ্যে রেখে ধীর গতিতে পরিচালনা করেন, আর ছাত্রীরা যতটুকু পারে ওরা নাচ গান করুক। কারণ একটু পরেই ওরা সকলেই ক্লান্ত হয়ে যাবে। তারপর সিনিয়র শিক্ষকের কথা শুনে বাস ড্রাইভার স্বাভাবিক আচরণ করলেন এবং বাস পরিচালনা শুরু করলেন। তারপর আবার শুরু হলো বাসের মধ্যে তুমুল নাচ গান। হঠাৎ করে একজন বড় আপু আমাদের এসে বললো, তোমাদের মধ্যে গান আছে এমন মোবাইল ফোন আছে? সঙ্গে সঙ্গে উত্তরে আমার বন্ধু রাশিদুল হ্যাঁ বলে দিল।

ওই সময় রাশিদুলের কাছে একটি মোবাইল ফোন ছিল। মোবাইল ফোনটি অবশ্য তার পরিবারের, কিন্তু শিক্ষা সফরে যাওয়া হচ্ছে তাই শখ করে রাশিদুল সেদিন মোবাইল ফোনটি কাছে রেখেছিল। যাহোক, বড় আপুদের কথা মতো রাশিদুল তার মোবাইল ফোন দিয়ে গান বাজাতে চলে গেল। রাশিদুল তার মোবাইল ফোন থেকে প্রথম গানটি দিল শিল্পী মমতাজের একটি বিখ্যাত গান, সেটা হল, "বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া"। যাহোক এই গানটি শুরু হওয়ার সাথে সাথে সকল বড় আপুরা হাসা-হাসিতে মেতে উঠলো। এরপর গানটি আর বেশিক্ষণ বাজালো না। একই সাথে আমাদের বড় আপুদের নাচের মাত্রাটা বেশ কমে গেল। একটু পরে আমরা খেয়াল করলাম যে, বড় আপুরা নিজ নিজ সিটে বসে হাত পা নাড়িয়ে নাচের ভঙ্গি করছে।

তারপর সকল বড় আপুরা নাচ বাদ দিয়ে নিজ নিজ ব্যাগ থেকে পানি বের করে পানি পান করলো। তারপর বড় আপুরা সুমধুর কন্ঠে সুন্দর সুন্দর প্রেমের গান গাইতে লাগলো। ওই সময় বড় আপুদের মধ্যে একজনের নাম ছিল জোসনা। জোসনা আপুর গানের কন্ঠ ছিল অসাধারণ। আমাদের বিদ্যালয়ে যখন সাপ্তাহিক সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান হতো তখন আমাদের প্রধান আকর্ষণ থাকতো জোসনা আপু। জোসনা আপুর গান মানেই আমাদের হল রুমের সকল ছাত্র-ছাত্রীর মুখ বন্ধ। আমরা সকলেই নীরব হয়ে জোসনা আপুর গান প্রাণ ভরে শুনতাম। যাহোক শিক্ষা সফরে যাওয়ার সময় এতোটা কাছে থেকে যে জোসনা আপুর গান শুনতে পারবো এমনটা কখনোই চিন্তা করেছিলাম না। জোসনা আপু যখন সুমধুর কন্ঠে,"বকুলের মালা শুকাবে রেখে দেবো তার সুরভী" গানটি গাইতে লাগলো তখন আমরা সকলেই অত্যন্ত নীরব হয়ে জোসনা আপুর গান শুনতে লাগলাম। এমনকি সুন্দর গান শুনে বাসের ড্রাইভার পর্যন্ত তার পিছনের দিকে কয়েকবার তাকালো।

প্রথম পর্বটি পড়ার লিংক





আমার পরিচয়।

IMG_20220709_132030_108.jpg



আমার নাম মোহাঃ নাজিবুল ইসলাম (বিদ্যুৎ)। আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমি অতিশয় ক্ষুদ্র জ্ঞানের একজন মানুষ। আমি মেহেরপুর জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে বসবাস করি। আমি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে আমার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরু হয়। আমার স্টিমিট আইডি নাম (#bidyut01). প্রথম প্রথম স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ কিছুই পারতাম না। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সম্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন এবং মডারেটরদের সার্বিক সহযোগিতায় খুব সহজেই স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ গুলো সম্পর্কে জানতে পারি ও শিখতে পারি। এরপর থেকে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে আমার এলাকাতে আমি ব্যাপকভাবে প্রচার করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আমার এলাকার অনেকেই এখন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সদস্য। যাহোক, এখন আমার মাতৃভাষায় লেখালেখি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। যদিও আমার প্রধান পেশা শিক্ষকতা এবং পাশাপাশি মাছের চাষাবাদ করা। আমার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আমার পরিবারের প্রধান হলো আমার বাবা ও মা। আমার পছন্দের কাজ সমূহ হলো-ছবি অঙ্কন করা, যেকোনো জিনিসের অরিগ্যামি তৈরি করা, বিভিন্ন প্রকারের রেসিপি তৈরি করা, কবিতা লেখা, ভ্রমণ করা ও ফটোগ্রাফি করা। আর একটু সময় সুযোগ পেলেই পুরনো দিনের মুভি গুলো দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি।

১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।



Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

শিক্ষা সফর মানে আনন্দের জায়গা এটা স্বাভাবিক। তবে এমন আনন্দ করা যাবে না যে বাস চালানো বন্ধ হয়ে যায়। আপনার বড় আপুরা হয়তো একটু বেশিই আনন্দ করেছে। আসলে অতিরিক্ত কিছুই ভালো না।আর জোসনা আপুর কণ্ঠ ভালো শোনে অনেক ভালো লাগলো।তারপর বাস চালক সবাই গান শোনে পিঁছে তাকালো।দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়।

ভাইয়া আপনাদের শিক্ষা সফরে যাওয়ার খুব সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করেছেন। যদিও আমি কখনও শিক্ষা সফরে যেতে পারিনি কিন্তু অন্যদের কাছ থেকে এই গল্প শুনতে ভালো লাগে। তবে আমার মনে হয় আনন্দ করা ভালো কিন্তু অতিরিক্ত করা ভালো নয়। বাসের মধ্যে যদি যাত্রীরা এভাবে বিভিন্ন আওয়াজ করতে থাকে তখন সত্যিই ড্রাইভার তার মন স্থির রাখতে পারে না। এতে করে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। যাই হোক পরবর্তীতে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে জেনে ভালো লাগলো। আপনাদের সিনিয়র জোসনা আপু গান এতটা ভালো যে ড্রাইভার ও বারবার পিছনে ফিরে দেখছে। যাই হোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।