হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।
আজ মঙ্গলবার । ০৪ ই জুলাই, ২০২৩ ইং।
আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমাদের গ্রাম অঞ্চলে মাছ চাষ দিন দিন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের এলাকার প্রায় প্রতিটি মানুষই তাদের অন্যতম পেশা হিসেবে মাছ চাষকে বেছে নিয়েছে। যাহোক, আমিও মোটামুটি ভাবে মাছের চাষাবাদ করি। আমি মোট ছয়টি পুকুরে মাছের চাষ করি। আর মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে আমি সব সময় পুকুর প্রস্তুতিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। যেহেতু পুকুরের পানির মধ্যে আমাকে মাছ চাষ করতে হবে, তাই মাছের বাস স্থানটা যথাপযুক্ত ভাবে তৈরি করে দেওয়াটাই আমার প্রধান কাজ। সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমার পুকুরে মাছ চাষ শুরু করার পূর্বে আমি যেভাবে আমার পুকুর গুলো প্রস্তুত করেছি তার সংক্ষিপ্ত কিছু বিবরণী আপনাদের নিকট শেয়ার করেছি।
মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রথমে পুকুরে বিশুদ্ধ পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার পুকুরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য আমার পুকুর পাড়ে রয়েছে স্যালোমেশিন বসানো। বছরের যে কোন শুষ্ক মৌসুমে আমি খুব সহজেই আমার পুকুরে পানি সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। তাই মাছ চাষের ক্ষেত্রে পুকুর প্রস্তুতি করার জন্য প্রথমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
পুকুরে বিশুদ্ধ পানি দেওয়ার পাশাপাশি পুকুরপাড়ের জঙ্গল পরিষ্কার করে রাখতে হবে। বিশেষ করে পুকুর পাড়ের একেবারে ধার দিয়ে অনেক সময় দেখা যায় যে বিভিন্ন ধরনের জঙ্গলের সৃষ্টি হয়। পুকুরপাড়ে এ ধরনের জঙ্গল থাকলে পুকুরে বিভিন্ন ধরনের সাপের উপদ্রব ঘটে। যেটা মাছ চাষের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়। তাই পুকুরে মাছ দেওয়ার পূর্বে পুকুর পাড়ের চারিপাশের জায়গা খুবই সুন্দরভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে। একই সাথে পুকুরের ভিতরে যদি কোন ধরনের আগাছার জন্ম হয় তাহলে সেটাকেও নির্মূল করতে হবে। আবার পুকুরের মধ্যে যদি কোন ধরনের রাক্ষসে মাছ থাকে তাহলে সেই রাক্ষসে মাছকেও নির্মূল করতে হবে। যদিও আমার পুকুরে কোন ধরনের রাক্ষসে মাছ নেই। যাহোক, এক কথায় মাছ চাষের পূর্বে পুকুর পাড়ের অংশ এবং পুকুরের ভিতরে অংশ সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
পুকুর পাড় পরিষ্কার করার সময় কিছু আগাছা পুকুরের মধ্যে পড়ে যায়। পুকুরের মধ্যে পড়ে যাওয়া আগাছাগুলো পরবর্তীতে অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে। কেননা এ ধরনের আগাছা গুলো যদি পানির ভিতরে থাকে তাহলে এগুলো পচে পানিতে গ্যাসের সৃষ্টি করে, যেটা মাছ চাষের ক্ষেত্রে বিরাট বাধা। তাই পুকুর পাড় পরিষ্কার করার সময়ও আমি সতর্কতার সাথে আমার পুকুরপাড় সুন্দরভাবে পরিষ্কার করেছিলাম। আসলে পুকুরের ভিতরের অংশ এবং পুকুরপাড় যদি পরিষ্কার থাকে তাহলে পুকুরের সৌন্দর্য বেশ বৃদ্ধি পায়। মাছের খাবার প্রয়োগ করার সময় পুকুরটি দেখতেও বেশ সুন্দর লাগে।
পুকুর সুন্দরভাবে পরিষ্কার করার পর আমি পুকুরে পরিমাণ মতো চুন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। এক্ষেত্রে মাছ চাষের জন্য যে চুন ব্যবহার করতে হয় সেই চুনগুলো ব্যবহার করতে হবে। মাছ চাষের ক্ষেত্রে পুকুরে মাছের পোনা দেওয়ার পূর্বে চুন দিলে পুকুরে পরিবেশ সার্বিকভাবে অনুকূলে চলে আসে। বিশেষ করে পুকুরে চুন দেওয়ার ফলে পুকুরের ভিতরে অম্লত্বের পরিমাণটা নির্ধারিত পর্যায়ে থাকে এবং পুকুরের তলদেশ মাছের উপযুক্ত আবাসস্থলে পরিণত হয়। তাই আমি আমার পুকুরে পরিমাণ মতো চুন দিয়েছিলাম। এখানে পরিমাণ বলতে আমি প্রতি শতকে ৪০০ গ্রাম করে চুন প্রয়োগ করেছিলাম। আমার পুকুরটির আয়তন ৩৫ শতক। তাই আমি পুকুরে চুন দিয়েছিলাম ১৪ কেজি।
মাছ চাষের ক্ষেত্রে পুকুর প্রস্তুতির জন্য পুকুরে চুন দেয়ার বিশেষ নিয়ম রয়েছে। আমি নিয়ম অনুসারে পুকুরে চুন দিয়েছিলাম। আমি প্রথমে ১৪ কেজি চুন একটি বস্তায় রেখেছিলাম। তারপর বস্তায় রাখা চুন গুলো পুকুরের পানির মধ্যে মোট ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখেছিলাম। যেহেতু চুনের ভিতরে পানি যাওয়ার সাথে সাথে চুলগুলো অত্যন্ত গরম হয়ে ওঠে। আর গরম চুন কখনোই পুকুরের ছিটানো উচিত নয়। পানিতে গলিয়ে নিয়ে চুন ঠাণ্ডা করে পুকুরে প্রয়োগ করতে হয়।
বস্তা ধরে চুনগুলো পুকুরে ভেজানোর পর সব চুলগুলো খুবই সুন্দরভাবে গলে গিয়েছিল। ২৪ ঘন্টা পর চুনগুলো ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। তারপর আমি বস্তার ভিতর থেকে একটি বড় হাড়ির মধ্যে চুল গুলো ঢেলে নিয়েছিলাম। যাতে চুলগুলো সুন্দরভাবে পুকুরে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়।
পুকুরের চারপাশে সমানভাবে চুলগুলো ছিটিয়ে দিয়েছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম যাতে পুকুরের সর্বস্তরের মাটিতে চুনগুলো পৌঁছায়। আসলে মাছ চাষ শুরু করার পূর্বে পুকুর যদি ভালোভাবে প্রস্তুত করে নেয়া যায় তাহলে মাছ চাষে দারুনভাবে সফল হওয়া সম্ভব হয়।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, মাছ চাষের ক্ষেত্রে যথার্থভাবে পরিশ্রম করতে পারলে মাছ চাষে লাভবান হওয়া সম্ভব। আর মাছ চাষে লাভবান হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো মাছ চাষ শুরু করার পূর্বে পুকুর ভালোভাবে প্রস্তুত করে নেওয়া। তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি মাছ চাষ শুরু করার পূর্বে আমার পুকুরটি যথার্থভাবে প্রস্তুত করে নিতে। সুপ্রিয় বন্ধুগণ আমি আশা করি, আমার পুকুর প্রস্তুতির প্রক্রিয়াটি আপনাদের কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আর বর্তমান সময়ে সকল মানুষের জন্য আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার অন্যতম হাতিয়ার হয়েছে মাছের চাষ। তাই আসুন আমরা সবাই মাছের চাষ করি এবং বেকারত্ব দূর করি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মাছ চাষ করার অন্যতম একটা শর্ত হচ্ছে পুকুর তৈরি করে নেওয়া। পুকুর থাকলেই যে সেখানে মাছ চাষ হয়ে যাবে সেটা কিন্তু ঠিক কথা নয় এর জন্য অবশ্যই আমাকে আগে সেটার প্রস্তুতি ঠিক করে নিতে হবে। আর যদি এটা ঠিক করে নেয়া সম্ভব হয় তাহলে মাছ চাষে লাভবান হওয়া সম্ভব।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit