আমার শৈশব জীবনে খালে ও বিলে মাছ ধরার স্মৃতিময় মুহূর্ত //পর্ব-০৩।

in hive-129948 •  8 months ago 



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ শনিবার। ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।


fisherman-4305368_1280.jpg

Source



শোল মাছটি দেখে প্রথমে আমরা প্রত্যেকে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু শোল মাছটি কে ধরবে? সেটা নিয়ে বেশ সংশয় তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কারণ আমাদের মধ্যে মাছ ধরায় একমাত্র দক্ষ ছিল আমার বন্ধু বকুল। আমরা সকলে বকুলকে শোল মাছটি ভালোভাবে ধরার জন্য আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু সে শোল মাছটি ধরার আগে বারবার আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল। এবং সে বলেছিল, যদি শোল মাছটি জোরে ঝাপ দেয় তাহলে তোমরা সবাই চেষ্টা করবে মাছটি ঠেকানোর। যাতে অন্য পানির স্থানে চলে যেতে না পারে। সত্যি বলতে, মোটা মাথা বিশিষ্ট শোল মাছটি দেখতেই ভয়ংকর লেগেছিল। আমাদের মতো ছোট মানুষ দ্বারা মোটা শোল মাছকে আটকানো সত্যিই অত্যন্ত কঠিন ছিল। তারপর আমার বন্ধু বকুল যখন শোল মাছটির মাথা দুই হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলো ঠিক তখনই শোল মাছটি পুনরায় পাশের কচুরিপানার মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দিল।

তখন শোল মাছটি ধরা আমাদের জন্য বেশ সহজ হয়ে গেল। আমার বন্ধু বকুল আস্তে আস্তে কচুরিপানার মধ্যে দুই হাত দিয়ে শোল মাছের মাথার অংশটি চেপে ধরলো। একই সাথে আমি শোল মাছের পেটের অংশ থেকে লেজের অংশ পর্যন্ত দুই হাত দিয়ে দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম। তারপর একটি শোল মাছকে দুইজন মিলে চার হাত দিয়ে ধরে আস্তে আস্তে উঁচু স্থানের দিকে যেতে লাগলাম। তারপর আমরা যখন উচু স্থানে পৌঁছে গেলাম ঠিক তখনই শোল মাছটি এতো জোরে নড়ে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দুই জনের হাত থেকে শোল মাছটি মাটিতে পড়ে গেল। সেদিন আমাদের কপালটা ভালো ছিল যে, শুকনো ও উচু স্থানে যাওয়ার পরে শোল মাছটি নড়ে উঠেছিল।

যদি উঁচু স্থানে আসার আগে শোল মাছটি নড়ে পানিতে পড়ে যেত তাহলে আমাদের দ্বারা আর সম্ভব হতো না শোল মাছটি আটকানো। যাহোক শোল মাছটি ভালোভাবে আটকাতে পেরে আমাদের অত্যন্ত ভালো লেগেছিল এবং অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করেছিলাম। জীবনে প্রথমবার বিলের মাঠে মাছ ধরতে এসে এতো বড় শোল মাছ ধরবো সেটা কখনোই চিন্তা করেছিলাম না। শোল মাছটি লম্বায় প্রায় এক ফুট হবে এবং ওজন এক কেজির উপরে হয়েছিল। যাহোক আমরা চার বন্ধু যেহেতু স্কুল থেকে সরাসরি বিলে মাছ ধরতে এসেছিলাম, তাই আমাদের সঙ্গে মাছ রাখার কোন জিনিসপত্র ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা একটু উঁচু স্থানের নরম মাটি গর্ত করে সেখানে মাছ রেখেছিলাম। কিন্তু শোল মাছটি ছিল অনেক বড়।

এবার শোল মাছটি নিরাপদ জায়গায় রাখার জন্য আমরা চার বন্ধু বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু নিরাপদ জায়গায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কারণ শোল মাছ যদি ঝাপ দেওয়া শুরু করে তাহলে তাকে আটকানো খুবই কঠিন। শেষ পর্যন্ত আমার এক বন্ধুর শরীরের জামা খুলে শোল মাছটি প্রথমে ভালো ভাবে জড়িয়ে নিয়েছিলাম। তারপর সেই বন্ধুর কাছে মাছটি রেখে তাকে উচু স্থানে বসিয়ে রেখেছিলাম। আমার সেই বন্ধুর প্রধান দায়িত্ব ছিল শুধুমাত্র শোল মাছটি ধরে রাখা। এরপর আমরা পুনরায় মাছ ধরতে চলে গেলাম। আমাদের ছেঁকে নেওয়া স্থানে গিয়ে দেখি চারিদিক থেকে পানি চুয়ে এসে বেশ পানি জমে গেছে। জমে থাকা পানিগুলো আমি ছেকতে শুরু করলাম, আর আমার বন্ধু বকুল সহ আরো একজন মাছ ধরা শুরু করলো।

কয়েক মিনিট মাছ ধরার পরে যখনই একটু বেশি করে কচুরিপানা তুলে ফেললাম ঠিক তখনই আমরা আরো একটি শোল মাছ দেখতে পেলাম। শোল মাছটি দেখে আমরা তো সকলেই বেশ চমকে উঠেছিলাম। শোল মাছটি যেখানে ছিল সেখানে কিছুটা পানিও ছিল এবং জায়গাটি তুলনামূলক নিচু ছিল। কচুরিপানা তুলে ফেলার সাথে সাথে শোল মাছটি তার জায়গায় থেকে বেশ নড়াচড়া করছিল। শোল মাছটি দেখে আমরা তিনজন পরিকল্পনা করতে লাগলাম যে, কিভাবে শোল মাছটিকে আটকাবো। হঠাৎ করে আমার মাথায় একটি উপস্থিত বুদ্ধি এসেছিল, আমার বন্ধু বকুলকে বললাম, আস্তে আস্তে শোল মাছের উপর কচুরিপানাগুলো দিয়ে ঢেকে দাও। এরপর আমার কথা মতো শোল মাছটি কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেয়া হলো। তারপর আমরা তিনজন তিন দিক থেকে দুই হাত দিয়ে শোল মাছটিকে যখনই আটকাতে গেলাম ঠিক তখনই শোল মাছের পাশ থেকে আমার বন্ধু বকুলের হাতে জিওল মাছে কাটা ঢুকিয়ে দিলো।


দ্বিতীয় পর্বটি পড়ার লিঙ্ক



আমার শৈশব জীবনে খালে ও বিলে মাছ ধরার স্মৃতিময় মুহূর্তের বাকি কথাগুলো চতুর্থ পর্বে শেয়ার করা হবে।


আমার পরিচয়।

IMG_20220709_132030_108.jpg



আমার নাম মোহাঃ নাজিবুল ইসলাম (বিদ্যুৎ)। আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমি অতিশয় ক্ষুদ্র জ্ঞানের একজন মানুষ। আমি মেহেরপুর জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে বসবাস করি। আমি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে আমার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরু হয়। আমার স্টিমিট আইডি নাম (#bidyut01). প্রথম প্রথম স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ কিছুই পারতাম না। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সম্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন এবং মডারেটরদের সার্বিক সহযোগিতায় খুব সহজেই স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ গুলো সম্পর্কে জানতে পারি ও শিখতে পারি। এরপর থেকে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে আমার এলাকাতে আমি ব্যাপকভাবে প্রচার করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আমার এলাকার অনেকেই এখন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সদস্য। যাহোক, এখন আমার মাতৃভাষায় লেখালেখি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। যদিও আমার প্রধান পেশা শিক্ষকতা এবং পাশাপাশি মাছের চাষাবাদ করা। আমার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আমার পরিবারের প্রধান হলো আমার বাবা ও মা। আমার পছন্দের কাজ সমূহ হলো-ছবি অঙ্কন করা, যেকোনো জিনিসের অরিগ্যামি তৈরি করা, বিভিন্ন প্রকারের রেসিপি তৈরি করা, কবিতা লেখা, ভ্রমণ করা ও ফটোগ্রাফি করা। আর একটু সময় সুযোগ পেলেই পুরনো দিনের মুভি গুলো দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি।

১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।



Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

শৈশবের সময়ের সুন্দর মাছ ধরার মুহূর্তগুলো আপনি আমাদের মাঝে ব্যক্ত করেছেন। খুবই ভালো লেগেছে সেই অতীতের স্মৃতিগুলো পুনরায় উপস্থাপন করতে দেখে। সত্যি কতই না মধুর ছিল আমাদের সেই দিনগুলি। খুবই ভালো লাগলো মাছ ধরার সেই সময় গুলো পুনরায় শেয়ার করতে দেখে।

অনেক সুন্দর অতীত কাহিনী জানতে পারলাম আপনার পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে। ছোটবেলায় দেখতাম অনেকে মাছ ধরতে যেত। আমার বড় ভাই ও মাছ ধরতে যেত এভাবে। আর তারা বাড়ি ফিরে এসে মাছ ধরার বিষয়ে গল্প করত। যাইহোক ভালো লাগলো কিন্তু গল্পটা পড়ে।

আসলে ছোট বেলার স্মৃতি গুলো মনে পড়লে ভীষণ ভালো লাগলো। আমরাও ছোট বেলায় এমন অনেক মাছ ধরতাম। আজকে আপনার পোস্ট পড়ে সেই দিন গুলোর কথা মনে পড়ে গেলো। যাই হোক ধন্যবাদ সুন্দর স্মৃতি গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

ছোটবেলার স্মৃতি আমাদের অনেক ভালো লাগে। সে ছোটবেলার স্মৃতি যখন মনে পড়ে তখন সে অনুভূতি একেবারে অন্যরকম থাকে। আজকে আপনি সেরকমই মাছ ধরার একটি অনুভূতি শেয়ার করেছেন যা দেখে খুবই ভালো লাগছে৷ আমরাও এভাবে ছোটবেলায় অনেক মাছ ধরতাম৷ আপনার এই পোস্টটি পড়ে সেই ছোটবেলার স্মৃতিতে ফিরে গেলাম৷