গল্প // রহিম আমার বন্ধু//পর্ব-০২।

in hive-129948 •  5 months ago 



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ বৃহস্পতিবার। ০৬ ই জুন, ২০২৪ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

boys-1283786_1280.jpg

Source



রাম ও রহিম একে অপরকে ছাড়া একেবারেই থাকতে পারে না। তারা দুজনে একসাথে মাঠে খেলা করতে যায়, আবার তারা দুজন একসাথে মাঠে ছাগল চরাতে যায়। শুধু তাই নয়, রাত্রে তারা দুজন একসাথে বসে বাংলা বর্ণমালা (অ, আ, ই, ঈ) মুখস্ত করে। আবার মাঝে মধ্যে রাম ও রহিম একত্রে বসে ছবি অংকন করে। কোন কোনদিন রাম রহিমদের বাড়িতে গিয়ে রাত্রে লেখাপড়া করে রহিমদের সাথে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যায়। আবার কোন কোন দিন রহিম রামদের বাড়িতে গিয়ে রামের সাথে খাওয়া-দাওয়া করে রাত্রে একই বিছানায় ঘুমায়। এভাবেই তাদের দিন কেটে যায়। যেদিন রামদের বাড়িতে খাবার থাকে না, সেদিন রহিম তাদের বাড়ি থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসে রামকে খাওয়ায়। আবার যেদিন রহিম দের বাড়িতে খাবার থাকে না, সেদিন রাম কিছু খাবার নিয়ে এসে রহিমকে খাওয়ায়।



ছোটবেলা থেকে রাম ও রহিমের এরকম নিবিড় বন্ধুত্ব দেখে অনেকে আবার হিংসে করতো। বিশেষ করে রাম ও রহিমদের গ্রাম কালিদাসপুরে কয়েক ঘর ধর্মীয় গোড়ামিতে বিশ্বাসী মুসলমান ছিল। তারা রাম ও রহিমের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সহ্য করতে পারতো না। রাম ও রহিমের বন্ধুত্ব দেখে মাঝেমধ্যেই ধর্মীয় গোড়ামিতে বিশ্বাসী ব্যক্তিরা রহিমের বাবা রহমানকে ডেকে বলতো, "তোমার ছেলে বড় হলে হিন্দু হবে নাকি? আর হিন্দু জাতের সাথে তোমাদের এতো মাখামাখি কেন?" উত্তরে রহমান বলেছিল, আমরা সকল মানুষেরা একই জাত, আমাদের মধ্যে কোন ভিন্ন জাতি নেই, আমরা সকলেই একই রক্ত, মাংস, চামড়া ও হাড়ের তৈরি। রহমান আরো বলেছিল, যারা মানুষ হয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, জাত সৃষ্টি করে তারা মানুষরূপী শয়তান।



রহমানের কথা শুনে ধর্মীয় গোড়ামীতে বিশ্বাসী শয়তানের দলরা রহমানের উপর অত্যন্ত রেগে গেল। তারা একদিন রহমানকে সমাজের মধ্যে অপমান করার পরিকল্পনা করতে লাগলো। এদিকে রাম ও রহিম হাতে হাত দিয়ে গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ায়। তারা নদীতে গোসল করে ও সাঁতার দেয়, তারা দুজনে একসাথে গাছে উঠে বিভিন্ন প্রকারের ফল পেড়ে খায়। আবার তারা দুজন একসাথে খেলাধুলাও করে। একদিন বিকেলে ডাংগুল খেলতে গিয়ে রহিমের ছোড়া গুলে রামের ঠিক কপালে গিয়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে রহিমের ডান চোখের ভুরুর উপরে অংশে কেটে রক্ত ঝরতে লাগলো। গুলের আঘাতে রাম যতটা কষ্ট পেয়েছিল তার চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছিল রহিম। রাম ও রামের পরিবার বুঝতে পেরেছিল যে, এটা খেলা করা অবস্থায় অপ্রত্যাশিত হবে রামের লেগে গেছে। কিন্তু রামের কপালে রক্ত বের হওয়া দেখে রহিম নিজেকে একেবারেই ক্ষমা করতে পারছিল না। সে রামের জন্য অত্যন্ত আফসোস করছিল এবং কেঁদেছিল।



এদিকে দেশভাগ হওয়ার কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ধর্মীয় দাঙ্গা শুরু হয়ে গেল। অনেক জায়গা থেকে খবর আসতে শুরু করেছে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে তুমুল মারামারি ও সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক জায়গার হিন্দুদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে মুসলমান উগ্রপন্থীরা। দেশ থেকে হিন্দুদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে ধর্মীয় গোড়ামী ও কুসংস্কারে বিশ্বাসী মুসলিমরা। এমন অবস্থায় রাম এর বাবা অমূল্য দৌড়াতে দৌড়াতে রহমানের কাছে চলে এলো। রহমানের কাছে অমূল্য বললো, ভাই আমাদের নাকি দেশ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, বাপ-দাদার ভিটা বাড়ি রেখে আমরা কই যামু? উত্তরের রহমান বললো, তোমাদের কোথাও যাওয়া লাগবে না ভাই, আমরা তো মিলেমিশে সুখে আছি, আমাদের মধ্যে তো কোন বিবাদ নেই। রহমানের কথা শুনে কান্নার কন্ঠে অমূল্য বললো ,ভাই যদি বিপদ আসে? উত্তরের রহমান বললো, শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও তোমাদের রক্ষা করার চেষ্টা করবো, তুমি এখন বাড়িতে যাও এবং তোমার কাজ করো গিয়ে।



কিছুক্ষণ পর রহমান তার একমাত্র ছেলে রহিমকে সঙ্গে নিয়ে আছরের নামাজ পড়তে মসজিদে যায়। কিন্তু মসজিদের খাদেম রহমান ও তার ছেলেকে মসজিদে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। রহমান যখন কারণ জানতে চাইলো তখন খাদেম বললো, তোমরা বাপ ছেলে হিন্দুদের সাথে মেলামেশা করো, তাই মসজিদের সভাপতি তোমাদেরকে মসজিদে ঢুকতে দিবে না। খাদেমের কথা শুনে ছয় বছরের ছেলে রহিম আগুনের মতো জ্বলে উঠলো। [গল্পটি চলমান থাকবে]



প্রথম পর্বটি পড়ার লিংক





আমার পরিচয়।

IMG_20220709_132030_108.jpg



আমার নাম মোহাঃ নাজিবুল ইসলাম (বিদ্যুৎ)। আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমি অতিশয় ক্ষুদ্র জ্ঞানের একজন মানুষ। আমি মেহেরপুর জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে বসবাস করি। আমি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে আমার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরু হয়। আমার স্টিমিট আইডি নাম (#bidyut01). প্রথম প্রথম স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ কিছুই পারতাম না। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সম্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন এবং মডারেটরদের সার্বিক সহযোগিতায় খুব সহজেই স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ গুলো সম্পর্কে জানতে পারি ও শিখতে পারি। এরপর থেকে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে আমার এলাকাতে আমি ব্যাপকভাবে প্রচার করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আমার এলাকার অনেকেই এখন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সদস্য। যাহোক, এখন আমার মাতৃভাষায় লেখালেখি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। যদিও আমার প্রধান পেশা শিক্ষকতা এবং পাশাপাশি মাছের চাষাবাদ করা। আমার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আমার পরিবারের প্রধান হলো আমার বাবা ও মা। আমার পছন্দের কাজ সমূহ হলো-ছবি অঙ্কন করা, যেকোনো জিনিসের অরিগ্যামি তৈরি করা, বিভিন্ন প্রকারের রেসিপি তৈরি করা, কবিতা লেখা, ভ্রমণ করা ও ফটোগ্রাফি করা। আর একটু সময় সুযোগ পেলেই পুরনো দিনের মুভি গুলো দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি।

১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।



Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

গল্প পড়ার মধ্যে অন্যরকম ভালো লাগা নিহিত থাকে। তাই গল্প পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে। আপনার আজকের এই গল্প আমাকে মুগ্ধ করেছে। দারুন একটি গল্প শেয়ার করেছেন আপনি। অসাধারণ ছিল আপনারা লেখা সুন্দর এই গল্পটি।