মিষ্টি খেজুরের গাছ থেকে রস চুরির হাস্যকর বাস্তব ঘটনা //পর্ব:-০৩(শেষ পর্ব)।

in hive-129948 •  last year 



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ রবিবার। ২৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

IMG_20231215_072720_347.jpg



তারপর আমার সকল বন্ধুরা পর্যায়ক্রমে খেজুরের রস গুলো খেয়ে ফেললাম। আর প্রতিবার আমাদের পাড়ার সেই বড় ভাইকে খেজুরের রসের সাথে পুকুরের পানি মিশিয়ে খেতে দিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে আমাদের দেওয়া বাংলা রস খাওয়ার পর সে বলতে লাগলো রস খেয়ে আমার মুখটা বেস্বাদ হয়ে গেল এবং প্রচন্ড শীত লাগছে। তারপর সেই বড় ভাই আমাদেরকে আরো বললো, তোমাদের কেমন লাগছে রস খেয়ে? তখন আমরা তো সকলেই হাসিমুখে উত্তর দিয়েছিলাম আমাদের খুবই ভালো লাগছে। তবে কিছুটা বাড়তি শীত অনুভব হয়েছিল আমাদেরও। বড় ভাইয়ের মুখে এরকম কথা শুনে আমরা একে অপরের কানে ফিসফিস করে বলছিলাম যে, যে বাংলা রস তোমার পেটের মধ্যে চালান করে দিয়েছি তাতে একটু প্রতিক্রিয়া তো হবেই।

আসলে আমাদের সেই সময় খেজুরের রস চুরি করে খাওয়াটা ছিল আমাদের জন্য একরকম বয়সের দোষ। আর আমাদের সাথে জোর করে যাওয়া পাড়ার সেই বড় ভাইয়ের ছিল স্বভাবের দোষ। তারপর রস খাওয়া শেষে আমার বন্ধুরা সবাই মিলে খেজুরের গাছে রসের ভাড় বেঁধে দিতে লাগলাম। আর তখন সেই বড় ভাই আজিজ বিড়ি ধরিয়ে ধূমপান শুরু করলো। তখনকার সময় আজিজ বিড়ি আমাদের গ্রাম অঞ্চলের প্রায় সকল বিড়িখোর মানুষের বেশ প্রিয় ছিল। পুকুরের পানির সাথে খেজুরের রস মিশিয়ে ঠান্ডা পানি পরিমাণে একটু বেশি খাওয়ানো হয়েছিল আমাদের সেই বড় ভাইকে। বেচারা ঠান্ডায় বেশ কাঁপছিল। তার বিড়ি খাওয়ার সময় খেয়াল করে দেখেছিলাম তার হাত যেভাবে কাঁপছিল তাতে মনে হচ্ছিল যে বেচারা জন্মের জব্দ হয়েছে।

তারপর আমরা খুব দ্রুত খেজুর গাছের বাগান থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসলাম। রাস্তায় আসার পরে আমি সহ আমার সকল বন্ধুরা মিলে পাড়ার সেই বড় ভাইকে বললাম যে, ভাইয়া আমাদের রস চুরি করে খাওয়ার কথা ভুলেও যেন কাউকে বলবেন না, তাহলে আমাদের মান-সম্মান আর থাকবে না। আমাদের কথা শুনে পাড়ার সেই বড় ভাই উত্তর দিলো, যেদিন তোমরা খেজুরের রস চুরি করতে যাবে ঠিক সেদিন আমাকেও সাথে নিয়ে যাবে, তাহলে আমি কাউকে বলবো না, কিন্তু আমাকে ফাঁকি দিলে খেজুর গাছের মালিককে সহ পাড়ার সবাইকে বলে দিবো। আমাদের এক বন্ধু ছিল তার মাথা সব সময় গরম থাকতো। মানে অল্পতেই সে রেগে যেত। বড় ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে সে আমার কানে কানে বললো, চলো দোস্ত শালাকে এবার বাংলা ধোলাই দেই।

তখন আমি আমার বন্ধুকে বললাম দোস্ত তুমি একটু থামো। এবার ওকে অর্থাৎ সেই বড় ভাইকে বাংলা শিক্ষা দিবো। তারপর আমি বলে উঠলাম, বড় ভাই আমিও পাড়ার মানুষকে সুন্দর একটি কথা বলে দেব। পাড়ার সেই বড় ভাই আমার কথা শুনে বলে উঠলো, "তুই আবার কি কথা বলবি? তোদের চুরি করা খেজুরের রসের ভাগ খেয়েছি- এই কথা তো?" উত্তরে আমি বলেছিলাম, না ভাই। আপনি যে আমাদের সাথে গিয়ে বাংলা রস খেয়েছেন সেই কথা পাড়ার সব মানুষকে বলে দিবো। পাড়ার সেই বড় ভাই বলে উঠলো বাংলা রস মানে? বড় ভাইয়ের এ কথা শুনে আমি ও আমার সকল বন্ধুরা বেশ জোরেই হেসে উঠেছিলাম। তারপরে বড় ভাইকে বললাম, বাংলা রস মানে এক গ্লাস রসের মধ্যে তিন ভাগ ছিল পুকুরের ঘোলা পানি আর এক ভাগ ছিল খেজুরের রস। আর এভাবেই খেজুরের রসকে বাংলা রস বানিয়ে আপনাকে খাওয়ানো হয়েছে।

তখন আমাদের হাস্যকর কথা শুনে পাড়ার সেই বড় ভাই বলতে লাগলো, এই কারণেই রস খাওয়ার সময় পানি পানি লাগলো আমার কাছে। তখন আমরা সকলেই বললাম, আপনি আমাদের খেজুরের রস চুরি করার কথা যদি পাড়ায় গল্প করেন তাহলে আপনার বাংলা রস খাওয়ানোর কথা আমরাও পাড়ায় গল্প করবো। তখন বেচারা আমাদের সকলের হাত চেপে ধরতে লাগলো আর ভাই ভাই করে বারবার অনুরোধ করলো একথা যেন আমরা কাউকে না বলি। কিন্তু এতো হাসির কথা না বলে কি থাকা যায়? পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি ও আমার বন্ধুরা যে যার মতো আমাদের পাড়ায় বাংলা রস খাওয়ার ঘটনা রটিয়ে দিয়েছিলাম। আর তারপর থেকেই আমাদের খেজুরের রস চুরি করা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়েছিল। সেই খেজুরের রস চুরি বন্ধ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আর কোথাও খেজুরের রস চুরি করে খাওয়া হয়নি। আর এটাই ছিল আমার কিশোর জীবনের খেজুরের রস চুরি করার বাস্তব হাস্যকর একটি ঘটনা। ধন্যবাদ সবাইকে।

দ্বিতীয় পর্বটি পড়ার লিংক





১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

দারুন একটি ঘটনা আজকে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার এই ঘটনা পড়ে বেশ অনেক কিছুই জানতে পারলাম। আসলে এমন ঘটনা আমাদের অনেকের জীবনে রয়েছে। যদি সবাই একের পর এক শেয়ার করে তাহলে অনেক তথ্য এভাবে জানতে পারা যায়।

গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

বড় ভাইয়ের বাংলা রস খাওয়ার কথা সবাইকে বলে তো নিজেরাই বিপদে পড়লেন। রস চুরি করে খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। একদিক দিয়ে অবশ্য ভালোই হয়েছে চুরি করে রস খাওয়া ঠিক না। আপনার রসের গল্প শুনে ছোটবেলার অনেক কাহিনী মনে পড়ে গেল। এখন আর ভাইরাসের ভয়ে তেমন একটা রস খাওয়া হয় না। যাই হোক গল্পটি বেশ মজার ছিল।

বাংলা রস খাওয়ানোর মধ্যে যে পরিমাণ আনন্দ পেয়েছিলাম সেটা প্রকাশ না করে থাকতে পারছিলাম না।