গল্প: মামা ও ভাগ্নে। পর্ব: ১৫(শেষ পর্ব) || তাং: ১১/০৫/২০২৩ ইং।

in hive-129948 •  last year 



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ বৃহস্পতিবার। ১১ ই মে, ২০২৩ ইং।




আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের নিকট আমার লেখা একটি গল্প শেয়ার করছি। আমার গল্পের নাম- 'মামা ও ভাগ্নে', পর্ব-১৫। আমি আশা করি আমার লেখা গল্পের পর্ব-১৫ আপনাদের নিকট অনেক অনেক ভালো লাগবে।


sunset-g5f78888ca_1280.jpg

Source



গল্পের ১৪ তম পর্বটি পড়ার লিঙ্ক



সততার পুরস্কার পেয়ে সুজনের দুই চোখ অশ্রুতে ভরে গেল। সুজন যখনই পুলিশ সুপারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগলো ঠিক তখনই পুলিশ সুপার বললো, "এটা তোমারই প্রাপ্য। তাই, তুমি সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।" সুজনের সাথে সমস্ত কথাগুলো শেষ করে পুলিশ সুপার পুনরায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে চলে এলো। তারপর পুলিশ সুপারের নির্দেশে অন্যান্য দারোগা এবং পুলিশগণ সকল মাদক ব্যবসায়ীদের মাজায় দড়ি বেঁধে লাথাতে লাথাতে রাস্তার দিকে নিয়ে গেল। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তালেব আলিসহ তার সহকর্মীদেরকেও মাজায় দড়ি বেঁধে দিলো। তালেব আলিসহ তার সহকর্মী সকলেই পুলিশ সুপারের নিকট খুবই আকুতি-মিনতি করলেও পুলিশ সুপার কোন কর্ণপাত করল না। পুলিশ সুপার তাদেরকেও নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল। এমন অবস্থায় সুজন এবং হৃদয় তালেব আলী দের পক্ষে পুলিশ সুপারের নিকট অনুরোধ করতে লাগলো।


অনেকক্ষণ অনুরোধ করার পরে পুলিশ সুপার সুজন এবং হৃদয়ের কথা রাখলো। অবশেষে তালেব আলী সহ তার সহকর্মীদেরকে পুলিশ সুপার ছেড়ে দিল। পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে তালেব আলি সুজন এবং হৃদয়ের কাছে খুবই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। একই সাথে তালেব আলী সুজনের কাছে তার ভুল কথা বলার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলো। সুজন হাসিমুখে তালেব আলীকে ক্ষমা করল এবং বুকে জড়িয়ে নিল। তালেব আলী পুলিশ সুপারের সামনেই তার মেয়ে তমা'র সাথে সুজনের ভাগ্নে হৃদয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিলো। তালেব আলীর এই কথা শুনে পুলিশ সুপার সহ সুজন এবং হৃদয় খুবই আনন্দিত হল। অবশেষে সুজন বুঝতে পারলো যে, পুলিশ সুপার খুবই কৌশল করে তালেব আলীর সাথে আমাদের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দিলো।।


তারপর পুলিশ সুপার সকল মাদক ব্যবসায়ীদেরকে গাড়িতে করে থানায় নিয়ে চলে গেল। এদিকে তালেব আলী সহ তার সহকর্মীরা সকলেই বাড়ির দিকে চলে গেল। সুজন এবং হৃদয় অত্যন্ত আনন্দের সাথে তাদের বাড়ির দিকে রওনা হলো। সুজনের চোখে মুখে অত্যন্ত আনন্দিত ভাব দেখে হৃদয় ভাবতে লাগলো যে, তালেব আলী আমাদের ভালবাসার সম্পর্ক মেনে নেওয়ার কারণেই হয়তো মামা অধিক আনন্দিত হয়েছে। কিন্তু হৃদয় জানে না যে, পুলিশ সুপার সুজনকে সব টাকাগুলো পুরস্কার হিসেবে দিয়ে দিয়েছে। সুজন যখন টাকা গুলোর কথা হৃদয়কে বললো, টাকার কথা শুনেই হৃদয় রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে গেল। বাড়িতে পৌঁছে সুজন এবং হৃদয় পরিকল্পনা করতে শুরু করলো। তারা এতগুলো টাকা তাদের বাস্তব জীবনে সফলভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনায় ব্যস্ত হয়ে গেল।


সুজন এবং তার ভাগ্নে হৃদয় অনেকক্ষণ পরিকল্পনা করার পরে তারা সিদ্ধান্ত নিল যে, টাকাগুলো দিয়ে তারা প্রথমেই দুইটা গাভী গরু কিনবে এবং কিছু ছাগল কিনবে। তারপর বাকি টাকা গুলো দিয়ে তারা দু'জন ব্যবসা শুরু করবে। তারপর, তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সুজন এবং হৃদয় মিলে খুবই সুন্দর সুন্দর দুটি গাভী গরু এবং পাঁচটি ছাগল কিনে লালন পালন করতে শুরু করলো। আত্মকর্মসংস্থান করে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুজন এবং হৃদয় কঠোর পরিশ্রম শুরু করে দিলো। তারপর, তালেব আলীর মেয়ে তমা'র সাথে হৃদয়ের শুভ বিবাহের দিন ধার্য হয়ে গেল। সুজন তার ভাগ্নের বিয়ের জন্য বেশ মোটা অংকের বাজেট করল। তারপর সুজন তার ভাগ্নের বিয়ের দাওয়াত দেওয়ার জন্য সুন্দর সুন্দর বিয়ের দাওয়াত কার্ড সংগ্রহ করল। সুজনের ইচ্ছে হৃদয়ের বিয়ের প্রথম দাওয়াতটি দিবে পুলিশ সুপারকে। তাই সুজন সিদ্ধান্ত নিলো পরের দিন সকালে পুলিশ সুপারকে দাওয়াত করতে যাবে।


পরের দিন সকালে সুজন যখন পুলিশ সুপারের কাছে যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলো, ঠিক তখনই তার গ্রামের মধ্যে হইচইয়ের শব্দ শুনতে পেল। সুজন তার গ্রামের মানুষজন গুলোকে দলবেঁধে মাঠের দিকে যেতে দেখলো। গ্রামের ছোট-বড় নারী, পুরুষসহ সকল বয়সের মানুষ জনকে মাঠের দিকে যেতে দেখে সুজন খুবই বিস্মিত হয়ে গেল। সুজন জানার চেষ্টা করতে লাগল যে, মাঠের মধ্যে আসলে কি হয়েছে? তারপর সুজন জানতে পারলো যে, মাঠের মধ্যে অজ্ঞাত সাত-আটটি লাশ পড়ে আছে। মাঠের মধ্যে একসাথে সাত-আটটি লাশ পড়ে থাকার কথা শুনে সুজন তার ভাগ্নে হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে মাঠের দিকে যেতে লাগলো। মাঠে গিয়ে সুজন এবং হৃদয় দেখলো যে, পুলিশের হাতে ধরা পড়া মাদক ব্যবসায়ীদের লাশ মাঠে পড়ে আছে। মাদক ব্যবসায়ীদের এরকম লাশ পড়ে থাকা দেখে সুজনের মাথা ঘুরে গেল। সুজন অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে একটি দারোগাকে জিজ্ঞেস করল যে, এরা কিভাবে মারা গেল? উত্তরে দারোগা বললো, এরা বন্দুকযুদ্ধে সকলে নিহত হয়েছে।


তারপর সুজন এবং হৃদয় যখন মাঠ থেকে বাড়ির দিকে আসছিল, তখন রাস্তায় সুন্দর একটি পুলিশের গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে বের হল পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপারকে দেখে সুজন এবং হৃদয় দৌড়ে তার কাছে চলে গেল। সুজন এবং হৃদয় কিছু বলার আগেই পুলিশ সুপার বললো, "আমি এখান থেকে ট্রান্সফার হয়ে গেছি।আগামীকাল আমি তোমাদের এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছি। তাই যাওয়ার পূর্বে, আমি তোমাদের এলাকা থেকে কিছু জঞ্জাল সাফ করে দিলাম। যাতে তোমাদের এলাকার প্রতিটি সমাজ মাদকমুক্ত হয়ে সুন্দর পরিবেশ গড়ে ওঠে।" পুলিশ সুপার আরো বললেন, " সুজন তোমার জীবন এবং তোমার ভাগ্নের দাম্পত্য জীবন সুন্দর এবং সুখের হয়ে উঠুক এমনটাই প্রত্যাশা করি।" তারপর পুলিশ সুপার সুজন এবং হৃদয়কে দেশপ্রেমিক হিসেবে সম্মানিত করলো। তারপর সুজন এবং হৃদয় পুলিশ সুপারকে আন্তরিকভাবে স্যালুট জানালো। তারপরে অশ্রু ভেজা চোখে সুজন এবং হৃদয় পুলিশ সুপারকে বিদায় জানালো। (গল্পটি সমাপ্ত হয়ে গেল)




১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png