হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।
আজ রবিবার। ০২ এপ্রিল, ২০২৩ ইং।
আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ, সুস্থতা মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে বিশেষ একটি নেয়ামত। আমরা প্রত্যেকেই সব সময় সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে পছন্দ করি। কিন্তু দিনশেষে আমাদের প্রধান পরিচয় হলো রক্ত মাংসে গড়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী। আর রক্তে মাংসে গড়া সকল প্রাণীকেই বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হতে হয়। ঠিক তেমনি আমরা মানুষ জাতি বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হয়। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন রোগের সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি এবং আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্মগুলো করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারপরেও আমরা আমাদের জীবনকে স্বাভাবিক রাখতে পারছি না বিভিন্ন রোগের কারণে। আর বর্তমান সময়ে এসে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। যাহোক, এসব বাদ দিয়ে মূল কথায় যাওয়া যাক।
কিছুদিন আগে আমার ওয়াইফের মুখে হঠাৎ করেই যেন ঘামাচির মত ছোট ছোট কিছু ফোঁড়া বের হওয়া শুরু হল। প্রাথমিকভাবে মনে হল হয়তো এমনিতেই এগুলো বের হচ্ছে তাই এমনিতেই সেরে যাবে। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পূর্বে মুখে যে পরিমাণ ঘামাচির মত ফোড়া ছিল 24 ঘন্টা পরে তার তিন ডাবল বৃদ্ধি হয়ে গেল। হঠাৎ করে আমার ওয়াইফের মুখে এরকম অবস্থা দেখে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। তারপর গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে দেখালাম, তিনি সাধারণভাবে বললেন এলার্জিজনিত সমস্যা। কিন্তু আমার ওয়াইফের এলার্জির তেমন কোন সমস্যা নেই। তারপরও গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে কিছু এলার্জির ওষুধ ক্রয় করে খাওয়ালাম। কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না। মাত্র চার দিনের মধ্যেই কপাল থেকে শুরু করে পুরো মুখমণ্ডলে ঘামাচির মত ছোট ছোট ফোড়ায় পরিপূর্ণ হয়ে গেল আমরা ওয়াইফের মুখ। হঠাৎ করে আমার ওয়াইফের মুখের এমন অবস্থা দেখে আমার পরিবার এবং আমার শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সকলেই বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।
এরকম পরিস্থিতিতে আমি ভালো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের খোঁজ করতে শুরু করলাম। এমন অবস্থায় আমার মনে হল যে আমার গ্রামের বেশ কয়েকজন ছাত্র কুষ্টিয়াতে লেখাপড়া করছে। তাই আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের নিকট থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতে লাগলাম। সম্পর্কে আমার একজন ফুফাতো ভাই সরাসরি আমাকে বলে দিল ডক্টর আলাউদ্দিন কবিরকে দেখাতে। সে বলল বর্তমান সময়ে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের মধ্যে অন্যতম ভালো একজন ডক্টর হলেন তিনি। তাই আমার সেই ভাইয়ের কথা মতো আমি সেখানে আমার ওয়াইফকে দেখানোর জন্য রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু ডক্টর আলাউদ্দিন কবিরের সাথে যোগাযোগ করার মতো কোন ব্যবস্থা আমার ছিল না। তারপর আমার সেই ফুফাতো ভাই ডক্টর আলাউদ্দিন কবির এর চেম্বারে গিয়ে সিরিয়াল করে দিল।যাহোক ফুফাতো ভাইয়ের সাহায্যে আমাদের সিরিয়াল নাম্বার হল ৬। পরের দিন একটি অটোরিকশা ভাড়া করে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমাদের গাংনী থেকে কুষ্টিয়া প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে হবে। যাহোক পৌনে দুই ঘণ্টার মধ্যে আমরা ডক্টর আলাউদ্দিন কবিরের চেম্বারে পৌঁছে গেলাম।
সিরিয়াল দেওয়ার পরে আমার সেই ফুফাতো ভাইয়ের কাছ থেকে আমি জেনেছিলাম যে ডক্টর আলাউদ্দিন কবির সকাল ১০ টা থেকে রোগী দেখা শুরু করেন। তাই আমরা সকাল দশটার আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে জানতে পারলাম যে, তিনি আজ সকাল এগারোটার সময় থেকে রোগী দেখা শুরু করবেন। তারপর ডাক্তার আসার আগেই আমাদের সিরিয়াল নাম্বারটা ঠিক করে নিলাম এবং ডক্টরের ভিজিট হিসেবে ৫০০ টাকা পরিশোধ করে দিলাম। তারপর ডক্টর সকাল ১১ টার সময় থেকে রোগী দেখা শুরু করলেন। ওখানে রোগী দেখার প্রথম নিয়মটি ছিল- ডাক্তার প্রথমে একজন নতুন রোগী দেখেন, তারপরে একজন পুরাতন রোগী দেখেন। আর দ্বিতীয় নিয়মটি ছিল- যে সমস্ত রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট গুলো দেখেন বিকেল তিনটার পর থেকে।
তারপর নির্ধারিত ৬ নাম্বার সিরিয়াল অনুসারে আমাদেরকে ডাকা হল। আমি আমার ওয়াইফকে নিয়ে ডক্টরের নিকটে গেলাম। তিনি লাইট দিয়ে ভালোভাবে আমার ওয়াইফের মুখটি দেখলেন। তারপর প্রথমে তিনি কিছু পরামর্শ দিলেন। প্রথমত তিনি বললেন চর্বি জাতীয় খাবার এবং ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে। তারপর তিনি বললেন সকল ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। তারপরে আমাদের নিকট থেকে বিস্তারিত জেনে ওষুধ লিখে দিলেন। তারপর ডক্টর বলে দিলে ০৬ সপ্তাহ পরে আবার আসতে। প্রেসক্রিপশন নিয়ে আমরা বাইরে চলে এলাম এবং বাইরে যারা সিরিয়াল নেওয়ার কাজ করছিল তারা একটি কভার দিয়ে প্রেসক্রিপশনটি জড়িয়ে দিলেন। তারপর তারা ডক্টরের নিজস্ব ফার্মেসি থেকে ওষুধ গুলো নেওয়ার কথা বললেন।
ডক্টর আলাউদ্দিন কবির এর নিজস্ব ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিতে গিয়ে ঔষধের মূল্য শুনে মনে হল আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। মুখে খাওয়ার জন্য দুইটি ওষুধ দিয়েছিল আর বাকি তিনটি ওষুধ দিয়েছিল মুখের ফোড়া গুলোর উপর ব্যবহার করার জন্য। ডক্টরের নিজস্ব ফার্মেসি থেকে বেরিয়ে দ্রুত চলে গেলাম কুষ্টিয়ার নামকরা আমিন ফার্মেসিতে। সেখানে গিয়ে প্রেসক্রিপশন দেখাতে তারা বললেন আপনি সারা কুষ্টিয়া শহর খুঁজেও এই ওষুধ গুলো পাবেন না। বরং ডক্টরের নিজস্ব ফার্মেসি থেকে ওষুধগুলো নিয়ে বাড়িতে যান। আমিন ফার্মেসীর লোকদের এরকম কথা শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। তারপর আমি প্রেসক্রিপশনটির একটি ফটো তুলে আমার পরিচিত আমাদের গাংগীবাজারের একজন ঔষধ বিক্রেতার মোবাইলে পাঠিয়ে দিলাম। তিনি এই প্রেসক্রিপশনটি পড়ে আমাকে জানালেন, শুধুমাত্র মুখে খাওয়া ওষুধ দুটি বাদে বাকি তিনটা ওষুধের নাম আজই প্রথম জানতে পারলেন।
তাই শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ডক্টর আলাউদ্দিন কবির এর নিজস্ব ফার্মেসি থেকে ওষুধগুলো ক্রয় করতে হলো। ঔষধ হিসেবে ছিল ফ্রেশ ওয়াশ, সূর্যের তাপ এবং রান্নাঘরে চুলার আগুনের তাপ থেকে ত্বককে রক্ষা করার একটি ওষুধ এবং মুখের ফোড়া গুলো শুকিয়ে ফেলানোর জন্য আরেকটা ওষুধ। এই তিনটা ওষুধ ক্রয় করতে আবার টাকা লাগলো মোট ৪৩০০ টাকা। ওষুধগুলো ক্রয় করার সময় মনে মনে শপথ ঔ করলাম যে মুখের ফোড়া গুলো সেরে গেলেই হয় আর জীবনেও এই ডক্টরের কাছে রোগী নিয়ে আসব না। এখানে চিকিৎসা দেওয়ার নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। যাহোক তারপরে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
সুপ্রিয় বন্ধুগণ ডাক্তারি পেশা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ পেশা। তবে বর্তমান সময়ে প্রাইভেট ক্লিনিক গুলো সেবা দেওয়ার নামে রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে। আর তাদের এই রমরমা ব্যবসার ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমার মতো অসংখ্য সাধারণ মানুষ। তাই আমাদের সকলের উচিত এসব বিষয়ে সচেতন থাকা।
Twitter link
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাই এটা ঠিক বলেছেন যে সুস্থতা মানব জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৷ তবে রক্তে মাংসে গড়া মানুষ তো বিভিন্ন সমস্যা জনিত সমস্যা থাকেই ৷ শুনে খারাপ লাগলো যে ভাবির এমন অবস্থা ৷ খুব ভালো করেছেন চর্ম বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ৷ আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে ৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দোয়া করবেন ভাইয়া যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রথমে মামীর সুস্থতা কামনা করি। আল্লাহতালা যেন মামীকে খুব দ্রুত সুস্থ করে দেয়। আসলে আমাদের গ্রামের ওইসব ডাক্তাররা খুব একটা ভালো না। আসলে ওদের কথামতো এলার্জির ওষুধ খেলে হয়তো কোন বড় সমস্যা হয়ে যাবে। আপনি কুষ্টিয়াতে এসে ডাক্তার দেখিয়েছেন জেনে খুবই ভালো লাগলো। আশা করে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ওষুধ খেলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। শেষের দিকে আমাদের ভাইয়ের ছবি শেয়ার করেছেন মামা দেখে খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া কুষ্টিয়া চৌরহাস আমার বাসার কাছ থেকে ঘুরে গেলেন আর আমি জানতেই পারলাম না।।
যাহোক ভাবির সুস্থতা কামনা করছি।।
পরবর্তীতে কুষ্টিয়া এলে অবশ্যই আমার সাথে দেখা করে যাইয়েন
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসসালামু আলাইকুম। ভাইজান আপনাকে চেনা চেনা লাগছে, তার চেয়ে বেশি চেনা লাগছে আপনার কোলের বাচ্চাটিকে! কারণ সে অতি সুখ পরিচিত একটি মানব শিশু। যাকে চেনেনা এমন লোক পাড়া গায়ে নেই বললেই চলে। তার মুখের হাসি আর দুষ্টামিতে ভরে থাকে এর ওর মুখের গাল গল্প। চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়াতে গেছেন সেটা হয়তো জানতাম তবে এত কিছু জানতাম না। তবে আজকে ব্লগের মাধ্যমে জানতে পারলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit