♥️আসসালামুআলাইকুম♥️
আমার বাংলা ব্লগ এর প্রিয় বন্ধুগণ, সবাই আশাকরি খুব ভালো আছেন। আমিও আছি কোনো একরকম,তবে আলহামদুলিল্লাহ। আজ ৭ই জুন, আমাদের বিবাহ বার্ষিকী। কিন্তু আমার মনটা ভালো নেই।কারণ স্পেশাল দিন স্পেশালের মত না অনুভূত হলে সেটা ভালো না লাগারই কথা।মনের মাঝে থাকা কষ্টগুলো আজ আবারও নাড়া দিয়ে উঠলো।
জীবনে কিছু কিছু মুহূর্ত রয়েছে যেগুলো কখনোই ভোলার মত নয়। আজকে আমি আপনাদের মাঝে এমন একটি মুহূর্ত তুলে ধরব। আপনাদের মাঝে শেয়ার করব আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখের দিন। যেটি একদম অপ্রত্যাশিত ছিল। স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষের কাছে স্পেশাল দিনগুলো স্পেশালভাবে মনে রাখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু জীবনে এমন কিছু দিন আসে যে দিনগুলো স্পেশাল এর এর মাঝেই দুঃখে পরিণত হয়।
source
২০২১ সালের ৫ই জুন, আমার জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্টের দিন।হয়তোবা সেটি কষ্টের দিনগুলোর শুরু ছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকেই আমার বিয়ের কথা হয়েছিল এবং সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের জুন মাসে বিয়ের দিন ঠিক হয়। যদিও প্রথমত ৪ই জুন বিয়ের দিন ঠিক করার কথা।কিন্তু পরবর্তীতে অন্য একটা কারণে বিয়ের দিন ৭ তারিখেই নেয়া হয়েছিল। তখন আমার সবচেয়ে কাছের একজন মানুষ যার প্রতি সব সময় আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা অনেক বেশি ছিল সে হলেন আমার নানা। উনি বলেছিল বিয়ের দিন কেন পেছানো হল, বিয়ের দিন পেছানো ঠিক নয়।
যাইহোক যেহেতু পেছানো হয়েই গিয়েছিল সেই হিসেবে উনি সত্যিই খুব খুশি ছিল। কারণ আমি তার প্রথম নাতনি ছিলাম। প্রথম যেই নাতি বা নাতনি ঘরে আসে তার আদর সবার কাছে সবসময় একটু আলাদাই থাকে। আর যেহেতু আমার নানা মেয়েদেরকে একটু বেশি পছন্দ করতেন সেই হিসেবে আমাকে অনেক বেশি আদর করতেন। আমার ছোট আরো দুটি আন্টি আছে তাদের থেকেও আমাকে অনেক বেশি আদর করতেন। কারণ আমি তার নাতনি ছিলাম। আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে যদি আমি কারো সাথে কথা বলতাম তখন খুব দুষ্টুমি করেই বলতো কি বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছে? যাইহোক ফিরে আসি মূল কথায়।আমার নানার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ২তারিখ সকাল ১১টায়, ৫ তারিখ সকাল বেলা আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করার জন্য কলেজে যাই। তাদের সাথে দেখা করি এবং কিছুক্ষণ সময় তাদের সাথে কাটাই।
তখন আমার ছোট আন্টি ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলছে। আমি যখন নানার কথা জিজ্ঞেস করলাম তখন সে বলল আব্বুর জ্বর কমছে না আছে, তবে ডাক্তারের কাছে যাবে।ডাক্তার না দেখিয়ে চেম্বার থেকে চলে এসেছিল কারণ যাকে দেখাবে সে ছিল না।আমার নানুকে নিয়ে সেদিন প্রথমবার নানা নিজের জন্য ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল।এর আগে যদি কেউ বলতো তার সাথে যেতে তিনি কখনোই নিতেন না।কিন্তু সেদিন নানুকে নিজেই নিয়ে গিয়েছে। তারপর বললাম ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর জানাতে কি বলে। এই বলেই সেদিনের মতো আর কারো সাথে কথা হয়নি।
এরপর আমি বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। সারাদিন বিভিন্ন রকম কাজ ছিল।রাত ৯ টায় হঠাৎ মনে পড়ল নানার কথা জিজ্ঞেস করি কেমন আছে, তারা কবে আসবে। যেহেতু পর দিনই হলুদ এর অনুষ্ঠান হবে। যাইহোক রাত নয়টার একটু আগেই আমি নানুর নাম্বারে কল দিয়েছিলাম। তখন আমার ছোট আন্টি কল ধরে কান্না কান্না ভাবে কথা বলছিল, আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে কিন্তু সে যেন তখন কথার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সে কোন কথাই বলছে না শুধু কান্না করছে। তারপর আবার আমি জিজ্ঞেস করলাম, বারবার জিজ্ঞেস করার পর ও বলল আব্বু খুব অসুস্থ কথা বলতে পারছে না কেমন যেন করছে,, আর বলছে আব্বু একবার হাত ধরে আবার হাত ছাড়ে,এভাবে কয়েকবার করছে আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।তখন সে আর কথা বলতেছিল না।
তখন আমি বললাম নানুকে মোবাইল দিতে, নানু তখন নিজেও বলছে তোর নানা মনে হয় আর নেই। তখন আমার মাথায় বাজ পড়ার মত অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। আমি বারবার চিৎকার করে বলতেছি তবুও আমি নিজে কথা বলতে পারতেছিলাম না যেন। তখন আম্মু আমার কান্নাকাটি দেখে আমার থেকে মোবাইল নিয়ে নিল এবং তখন নানু সেইম কথা বলল। তখন আম্মুর নিজেও ভেঙে পড়েছে। আসলে নিজের বাবা-মা যদি না থাকে তাহলে কি পরিমান কষ্ট হয় তা শুধুমাত্র সেই জানে। তখন আমাদের খুশির দিনের সময় গুলো একদম মলিন হয়ে গেল। রাত তখন নয়টা বাজে বৃষ্টি আসবে এরকম অবস্থা। আমার আব্বু, ছোট ফুফু, আর আমার ছোট আন্টি সেও আমাদের বাড়িতেই ছিল। তখন শুধুমাত্র সিএনজি আসার অপেক্ষা।আমি পারছিলাম না দোড় দিতে।আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছিল।তখন ১০টায় চলে গেলাম নানুর বাড়িতে।
আমার নানা বিয়েতে আসবে বলেই সব কিছুই রেডি করে রেখেছিল আগে থেকে। কারণ তার বড় নাতনির বিয়ে দেবে এটা তার অনেক বেশি আনন্দের বিষয় ছিল। কিন্তু তার ভাগ্যে আর নাতনির বিয়েতে থাকা হলো না। শুধুমাত্র এই দিনটি নয়, তার পর থেকেই আমার জীবনে শোকের ছায়া শুরু।আমি কখনো ভাবি নি আমার আনন্দের দিনে এমন কিছু ঘটবে।আমার বিয়ে নিয়ে সবচেয়ে বেশি মাতামাতি ছিল আমার নানুদের সকলের। কিন্তু কেউ আর আসতে পারে নি।সবাই ২দিন আগে আসার কথা ছিল।যাইহোক পরদিন সকাল ৯টায় কবর দেয়া হয়েছিল আমার নানাকে।তখন কি রকম অনুভূতি ছিল সেটা বলে বোঝানোর মত না।আর যখন নিয়ে যাচ্ছিল তখন এত পরিমান বৃষ্টি আর তুফান হচ্ছিলো কেউ বেরুতে পারছিল না।
যাইহোক পরে আমার আব্বু চেয়েছিল বিয়ে আবার পিছিয়ে দিতে।তখন মামারা,নানু আর বাকি সবাই বলল সব এরেঞ্জ হয়ে গিয়েছে যেহেতু তাই আর পেছানোর দরকার নেই।তাই বিকেলের আগেই আমরা চলে এলাম।বিয়ের দিন শুধু আমার মামারা এসেছিল। কিন্তু আমার বিয়েটা যেন একজনের হাতে হলেই ভালো হতো।আমি সেদিন থেকেই বুঝলাম, অনুভব করলাম,বিভিন্ন দিক থেকে আমার শখ,আহ্লাদ, আবদার, স্পেশালিটি সব হারিয়ে গেছে।আমাকে আমার মত স্পেশালভাবে অনুভব করানোর কেউ নেই।আমার নানা আমার জন্য অন্যরকম একজন মানুষ ছিলেন,আমাদের ঝগড়া হতো,খুনসুটি হতো,আর হঠাৎ নাম্বারে কল দিয়ে দুষ্টামি করতো।
কিন্তু সেই মানুষটা নেই, ২বছর হয়ে গেল।প্রত্যেক ঈদে আগে আমায় কল দিত,আমাদের বাড়িতে সবার আগে আসতো,ছোট বেলা থেকে আমার সব আবদার পূরণ করত।এমনও হতো তার কাছে কোনো কিছু চাওয়ার আগেই যেন বুঝে যেত।আমি যখন নানার বাড়িতে থাকতাম তখন চট্টগ্রাম থেকে আসার সময় কারো জন্য কিছু নিয়ে না আসলেও আমার জন্য নিতো।আসলে তার ব্যাপারে যতই বলিনা কেন কম হয়ে যাবে।তবে একটা কথা সত্যি,,আমার জীবনে স্পেশালিটি হারিয়ে গেছে,আমার ভালোলাগা,আবদার, অভিমান সবকিছু অনেকটা কমে গিয়েছে।জানিনা কেন,সেদিনের পর থেকে প্রাপ্তির খাতায় আমার হিসেবটা কখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
সবাই অনেক অনেক ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। সবার জন্য আন্তরিক ভালোবাসা রইল। সম্পূর্ণ পোস্টে আমার ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। |
---|
♥️আল্লাহ হাফেজ♥️ |
---|
আমি তাহমিনা আক্তার বৃষ্টি। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাংলায় কথা বলি,আমি বাংলায় নিজের মনোভাব প্রকাশ করি। আমি নিজের মত করে সবকিছু করার চেষ্টা করি। আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন জিনিস আঁকতে পছন্দ করি। বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকা, রঙ করা, নতুন নতুন কিছু তৈরি করা আমার পছন্দের কাজ। তবে রান্নাবান্না আমার ভালোলাগা, চেষ্টা করি সবসময় নিজে নতুনভাবে কিছু রান্না করার। ভ্রমণপ্রেমীদের মত আমিও ঘুরতে পছন্দ করি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক অনেক ধন্যবাদ সবসময় সাপোর্ট করার জন্য ভালো। 🙏
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে এরকম সময় যদি কাছের মানুষগুলো আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায়, তখন সত্যি অনেক বেশি খারাপ লাগে। আপনার বিয়ের দুই দিন আগে আপনার নানা মারা গিয়েছিল, এটা শুনে সত্যি অনেক বেশি খারাপ লেগেছিল। আসলে নানা নানু এমন মানুষ, যারা নাতনি এবং নাতিদেরকে অনেক বেশি ভালোবাসে। আপনার সব আবদার পূরণ করতে আপনার নানা। এখন তিনি আর নেই, এটা ভাবতেই আমার কাছে অন্যরকম লাগছে। আপনার কষ্ট বুঝতে পারছি আপু। আসলে পৃথিবীতে সবাই চিরদিন থাকে না। সবাইকে একদিন না একদিন আমাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। আল্লাহ তায়ালা যেন ওনাকে জান্নাতবাসী করেন, সেই কামনা করি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি আপু আসলে নানা নানু এমন মানুষ, যারা নাতনি এবং নাতিদেরকে অনেক বেশি ভালোবাসে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রিয়জন হারানোর অনুভূতি গুলো সত্যি খুব কষ্টের। আপনার নানাকে আল্লাহতালা যেন জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করে। আসলে আপনি যে পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে তা মানিয়ে নেওয়া সত্যি খুবই কষ্টকর। প্রিয়জন হারালে হৃদয়ের মাঝে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় তা আর কখনো পূরণ হয় না। এত কষ্ট অনুভূতিগুলো গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিক ভাইয়া প্রিয়জন হারালে হৃদয়ের মাঝে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় তা আর কখনো পূরণ হয় না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার পোস্টটা পড়ে সত্যি অনেক বেশি খারাপ লেগেছে আপু। এরকম মৃত্যু গুলো একেবারেই মেনে নেওয়া সম্ভব না। কতই না মজা হত, যদি আপনার নানা আপনার বিয়েতে উপস্থিত থাকতো। তিনি সবকিছু গোছগাছ করে নিয়েছিলেন, আপনার বিয়েতে উপস্থিত হওয়ার জন্য। কিন্তু বিধাতা আর ওনাকে ওনার ইচ্ছা পূরণ করতে দেননি। আপনার নানার কথাটা মনে করলে সত্যি আমার কাছেও অনেক খারাপ লাগে। নিজের কাছের মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর যদি হয় এরকম একটা পরিস্থিতিতে তাহলে তো বলাই যায় না। আপনি আপনার অনুভূতি খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরলেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি ভাইয়া নিজের কাছের মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে আপু আপনার বিয়েতে যদি আপনার নানা উপস্থিত থাকতো তাহলে নিঃসন্দেহে বিয়ের অনুষ্ঠানটি আরো বেশি জমজমাট এবং আনন্দদায়ক হতে। হয়তো সৃষ্টিকর্তা তাকে সেই পর্যন্ত আয়ু দান করেননি। অত্যান্ত প্রিয় মানুষের মৃত্যুর কথাটা কখনোই ভুলে থাকা সম্ভব নয়। আমি দোয়া করি মহান সৃষ্টিকর্তা যেন আপনার নানাকে জান্নাত নসিব দান করেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি ভাইয়া বিয়েতে যদি আমার নানা উপস্থিত থাকতো তাহলে নিঃসন্দেহে বিয়ের অনুষ্ঠানটি আরো বেশি জমজমাট এবং আনন্দদায়ক হতে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শুভ বিবাহ বার্ষিকী। আপনাদের দু"জনকেই শুভেচ্ছা। বিয়ের আগে নানার মৃত্য সত্যি পীড়াদায়ক। জন্ম-মৃত্যতে মানুষের হাত থাকেনা! শোক ভুলে মানুষ বাচতে চায়। আর হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন।আশাকরি,শোক কাটিয়ে উঠবেন। আপনার নানা ওপারে ভালো থাকুক।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিক আপু বিয়ের আগে নানার মৃত্যু সত্যি পীড়াদায়ক। জন্ম-মৃত্যু তে মানুষের হাত থাকেনা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit