আজ || ০৬ আশ্বিন,১৪২৮ বঙ্গাব্দ || ১৩ সফর,১৪৪৩ হিজরী || ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ইংরেজি || রোজঃ মঙ্গলবার ||
[Edited by picsart]
আসসালামু আলাইকুম
স্টিমিটে একমাত্র বাংলায় ব্লগিং করার যোগ্যতম কমিউনিটি-
আমার বাংলা ব্লগ
কমিউনিটির কতৃপক্ষ এবংসকল স্টিমিয়ান বন্ধুদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আশাকরি সবাই ভালো আছেন এবং সুন্দর জীবন যাপন করছেন।
আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।
আজকে আমি আপনাদের মাঝে যা ভাগ করতে যাচ্ছি তা হলো-
দোয়াত-কলম সম্পর্কে দুএকটি কথা || ১০% সুবিধাভোগ লাজুক-খ্যাঁকের জন্য।
এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করতে যাচ্ছি।
তো দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
[Edited by picsart]
[সুচনা]
ইংরেজিতে একটি কথা আছে-
"Old is Gold."
অর্থাৎ পুরাতনই স্বর্ণ।কথাটি একেবারে তুলে দেয়া ঠিক না।কারন পুরানো জিনিসটাই নতুন জিনিসের জন্ম দেয়।পুরাতন টি না থাকলে হয় তো নতুনটি আসতো না।আজ আমি সেই পুরাতন জিনিস নিয়ে দুএকটি কথা আলোচনা করবো।
[দোয়াত]
বর্তমান প্রজন্ম হয়তো দোয়াত দেখা তো দুরের কথা অনেকে আছে দোয়াতের নামটি পর্যন্ত শোনেননি।এটা বিলুপ্ত হওয়া বেশিদিন হয়নি। এই তো ১৯৯০/৯২ সালে ছিল আমাদের পড়ালেখার সময়।আপনাদের বলি দোয়াত কি? দোয়াত হলো কাঁচের তৈরি একটি খাটো বোতল। যার দৈর্ঘ্য ৫/৬ সেন্টিমিটার প্রস্থ ৪/৫ সেন্টিমিটার। উপরে মুখটা ছিল গোল এবং প্লাস্টিকের ঢাকনা বা কর্ক ছিল।যা দ্বারা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ঢাকনা বা কর্কটি শক্ত করে লাগিয়ে দেয়া হতো যাতে কালি না পড়ে যায়।মুখের ব্যাস হবে ২/৩ সেন্টিমিটার। এর ভিতরে কালো অথবা লাল অথবা সবুজ তরল কালি থাকতো। যা কলম দিয়ে লেখার কাজে ব্যবহৃত হতো।
[Edited by picsart]
আমি ১৯৯২ সালে এসএসসি দিয়ে দিয়েছি এই দোয়াত-কলম দিয়ে।তখন একটি কালি ভরা দোয়াতের দাম ছিল মাত্র ২.৫০ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত।এভারেড-ব্লু-ব্লাক নামের একটি দোয়াত আমি ব্যবহার করতাম।আরো দোয়াতের নাম ছিল-
এভারেডি-ব্লাক,
এভারেডি-রেড,
এভারেডি-ব্লু,
এভারেডি-ব্লু-ব্লাক,
পেংগুইন-এর উপরোক্ত রঙের কালি,
সুলেখা-এর উপরোক্ত রঙের কালি।
[Edited by picsart]
পরীক্ষা দেওয়ার সময় কলম ও দোয়াত কালি সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়।কারন কলমে একবার কালি তুললে পরীক্ষা শেষ হবে না।পুরা তিন ঘন্টা সময়ের পরীক্ষায় কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ বার কলমে কালি তুলতে হয়।
[Edited by picsart]
[কলম]
সেই সময় বলপয়েন্ট কলম বা শীশ কলম বা জেল কলম ছিল না।আমরা পেনসিল দিয়ে লেখা শিখতাম।কমলের ব্যবহার খুব কম ছিল। তখন কালির কলম কয়েক প্রকারের ছিল।এগুলোকে বলা হয়-ফাউনটেন পেন।সেই ফাউনটেন কলম দেখতে একটু মোটা ছিল।কলমের নাম গুলো হলো-
নাবিক কলম,
ইয়থ কলম,
পাইলট কলম,
উইনসন কলম ইত্যাদি।
১৯৮৭ সালে আমি যখন হাই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি।আমি কিন্তু বাবা-মার একমাত্র বড় ছেলে এবং আমাদের পরিবারের অতি আদরের সন্তান। যা আবদার করি তাই পেতাম।আব্বার কাছে আবদার করলাম একটি উইনসন কলম নেয়ার জন্য।তিনি প্রথমে না দেয়ার সিদ্ধান্ত দিলো।পরে কাঁদলাম এবং ভাত খাওয়া ছেড়ে দিলাম।তখন আব্বা কলমটি নিয়ে দিতে রাজি হলো এবং ২৫ টাকা দিয়ে একটি উইনসন কলম আমাকে নিয়ে দিলেন।
[Edited by picsart]
তখন সবচেয়ে কমদামের কলম ছিল-নাবিক কলম।আর বেশি দামি ছিল-উইনসন কলম। উপরোক্ত কলমের মুল্যগুলো নিচের তালিকায় দেয়া হলো-
কলমের নাম | মুল্য বা দাম |
---|---|
নাবিক কলম | ৫ টাকা |
ইয়থ কলম | ১৫ টাকা |
পাইলট কলম | ২০ টাকা |
উইনসন কলম | ২৫ টাকা |
*তখনকার সময় এক কেজি বড় ইলিশ মাছের দাম ছিল ১০ টাকা।২৫ টাকায় কয় কেজি ইলিশ হবে?
অংকে ভালো না পারলে উত্তরটা দিয়ে দিচ্ছি কোন ব্যাপার না।
১০ টাকায় ইলিশ মাছ পাওয়া যায় ১ কেজি।
১ টাকায় ইলিশ পাওয়া যাবে=(১÷১০) কেজি।
২৫ টাকায় ইলিশ পাওয়া যাবে=১÷১০×২৫=২.৫ কেজি।
তাহলে ২৫ টাকায় আড়াই কেজি ইলিশ পাওয়া যেত।বর্তমান ২.৫ কেজি বড় ইলিশের দাম হচ্ছে-২০০০×২.৫=৫০০০ টাকা।এখন উইনসন কলমটির দাম পড়তেছে ৫০০০ টাকা।তাই না?
[কলমের অংশ]
নাবিক কলমের মোট চারটি অংশ।যথা-নিব,ঢাকনা বা হেড, বডি ও কালির চোং।
ইয়থ,পাইলট ও উইনসন কলমগুলো কয়েকটি অংশ।যথা-হেড, নিব,নিব ধারক,বডি,পিছনের চোং,রাবার ড্রপার,স্টিল ড্রপার কভার,সরু প্লাস্টিক পাইপ ইত্যাদি।
উপরোক্ত সব কলমে বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে।যেমন-লাল,সবুজ,বাদামী,গোলাপী ইত্যাদি।
শুধু নাবিক কলমটি প্লাস্টিকের।বাকীগুলো স্টিলের তৈরি।দামি কলমগুলোর নিব থাকে সোনালী রঙের।
[দোয়াত-কলমের সুবিধা]
দোয়াত-কলমের লেখার অনেক সুবিধা রয়েছে।সেগুলো নিচে দেয়া হলো-
কালি সাশ্রয়।কারন ৫ টাকা দিয়ে একটি দোয়াত কিনলে ১ বছর পর্যন্ত চলে।
এই কালির লেখা অক্ষত থাকে। সারাজীবন এই কালির লেখা মুছে যাবেনা।
দোয়াত কালির লেখা ঝাঁপসা হবে না কোনদিন।
এই কালির লেখা ডিসকালার হবে না কোনদিন।
দোয়াত কালির লেখা লালচে হবে না কোনদিন।
আগেকার জমির দলিল এই কালি দিয়ে লেখা জন্য স্পষ্টত থাকে।
এই কলম দিয়ে লিখলে হাতের লেখা ভালো হয় ও সুন্দর হয়।তাই বেশি নাম্বার পাওয়া যায়।
[দোয়াত-কলমের অসুবিধা]
দোয়াত-কলমের যেমন সুবিধা রয়েছে,তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে।সেগুলো নিচে দেয়া হলো-
যেখানে প্রচুর লিখতে হয়,সেখানে দোয়াতটি বহন করে নিয়ে যেতে হয়।এটা বাড়তি ঝামেলা।
পরীক্ষায় লিখতে বারবার কলমে কালি তুলতে হয়।তাতে সময়ের অপচয় ঘটে।
কালি তোলার সময় হাতের আঙ্গুলে কালি ভরে বিশ্রী দেখায়।
কলমটি নষ্ট হলে কালি চুয়েচুয়ে পড়ে সার্টের পকেট নষ্ট করে ফেলে।
নিবটি ক্ষয় হয়ে গেলে লেখার সময় খাতার পাতা ছিঁড়ে যেতে পারে।
নিবটি ক্ষয় হলে কলমটি মোটা মোটা লেখে।লেখা খারাপ দেখায়।
এই কলম হারিয়ে গেলে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়।
[উপসংহার]
প্রত্যেক জিনিসেরই সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।তবে এই দোয়াত-কলমের সুবিধার অংশটি বেশি। তাই এই কলমগুলো আমরা এখনো যদি ব্যবহার করা যেত, তাহলে আমাদের আর্থিক খরচ অনেক কম হতো।ডায়েরী লেখা ও দলিল বা কোন চুক্তিনামা এই কলম দিয়ে লিখলে অনেক ভালো ও স্থায়িত্ব হতো।
ছবির উৎস
ছবি সংগ্রহ | pixabay.com |
---|---|
ফোনের নাম ও মডেল | সিম্ফনি জেড২৫ |
ফটোএডিটর | @doctorstrips |
ক্যামেরা রেজুলেশন | ১৩ মেগাপিক্সেল |
লোকেশন | রংপুর,বাংলাদেশ |
ক্যাটাগরি | দোয়াত-কলম |
ফটো এডিট এ্যাপ | পিক্সআর্ট এ্যাপ |
বন্ধুরা পোস্টটি ভালো লাগলে আপভোট দিতে পারেন।না হলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন, কেমন?
ধন্যবাদান্ত-
আমি মোঃ নায়েব আলী,
হাইস্কুল শিক্ষক।
এলএমএএফ ডাক্তার।
একজন ইউটিউবার।
ওয়েব ডিজাইনার ও ব্লগার।
ছাদবাগান, ফটোগ্রাফ, ভিডিও,জনসেবা ও ভ্রমণ আমার প্রিয় শখ।
আমার মোটামুটি দোয়াত কলম সম্পর্কে ভাল অভিজ্ঞতা আছে। বিশেষ করে আমার যখন ডাক্তারী পাশের সার্টিফিকেট দিয়েছিল,তখন সেখানে যে লেখাগুলো লেখা হয়েছিল সেটা মূলত দোয়াত কালি দিয়ে লেখা হয়েছিল। যাইহোক ভাল লিখেছেন এবং ভালো উপস্থাপনা ছিল। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
তাহলে দেখুন এর গুরুত্ব কতটুকু।অনেক সুন্দর মতামত প্রদানের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার পোষ্টটি পড়ে দোয়াত কলম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম বিশেষ করে দোয়াত কলম এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে আমি অবশ্য কোনদিন দোয়াত-কলম দেখিও নি তা দিয়ে লেখার ভাগ্য আমার হয়নি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে আমি খুব আনন্দিত। আমি এর দোয়াত কলম এর বিষয়ে কিছু জানতাম না। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে নতুন কিছু জানতে পারলাম। অনেক শিক্ষনীয় একটি পোস্ট আশা করি এভাবে আপনি চালিয়ে যান। শুভকামনা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দোয়াত কলম শুধু বইয়ের পাতায় দেখেছি। আমি সরাসরি কখনো দেখিনি। কলমটা নিয়ে অনেক তথ্যবহুল একটি পোস্ট করেছেন। যা এই যুগের শিক্ষার্থীদের কাছে ইতিহাস মনে হবে। কিন্তু এটা ছিল শিক্ষার সোনালী অতীত।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
রাইট।অনেক সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পুরাতনকে তুলে আনতে অন্য রকম একটি সাহস লাগে। সেটা তোমার মাঝে আমি দেখতেছি। এগিয়ে যাও, দোয়া সবসময়
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ আপনাকে অনেক সুন্দর ও মুল্যবান মতামত প্রদানের জন্য।শুভকামনা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit