দ হ ন

in hive-129948 •  last year 

FB_IMG_1698168117274.jpg

গ্রামের ১৬ বছরের মেয়েরা হুট করেই গর্ভধারণ করছে৷ গ্রামে এ যেন এক মহামারী দেখা দিয়েছে। ১৬ বছরের সবকটি মেয়েরা অদ্ভুতভাবে গর্ভবতী হচ্ছে এবং ১০ দিনের মধ্যেই এক ভয়ংকর আকারের বাচ্চার জন্ম দিচ্ছে। জন্ম দেয়া বাচ্চার সারা দেহ রক্তাক্ত, ছেঁড়া ত্বক এবং বিভৎস কালো চেহারা। শিশুটির মৃত জন্ম হচ্ছে। এমন মনে হয় যেন গর্ভের মধ্যে কেউ শিশুটিকে ভীষণ বাজেভাবে আঘাত করেছে। গ্রামের পরিস্থিতি এখন খুবই অস্বাভাবিক। চারিদিকে ভয়ের মেঘ ছেয়ে গেছে। মানুষ রাতের আধারে যতটা ভয় পায়, দিনের আলোতেও ততটাই আতঙ্কে থাকে।
এই ভয়ংকর মহামারীর সর্বপ্রথম শিকার হয় অঞ্জন বাবুর ১৬ বছরের মেয়ে সূচনা। সূচনা দেখতে ভীষণ রকমের সুন্দরী, দেহের গঠন যে কাউকেই মোহিত করতে পারে। কালো ঘন চুলের মেঘের জালে যে কেউ আটকা পড়বে। হুট করে সকালে এক ভয়ংকর স্বপ্ন দেখার পর ঘুম ভাঙলো সূচনার। ঘুম ভাঙতেই পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলো। চিৎকার দিয়ে সম্পূর্ণ ঘর মাথায় তুলে নিল। পেটের এমন অসহনীয় ব্যথায় আর্তনাদ করতে করতে বিছানা থেকে মাটিতে ধপাস করে পড়লো। সূচনার মা সূচনার এমন অবস্থা দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে মেয়ের কাছে দৌড়ে চলে আসলেন।

  • মা গো খুব পেট ব্যথা করতেছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন পেটের ভেতরের নাড়িভুড়ি ছিঁড়ে ফেলছে। মা গো আমি মনে হয় বাঁচবোনা গো।
    তীব্র ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে সূচনা কথাটা তার মাকে বলল। সূচনার মা এর আগে কখনো এত ভয়ঙ্করভাবে কাঁদতে দেখেননি সূচনাকে। সূচনার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে তাকে বললেন,
    একটু সামলে নে মা আমি তোর বাপকে ডাক দিচ্ছি।
    সূচনার মা করুণ কণ্ঠে অঞ্জন কে ডাক দিল। অঞ্জন বাহিরে বেড়া তৈরি করছিলেন উঠোন টা ঘেরাও দিবেন বলে। বউয়ের এমন চিৎকার শুনে কাজ ফেলে দ্রুত পায়ে ভেতরে এলেন। সূচনাকে কাঁদতে দেখে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
    কি হইছে সূচনার মা? মেয়ে এমন করে গড়াগড়ি করতাছে কেন?
    সূচনার মা কাঁদতে বললেন,
    দেখেন না মেয়েটার পেটে বেজায় ব্যথা উঠছে। আপনি আগে ডাক্তার কে ডেকে আনেন। জলদি যান আপনে..!
    সূচনা অসহনীয় ব্যথায় কাতরাচ্ছে আর মা, মা বলে চিৎকার করছে। পাড়াপড়শি চিৎকার শুনে দেখতে এসেছেন কি হয়েছে। অঞ্জন তড়িঘড়ি করে ডাক্তার বাবুকে নিয়ে এসেছে। ডাক্তার বাবু অনেক আগে থেকেই এই গ্রামের লোকজনের চিকিৎসা করে আসছেন। নাম অশোক কর্মকার। বয়স ৫০ এর ঘরে। দাঁড়ির রঙ কালো। মাথার চুলে এখনো পাঁক ধরেনি। ডাক্তার বাবু সূচনার পেটে হাত দিয়ে টিপে টিপে দেখছেন। পেট শক্ত হয়ে আছে কিন্তু কি হয়েছে সেটা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছেননা। সাধারণ পেট ব্যথার ঔষধ লিখে দিলেন। কিন্তু এই ঔষধে পেট ব্যথা সারলোনা সূচনার। অশোক বুঝতে পারল যে এটা সাধারণ কোনো পেট ব্যথা নয়। তাই অঞ্জন বাবু কে পরামর্শ দিয়ে বললেন শহরের ডাক্তারকে দেখিয়ে আসতে। শহরের একজন ভালো ডাক্তারকে উনি চেনেন। তার ঠিকানা দিলেন অঞ্জন বাবুকে। অশোক হয়তো আঁচ করতে পেরেছিলেন কি হয়েছে সূচনার। কিন্তু নিশ্চিত হবার জন্য শহরের ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিলেন।
    অঞ্জন দ্রুত মেয়েকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। হাসপাতালের ডাক্তার শফিকা উদ্দিন প্রথমে সূচনার পেট ব্যথার কারণ জানার জন্য তার পেট টিপে টিপে দেখলেন। অশোক বাবুর মতো উনিও পেট শক্ত অনুভব করলেন। সূচনাকে জিজ্ঞেস করলেন কোনো আজেবাজে খাবার খেয়েছিল কি না, অথবা ভারী কাজ-টাজ করেছিল কি না। সূচনা না-সূচক জবাব দিল। সন্দেহবশত ডাক্তার শফিকা সূচনার আল্ট্রাসনোগ্রাফী করলেন। টেস্টে ধরা পড়ল সূচনা মা হতে চলেছে। ডাক্তার শফিকা একদম অবাক হোন নি। কতশত টেস্ট করেন, কত কতজনকে মা হবার সুখবর দিয়ে খুশি করেন তার হিসেব উনি রাখেন নি। কিন্তু একটু অবাক হলেন। প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে হাজবেন্ড তার বউকে নিয়ে আসেন। কিন্তু বাবাকে নিয়ে আসতে দেখেননি কখনো শফিকা। কিন্তু তবুও বিষয়টিকে পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে গেলেন। অঞ্জনকে নিজের চেম্বারে নিয়ে গিয়ে বসালেন।
  • অঞ্জন বাবু, ঘাবড়ানোর মতো কিছু হয়নি। এটা তো সুখবর...
  • কি সুখবর ডাক্তার সাহেবা?
    হাস্যজ্বল মুখে সুখবরের কথা শুনে অঞ্জন বাবু জানতে চাইলেন।
  • আপনার মেয়ে তো মা হতে চলেছে। আপনারার তো মিষ্টি খাওয়ানোর কথা।
    সূচনার মা হবার কথা শুনে রীতিমতো অঞ্জন বাবু ঘাবড়ে গেলেন। থরথর করে কাঁপতে লাগলেন। সূচনাও বড়সড় ধাক্কা অনুভব করলো। সেও অবাক ডাক্তারের মুখে এমন কথা শুনে। সূচনার মুখের হাবভাব দেখে এবং অঞ্জন বাবুর কপাল দিয়ে ঘাম ঝরছে দেখে ডাক্তার শফিকা জিজ্ঞেস করলেন,
    কি হয়েছে? আপনার মেয়ে মা হতে চলেছে আর আপনি খুশি হননি!
    তারপর ডাক্তার শফিকা সূচনার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেম,
    সূচনা তুমি মা হবে। একথা শুনে তোমার চেহারার রঙ উড়ে গেল কেন?
    -যার মেয়ে বিয়ের পূর্বেই মা হতে চলেছে তার বাবা কিভাবে খুশি হবে বলেন ডাক্তার সাহেব!
    অঞ্জন খুব সহজসরল মনের মানুষ। মনের ব্যথা লুকিয়ে রাখতে পারেননা। কাঁদতে কাঁদতে তাই সে শফিকাকে কথাটা বললেন।
    অঞ্জন মাথায় হাত দিয়ে অসহায় প্রাণীর মতো হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। সূচনাও কাঁদতে লাগলো। এদিকে শফিকা ভীষণ অবাক। বিয়ে হয়নি অথচ মা হতে চলল সূচনা! বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
    কি বলছেন, আপনার মেয়ের বিয়ে হয়নি?
  • না ডাক্তার সাহেবা। এখন আমি কোন মুখে যাবো গ্রামে! এলাকার লোকজনকে কি বলব? আমার তো মানসম্মান কিছুই থাকবেনা। আমাকে গ্রামের সবাই লাথি মেরে গ্রাম থেকে বের করে দিবে ডাক্তার সাহেব।
    কাঁদতে কাঁদতে একটু পর অঞ্জন আবার জিজ্ঞেস করলো, ডাক্তার সাহেব সব কাগজ ভালো করে দেখেছেন তো? কোনো ভুল হয়েছে নাকি?
  • ভালো করে দেখেই বলছি অঞ্জন। তোমার মেয়ে প্রেগন্যান্ট। আমি রিপোর্ট ভালো করে দেখেছি। রিজাল্ট পজিটিভ আসছে।
  • কিন্তু এটা সম্ভব কিভাবে? আমার মেয়ের বিয়ে হয়নি। তার স্বামী নেই তাহলে সে মা কিভাবে হতে পারে?
    শফিকা জানেন, আজকাল ভালোবাসার নামে শারীরিক মিলনের ঘটনা খুব সহজ। তাছাড়া ভয় দেখিয়ে দৈহিক চাহিদা মেটানো পুরুষের সংখ্যাও কম না সমাজে। এই ঘটনাটিকেও তিনি সেভাবেই নিলেন। কিন্তু সূচনার বাবাকে এ সম্পর্কে কিছু বলতে না চাইলেও বলতে হবে। বলাটা উচিৎ মনে হয়। বাবার মন মেয়েকে নিয়ে সবসময়ই দুর্বল। এমন কথাটা উনি হয়তো সহ্য করতে পারবেন না, কিন্তু না বললে তো আর সূচনার বাবা বুঝতে পারবেননা। তাই শফিকা বললেন,
    আমি জানিনা কথাটা আপনি কিভাবে নেবেন, কিন্তু আপনার মেয়ের বয়স মা হবার জন্য পর্যাপ্ত। যদি সে কোনো পুরুষের সাথে শারীরিক মিলনে গিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সে মা হতে পারবে।
    কথাটা শুনে অঞ্জনের মাথায় যেন বাজ পড়লো। তার মেয়ে এতটা নিচে নেমে গেল! কিন্তু সূচনা তখনই কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো,
    না মেডাম আমি কোনো পুরুষের সাথে শারীরিক মিলনে যাইনি। আমি সত্যি বলছি মেডাম।
    ডাক্তার শফিকা ভাবলেন যে হয়তো ভয়ে সে স্বীকার করতে পারছেনা। ডাক্তার শফিকা সূচনাকে শান্ত ভাবে বোঝালেন,
    দেখ সূচনা, বয়সের কারণে ভুলবশত মেয়েরা এমন পথে চলে যায়। তুমি ভয় না পেয়ে সত্যটা বলো।
    সূচনা কাঁদতে কাঁদতে বললো
    মেডাম আমার মায়ের দিব্যি খেয়ে বলছি আমি এমন জঘন্য কাজ করিনি।
    শফিকা ভীষণ অবাক হলেন। সূচনার কথায় উনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। যদি সূচনা সত্য বলছে তাহলে সূচনার গর্ভে সন্তানের ভ্রুণ জন্ম নেয়ার প্রশ্নই আসেনা। তাহলে সূচনা তার মায়ের কি মিথ্যে দিব্যি খেয়েছে?
    অঞ্জন তার মেয়েকে নিয়ে বাসায় এসেছে। সূচনার মা সেই তখন থেকে অপেক্ষা করছিলেন অঞ্জনের যখন থেকে সে তার মেয়েকে নিয়ে শহরে গেছে। অঞ্জনের মোবাইলও নেই যে তার সাথে যোগাযোগ করে জানবে মেয়ের অবস্থাটা। তাই অঞ্জন কে দেখে অস্থির হয়ে যায় সে। দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
    কি বলেছেন ডাক্তার? মেয়ে আমার ঠিক আছে তো?
    অঞ্জন বাবু রাগে দাঁত কটমট করতে করতে জোরে এক থাপ্পড় দিলেন নিজের মেয়েকে। সূচনা থাপ্পড়ের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
  • ওগো, মারছো কেন আমার মেয়েকে? কি করেছে সে?
    বিস্মিত কণ্ঠে সূচনার মা জিজ্ঞেস করলো। চোখের জল মুছতে মুছতে অঞ্জন বলল,
    তোমার মেয়ে এই মুখে চুনকালি মেখে দিয়েছে বুঝলে! মা হতে চলেছে তোমার মেয়ে। বিয়ের আগে কার সাথে অপকর্ম করে এসেছে কে জানে বল! আমি গ্রামে কি মুখ দেখাবো এখন?
    কাঁদতে কাঁদতে অঞ্জন বাবু মাটিতে বসে পড়লেন। আজ নিজেকে সেই সমুদ্রের তীরে বসে থাকতে দেখছেন অঞ্জন বাবু যেখানে উনার আশেপাশে কোনো জনমানব নেই। সূচনার মা কাঁদতে কাঁদতে বেহাল। সূচনার চুল মুষ্টিবদ্ধ করে জিজ্ঞেস করলেন,
    হারামজাদি কার সাথে অপকর্ম করেছিস তুই? কে তোর এই অবস্থার কারণ? কার পাপ নিজের পেটে বড় করছিস?
    সূচনা অসহায় হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
    মা গো, আমি জানি না মা। আমি কিচ্ছু করিনি মা বিশ্বাস কর। আমি জানিনা মা এটা কেমনে হল..!
  • তাহলে মা কি তুই এমনিতেই বনে গেলি! এখন তুই বল, যদি গ্রামের লোকজন জানতে পারে তাহলে আমরা কি জবাব দিব? তুই আমাদের কে জীবিত মেরে ফেললি রে..!
    কাঁদতে কাঁদতে অঞ্জন বাবু এবং তার স্ত্রী শেষ। এদিকে সূচনার পেটে আবারো ব্যথা শুরু হল। সূচনা কোনভাবে এই অসহনীয় ব্যথা সহ্য করে রাত পার করে। কিন্তু সকালে তার পেটে আবার ব্যথা উঠলো। আর আজ সকালে তার পেট কালকের তুলনায় অনেক বড় দেখাচ্ছে। ঠিক ছয়-সাত মাসের গর্ভবতী মহিলার মতো। কিন্তু একদিনে পেটের আকার এমন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া তো আজব ব্যাপার! সূচনার বাবা-মাও অবাক। অঞ্জন সূচনাকে আবার নিয়ে গেলেন ডাক্তার শফিকার কাছে।
    শফিকা যখন দেখলেন সূচনার পেট এতটা ফুলে উঠেছে তখন অনেকটা ঘাবড়ে গেলেন উনি। ঘাবড়ে যাওয়ার বিশেষ কারণ আছে। সন্তান গর্ভের ভেতর ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে যার কারণে পেটের আকারটাও আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু একদিনে এতটা বৃদ্ধি পাওয়া অসম্ভব। এর আগে এমন ঘটনা উনি কখনো দেখেননি। নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেল শফিক সাহেবের মন-মস্তিষ্কে। কি করবেন বুঝতে না পেরে তাড়াতাড়ি সূচনার টেষ্ট করলেন। রিপোর্ট শফিকার হাতে। শফিকা রিপোর্ট দেখে যেন আকাশ থেকে পড়লেন। রিপোর্টের মতে অহনা ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু গতকালের রিপোর্ট বলছে সে তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা। খুব অবাক হন ডাক্তার শফিকা। দুটো রিপোর্ট আবার ভালোভাবে দেখলেন। কিন্তু ফলাফল একটাই। প্রথম রিপোর্টে সূচনা তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং দ্বিতীয় রিপোর্ট অনুযায়ী ছয়মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু একদিনে তিন মাসের ভ্রুণটির ছয়মাসের ভ্রুণের মতো বৃদ্ধি? এটাতো অসম্ভব! শফিকা অঞ্জনকে সবকিছু বিস্তারিত বললেন। অঞ্জন বাবু এমনিতেই খুব ভয়ে আছেন। এখন এমন কথায় উনি আরও ঘাবড়ে গেলেন। চেহারা ঘামে ভিজে একাকার। চোখ থেকে অঝোরে জল পড়ছে। কাঁদতে কাঁদতে অসহায় অঞ্জন শফিক সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন,
    ডাক্তার সাহেবা এর কোনো উপায় হয়না? আমি গরিব মানুষ। দুবেলা কম খাই কিন্তু গ্রামে সম্মান সহিত জীবনযাপন করি। যদি মেয়ের ঘটনাটা জানাজানি হয়ে যায় তাহলে মরা ছাড়া আমার কাছে কোনো উপায় থাকবেনা সাহেব।
    শফিকার মনে অঞ্জনের জন্য মায়া বোধ জাগলো। কিন্তু এখন করার কিছুই নেই। অসহায় হয়ে উনি বললেন,
    এখন কোনো উপায় নেই অঞ্জন বাবু! গর্ভপাত করা খুব বড় অপরাধ। কিন্তু যদিও সূচনার গর্ভপাত করি তাহলে সে মারা যাবে কেননা গর্ভের সন্তান এখন অনেকটা বেড়ে গেছে। আমার কাছে ঘটনাটা একদম সহজ অথবা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। আপনারা আপনাদের ঈশ্বরকে স্মরণ করুন। উনিই হয়তো মুক্তি দিতে পারবেন!
    শফিকা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন এটি ভীষণ অস্বাভাবিক কিছু। কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত দেননি অঞ্জনকে। ডাক্তার হয়ে বিজ্ঞানের বিপরীতে গিয়ে কিছু বলাটা উনার মুখে শোভা পায়না। নিরুপায় হয়ে অঞ্জন ফিরে আসেন গ্রামে। তার স্ত্রীকে সবকিছু খুলে বললেন। দুজন খুব ভয়ানক পরিস্থিতিতে পড়েন। বুঝতে পারছিলেন না কেন এসব হচ্ছে।
    এভাবেই কয়েকদিন কাটলো। সূচনা প্রতিদিন ব্যথায় কষ্ট পায়, আর্তনাদ করে। কখনো কখনো ব্যথা খুব বেশি করে। সূচনাকে বারবার জিজ্ঞেস করলেও সে একই কথা বলছে যে সে কিছুই জানেনা। কেন, কিভাবে তার পেটে এই সন্তান এসেছে সে জানেনা। কিন্তু সূচনা তার বাবা-মাকে বলল যে,
    সে রাত্রে খুব ভয়ানক একটা স্বপ্ন দেখেছিল সেদিন। তারপর যখন ঘুম ভাঙলো তখন থেকেই তার পেটে ব্যথা শুরু হয়।
    অহনার বাবা-মা জানতে চাইলেন,
    কি স্বপ্ন ছিল সূচনা?
    সূচনা বলল,
    আমি স্বপ্নে দেখছিলাম কয়েকজন পুরুষেরা মিলে আমাকে মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। তারা সবাই লাঠি দিয়ে আমার পেটে আঘাত করছে। আমি ব্যথায় কাতরাচ্ছিলাম। চিৎকার করে বলছিলাম আমাকে আর মেরনা, ছেড়ে দাও আমাকে, আমি মরে যাব। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনেনি। তারা আমাকে নরপশুর মতো মারছিল। তারপর আমার ঘুম ভেঙে যায় আর আমি পেটে ব্যথা অনুভব করি বাবা। আমি প্রতিটি রাতে এই স্বপ্নটাই দেখি বাবা। স্বপ্ন দেখার পর আমার পেটের ব্যথা অনেক বেড়ে যায়।
    এই স্বপ্ন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই অহনার বাবা মায়ের। কেন তার মেয়ে এমন স্বপ্ন দেখে তার কোনো জ্ঞান তাদের নেই। এদিকে গ্রামের প্রায় সবাই জেনে গেছে সূচনার কথা। সবাই মেয়ের চরিত্রের উপর দোষারোপ করে, মন্দ মন্তব্য করে। অঞ্জন বাবুকে রাস্তায় বের হলে খারাপ, নেহাত খারাপ কথা শুনতে হত। গালিগালাজ পর্যন্ত হজম করতে হত। তাই এখন ঘরের চার দেয়ালের আড়ালে থেকে শুধু কাঁদেন। এভাবে কেটে যায় ১০ দিন। সূচনার পেটে আজ ভীষণ ব্যথা উঠে। সে কোনোভাবেই ব্যথা সহ্য করতে পারছেনা। মেয়ের এমন করুণ অবস্থা দেখে মারাত্মক ভাবে ভয় পেয়ে যান তার বাবা-মা। কোনোভাবেই তারা সূচনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। সূচনা শুধু চিৎকার দিয়ে দিয়ে বলছে,
    তোমরা এটা ঠিক করনি। তোমরা এর ফল অবশ্যই ভোগ করবে। এই অন্যায়ের শাস্তি তোমরা পাবেই পাবে। কেউ রক্ষা পাবেনা তোমরা...
    কিছুক্ষণ পরই সূচনা একটা অদ্ভুত শিশুর জন্ম দেয়। জন্ম দিয়েই সূচনা মারা যায়। শিশুটিরও মৃত জন্ম হয়। শিশুটির সারা দেহ রক্তে ভরা, চামড়া খুব বাজেভাবে ছেড়া, চেহারা একদম বিভৎস কালো। সূচনার মা-বাবা শিশুটিকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। গ্রামের লোকেরা এসে এসে দেখে যাচ্ছিলেন বাচ্চাটাকে। সবাই ভীষণ ভয়ও পাচ্ছিল এমন অদ্ভুত বাচ্চা দেখে। সবাই যা মুখে আসছে তা বলে দিচ্ছে সূচনার বাবা-মাকে। কেউ কেউ বলছে সূচনা কোনো ভুত বা পিশাচ ছিল। কেউ কেউ সূচনার বাবা-মাকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করলেন। অঞ্জন ও তার বউ নীরব হয়ে সব সহ্য করছিলেন। কিন্তু রাত্রে ঘটলো ভীষণ বেদনাদায়ক ঘটনা। রাতের আধারে সূচনার বাবা-মা ফাঁসি লাগিয়ে আত্মহত্যা করে নেয়। চিরতরে পৃথিবী থেকে চলে যান। গ্রামের লোকজন মনে করেন লজ্জায়, লোকনিন্দার ভয়ে তারা আত্মহত্যা করেন। কিন্তু এই আত্মহত্যা এতটা স্বাভাবিক কোনো বিষয় ছিলনা যতটা গ্রামবাসী মনে করছিলেন। এই আত্মহত্যার পেছনেও ভয়ংকর কারণ লুকিয়ে ছিল।
    সপ্তাহ দুয়েক পেরিয়ে যায়। গ্রামের লোকজন সূচনা, সূচনার পরিবার এবং সূচনার সাথে ঘটে যাওয়ার কথা ধীরে ধীরে ভুলে গেলেন। কিন্তু এই দুই সপ্তাহ পর ঠিক একই ভাবে স্বপ্ন দেখে আরোও সাতজন মেয়ে গর্ভধারণ করে। সাতজন মেয়ে ই ১৬ বছরের। আর স্বপ্নটাও সেটাই যেটা সূচনা দেখেছিল। কয়েকজন লোক মেয়েগুলোর পেটে সজোরে আঘাত করছে শক্ত শক্ত লাঠি দিয়ে। তারা চিৎকার করে, আকুতি মিনতি করে সেই লোকদের কাছে ক্ষমা চায়, তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছে কিন্তু তাদের সব অনুরোধ উপেক্ষা করে লোকেরা মেয়েগুলোকে মেরেই চলেছে। যখন স্বপ্ন ভাঙে, মেয়েরা পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে। ঠিক সূচনার মতো। ব্যথায় কাতরাতে থাকে কিন্তু কি হয়েছে, কিভাবে হয়েছে কেউ বুঝতে পারেনা। তারপরের দিন ঠিক একইভাবে মেয়েগুলোর পেট অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে। মেয়েগুলোর সাথে সাথে তাদের পরিবারবর্গও ভীষণ ভয় পেয়ে যান।
    ডাক্তাররাও ভীষণ অবাক। তাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর পূর্বে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। কোনো দৈহিক মিলন নেই অথচ মেয়েরা গর্ভবতী হচ্ছে। তাছাড়া গর্ভের সন্তান দিনদিন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে, গর্ভবতী মেয়েটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ব্যথায় কাতরায়। একটি ভ্রুণ গর্ভে নয় মাসে যে পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এই মেয়েদের ক্ষেত্রে তা হয় মাত্র ১০ দিনে। তারপর ১০ দিন পর যখন বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসে তখন তার মৃতজন্ম হয় এবং দেহ খুব বিদঘুটে আকৃতির হয়ে যায়। সাথে সাথে গর্ভবতী মেয়েটিও মারা যায়। কিভাবে এসব সম্ভব? বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দলেরা এর উপর বিশদভাবে গবেষণা চালায় কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেনা। তাছাড়া সব থেকে অবাক করার কথা হলো মেয়েগুলোর বাবা-মাও আত্মহত্যা করে মারা যায়। সবার আত্মহত্যা করার পদ্ধতি একই, গলায় ফাঁসি দিয়ে।
    গ্রামের লোকজন খুব ভয়ে এখন দিনাতিপাত করছে। গ্রামের এমন অবস্থার খবর এলাকার আশেপাশের গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। এমন ভয় ভয় অবস্থা হয়েছে যে অন্য গ্রামের লোকজনও এখন এই গ্রামে আসতে ভয় পান। রাতের আধারে তো দূরের কথা দিনের আলোতে কেউ কেউ ঘর থেকে বেরুতে নারাজ। সবাই এটাকে অশুভ অলৌকিক শক্তির প্রভাব মনে করছেন। কিন্তু এই সমস্যার তো একটা সমাধান চাই। তাই গ্রামবাসীরা সিদ্ধান্ত নিলেন যে তারা তান্ত্রিক ডেকে সমস্যাটির সমাধান করবে।
    গ্রামের কয়েকজন মিলে পাশের দুই গ্রাম পেরিয়ে একটি গ্রাম থেকে একজন তান্ত্রিককে ডেকে আনেন। উক্ত তান্ত্রিকের যথেষ্ট খ্যাতি আছে। উনি যেকোনো ভুত কিংবা পিশাচ ছাড়াতে দক্ষ। নাম শংকর তান্ত্রিক। গ্রামবাসীরা শংকর তান্ত্রিককে সাথে করে গ্রামে নিয়ে আসেন।
    গ্রামে প্রবেশ করতেই উনি কেমন জানি অনুভব করলেন। বুঝতে পারলেন এই গ্রামের বায়ু পর্যন্ত দূষিত হয়ে গেছে। তান্ত্রিক গ্রামবাসীকে জানালেন এই গ্রাম এখন অনেক শক্তিশালী দুরাত্মার কবলে। গ্রামবাসীরা উক্ত কথা শুনেই ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। তাদের গায়ের লোম গুলো খাড়া হয়ে গেলো। কিন্তু শংকর তান্ত্রিক তাদের আশ্বাস দিলেন উনি সব ঠিক করে দেবেন বলে। এতে গ্রামবাসীরা কিছুটা হলেও ভয়মুক্ত হতে পেরেছে।
    তান্ত্রিক তার ভুত পিশাচ তাড়ানোর কার্যপ্রণালী শুরু করলেন। কিছু বিধিবিধান গ্রামবাসীদেরকেও পালন করার জন্য বললেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর শংকর তান্ত্রিক চিৎকার দিয়ে উঠে পড়লেন। ভয়ের ছাপ উনার চোখে-মুখে লেপ্টে রয়েছে। গ্রামবাসীরা কি হয়েছে জানার আগ্রহ দেখালে শংকর তান্ত্রিক হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
    তোমরা কেউ রক্ষা পাবে না। এসব তোমাদের পাপের ফল। তোমাদের অন্যায়ের শাস্তি। কেউ বাঁচতে পারবেনা। ধ্বংস হয়ে যাবে এই গ্রাম। সে ধ্বংস করার জন্যই এসেছে তোদের মাঝে।
    "সে ধ্বংস করার জন্য এসেছে মানে?" কে এসেছে? গ্রামের লোকজন সবাই আরো ভয় পেয়ে যায়। কে এসেছে এর উত্তর হয়তো এই তান্ত্রিক জানে। কিন্তু তান্ত্রিক এমন ভাবে পালালো যেভাবে হরিণ বাঘের ভয়ে পালায়। গ্রামবাসীরা ভীষণ অবাক এবং আতঙ্কিত। কিন্তু ভয় তখন আরোও বেড়ে যায় যখন পরেরদিন শংকর তান্ত্রিকের মৃত্যুর খবর গ্রামবাসীদের কানে আসে...

চলবে

দহন
#পর্ব ০১

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

টাইপ: চৌর্যবৃত্তি।
এ ধরনের পোস্ট আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি Allow করে না। নতুন ইউজার হওয়ার কারণে শুধুমাত্র আপনার পোস্ট Mute করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আবার একই ধরনের কাজ করলে আপনার একাউন্ট কমিউনিটি থেকে ব্যান করা হবে।

কমিউনিটির নিয়মাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন
https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-16-aug-22

যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।

Discord server link: https://discord.gg/ettSreN493

Source: https://www.facebook.com/groups/1367649550233512/posts/1498640003801132/