এসে গেছি এসে গেছি এসে গেছি
কালবৈশাখী ঝড় উড়িয়ে, ট্রেনের ভোঁ এর তালে তালে , কোভিডের নাচনে তুরুক তুরুক করতে করতে পুরো মম চিত্তে নিতি নৃত্তে গাইতে গাইতে পুরো রজনীকান্ত স্টাইলে
সটান ল্যান্ড করলাম স্তিমিটের প্লাটফর্ম নম্বর দুশো বারোর বাংলা ব্লগে।
সবার আগে বলি আসিনি কেন - তো ব্যাপারটা হচ্ছে আসিনি কারণ আমার ভাবের ঘরে চুরী হয়েছিল। ভাবছিলাম এসে কি হবে , আসতেই পারি কিন্তু কেন আসবো ইত্যাদি বিরাট বিরাট ফিলোজফি আসছিল মাথায়, তারপর এলো কোভিড, আমিও পালালাম দিল্লী, তারপর বেঙ্গালোর পাক্কা দেড় দেড় তিন মাস। ফিরে ভাবছিলাম আসবো ওমনি প্রিয় বন্ধু বলল পরে স্তিমিত করিস আপাতত আমার সাথে ঘুরতে চ। আর আপনারা তো জানেনই এই অভাগিনীর জীবনে প্রেম বলতে ওই একটাই জিনিষ আছে, তুষার শুভ্র নগাধিরাজ হিমালয় অথবা ঘন স্যাতস্যাতে রাস্তা হারানো সুপ্রাচীন গাছের জঙ্গল। এই দুটো নিয়েই তো বেঁচে আছি। বয়ফ্রেন্ড লাথ মেরেছে, ক্রাশ পাত্তা দেই না।
মা ও আজকাল ঠিক মত সাড়া শব্দ দিচ্ছে না, ফলত বেজায় মন খারাপ নিয়ে বন্ধুকে বললাম ভাই নিয়ে যাবি ত যাব। নাহলে টাকা পইসা নাই। সে বলল ধার দিতে পারি তবে সেটা মাসে মাসে শোধ করতে হবে।
ব্যাস আর যায় কোথায়, এই প্রসঙ্গে আমার একবার একটা ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপার হয়েছিল। সেই গল্প অন্য একদিন বলবো আজকে ঘুরতে যাবার কেসটা বলি। তারপর নিলাম টাকা, দিব্যি ব্যাগ গোছাচ্ছি ওমনি মা বাবা এসে শুরু করে দিল তিন মাস ঘুরে এসে আবার ঘুরতে যাবার কি দরকার। কে বোঝাবে তাদের যে এই তিনমাস আমি গেছিলাম কাজে, আর দিল্লী বোম্বাই কে ঘুরতে যায় আপনারাই বলুন ? আর তাছাড়া আমি তো যাচ্ছি আমার প্রেমিকের কাছে , কাজেই বেশ কাঁদো কাঁদো মুখ করে তোমরা আমাকে ভালো বাসো না , আমার কেউ নেই টাইপ হ্যাজ দিয়ে তাদের রাজী করতে পাক্কা এক বেলা লাগলো।
একটা জিনিষ রিয়ালাইজ করলাম বুঝলেন, আমার বাবাটা না মাইরি বলছি বেজায় ভালো মানুষ। দিব্য বলল হাতে ব্যাঙ্কে তো কিছুই নেই টাকা লাগবে। আর এই সব ক্ষেত্রে আমি সাধারণত না বলি না, বললে ঠাকুর পাপ দিতে পারে। কাজেই দু হাত একসাথে বাড়িয়ে দিয়ে দাও নগদ দাও ফরম্যাটে দাঁড়িয়ে যায়। ভদ্রলোক বিরাট ভালো মানুষ, নগদ তো দিলেনই সাথে আরো একটা কার্ড লুকিয়ে লুকিয়ে দিয়ে দিল। বলল মা কে বলার দরকার নেই। কাছে রাখবি। আমি বিরাট ইগো নিয়ে আমার পাঁচটা কার্ড আছে বলতে গিয়েই মনে পড়লো দুটোর পিন ভুলে গেছি, একটা ব্লক হয়ে গ্যাছে আর বাকি দুটো ক্রেডিট, ধার বাকি আছে তাই ওগুলো ইউজ করা যাবে না। অগত্যা বাবার সুকন্যা হয়ে বাবাকে একটা হামি খেয়ে দিব্যি ট্যা ট্যা করে সোজা একটা উবের নিয়ে বন্ধুর বাড়ি।
গিয়ে দেখি যাচ্ছেতাই ব্যাপার। ব্যাটা উদুম তামাক টেনে বেশ একটা ঐশ্বরিক মুডে লম্বা লম্বি উল্লম্ব ভাবে শুয়ে আছে। ঠেলে ঠুলে তাকে তুলে কোনমতে বোঝালাম দ্যাখ বাপু ২০ দিনের একটা ছুটি ম্যানেজ করেছি কোনমতে। মা বাপ কেউ ফোন করবে না। কাজেই এখন গুছিয়ে নেশা করবো দুদিন। তারপর যেখানে যাবার যাব।
ভাই বিরাট ভালো ছেলে। বলল বোস। তারপর তার গোপন স্টোর থেকে বের করলো জড়ি বুটি। আহা , বিশ্বাস করুন মাইরি বলছি স্বর্গীয় জিনিষ। স্বয়ং ঈশ্বর নিজের হাতে বানিয়েছেন এইসব জিনিষ। আর ছোকরা বানাই অসাধারণ লেবেলে। পুরো বাটারের মত গলা দিয়ে নেমে যাচ্ছিল। পুরো দুটো দিন কোথা দিয়ে কি করে কাটলো জানি না, মাঝে একবার শুধু রসগোল্লা আনতে বেরিয়েছিলাম কোনমতে কিন্তু তাও গাড়ির তলায় চলে যেতে যেতে বেঁছেছি। তারপর আর ভাই রিস্ক নেয়নি। বেরোতে দেয়নি। পুরো ৫০ ঘন্টা ফুল লোড হয়ে ৫টা সাড়ে সাতশো খালি করে, প্রায় গোটা বিশেক ছিলিম আর র্যাপার শেষ করে যেদিন বেরোলাম সেদিন তুমুল বৃষ্টি। কোলকাতা ভেসে যাচ্ছে, উবের ওলা দেখাচ্ছে নৌকো নিয়ে করুনাময়ী বাস স্টান্ড যেতে হবে। এদিকে আমাদের পা ঠিক মত মাটিতে পড়ছে না, কোনমতে করুনা ময়ী পৌঁছে সোজা বাসের আপার বার্থে লম্বা লম্বি শুয়েছি, চোখ খুললাম যখন তখন শিলিগুড়ী তেঞ্জিং নোরগে বাস স্টান্ডে বাস দাঁড়িয়ে আছে, পুরো ১৮-২০ ঘন্টা কোথা থেকে কি করে কাটলো নিজেও জানি না। ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার বডিগার্ড বন্ধু হাফ বয়ফ্রেন্ড দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে, শালার নেশাও হয় না আবার বমিও করে না, আমি ছড়িয়ে পুরো মাঠ ময়দান করে ফেলি সামলাতে না পারলে।
যায়হোক আপাতত শিলিগুড়ি নেমে যেটা রিয়ালাইজ করলাম আমি নিজের ফোনটা কোলকাতা তেই ফেলে এসেছি, তারপর কোনমতে নাম্বার কপি করিয়ে ভোডাফোণ স্টোড়ে ধর্না দিয়ে একটা সেম কপিড নাম্বার কালেক্ট করে একটা কাজ চালানোর মত মোবাইল কিনে বাড়িতে ফোন করে খিস্তি খেয়ে শুরু হলো আমাদের আসল ট্রিপ। দুজনে দুজনকে বিরাট প্রতিজ্ঞা করলাম আর নেশা ভাং করবো না, যদিও এই প্রতিজ্ঞা আমরা ৪ দিনের বেশি রাখতে পারিনি। যায়হোক জয় শ্রী কৃষ্ণ বলে শুরু হলো অরুনাচল যাত্রা।
যাত্রার গল্প কাল বলবো। এখন পুজোর টাইম, বাড়ি বসে ল্যাদ খাবো আর নেটফ্লিক্স দেখবো। কাজেই অফুরন্ত সময়। সাথে একটা দুটো ছবি দিলাম আমাদের দু জনের।
Lovely diary from your side keep posting your article it is very good read .Thanks for sharing your view .
@deepak94
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit