আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা - ২০ // আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি//

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম। আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করছি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আল্লাহর রহমতে আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @easin001 আজ বাংলাদেশ থেকে বলছি।

heart-2402086__480.webp

source

প্রেম সবার জীবনে একবার হলেও আসে। আমার জীবনেও এসেছে। প্রেমে পড়া যে কত আনন্দের সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। প্রেমে পড়ার মতো সুখ পৃথিবীর আর কোথাও নাই। আর সেটা যদি হয় প্রথম প্রেম তাহলে তো কথায় নাই। জীবনের প্রথম প্রেমটা সবথেকে বেশি আনন্দের। আবার সবচেয়ে বেশি কষ্টের। প্রথম প্রেমের কথা কেউ কখনো ভুলতে পারে না। আমিও পারি নি আর হয়তো পারবোও না। আমি কখনো ভাবতে পারি নি যে আমার জীবনের প্রথম প্রেমের গল্পটা আমি সবার মাঝে শেয়ার করতে পারবো। যার কারনে আজ আমার খুবই ভালো লাগছে। যাই হোক কথা বেশি না বাড়িতে চলুন শুরু করা যাক আমার প্রথম প্রেমের অনুভুতি।

wedding-1146324__480.webp

source

আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন ভর্তি হই। আমাদের ক্লাসে মোট ১০৪ জন ভর্তি হয়। তার ভিতরে তখন আমার রোল ছিল ৬।তারপর হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখি। মেয়েটাকে আমার অনেক ভালো লাগলো। তারপর থেকে আমি খোঁজ নিতে শুরু করি। খোঁজ নিয়ে দেখি মেয়েটা আমাদের সাথে একই ক্লাসে পড়ে। শুনেতো আমার খুবই আনন্দ হলো। আসলে অনেক
ছাত্রছাত্রী হওয়ার কারনে সেইভাবে দেখা হয়েছিল না। যাই হোক তারপর সে আমাদের সাথে একই ক্লাসে পড়ে শুনে আমি ওর বেপারে আরও খোঁজ নিতে শুরু করি। অনেক খোঁজ নেওয়ার পর আমি জানতেপারি যে ওর নাম নদী। ওর রোল ছিল ২। তারপর থেকে আমি প্রতিদিন সবার আগে স্কুলে আসতাম ওকে দেখার জন্য। এভাবেই দেখতে দেখতে আমরা সপ্তম শ্রেণীতে উঠে পড়ি। ও যখন আসতো আর আমার যখন ওর চোখে চোখ পড়ে যেত তখন আমার বুকের ভিতর কেমন জানি করে উঠতো। সে এক অন্য রকম অনুভূতি। যেটা বলে বোঝানো যাবে না। ওকে দেখলে আমার লজ্জা লাগতো আবার একটু ভয়ও করতো। কারন প্রত্যেকটা মানুষ তার ভালোবাসার মানুষের কাছে দুর্বল। আমিও সেইদিক থেকে একটু দুর্বল ছিলাম। কিন্তু একদিন সাহস করে ওর সাথে কথা বলি। কথা বলতে বলতে অনেক ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে আমাদের মাঝে। এভাবেই কেটে গেল একটা বছর। আমরা অষ্টম শ্রেণিতে উঠে পড়েছি। অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর আমি প্রাইভেট শুরু করি আমাদের গ্রামের একটা স্যারের কাছে। কিছুূদিন পড়ার পর দেখি নদীর বাবা এসেছে আমরা যেই স্যার এর কাছে পড়ি ওই স্যার এর কাছে এসে বলছে তার মেয়েকে পড়ানোর কথা। শুনে তো আমি অনেক খুশি। আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে আমার বুকের ভিতর। পরদিন সকালে দেখি নদী পড়তে আসছে। আমি তো অনেক খুশি। তারপর থেকে আমি প্রতিদিন আগে আসতাম। স্যার যতক্ষণ না আসতো আমরা বসে গল্প করতাম। এভাবে কেটে গেল আরেকটি বছর। আমরা নবম শ্রেণিতে উঠে পড়েছি। কিন্তু আমি এখনো বলতে পারিনি আমার ভালোবাসার কথা।

istockphoto-1179778309-612x612.jpg

source

তারপর নবম শ্রেণিতে কিছুদিন কাটার পর একদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। তখন আমরা প্রাইভেট পড়তে আসি। আমি আর আমার দুইটা বন্ধু আসছিলাম তাছাড়া কেই আসছিল না। তারপর জালানা খুলে দেখি নদী আর ওর একটা বান্ধবী ছাতা মাথায় দিয়ে আসছে। দেখে তো আমি মহা খুশি। আমি মনে মনে ভাবতে থাকি আজ যেভাবেই হোক বলবো।ও আসলো এসে বসলো আমার সামনে। আমার তো তখন বুকের ভিতর ধুকপুক করছে। হাটু কাঁপছে। তারপর আমার একটা বন্ধু জোর করে বললো আজ তোকে বলতেই হবে। তাই বলে ওরা রুম থেকে বের হয়ে গেল।আমার ধুকপুকানি তো আরও বেড়ে গেল। তাতে কি আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ বলেই ফেলবো। তারপর আমি সাহস করে বলে ফেললাম। ও কোনো কথা না বলে চলে গেল। পরদিন ক্লাসে আসার পর আমি একটা বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতে বলি। ও বললো ছুটির পরে যেন ওর সাথে দেখা করি। আমার তো বুকের ভিতর কেমন জানি করতে শুরু করে। তারপর ক্লাস শেষ করে ছুটি হয়ে যাওয়ার পর আমি ওর সাথে দেখা করি। তারপর ও আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। আমি তো শুনে অবাক। আমার বুকের ভিতর তখন আনন্দের ঢেউ বইছে। আমার মতো সুখি মানুষ ওই মুহুর্তে আর কেই নাই। আমি অনেক আনন্দের সাথে নাচতে নাচতে বাড়িতে গেলাম।

rose-2042235_640.jpg

source

পরদিন থেকে চলতে থাকে আমাদের প্রেম। দেখতে দেখতে আমরা দশম শ্রেণিতে উঠে পড়েছি। দশম শ্রেণিতে ওঠার আগে আমরা চিঠি আদান প্রদান এর মাধ্যমে প্রেম আলাপ করতাম। দশম শ্রেণিতে ওঠার পর আমি একটা বাটন ফোন কিনি। ফোনটির নাম ছিল সিমফোনি। তারপর থেকে আমাদের প্রতিদিন ফোনে এসএমএস এবং কথা চলতে থাকে। এভাবে কেটে গেল কয়েকটা মাস। সামনে আমাদের টেস্ট পরিক্ষা। তারপর এসএসসি পরীক্ষা। আমার তো ওকে না দেখলে ভালো লাগতো না। পরীক্ষার কথা শুনে মনটা একটু খারাপ হলো। কিন্তু কি আর করার পরিক্ষা তো দিতেই হবে। তারপর ফোনে কথা দেখা করা এভাবে কেটে গেল অনেকটা সময়। চলে আসলো এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে আমরা একদিন স্কুলে বিদায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সবাইকে বিদায় দেই। একটু খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করি। ওইদিন আমরা অনেক কান্না করছিলাম। স্যারদেরকে ছেড়ে স্কুল ছেড়ে আমরা চলে যাবো। বিদায় অনুষ্ঠান শেষ করে আমরা বন্ধুরা সবাই একত্রিত হই। তারপর আমি ফোনে কথা বলেছিলাম ঠিক তখন ভেজা ভেজা চোখ নিয়ে নদী আসে এবং আমাকে জোড়িয়ে ধরে কান্না করে ফেলে। আমিও কান্না করে ফেলি। আমি ওকে বলি তোমাকে না দেখে আমি কিভাবে থাকবো। এটা শোনার পর ও আরও বেশি কান্না করতে থাকে। তারপর আমি কোনো মতে ওকে থামায়। ও তখন বাড়িয়ে চলে গেল।

wall-3627707__480.jpg

source

কিছুদিন পর আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল।আমার ছিট হয় এক রুমে আর নদীর ছিট হয় আরেক রুমে। আমি প্রতিদিন পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ওকে দেখে আসতাম। তারপর একটা দুইটা করতে করতে সবগুলো পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। তার কিছুদিন পর রেজাল্ট আসে আমরা পাশ করি। এরপর কলেজে ভর্তি হবার পালা।

adult-2539690__480.jpg

source

আমি ভর্তি হলাম এম এস জোহা কলেজে। কৃষি ডিপ্লোমাতে। আর নদী ভর্তি হলো গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজে। তারপর থেকে আমাদের ফোনে কথা হতো। তেমন একটা দেখা হতো না। আমি প্রতিদিন বিকেলে যেতাম দেখা করার জন্য। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর ওর বাড়িতে সবকিছু জানাজানি হয়ে যায়। আমি তো অনেক চিন্তার মধ্যে পড়ে যায়। কখন যানি বিয়ে দিয়ে দেয়। এভাবে কিছুদিন কেটে যায়। তারপর আস্তে আস্তে সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যায়।আমরা তো অনেক খুশি। তারপর থেকে আমাদের দিনগুলো অনেক সুন্দর কাটতে শুরু করে। তারপর থেকে শুরু হয় আমাদের আরেকটা নতুন জীবন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমাদের ক্লাসে মোট ১০৪ জন ভর্তি হয়।

এত বেশি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে থেকে দেখতে আপনি আপনার পছন্দের মানুষ নদীকে খুঁজে পেয়ে গিয়েছেন। আসলে প্রেম করতে গেলে এমন একটি ভয় ছাত্র জীবনে থেকেই যায় কখন জানি প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাবে।

আপনার এই মধুর ভালোবাসা একদিন স্বর্গের সিড়ি বয়ে হেঁটে হেঁটে বহু দূরে চলে যাবে, আপনি আর টেনশন নিয়েন না। আপনি চাইলে কয়েকটি বিরহের গান মুখস্ত করে রাখতে পারেন, সময়কালে কাজে দিবে।