নির্বাসিত নক্ষত্র ( অষ্টম পর্ব )!!!

in hive-129948 •  5 days ago 


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ শুক্রবার, ৭ ই ফেব্রুয়ারি,২০২৫।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে


1000572210.jpg

ছবিটি Pixabay নিয়ে নেওয়া এবং Canva দিয়ে এডিট করা


সপ্তম পর্বের পর


তৃপার কথা শুনে একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় ম্রিয়মান। তুমি কী ঠিক বলছ না আমার সাথে মজা করছ

আমি মজা করছি না। আমার ক‍্যান্সার আছে। এটা গত বছর ধরা পড়ে। ফুসফুসের একটা অংশে এটা। হয়তো ইনানের দেওয়া যন্ত্রণা টা আমার হৃদয়ের পরিবর্তে আমার ফুসফুসে গিয়ে আঘাত করেছে।

তোমার ক‍্যান্সার আর তুমি এভাবে সিগারেট খাচ্ছ। তুমি কী পাগল নাকী, বলে ম্রিয়মান

সিগারেটের অভ‍্যাস দুই বছরের। ইনানের সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে। ডাক্তার অনেক নিষেধ করেছে কিন্তু শুনিনি কখনও। ভাবলাম শেষ যে কয়েকটা দিন আছি এটা আর ছাড়ব না।

কানাডায় তো অনেক উন্নত চিকিৎসা রয়েছে তাহলে তুমি চিকিৎসা করাওনি কেন? ডাক্তার বলেছিল কেমোথেরাপি দিলে হয়তো কিছুটা ভালো হতাম আরও কয়েকটা বছর বেঁচে থাকতাম আমি। কিন্তু আমি সেটা চাইনি। ঠিক কার জন্য আমি বেঁচে থাকব আমার কে আছে এই পৃথিবীতে। আমি না থাকলে কার কী আসবে যাবে। এসব ভেবে চিকিৎসার মধ্যে আর যায়নি।

আমি চাইনি বেঁচে থাকতে আর। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি। তোমার দেখা আগে পেলে হয়তো আমার মধ্যে বেঁচে থাকার ইচ্ছা জাগ্রত হতো, বলে ম্রিয়মানের হাত টা চেপে ধরে তৃপা। সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমাদের তৈরি করেছিল একে অপরের জন্য। কিন্তু উনি আমাদের জুটি তৈরি করতে ভুলে গিয়েছিল। তবে আমাদের যোগসূত্র উনি ছিন্ন করেননি। এইজন্যই হয়তো জীবনের শেষ সময়ে এসে আমাদের দেখা হলো।

ডাক্তার দেখাওনি আর তুমি?প্রশ্ন করে ম্রিয়মান।

শরীর যখন বেশি খারাপ হতো তখন ডাক্তারের কাছে যেতাম। বাংলাদেশে আসার আগে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। ডাক্তার বলল আমার হাতে সময় বেশি নেই। লাস্ট স্টেজে রয়েছে আমার ক‍্যান্সার। ডাক্তার বলল আমার যেটা ইচ্ছা সেটা যেন আমি করি।

তুমি চিকিৎসা নাওনি। তাহলে ব‍্যাগে অতোগুলো মেডিসিন কিসের। জিজ্ঞেস করে ম্রিয়মান

এগুলো সব পেইন কিলার। ভেতরে যখন অস্বস্তি হয় প্রচণ্ড খারাপ লাগে তখন ঐগুলো নিয়ে থাকি। ঐগুলো অনেক টা ড্রাগের মতো কাজ করে। ঔষধ গুলো নিলে আমি আরেকটু শক্তি পেয়ে থাকি।

ডাক্তারের কথা শোনার পর আমার খারাপ লাগেনি। ভাবলাম যাক অবশেষে মৃত্যুদূত আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। তবে আমার ইচ্ছা হলো শেষ একবার বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আসার। নিজের দেশকে ভালোভাবে দেখার। আর কানাডায় আমার ভালো লাগে না। কানাডা আমার থেকে বাবা মা ভালোবাসা সবকিছুই নিয়ে নিয়েছে। ঐটা যেন আমার কাছে একটা অভিসপ্ত নগরী।

আমার বাবা মারা যাওয়ার আগে আমার জন্য অনেক কিছু রেখে গিয়েছে। যেটা দিয়ে আমার পুরো জীবন চলে যাবে আরাম আয়েসে। কিন্তু সেগুলো খরচ করার সময় নেই আমার কাছে। বাংলাদেশে আসার আগে একটা চ‍্যারিটিতে তার বেশিরভাগ অর্থ আমি দান করে এসেছি। তুমি চুপ আছ কেন।

ম্রিয়মান তার ঘোর তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ম্রিয়মান। হাজার নক্ষত্রের মধ্যে হঠাৎ একটা নক্ষত্র খসে পড়ল আকাশ থেকে। সেটা ম্রিয়মান ভালোভাবে দেখল। ঐ নক্ষত্র টা নির্বাসিত হলো আকাশের বুক থেকে। হারিয়ে গেল সময়ের পরিক্রমায় কালের যাএাপথে। মূলত এটাই তো মানুষের জীবন। মানুষ তো ঐ নক্ষত্রের মতোই। হঠাৎ সেটা খসে পড়ে পৃথিবীর বুক থেকে। বিলীন হয়ে যায় তার সমস্ত অস্তিত্ব।

চলবে......



সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



IMG-20231027-WA0008.jpg

Facebook
Twitter
You Tube



অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।


আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।





Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

Banner(1).png

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif



Heroism_Second.png


1000561739.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Daily task

1000573718.jpg

1000573717.jpg

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

গল্পটা এভাবে না আগালেও পারতো।জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়।শেষ মেষ কি হয় গল্পের শেষ তা জানতে আগ্রহ নিয়ে বসে রইলাম ভাইয়া।অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।