স্মৃতিচারণ : মিশন খেজুরের রস!!

in hive-129948 •  11 days ago 


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ মঙ্গলবার, ১২ ই নভেম্বর,২০২৪।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে


1000565082.jpg

source


আমি ছোটবেলা থেকে একটু চাপা স্বভাবের। অর্থাৎ আমার দুষ্টু বুদ্ধি ছিল অন‍্যদের থেকে বেশি। এবং এটা আমাকে দেখে কেউ বুঝতে পারত না। আমাকে দেখতেও একটু বোকা লাগে ছোটবেলা থেকেই। এবং আমি কথা কম বলায় মানুষ এটা আরও দ্রুত বিশ্বাস করে নিত। ২০১৬ সালের কথা। আমি তখন জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে ছুটি কাটাচ্ছি। দিনগুলো দারুণ যাচ্ছে। আমার সমবয়সী আমার এলাকার আরও তিনজন বন্ধু ছিল মেহেদী, তোহা এবং শিমুল। ওরা আমাকে বেশি প্রায়োরিটি দিত আমার দুষ্টু বুদ্ধির জন্য। শীতকালে আমাদের গ্রামের খেজুর গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করা হতো। এবং সেই রস থেকে তৈরি হতো গুড়। এই গুড় আবার দুই ধরনের হতো। একটা সাধারণ গুড় এবং অন‍্যটা হলো পাটালি গুড়। কিন্তু খেজুর গাছ থেকে যে রস সংগ্রহ করত সে বেশ গম্ভীর মানুষ ছিল।

মোটামুটি আমরা সবাই তাকে কিছুটা ভয় পেতাম। ডিসেম্বরের শীত। ঐদিন আমরা রাতে ব‍্যাডমিন্টন খেলছি। খেলা শেষ কর সবাই বসে গল্প করছি। এমন সময় তোহা বলল এইবছর খেজুরের রস খাওয়া হয়নি। তোহার সঙ্গে শিমুল মেহেদীও বলল হ‍্যা আমরাও খাইনি। ঐদিকে আমি নিজেও খাইনি। ওরা বলল ঠিক আছে কালই খেজুরের রস খাওয়া হয়ে থাক। ওদের কথা শুনেই আমি বুঝে গিয়েছি ওদের পরিকল্পনা গাছ থেকে চুরি করে খাওয়া। কিন্তু ওদের যা বুদ্ধি এতে করে ভালোভাবে কাজটা করতে পারবে না। ওরা তিনজন বলল ঠিক আছে তাহলে কালই খাব। আমি বললাম না কাল না। কাল ভোরে সবাই একসঙ্গে বের হবো। কিছু বিষয় লক্ষ্য করতে হবে। এবং তারপর করতে হবে পরিকল্পনা। কারণ যদি ধরা পড়ি বাড়ি থেকে এমন ধোলাই দেবে একটা মাইরও মাটিতে পড়বে না হা হা।


1000565083.jpg

Source


পরের দিন খুব ভোরে। প্রচণ্ড কুয়াশার মধ্যেও দেখলাম বাকিরা এসে হাজির। শিমুল বলল কী দেখতে হবে বল। আমি বললাম প্রথমত লক্ষ্য করতে হবে উনি গাছ থেকে রস নামাতে কখন আসে। যথারীতি চারজন একটু কৌশলে ব‍্যাপার টা লক্ষ্য করলাম। একদিন না পর পর দুইদিন লক্ষ্য করলাম। উনি মোটামুটি ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে রস নামাতে আসে। পরের দিন রাতে পরিকল্পনা করতে বসলাম। আমাদের মিশন শুরু হবে ভোর সাড়ে পাঁচটায়। অর্থাৎ উনি রস সংগ্রহ করতে আসার ঠিক এক ঘন্টা আগে। মেহেদি থাকবে রাস্তার উপর। কেউ বাগানের দিকে আসতে দেখলে আমাদের সংকেত দেবে। এবং দুই লিটারের চারটা বোতল লাগবে। ওরা বলল আমাদের চারজনের জন্য দুইটা বোতল হলেই যথেষ্ট। ওদের বললাম সেটা ঠিক আছে। দুইটা বোতলে থাকবে পানি। এবং অন্য দুইটা বোতল খালি থাকবে রস নেওয়ার জন্য।

স্বাভাবিকভাবে ওদের প্রশ্ন বোতলে পানি কী হবে। ওদের প্রশ্নের জবাবে বললাম একটা হাঁড়ি থেকে ঠিক তার অর্ধেক রস আমরা নেব এবং যতটুকু রস নেব ততটুকু পানি দিয়ে পূর্ণ করে দেব। যেন কোন সন্দেহ না হয়। কোন হাঁড়ি একেবারে ফাঁকা করে দেওয়া যাবে না। ওরা আমার বুদ্ধির বেশ প্রশংসা করল। পরের দিন সকালে প্রচণ্ড কুয়াশা। মেহেদী রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিচ্ছে। আমরা তিনজন বাগানে খেজুর গাছের নিচে। শিমুল উঠে গেল গাছে। যথারীতি হাঁড়ি নামিয়ে দেওয়ার পর দ্রুত রস নেওয়া এবং পানি দিয়ে আবার ভর্তি করে দেওয়ার কাজটা আমরা শেষ করলাম। চারটা গাছের হাঁড়ি থেকে রস সংগ্রহ করার পর আমাদের দুইটা বোতল পূর্ণ হলো। রস নিয়ে আমরা চলে গেলাম আমাদের গোপন আস্তানায়। আমাদের অভিযান সফল। এই ঘটনা এতদিন রহস‍্য ছিল। শুধু আমরা চারজন জানতাম। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।



সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



IMG-20231027-WA0008.jpg

Facebook
Twitter
You Tube



অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।


আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।





Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

Banner(1).png

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif



Heroism_Second.png


1000561739.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

রাতে বন্ধুরা মিলে ব্যাডমিন্টন খেলার মজা যেমন আলাদা ঠিক তেমনি বন্ধুদের সাথে খাজুরের রস খাওয়ার আনন্দটা আলাদা। ঠিক তেমনি স্মৃতিচারণ করেছেন আজকের এই পোস্টে। যেন অতীতের বেশ কিছু স্মৃতি স্মরণ করলাম আপনার পোস্ট পড়তে গিয়া।

দুষ্ট বুদ্ধির প্রসংশা না করে পারা যাচ্ছে না আপনার।তবে গল্পটি ভালো লাগলো।অনেকই খেজুর রস খেতো চুরি করে এটাতে মনে হয় অনেক মজা। আসলে বন্ধুদের সাথে মিলে এরকম কাজ করলে তো মজা হবেই।যতটুকু রস নিয়েছেন ততটুকু জল ঢেলে রেখেছেন আর সেজন্য রসওলা বেচারা বুঝতেই পারেনি কি হয়েছে তার সাথে হাহা।ধন্যবাদ ঘটনাটি আমাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন জন্য।

তাহলে আপনি স্বীকার করলেন যে,আপনাকে দেখতে বোকা লাগলেও আপনি খুবই চালাক।যাইহোক ভাইয়া, রস চুরির বুদ্ধি কিন্তু দারুণ ছিল।আর এতে সফল হয়েছেন এটাও মজার।আপনার শীতকালে রস চুরির স্মৃতিচারণ পড়ে ভালো লাগলো, ধন্যবাদ আপনাকে।