বাস্তব প্রেমের গল্প:) শাখি তোমায় ভালোবাসে অতৃপ্ত হৃদয় 💓 (পর্ব- ০১)

in hive-129948 •  2 years ago 

বাস্তব প্রেমের গল্প:)
শাখি তোমায় ভালোবাসে অতৃপ্ত হৃদয় 💓


couple-1934204_640.webp

সংগ্রহশালা

ঘড়িতে এগারোটা বেজেছে স্বপ্নীল দ্রুত ট্রেনে উঠে পরেছে এবং একটি আসন খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করলো। লোকাল ট্রেন তাই নির্দিষ্ট কোন আসন নাম্বার নেই, যে যার মতো আগে এসে আসন দখল করলেই হলো। ট্রেন সাড়ে এগারোটার দিকে ছেড়ে দিয়েছে। স্বপ্নীল খেয়াল করলো ঠিক তার মুখোমুখি আসনে একটি ভীষণ মিষ্টি দেখতে সুন্দরী মেয়ে বসে রয়েছে, যার চোখ দুটো হরিণীর মতো। স্বপ্নীল ভীষণ লাজুক মানুষ, একটুখানি আড়চোখে তাকাতেই কেমন যেন মেয়েটির সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। দুজনেই নম্রতার সাথে চোখ নামিয়ে নিল। স্বপ্নীল দেখতে মন্দ নয় তার মুখেও বেশ মায়াবী একটা ভাব রয়েছে। কতক্ষন চোখাচোখি হবার পর স্বপ্নীল কিছুটা এলোমেলো চিন্তা করলো, হয়তো বড় লোকের মেয়ে তাকে পাত্তা কেন দেবে ? তার নিজেকে কেমন ছোট মনে হতে লাগলো কারন সে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পোশাক আষাকে খুব বেশি স্মার্ট নয় সে। একটি স্টেশন পার হবার পর হঠাৎ ট্রেনে ভিড় বাড়তে থাকলো। এমন সময় একজন বয়স্ক মহিলা ট্রেনে উঠে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দেখে স্বপ্নীলের ভীষণ খারাপ লাগলো। এদিকে মিষ্টি দেখতে মেয়েটি তার সামনে রয়েছে, জায়গাটা ছেড়ে দিলে হয়তো মেয়েটিকে আর এক নজর নাও দেখতে পারে সে। কিন্তু স্বপ্নীল কারো কষ্ট সহ্য করতে পারে না। আর কেউ জায়গা ছাড়তে রাজি নয় কারন বেশ দূরের যাত্রা। না আর সে পারছেনা, হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে তাকে বললেন মা আপনি আসনটিতে বসুন। এই কথা শুনে বয়স্ক মহিলা একটি তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললেন বাবা তুমি দাঁড়িয়ে যাবে আমি বসবো, তা কি হয় ? না তুমি বসো আমি দাড়িয়েই যেতে পারবো। না স্বপ্নীল কিছুতেই মানলো না, বয়স্ক মহিলাকে বসিয়ে ছাড়লো। মহিলাটি মিষ্টি একটি হাসি দিয়ে বললেন বাবা তোমায় অনেক দোয়া করছি মানুষের মতো মানুষ হও, অনেক বড় হৃদয় তোমার। আশে পাশে যারা ছিল সবাই বেশ অবাক হলো স্বপ্নীলের কান্ড দেখে, কেউ বললো বোকা ছেলে, আবার কেউ বলবো এরকম ছেলে এখন পাওয়া দুষ্কর। যাক কি আর করা স্বপ্নীল দাড়িয়ে যাত্রা শুরু করেছে তবে মেয়েটি কিছুটা চোখের আড়াল হয়ে গেল। বারবার তার ঐ হরিণী কাজল কালো চোখ খুঁজে চলেছে স্বপ্নীল কারন ইতিমধ্যে বেশ ভিড় হয়ে গেছে ট্রেনে। যাক আরো একটি স্টেশন যাবার পর লোকজন বেশ কমে গেছে। এবার স্বপ্নীল মেয়েটির কাছাকাছি দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। এবার তার পাশের আসনের একটি ছেলের সাথে ওর কিছুটা কথা শুরু হলো। স্বপ্নীলের বেশ ভালো লাগছে কথা বলতে ছেলেটির সাথে আর মাঝে মাঝেই মেয়েটির সাথে চোখাচোখি চলছিল। কথা বলার এক পর্যায়ে ঐ ছেলেটি স্বপ্নীলের ফোন নাম্বার চায়। ট্রেনে বেশ শব্দ থাকায় স্বপ্নীল বেশ জোরে জোরে তার ফোন নাম্বার বলতে থাকে। এদিকে হরিণী চোখের মেয়েটি স্বপ্নীলের ফোন নাম্বার মুখস্থ করে নেয় তা আর স্বপ্নীল বুঝতে পারেনি। এভাবেই চোখাচোখি চললো পুরো রাস্তা। অবশেষে তাদের কাঙ্ক্ষিত স্টেশনে চলে এসেছে ট্রেনটি। কিন্তু দুজনের মাঝে কোন কথা আর হলো না‌। স্বপ্নীল বেশ মন খারাপ করে ট্রেন থেকে নামছিল হঠাৎ সেই মেয়েটিকে দেখলে এক পলকের জন্য। মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে এক ঝলক মিষ্টি হাসি দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।

rose-1642970_640.webp

সংগ্রহশালা

স্বপ্নীল বেশ মন খারাপ নিয়ে তার হোস্টেলে প্রবেশ করলো। তার রুমমেটরা জিজ্ঞেস করলো তাকে এমন মনমরা দেখাচ্ছে কেন। সে জবাবে কিছু না বলে একটা মিষ্টি হাসি দিল। কাপড় ছেড়ে খাবার খাওয়ার পর সে একটু পড়াশোনা করার চেষ্টা করলো কিন্তু তার কিছুই ভালো লাগছে না। যেদিকে তাকাচ্ছে শুধু ঐ মিষ্টি মেয়েটির চোখ তাকে দিশেহারা করে দিতে লাগলো, আর চলে যাবার সময়ের সেই মিষ্টি হাসিটা তার হৃদয়ে তীরের ফলার মতো গেঁথে গেছে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলো না সে। কিছুটা খাবার খেলো অনিচ্ছা নিয়ে, আর ঘুমুতে গিয়ে দুচোখের পাতা যেন এক করতে পারছেনা। কেমন যেন পুরো শরীর তার বশে আর নেই, কোন কিছু সে সামলাতে পারছেনা। রাত তখন সাড়ে বারোটা হঠাৎ তার ফোনে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো। সে ফোন রিসিভ করতেই কোন সাড়া পেলো না। কিছুক্ষণ হ্যালো হ্যালো করার পর রাগ করে স্বপ্নীল ফোন কেটে দিল। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন এলো, আবারও একই অবস্থা। স্বপ্নীলের মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে, এমনিতেই ভালো লাগছে না। তারপর আবার এ কোন অত্যাচার। এবার চিন্তা করলো আর একবার ফোন এলে আচ্ছা রকম বকা দেবে। তৃতীয় বার ফোন এলো, এবার স্বপ্নীল বেশ রাগ নিয়ে বললো হয় কথা বলুন না হয় আমাকে আর বিরক্ত করবেন না, যদি আর একবার ফোন দেন তাহলে কিন্তু আমি বকা দেব। এবার অপর পাশ থেকে সুরেলা কণ্ঠ ভেসে এলো হ্যালো আমি বলছি। স্বপ্নীল বেশ চমকে উঠলো এতো রাতে কোন এক মিষ্টি কন্ঠের অধিকারী মেয়ে তাকে ফোন করছে, কিন্তু কে সে? সে তোতলাতে তোতলাতে বললো কেকককে? মেয়েটি একটি হাসি দিয়ে বললো আমি সেই মেয়েটি যাকে আপনি পুরো রাস্তা চোখে হারাচ্ছিলেন 💓 স্বপ্নীল তার কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। সে তার শরীরের চিমটি কেটে দেখলো আর উঃ করে উঠলো। না সে বাস্তব দুনিয়ায় রয়েছে। কিন্তু সে তো সেই মেয়ের সাথে কথা পর্যন্ত বললো না তাহলে তার ফোন নাম্বার কিভাবে তার কাছে গেল। সে চুপচাপ এসব চিন্তা করতে লাগলো। অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো সুরেলা কন্ঠ কি কোথায় হারিয়ে গেলেন ? বলেই সেই পাগল করা হাসি।

স্বপ্নীল বললো আপনার সাথে তো আমার কথা হয়নি শুধু মাত্র চোখে হারাচ্ছিলাম , তাহলে আপনি কিভাবে আমার ফোন নাম্বার পেলেন যদি একটু বলতেন। মেয়েটি বললো দেখুন প্রথম যখন আপনি আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন সত্যিই তখন আমার কিছুটা অস্বস্তি এবং বিরক্ত বোধ হচ্ছিল। কিন্তু যখন আপনি ঐ বয়স্ক মানুষটিকে আপনার জায়গা ছেড়ে দিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন আপনার প্রতি আমার একটা সম্মানবোধ তৈরি হলো আর কেমন যেন আপনাকে একজন ভালো মানুষ মনে হলো। বিশ্বাস করুন আপনি যখন ঐ ছেলেটির সাথে কথা বলছিলেন তখন আমি কান পেতে আপনার প্রতিটি কথা শুনেছি আর আপনার কথা বলার ভঙ্গি এবং যে সরলতা আমি শুনেছি তাতে আপনার কন্ঠ আমার হৃদয়ে সুর হয়ে বেজেছে সারাক্ষণ। যখন আপনি আপনার ফোন নাম্বার ঐ ছেলেটিকে দিয়েছেন এতো শব্দের মাঝেও আমি মুখস্থ করে ফেলেছি। এই বলে মেয়েটি থামলো কারন এতোক্ষণ এক নিঃশ্বাসে সব বলে যাচ্ছিলো সে। এতোক্ষণে স্বপ্নীল যেন আকাশ থেকে মাটিতে পরলো। তাহলে কি মেয়েটিও তাকে ভালোবেসে ফেলেছে? আবার সে অস্থিরতায় কথা বলতে পারছেনা।


" চলবে"

এ গল্পটি আমি উৎসর্গ করছি আমাদের সবার প্রিয় এবং রোমান্টিকতায় পূর্ণ যার হৃদয় শ্রদ্ধেয় @hafizullah ভাইকে 🤗

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

বাহ ভাই অসম্ভব একটা ভালোবাসার গল্প তুলে ধরেছেন আমাদের। খুবই সুন্দর হয়েছে, আপনার লেখা গল্প। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে এতো সুন্দর একটা গল্প শেয়ার করার জন্য।

ধন্যবাদ ভাই গল্পটি পড়ার জন্য 🥀

প্রেমের গল্পের ঘোষণা কাল ই শুনেছিলাম ।আজ পড়ার সুযগ হলো । পড়েও ভাল লাগলো খুবই দ্রুত পরের পর্ব গুলো পড়ার আশায় রইলাম ।

ধন্যবাদ ভাই।
আসলে গল্পের ভীষণ চমৎকার একটি টুইট রয়েছে। তা আগামী পর্বে ইনশাআল্লাহ পাবেন।

হাফিজ ভাইয়া আমাদের প্রিয় রোমান্টিক ভাইয়া এবং আপনার এই গল্পটি হাফিজ ভাইয়াকে উৎসর্গ করলেন জেনে খুবই ভালো লাগলো। হাফিজ ভাই পড়লে অবশ্যই ওনার ভালো লাগবে হাফিজ ভাইয়ের সাথে সাথে যে আমরাও আপনার রোমান্টিক প্রেমের গল্পটি পড়তে পেরেছি খুবই ভালো লেগেছে। অসাধারণ একটা প্রেমের গল্প লিখেছেন আপনি। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

ধন্যবাদ ভাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভীষণ খুশি হলাম 🤗

খুব ভাল লাগলো গল্পটা, তবে ইদানিং এমন হয়না, যে আমি আমার সিট ছেড়ে ভাল মানুষ সাজবো, যখন তার গন্তব্যে চলে আসে তখন বলে আমি নেমে যাব আপনি বসেন, এত সময় কিন্তু সে দেখে আসছে কিছুই বলেনা যখনই নামার সময় হয় তখনই মহত্ত্ববোধ দেখায়, ধন্যবাদ সু্ন্দর একটি গল্প লেখার জন্য,

না গল্পটা এখনকার সময়ের নয় আজ থেকে আরো পনেরো বছর আগের।
ধন্যবাদ ভাই আমার গল্পটা পড়ার জন্য 🥀

খুব সুন্দর লিখেছেন গল্পের পর্ব টি। অবসর সময় হলে নানা রকম গল্প পড়ে সময় কাটানো যায়। ভালোবাসা শব্দটি জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। সবার জীবনেই একবার না একবার তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকবো

ঠিক বলেছেন ভাই অবসর সময়ে গল্প পড়ে সময় কাটাতে ভালো লাগে। আমার গল্প আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
পরবর্তী পর্ব আসছে খুব শীঘ্রই। 🤗

কি বলবো আপনি চমৎকার একটি বাস্তব প্রেমের গল্প শেয়ার করেছেন। স্বপ্নীল আর মেয়েটির গল্প পরে ভীষণ ভালো লাগলো। সত্যিই ট্রেন জার্নি গুলো রোমান্টিক হয়ে থাকে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় এই কামনাই করি।

ধন্যবাদ লিমন গল্পটার সামনের পর্বে ধামাকা আসছে।
অপেক্ষা করো 🤗

কাল রাতেই শুনলাম প্রেমের গল্প লিখছেন।
এই ধরনের গল্প গুলো পড়তে ভালো লাগে। ট্রেনে এক ঝলক দেখে ও কাউকে ভালোবেসে ফেলা যায়। ভাবা যায়।
পরবর্তী পর্বগুলো নিশ্চয়ই আরো রোমাঞ্চকর হবে।
অধীর অপেক্ষায় রইলাম।

আসলে প্রেম ঘটিত ব্যাপার হঠাৎ করেই হয়ে যায় 🤗
নিজের এক্তিয়ার থাকে না সবসময় ।
হ্যা পরবর্তী পর্বে মোড় ঘোরানো কিছু আসছে ।
ভালো থাকুন দোয়া রইল 🥀

ইস কি সুন্দর গল্প লিখেছেন ভাইয়া। ভাগ্যিস সেই ছেলেটিকে স্বপ্নীল নাম্বার দিয়েছিল বলেই মেয়েটি তার নাম্বার মুখস্ত করতে পেরেছে, না হলে তো তাদের আর কখনো কথাই হত না। খুব শান্তি পেলাম ভাইয়া গল্পটি পড়ে। ❣️

আর ভাইয়া দুঃখিত গল্পটি পড়তে একটু দেরি হয়ে গেল। 🥺

না সমস্যা নেই।
সামনের পর্ব আসছে খুব তাড়াতাড়ি।
দোয়া রইল তোমার জন্য।

অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া ☺️❣️

প্রেমের গল্প গুলো পড়তে ভালই লাগে ।আপনি পর্বভিত্তিক এত সুন্দর প্রেমের গল্প আমাদেরকে উপহার দিতে চাচ্ছেন তা ভেবে খুবই ভালো লাগলো। আপনার লেখাগুলো খুবই ভালো। সামনে আপনার পর্বগুলোর অপেক্ষা করছি ভাই ।দোয়া রইল

ধন্যবাদ ভাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
সামনে এই গল্পের তৃতীয় পর্ব আসছে।
সাথেই থাকুন।