আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২৪ || ফেলে আসা জীবনের বন্ধুত্বের স্মৃতি।

"আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২৪"

---

ফেলে আসা জীবনের বন্ধুত্বের স্মৃতি

_{^{ছবিটি পিক্সাবে থেকে নিয়ে কেনভা দ্বারা তৈরি}}

শুভ দুপুর আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে শুরু করছি। #amarbanglablog মানেই নতুন কিছু আর প্রতিনিয়ত নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলা। তার ধারাবাহিকতায় আজ এই প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু সত্যিই অসাধারণ। বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক চাপে আমরা আমাদের বন্ধুত্বের স্মৃতিগুলো ভুলতে বসেছি। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আবারও ফিরে যেতে পারবো সেই অতীতের স্মৃতিগুলোতে। এতে হয়তো ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসি আসবে খুনসুটি গুলো মনে করে আর একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস অনেক কিছু হারিয়ে ফেলার।

---

আমার এই ছোট্ট জীবনে বেশকিছু ভালো বন্ধু পেয়েছি, আর চেষ্টাও করেছি সবাইকে আপন করে নেয়ার। বন্ধুত্ব বুঝতে শিখেছি স্কুল জীবনে পা দেয়ার পর। বাবার চাকরির সুবাদে যে আবাসিক এলাকায় থাকতাম সেখানে ছোট্ট একটি স্কুল ছিল। স্কুলে পা দেয়ার সাথে সাথেই কেমন যেন একটা আনন্দ হতো। না সেটা লেখাপড়ার জন্য না, ক্লাশ রুমে বন্ধুদের সাথে খেলতে পারার আনন্দে। আমাদের প্রতিটি ক্লাশ শেষ হবার সাথে সাথেই কানামাছি, হা-ডু-ডু শুরু হয়ে যেত। কি যে একটা আনন্দ বলে বোঝাতে পারবো না। একবার হা-ডু-ডু খেলার সময় এক বন্ধুর পা ধরে টান মেরেছিলাম তখন তার রক্তে পা ভিজে গিয়েছিল। তবুও শিক্ষকদের কিছু বলেনি সে। আরো একটা মজার ঘটনা ছিল একদিন কানামাছি খেলতে গিয়ে হঠাৎ করে শিক্ষিকা চলে আসলো, যার চোখ বাঁধা তাকে সতর্ক করার সুযোগ পেলাম না আমরা। ইতিমধ্যে সে আমাদের শিক্ষিকাকে জড়িয়ে ধরেছিল না বুঝে 😄 সে যে কি পিটুনিটা খেয়েছিল সেদিন। আজ সেই স্কুলের বন্ধু গুলো সবাই যে যার মতো ব্যাস্ত, মাঝে মাঝেই হয়তো ফোনে কথা হয় , না হয় মেসেঞ্জারে চ্যাট করি। অনেকের তো কোন খবরই জানি না। মনে পড়লে ওদের কথা কেমন একটা শূন্যতা উপলব্ধি করি।

কলেজ জীবনে যখন ইন্জিনিয়ারিং পড়তে গেলাম। তখন আমার সবথেকে কাছের বন্ধু ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বী নবদ্বীপ কুমার। প্রথম দিনেই কেন জানি তাকে খুব আপন মনে হলো। আর যখন তার পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কথা শুনলাম আর তার শিক্ষা জীবন হুমকির মুখে জানতে পারলাম, তখন ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলেছিলাম আমি যদি ইন্জিনিয়ার হতে পারি তাহলে তুই ও হবি। সেই থেকে সে আমার সবথেকে কাছের বন্ধু আর আমার চব্বিশ ঘণ্টার সঙ্গী। যেগুলো দামী বই ছিল সেগুলো একটাই দুজনে মিলে পড়তাম। এভাবেই চলেছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।

আমার এখনও মনে আছে একবার ওর সেমিষ্টার ফি আটকে যায়। তখন আমি আমার পরিবারের কাছে মিথ্যে একটা অজুহাতে টাকা যোগাড় করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আর এমন ও দিন ছিল যখন বিকেলের নাস্তা হিসেবে একটা সিঙ্গারা দুজন ভাগ করে খেয়েছি। এভাবেই দুজনে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি জীবনে প্রবেশ করি।

চাকরি জীবনের শুরুতে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে আমার চাকরির আলোচনা চলছিল, সেদিন ভাইকে বলেছিলাম যদি দুইটা চাকরি দিতে পারেন তাহলে জয়েন করবো না হলে নয়। শেষপর্যন্ত তাকে চাকরি জীবনেও সাথে রাখতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমার বন্ধুটার টাকার অনেক প্রয়োজন ছিল তাই সে ভাল মন্দ বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আমি চেষ্টা করেছিলাম তাকে বোঝাতে, তবুও সে টাকাকে বড় করে দেখেছিল। আমি তাকে এবং সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। তার এখন অনেক টাকা হয়েছে মাঝে মাঝেই খবর পাই, কিন্তু আমি অতীতের কথা মনে করে মুচকি হাসি আর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। শুধুমাত্র কষ্ট লাগে যখন টাকা ছিলনা তখন সত্যিই আমাকে তার ভীষণ প্রয়োজন ছিল।

---

আমাদের উইটনেসকে সাপোর্ট করুন

https://steemitwallet.com/~witnesses

---

---

VOTE @bangla.witness as witness

OR

SET @rme as your proxy