বড়ি দেওয়ার পদ্ধতি ও আমার অনুভূতি।

আসসালামু আলাইকুম/আদাব
আমার বাংলা ব্লগ স্টিম কমিউনিটির বন্ধুগন
আমি @fatema001 বাংলাদেশ থেকে
আজকে রবিবার ,২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমার বাংলা ব্লগ স্টিম কমিউনিটির বন্ধু গণ আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করছি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রতিদিনের মতো আজকে আমি আবারো আপনাদের মাঝে নতুন এবং ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট শেয়ার করব। এর আগের বছর আমি এই বড়ি দেওয়ার পদ্ধতিটা আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম। কিন্তু তখন কিভাবে সবকিছু তৈরি করতে হয় এগুলো কোন ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছিলাম না। তবে আজকে এই বড়ি দেওয়ার অনেকগুলো ফটোগ্রাফি সাথে নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। বড়ি সাধারণত শীতকালে দেয় তবে আমাদের চাল কুমড়ো গুলো এবার দ্রুত পেকে গেছে । তাই শীতের আগেই একবার বড়ি দিয়ে ফেললাম। বড়ি প্রায় অঞ্চলে মানুষ দিয়ে থাকে। আর এগুলো খেতেও ভীষণ ভালো লাগে। বিভিন্ন সবজি বা মাছের সাথে রান্না করলে ভীষণ মজা লাগে খেতে। এমনকি এগুলো বাজারে বিক্রিও হয়। তবে এই বড়ি গুলো দিতে অনেক পরিশ্রম হয়। আর এত পরিশ্রম না করতে পেরে অনেকেই এগুলো বাড়িতে না তৈরি করে বাজার থেকে কিনে খায়। আমাদের বাড়িতে সবাই প্রায় বড়ি খেতে পছন্দ করে। আমার কাছেও ভীষণ ভালো লাগে।

তবে কিভাবে আমরা এই বড়ি তৈরি করেছি সেগুলো এখন আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। বডি তৈরি করার জন্য প্রয়োজন পাকা চাল কুমড়া ও কলাই ডাল। তবে এর মধ্যে আরো অনেক উপকরণ দেওয়া যায়। যেমন পেঁয়াজ ,পেঁপে আরো অনেক কিছু। গত চার দিন ধরে আমাদের এলাকাতে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। এর মধ্যে প্রথম দুইদিন প্রচন্ড বাতাস হয়েছিল। এত বাতাস হয়েছিল মনে হয়েছিল যেন ঝড় উঠে পড়েছে। এই বাতাসে আমাদের তেঁতুল গাছ থেকে দুটো চাল কুমড়ো পড়ে যাই। তেঁতুল গাছে আবার চাল কুমড়া ধারে এটা আপনার নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবছেন। আমাদের চাল কুমড়ো গাছটা তেঁতুল গাছের নিচে ছিল আর লতা গুলো গাছ উঠে পড়েছিল। আজ থেকে আর নামানো হয়নি আর সেখানেই ধরেছে অনেক চাল কুমড়ো। চাল কুমড়া দুটো মোটামুটি পাকা ছিল। তাই দেরি না করে আমার মা বলল অল্প করে প্রথমবার বড়ি দিয়ে ফেলি। কেননা ঝড়ে পড়া চাল কুমড়ো গুলো ফেটে গিয়েছিল। আর সেগুলো বেশিদিন সংরক্ষণ ও করা যাবে না পচে যাবে। তাই আমরা তার পরের দিন বড়ি দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেলাম।

পরের দিন সকালে উঠে মা এক কেজি কলাই এর ডাল পানিতে ভিজিয়ে রাখল। কলাই ডালগুলো ভিজিয়ে রাখলে খোসা খুব দ্রুত ই ছড়ানো যায়। এরপর রোদ উঠলে আমরা চাল কুমড়ো গুলো চামচ দিয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিলাম। আমরা বাড়িতে অনেক মানুষ ছিলাম তাই দুটো চাল কুমড়ো কাটতে বেশি সময় লাগে নি। আপনাদের প্রথমেই বলেছি বড়ি দেওয়া অনেক পরিশ্রমের কাজ। তাই আমরা অনেকজন মিলে এই কাজগুলো করেছি। এরপর বিকেলের দিকে কলাই ডালগুলো পানির সাহায্যে ভালোভাবে খোসা ছাড়িয়ে নিলাম। তারপর গামলায় ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিলাম। এরপর চাল কুমড়ো গুলো পাতলা ওড়না সাহায্যে বারবার ঘষে পানি দিয়ে পরিষ্কারভাবে ধুয়ে নিলাম। এগুলো পরিষ্কারভাবে না ধুলে বডি গুলো দেখতে লাল দেখাবে। তারপর সবগুলোর পানি ছাড়ানোর জন্য ঝুড়িতে রেখে দিলাম।

আমরা যখন অনেকগুলো চাল কুমড়ো একসাথে বড়ি দেই তখন সবগুলো পরিষ্কারভাবে ধুয়ে মেশিনে ফিনিশিং করে নিয়ে আসে। কিন্তু আজকে যেহেতু দুইটা চাল কুমড়া দিয়ে মাত্র এক কেজি কলা এর ডালের সাথে মিশিয়ে বডি দিব তাই খুবই অল্প বড়ি হবে। এইজন্য আমরা আর মেশিনে ফিনিশিং করতে না গিয়ে বাড়িতে শিল পাটায় বেটে নিলাম। আমরা অনেকবার দেখেছি বাইরে থেকে ফিনিশিং করে না এনে যদি বাড়িতে এভাবে শিল পাটায় বাটা হয় তাহলে খেতে ভীষণ সুস্বাদু হয় আর খুব দ্রুত সিদ্ধ হয়ে যায়। যখন আমরা একসাথে অনেক বড়ি দিতাম তখন আমার ফুফু অথবা আমার নানা বাড়ির কেউ আসতো ওনারা আমার মাকে সাহায্য করত। তবে আজকে এই বড়ি গুলো তৈরিতে প্রথমে আমি অল্প কিছু বেটে দিয়েছিলাম আমার আম্মুকে ।তারপর উনি সব গুলো বেটে নিলেন।

তবে কলাইয়ের ডাল ও চাল কুমড়ো একসাথে অল্প অল্প করে মিশিয়ে নিয়ে বাট তে হবে। এটা আপনি রাতেও বেটে রাখতে পারেন আবার সকালেও বাটতে পারেন। আমরা রাতে বেটে রেখেছিলাম যেন সকালে রোদ উঠতে উঠতে বড়ি গুলো দিয়ে দিতে পারি। এরপর সকালে উঠে আমরা বেটে রাখা বড়ি গুলো হাত দিয়ে ভালোভাবে মাখিয়ে শুরু করলাম। অল্প একটু একটু করে অল্প পানি দিয়ে ভালোভাবে বড়ি র ডো টা তৈরি করে নিতে হবে। ভালো ভাবে ছেনে নিতে হবে যেনো সাদা সাদা হয়ে ফুলে উঠে।

এরপর হাতের সাহায্যে চারুর উপর বড়ি গুলো বসিয়ে দিয়ে দিতে হবে। অল্প একটু একটু করে নিতে হবে আর সুন্দর করে বড়ি বসাতে হবে। আমারতো ভীষণ ভালো লাগে বড়ি বসাতে। এখানে আমি কিছুটা বড়ি বসিয়ে ছিলাম আর আমার ছোট বোন ও আমার মেজো আব্বুর মেয়ে অনেক গুলো বড়ি বসিয়ে ছিল। এরপর এটা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদে শুকাতে হবে। যদি খুব বেশি রোদ হয় তাহলে দুই দিনেই শুকিয়ে যাবে। আর যদি অল্প অল্প রোদ হয় তাহলে তিন চার দিন লাগতে পারে। এগুলো শুকানোর পর একদম পাতলা পাতলা হয়ে যাবে। আর আপনি যেমনটা বড়ি দিবেন তার থেকে কিছুটা ছোট হয়ে যাবে। তাই আমরা একটু মোটা করে বড়ি গুলো বসিয়ে ছিলাম। যাই হোক সবার সুস্থতা কামনা করে আজকে এই পর্যন্তই শেষ করছি। আপনাদের কাছে আমার আজকের পোস্ট কেমন লেগেছে সেটা অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। আশা করছি ভালো লাগবে। পরবর্তীতে আবার আপনাদের মাঝে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে হাজির হবার চেষ্টা করব। আল্লাহ হাফেজ ।