নমস্কার
শৈশবের এক টুকরো স্মৃতিচারণ:
ভাদ্র মাসের শেষ দিন। এই দিনে বিশ্বকর্মা পূজা করা হয়।কারন বিশ্বকর্মা হলেন দেবশিল্পী।বেদে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বকর্মা বলা হয়েছে। বিশ্বকর্মা মূলত সৃষ্টিশক্তির রূপক নাম।
ভাদ্র মাসে হিন্দু ধর্মের মানুষেরা ঘর-দুয়ার এবং পুরোনো আসবাবপত্র পরিষ্কার করে নতুনভাবে সাজাতে ব্যস্ত থাকেন।ঠিক তেমনি ভাদ্র মাস শেষ হওয়ার একদিন আগে সবাই সমস্ত মেশিনারি জিনিস জল দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন।যেমন-বাস,সাইকেল, বাইক থেকে শুরু করে সমস্ত মেশিনারি যন্ত্রপাতি।কারন কেউ কেউ আবার মেশিনারি যন্ত্রপাতি থাকায় বিশ্বকর্মা পূজা করে থাকেন পুরোহিত ডেকে।এছাড়া অনেকেই আবার বংশপরম্পরায় এই পূজা করে থাকেন এবং অনেক মানুষকে খেতে দেন সাদরে।
আমি যখন গ্রামে ছেলেবেলা কাটিয়েছি।তখন দেখতাম আমাদের গ্রামে বীরের বাড়ি ছিল অর্থাৎ এই বাড়ির মানুষের টাইটেল ছিল বীর।বীর টাইটেল থাকলেও তারা কিন্তু প্রভাবশালী ছিল না, খুবই সাধারণ ছিল।তবে তারা প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শেষ দিন এই পূজার আয়োজন করতেন পুরোহিত ডেকে।সেই মতো আমাদের রায় বাড়িতেও নিমন্ত্রণ আসতো।পূজার দিনে দুপুরে নিরামিষ পান্তা খাওয়ার নিমন্ত্রণ।
যতদূর মনে পড়ে,সেই বাড়ির মানুষেরা পূজার দিন চুলায় আগুন জ্বালাতো না।তাদের সারাদিন কাটতো নিরামিষ পান্তা ভাত খেয়ে।অর্থাৎ পূজার আগের দিন রাত্রে তারা হাঁড়ি ভর্তি ভাত রান্না এবং নানা পদের নিরামিষ সবজি রান্না করে রেখে দিতেন।আর সেই গরম ভাতে জল ঢেলে রেখে দিতেন।পরদিন ভোর বেলা পূজার সব ভোগের আয়োজন সেরে পুরোহিতের সামনে রাখা হতো সেই হাঁড়ি ভর্তি জল দেওয়া ভাতগুলি।যদিও তা সকাল অব্দি গরম অবস্থায় থাকতো।তারপর পুরোহিত সেই ভাতের হাঁড়িসহ বিশ্বকর্মা পূজা করতেন।আমিও আনন্দের সঙ্গে প্রতিবছর নিমন্ত্রণ পেয়ে চলে যেতাম পান্তা ভাত খেতে।
প্রথমে আমাদের দেওয়া হতো জল দিয়ে ধুয়ে রাখা কলাপাতা। যদিও কলাপাতাগুলি আমাদের বাড়িসহ অন্যান্য বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসতো তারা।কারন তাদের বাড়িতে জায়গা খুবই স্বল্প থাকায় কলাগাছ ছিল না।যাইহোক কলাপাতায় দেওয়া হতো বিভিন্ন ফল প্রসাদ।যেমন-বাতাবি লেবু,আখ,শসা,আঙুর, আপেল ইত্যাদি।ফল প্রসাদ খাওয়া হয়ে গেলে তারা সেই আগের রাতে জল দেওয়া গরম পান্তা ভাত দিয়ে যেত।তার মধ্যে সবজি হিসেবে ঘন বুটের ডাল আর কচুশাকের ঘন্ট দেওয়া হতো।সবশেষে নারিকেল কুড়ার সঙ্গে চিনি দেওয়া হতো।কি যে ভালো লাগতো খেতে বলে বোঝানো যাবে না, ঠাকুরের প্রসাদ তাই আলাদা একটা তৃপ্তি পেতাম।অনেকে আবার খাওয়ার পর বাড়ির জন্য ওই পূজা করা পান্তা ভাত নিয়ে যেত।কারন জানা যায়, ওই পান্তা ভাত খেলে অনেক অসুখ সেরে যায়।তাই পূজা শেষে অনেকেই এই কাজটি করতো।বহুদিন হয়ে গেল সেই পান্তা ভাত আর ঘন বুটের ডাল মিস করছি।তাই বিশ্বকর্মা পূজার দিনেই মনে পড়ে যায় উৎসুকভরা সেই শৈশব স্মৃতির কথা।
পোস্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।
আসলে আপু শৈশবের স্মৃতি সহজে ভুলা যায় না। আপনি বিশ্বকর্মা পূজায় পান্তা ভাত আর ঘন বুটের ডাল মিস করছেন।সত্যি আপু এমন ঘটনা ছোটবেলায় অনেক ভালো লাগে। আর এই দিন এলে এ সব কথা অনেক মনে পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে শৈশবের স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলেই এই দিনগুলোর কথা কখনো ভুলার নয়,ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে শৈশব স্মৃতি কখনো ভোলার নয়। আর সেগুলো আবার ফিরেও পাওয়া সম্ভব নয় ।আপনার শৈশবের বিশ্বকর্মা পূজার নিরামিষ ,ডাল ,পান্তা ভাত সেগুলো এখন মিস করছেন। আসলে এধরনের জিনিস মিস করার মতই ।বেশ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার সুন্দর মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বীর বাড়ির পান্তা ভাত বিষয়টি বেশ ইন্টারেস্টিং তো। এমনিতে পান্তা ভাত বেশ ভালো জিনিস খেলে পেট ঠান্ডা থাকে। বিশ্বকর্মা পূজোতে বীর বাড়ির আমন্ত্রণে পান্তা ভাত খাওয়া বিষয়টি আপনার এখনো মনে আছে রয়ে গেছে স্মৃতিতে দেখে ভালো লাগল। বেশ সুন্দর ছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলেই ইন্টারেস্টিং বিষয় ছিল ভাইয়া, ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শৈশবের সেই পান্তা ভাত খাওয়ার স্মৃতি আমারও এখনও মনে পড়ে দিদি । পহেলা বৈশাখে খাওয়া হতো। আপনি বীর বাড়ির নিমন্ত্রণে পা্ন্তা ভাত আর ফল প্রসাদ খেয়েছিলেন । এখন তা স্মৃতির ডাইরিতেই বন্ধী সেটা!
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ,অনেকেই পহেলা বৈশাখের দিনে পান্তা ভাত ও ইলিশ মাছ খেয়ে থাকেন।ধন্যবাদ আপনার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit