শৈশবের গল্প: "এক বেদেনীর গল্প"

in hive-129948 •  10 months ago  (edited)

নমস্কার

কেমন আছেন বন্ধুরা? আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন ঈশ্বরের কৃপায়।আমিও মোটামুটি ভালোই আছি।তাই চলে আসলাম আমি @green015 যথা নিয়মে আপনাদের মাঝে নতুন একটি শৈশবের বাস্তব গল্প শেয়ার করতে।

শৈশবের গল্প:"এক বেদেনীর গল্প"

IMG_20240414_043139.jpg
সোর্স

আমরা সবাই ফিরে পেতে চাই আমাদের শৈশবের কিছু সুন্দর মুহূর্তগুলিকে।কিন্তু কিছু মুহূর্ত এমন স্মৃতি হয়ে যায় যেটির সম্মুখীন আমরা দ্বিতীয়বার হতে চাই না।তেমনি একটি শৈশবের বাস্তবধর্মী গল্প বলবো আজ আপনাদের সঙ্গে।সেই স্মৃতি মনে পড়লে আজো আমার মনে বেদেনীদের নিয়ে একফালি খারাপ লাগার ধারণা সৃষ্টি হয়।তাই আমার শৈশবে দেখা সেই খন্ডচিত্র শেয়ার করবো আপনাদের সঙ্গে। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের লেখা শৈশবের গল্পখানি।তো চলুন শুরু করা যাক এই গল্পের মূল কাহিনীতে--



ছোটবেলা থেকেই এই বেদে/বেদেনী শব্দের অর্থ বলতে আমরা শুনে আসছি--যারা সাপ খেলা দেখায়, বিভিন্ন গাছের শিকড় ও ডালপাতা মানুষকে দিয়ে টাকা রোজগার করে।এদের নির্দিষ্ট কোনো বসতি নেই অর্থাৎ কয়েক দিন বা মাসের জন্য খোলা আকাশের নীচে তারা তাবু কিংবা থাকার জায়গা তৈরি করে নেয় পরিবারের সঙ্গে যেখানে সেখানেই।এরা গুনগানের নাম করে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে সম্পদ হাতানোর চেষ্টা করে।আমার এক পরিচিত দিদা তো গুনগানের চক্করে পড়ে বেদেদের কত কিছু দিয়ে নিজেই পাগলের খাতায় নাম লিখিয়েছেন।তো সেই গল্প-ই শেয়ার করবো আজ,কিভাবে দিদার এমন অবস্থা হলো।

আসলে সমাজের কিছু কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস আমাদের মনকে জর্জরিত করে ফেলে।আর এটা দেখা যায় গ্রামে বেশি।তেমনি ফুরফুরে মেজাজের এক আবহাওয়ায় আমি গিয়েছি আমার মায়ের সঙ্গে বেড়াতে মামাবাড়ি।মামাবাড়ি থেকে কিছুটা দূরে মাঠের মাঝে একদল বেদে বাসা বেঁধে থাকতে আরম্ভ করেছে।পুরুষ মানুষগুলো সাপ খেলা দেখাতে বের হয়ে পড়ে ঝোলা কাঁধে।আর বেদেনী মেয়েগুলো কম বয়সে বিয়ে করে বাচ্চা কোমরের কাপড়ে জড়িয়ে গ্রামে ভিক্ষা করতে বের হয়।

আমার মা সবসময় আমাকে বলেন--বেদেদের ফাটকি আয়।এরা সাপেদেরও অনেক ক্ষতি করে থাকেন।আর কথার জালে ফাঁসিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয় চোখে ধাঁধা দেখিয়ে।তাই মা বলেছিলেন--বেদেনীদের কখনো বিশ্বাস করবি না তাদের চেহারা দেখে।আসলে অসহায়ের মতো তাকিয়ে সুযোগ পেলেই বেদেনীরা গ্রাম থেকে চুরির কাজও করে থাকেন।

একদিন এক বেদে আসলো পাশে এক দিদার বাড়ি।তারপর কথার জালে জড়িয়ে সব রোগের চিকিৎসার গাছ রয়েছে বলেও জানালো।দিদার মন তো সেই কথা বিশ্বাস করে নিলো।দিদার স্বামী প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।তা সত্ত্বেও দিদা এই কুসংস্কারে বিশ্বাস করে।তাই সে বেদেনিকে খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেললো,আর অনেক চাল ও অন্যান্য গাছের ফল খেতে দিলো তাদের।

আসলে দিদার মনে সন্দেহের বাসা বেঁধেছে ,তাই তার স্বামীর মঙ্গল কামনায় সে বেদেদের ডেরায়ও পৌঁছে যেত কখনো সখনো গাছের শিকড় নেওয়ার উপলক্ষে।অন্যদিকে বেদেনী তো মহাখুশি,কারণ সে দিদার মাথায় হাত বুলিয়ে যা চাইছিল।দিদা বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে তাই-ই তাদের দিচ্ছিল।বিনিময়ে তারা কিছু গাছের শিকড় দিয়ে দিতো---এইভাবে প্রতিবছর ওই বেদেনীরা আমার মামাবাড়ি গ্রামে আসতো।আর দিদা তো বিশ্বাস করে জিনিস দিতো তাদের লুকিয়ে লুকিয়ে গাছড়া নেওয়ার আশায়।এইভাবে তার সন্দেহের জালে সে নিজেই আটকা পড়ে।তার স্বামীর বিশেষ ক্ষতি না হলেও সে ধীরে ধীরে মানসিক রোগী হয়ে ওঠে।অর্থাৎ যাকে প্রভাবিত করার জন্য এত কারসাজি তার তেমন কিছু না হলেও দিদার শরীর খারাপ হতে থাকে ও পাগলের মতো আচরণ শুরু করে।


আশা করি আমার আজকের লেখা গল্পটি আপনাদের সকলের কাছেও অনেক ভালো লাগবে।পরের দিন আবার নতুন কোনো বিষয় নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে, ততক্ষণ সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

পোষ্ট বিবরণ:

6nSeSEzKEwjJN68tMqgZXvpyk1cf2ihqXgmWESDgXSh21PkpkXyXwzmWEkSA7U2PjRr7VoGxjyzQFnZHCkVBWn57JTVUvY7omc512mhJJX...vDZX3Fcaov38Zxjxq21rAE9wN1b8HnrBKZamZjaRXZMJVUcaVKGLWFRFVNG6MXCo9ptvvGTefY61oasZ4TrQFVwMiYWBFUH8ivxFm1LbtvBRqtkowye4ZCeEyk.png

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং: "শৈশবের গল্প"
ডিভাইসpoco m2
অভিবাদন্তে@green015
লোকেশনবর্ধমান

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

আমার পরিচয়
আমি রিপা রায়।আমার স্টিমিট ইউজার আইডি @green015.আমি একজন ভারতীয়।আমি একজন বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করি।আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।বাংলা ভাষায় মন খুলে লেখালেখি করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।

IMG_20230822_061108.jpg
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।

Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Thanks.

আসলে এই সমস্ত গাছ-গাছড়ার কাজগুলো আমি কখনো বিশ্বাস করি না। আরেকটা বিষয় আসছে আপন ক্ষতি পরের লাথি। হয়তো উনি মাথায় যা এসেছিলেন ওই কারণেই তাদের কাছ থেকে গাছগাছড়া নিতেন দীর্ঘদিন আর তাদের চাওয়া পাওয়া পূরণ করতেন খুব সহজে একটাই আশা ভরসা ছিল এই গাছগাছারায় কাজ হবে। কিন্তু অবশেষে কাজ হল উল্টা তারা নিজেরই ক্ষতি সাধন হলো। তবে এই সমস্ত কুসংস্কার থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত আপনজনদের সাথে বুঝে শুনে চলা উচিত।

ঠিকই বলেছেন ভাইয়া, অন্যকে ক্ষতি করতে গেলে নিজেরই ক্ষতি হয়।ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার এক বেদেনীর গল্প পড়ে আপনার দিদার জন্য খারাপ লাগলো। আসলে বেদেনীরা মানুষকে গাছ গাছড়া দিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেয়।তবে এসব বেদেনীর কাছ থেকে সব সময় দূরে থাকা উচিত। ধন্যবাদ আপু সুন্দর লিখেছেন।

আপনার খারাপ লেগেছে এইজন্য দুঃখপ্রকাশ করছি আপু,ধন্যবাদ আপনাকে।

আগে বেদে মেয়েরা গ্রামের মহিলাদের কাছে এসে নানা প্রকারের তাবিজ,কবজ দিতো বাচ্চাদের ও বুড়োদের দাঁতের পোকা ফেলাতো গাছের শিকারে সাহায্য এবং আপনার দিদার মতো অনেক কাহিনি শুনেছি মানুষের ক্ষতি করতো তাবিজ কবজ দিয়ে। আপনার দিদাও ওনাদের জালে ফেঁসে গিয়েছিল। এবং পাগলের মতো আচরণ করা শুরু করেছিলো।ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।

আসলে ওইসব তাবিজ,কবজ সবই ভুয়া।ধন্যবাদ আপনাকে।

আসলে এক সময় আমাদের গ্রামেও এই বেদেনী গুলো আসতো এবং গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোদের ঠকিয়ে অনেক টাকা ইনকাম করে চলে যেত, যেমনটা হয়েছে তোমার এক দিদার সাথে। তবে এটা সত্যি কথা যে, এই মানুষগুলোকে একেবারেই বিশ্বাস করা যায় না। এরা চোখে মুখে মিথ্যা কথা বলে এবং এমন ভাবে কথা বলে যে তাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য হতে হয়। তবে সচেতন মানুষ যারা, তারা কখনো এদের পাল্লায় পড়বে না।

একদম ঠিক বলেছো দাদা👍.তবে এরা আমাদের গ্রামেও আসতো কিন্তু কিছুটা দূরে অন্য গ্রামে বাসা বেঁধে থাকতো।ধন্যবাদ তোমাকে।

এরা থাকার জন্য বেশি গ্রামই চয়েস করে নেয় বোন। গ্রামের সহজ সরল লোকদেরেরা এরা খুব সহজেই ঠকাতে পারে সেজন্য।

হুম দাদা,কারন গ্রামের মানুষেরাই কুসংস্কারকে প্রাধান্য দেয়।

আসলে এরকম লোকদের থেকে আমাদের সকলকে দূরে থাকা উচিত। কারণ এই লোকগুলো প্রতিনিয়ত তাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য যেকোনো কিছু করতে পারে৷ এভাবেই তারা প্রতিনিয়ত মানুষকে প্রতারণা করে আসছে। এই বেদেনীর গল্পের মধ্যেও ঠিক সেরকম একটি ঘটনা ঘটেছে৷ তার কাছ থেকে সকলে গাছ গাছালি নিত যাতে করে তাদের উপকার হবে। তবে তা তো হতোই না তার থেকে উল্টো হয়ে যেত। এর ফলে অন্যদের অনেকটাই ক্ষতি হয়ে যেত৷ ধন্যবাদ এরকম মূল্যবান একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য৷

একেবারেই ঠিক, এইসব ঠকবাজি লোকেদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে।ধন্যবাদ ভাইয়া।