১ম পর্বঃ ট্রেন জার্নি [ কিশোরগঞ্জ টু ভৈরব ]

in hive-129948 •  2 years ago 

05-11-2022

২১ কার্তিক ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় অনেক ভালো আছেন 🌼। যাক, আমি ভালো আছি। তবে আজকে আবারো ট্রেন জার্নির নতুন এক অভিজ্ঞতার গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলে এলাম! আপনারা হয়তো বিরক্ত! বারবার শুধু ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা শেয়ার! বিরক্ত হওয়াই কথা আসলে। কিন্তু ট্রেন জার্নিতে প্রতিবারই নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। আর সে অভিজ্ঞতাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে ভালোই লাগে! বৃহস্পতিবার আর শনিবার বোধহয় ট্রেন জার্নির স্পেশাল এপিসড হওয়া উচিত! কারণ এই দুইটা দিন ট্রেন জার্নি করে একবার বাড়িতে যাওয়া হয় আবার ট্রেনে করেই ভৈরব আসা হয়! ভাবছি এই দুইটা দিনে স্পেশাল ট্রেন জার্নির এপিসোড শেয়ার করবো, হাহাহা!

IMG20221105112446.jpg

সপ্তাহের দুইটা দিন সপ্তাহের ছুটির দিন থাকে! আর আমাদের পাওয়ার প্লান্টে আমাদেরও এই দুইটা দিন ছুটি থাকে! অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের পর শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে! আর এ দুদিন আশুগঞ্জ বসে থাকাও ভালো লাগবে না! তাই ছুটে চলে যায় বাড়িতে। বেশি দূরের রাস্তাও নয়! আগে তো ফেনী থাকা হতো! চাইলেই আর সপ্তাহে এক দুদিন বাড়িতে আসা সম্ভব হতো না! লং জার্নি করলে শরীর একদম নিস্তেজ হয়ে যায়! যাদের লং জার্নির অভ্যাস আছে তাদের কাছে হয়তো ব্যপারটা সহজ মনে হবে। যায়হোক, বাড়িতে যাওয়ার সময় আমার বন্ধু রমজানের সাথে গিয়েছিলাম। যেহেতু স্টুডেন্ট দুজনই তাই ট্রেনে টাকা দেয়া হয়না! টিটি এখন প্রায় আমাদের চিনেই ফেলেছে! রমজানের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়! অনেকটা পথ যেতে হয় ট্রেনে করে।

IMG20221105102749.jpg

আমাদের শেষ সম্ভল নাসিরাবাদ এক্সপ্রস। সেই যমুনা ব্রিজের এখান থেকে ছেড়ে আসে এবং একদম চট্রগ্রাম চলে যাবে। ট্রেন যেহেতু লোকাল এজন্য প্রত্যেক স্টেশনেই দাড়াঁয় ! যাদের রেস্ট নিয়ে নিয়ে ভ্রমণ করার সহ্য আছে আমার মনে হয় তারাই এ ট্রেনে চড়ে। যেহেতু কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব কাছেই। আর যেতেও বেশিক্ষন লাগে না। তাই এ ট্রেন দিয়েই চলে যায়। আরেকটা ব্যাপার হলো সম্পূর্ন ফ্রিতে একদম আপনি যেতে পারবেন। কোনোরকম টাকাই লাগবে না! যাক, আমি অবশ্য রমজানকে বলেছিলাম ময়মনসিংহ থেকে আসার সময় দুটা সিট বুকিং করে নিয়ে আসতে। কারণ পরে আর সিট পাওয়া যায় না। ময়মনসিংহ স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় ছেড়ে আসে। কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে আসতে আসতে সাড়ে দশটা বা এগারোটা বেজে যায়! মাঝে মাঝে সাড়ে এগারোটাও বেজে যায়। এটা নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল কখন আসবে আসলে!

IMG20221105102605.jpg

আমি সকাল নয়টায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ি। আমাদের বাড়ি থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে ৪০-৪৫ মিনিটের মতো লাগে! সকাল সকাল বাস পেয়ে গেলে তারও কম সময় লাগে। সকাল সকাল বাহিরে অনেক রোদ ছিল! বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আর বাসের জন্য দাড়াঁয়নি। সোজা অটো করে চলে আসি নান্দাইল চৌরাস্তা! এখানে সব জায়গায় যাওয়ার জন্য যানবাহন পাওয়া যায়। সকাল সকাল সিএনজি আছে। কিন্তু সিএনজি আবার সিট ফিল আপ না করে ছাড়বে। কিন্তু আমার ট্রেন যদি এসে পড়ে তাহলে তো ঝামেলায় পড়ে যাবো। এজন্য ভাবতেছিলাম সিএনজি দিয়ে যাবো কিনা! এমন সময় দেখি কিশোরগঞ্জগামী এমকে সুপার বাস চলে আসছে! ব্যাগ নিয়ে বাসে উঠে পড়ি! বাস আর বেশিক্ষণ দাড়াঁয়নি। নান্দাইল চৌরাস্তা থেকে বাসা ভাড়া ২০ টাকা! স্টুডেন্ট যেহেতু তাই ১০ টাকা দিলাম!

কিশোরগঞ্জ আসতে আসতে সকাল দশটা বেজে যায়! টেনশনে ছিলাম যে ট্রেন পাবো কি না! তাড়াতাড়ি অটো করে চলে যায় একরামপুর স্টেশনে। সেখান থেকে আরেকটি অটো নিয়ে সোজা চলে যায় কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে! একি! স্টেশনে গিয়ে দেখি একদম ফাকাঁ! শুধু কিছু ফার্নিচার আছে! আমার ঠান্ডা কদিন ধরেই। ভাবলাম এক কাপ চা খেয়ে নিলে মন্দ হয়না! স্টেশনের পাশেই একটি টং এর দোকান ছিল। সেখান থেকে এক কাপ দুধ চা খেয়ে নিলাম। গলাটা কিছুটা গরম হলো! দশটার উপরে বেজে গেছে! ট্রেন এখনও আসেনি । স্টেশনে বসে রইলাম। সাড়ে দশটা বাজে! তবুও ট্রেন আসে না। আজ এতো লেইট করছে! ফোন দিলাম রমজানকে! ট্রেন কোন পর্যন্ত আছে! রমজান বললো কিশোরগঞ্জ এর কাছাকাছি এসে পরেছে! এরই মাঝে মাইক দিয়ে জানানো হলো যমুনার ব্রিজ থেকে ছেড়ে আসা চট্রগ্রামগামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস চলে আসতেছে। সবাইকে এক নাম্বার প্লাটফর্মের এখানে দাঁড়াতে বললো!

IMG20221105121534.jpg

আমি এক নাম্বার প্লাটফর্মের কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম! কিন্তু কিছুক্ষণ পর একজন অপরিচিত লোক! হাতে একটি ব্যাগ! পড়নে শার্ট আর লুঙ্গি! আমার কাছে এসে বললো, 'ভাই আপনার ফোনটা দিবেন, মায়ের সাথে দু মিনিট কথা বলবো! ' লোকটা দেখে আমার সন্দেহ হলো! শুনেছি এসব বলে ফোন নিয়ে চলে যায়। পরে আর খোজেঁও পাওয়া যায় না। তাই আর লোকটাকে ফোন দেয়নি! কিন্তু লোকটাকে পরে আর চোখে পরেনি! রেলস্টেশনে এমন লোকজনের অভাব নেই। এজন্য একটু সতর্ক সাবধানে চলাফেরা করতে হয়! আপনারা যারা ট্রেনে করে জার্নি করেন অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন! বিশেষ করে ট্রেনে উঠার সময় পকেট মেরে দেয়, ফোন নিয়ে চলে যায়! এদের থেকে সাবধানে থাকাই ভালো।

ঠিক এগারোটা বেজে বিশ মিনিটের সময় ট্রেন এসে হাজির! রমজান আমাকে অবশ্য বলেছিল প্রথম বগীতে সে থাকবে। এজন্য আমি রেল স্টেশনের একটু সামনে চলে যায়! ট্রেন দাঁড়াতেই দেখি প্রথম বগীর ভিতরে রমজান বসে আছে। জানালার ভিতর দিয়ে আমার ব্যাগটা রমজানের কাছে দিয়ে দেয়। ভিতরে মোটামোটি অনেক মানুষজন। কিছু মানুষ এ স্টেশনেই নেমে পড়ছে! নামার পর উঠে পরলাম ট্রেনে! রমজান বন্ধু আগে থেকেই দেখা যায় সিট বুকিং করে রেখেছে। সিটটা জানালার পাশে হলে ভালো হতো। কিন্তু এই ট্রেনে সিট যে পেয়েছি এটাই তো বিরাট ব্যাপার,হাহাহা! ঘড়িতে তখন সাড়ে এগারোটা! ঢাকা থেকে এগারোসিন্ধু এক্সপ্রেস স্টেশনে প্রবেশ করবে। তার মানে ক্রসিং করবে তারপর নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ছাড়বে! আরও কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে তাহলে! এগারোসিন্ধু এক্সপ্রেস আসলে তারপর ছাড়বে। কি আর করা! অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন আসবে এগারো সিন্ধু এক্সপ্রেস ট্রেন!

চলবে...


DeviceOppo A12
Photographer@haideremtiaz
LocationW3w
Date05 November, 2022


10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ট্রেনে তো ভালোই ভিড় দেখা যায়। আপনারা সিট পেয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। কোন পাওয়ার প্ল্যান্ট এর কথা বললেন? চাকরী পেলেন নাকি ইন্টার্নি করছেন? কিশোরগঞ্জ এ বহু আগে গিয়েছিলাম এগাড়োসিন্দুর নামের এক ট্রেন এ করে সম্ভবত। আমার এক আংকেল এর বাড়ি আছে সেখানে।

ইউনাইটেড আশুগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টে ইন্টার্নি করছি ভাই! এগারোসিন্ধু দিয়ে একবার এসে পড়েন কিশোরগঞ্জ 😁

মাশ আল্লাহ। যেনে ভালো লাগলো ভাই। ভালো যায়গায় ইন্টার্নি করতেছেন। সুযোগ থাকলে এখানেই ঢুকে যাইয়েন ভাই। চাকরীর বাজার অনেক খারাপ।

জি ভাই দোয়া করিয়েন 🌼

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আপনার ট্রেন জার্নির ভালোই অভিজ্ঞতা আছে দেখছি। প্রতি সপ্তাহে দুই বার যাতায়াত করলে অভিজ্ঞতার ঝুলি পুষ্ট হওয়া টাই স্বাভাবিক। আপনার যেমন ট্রেনে যেতে ভালো লাগে, আমারও তেমনি ট্রেন জার্নি টাই বেশি পছন্দ। তবে আমাদের এখানে বিনা টিকিটে যাতায়াত করার তেমন সুযোগ নাই। আমি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনলাইনে টিকিট বুক করে যাতায়াত করি। ফলে সিট পেতে সমস্যা হয় না। ধন্যবাদ আপনাকে।

আমাদের এখানে ফ্রিতে ট্রেন জার্নি করা যায় দাদা! স্টুডেন্ট হলে তো কথায় নেই। ধন্যবাদ আপনাকে 🌼

ট্রেন জার্নিটার আবার এপিসোড আছে, এটা আবার আপনি পর্ব আকারে শেয়ার করবেন শুনে অবাক হলাম। স্টুডেন্টদের ট্রেনে টাকা নেয় না এটা তো জানা ছিল না। তাহলে আপনি আর আপনার রমজান বন্ধু তো ফ্রি ফ্রি যাওয়া আসা করেন মনে হয়। স্টুডেন্টদের কাছ থেকে বাস ভাড়া কম রাখে এটা আমি জানি। কারো জন্য কিংবা কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করলে তখন চা এর চেষ্টা পাই। লোকটা মনে হয় কথা বলতে চেয়েছিল আপনি তো দিলেন না ফোন। আর আপনার বন্ধু আগে থেকে সিট বুকিং দেয়ার কারণে হয়তো সিট পেয়েছেন।

জি আপু! স্টুডেন্ট হলে ফ্রিতে যেতে পারবেন তবে সেটা ঢাকার বাইরে প্রযোজ্য হবে মনে হয়! ধন্যবাদ আপু 🌼

আমার কাছে ট্রেন ভ্রমন সবসময়ই দারুন লাগে। বাবার চাকরির সুবাদে প্রায় সময়ই ফ্রি যাতায়াত করতাম। আপনার ট্রেন ভ্রমন কাহিনী শুনে সেই পুরনো দিনের কথা মনে পরে গেলো। স্টেশনে কখনো কোন অপরিচিত মানুষকে কিছু দেয়া কিংবা নেয়া একদমই ঠিক নয়, আপনি মোবাইল না দিয়ে ভালো কাজ করেছেন। বসার আসন পেয়েছেন জেনে ভীষণ খুশি হলাম।

জি ভাইয়া লোকটিকে দেখে সুবিধার মনে হয়নি! তাই আর ফোন দেয়নি। ধন্যবাদ ভাইয়া 🌼

ভাইয়া ভালই তো প্রতি সাপ্তাহে ফ্রীতে ট্রেনে বাড়িতে আসা যাওয়া করেন। টিটির সাথে ভালই সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তাই টিটিও কিছু বলে না। লোকাল ট্রেনে কম টাকায় যেতে ভালই লাগে। তবে প্রতি স্টেশনে দাড়ায় সেটা আর ভাল লাগে না। আমি প্রায় সময় বৃহস্পতিবারে তিতাস ট্রেনে বাড়িতে যায়। তিন ঘন্টা লেগে যায় ঢাকা থেকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া যেতে। আপনার ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা পড়ে ভালেই লাগলো ধন্যবাদ ভাইয়া।

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তিতাস ট্রেন মনে হয় লোকাল আপনার এজন্য লেট করে । চট্রলা এক্সপ্রেস দিয়ে আসলে এত লেট করবে না । ধন্যবাদ আপনাকে