প্রথমবার চাকরির ইন্টার্বিউ-এর অভিজ্ঞতা

in hive-129948 •  2 years ago 

06-10-2022

২১ আশ্বিন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


fire-fighting-4495488_1280.jpg

copyright free image from pixabay

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আপনারা জানেন যে আমি আপুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। এর অবশ্য কারণ কয়েকটি আছে। প্রথম কারণ ছিল একটা চাকরির ইন্টার্ভিউ ছিল। আসলে ছোট বেলা থেকেই সবার স্বপ্ন থাকে সরকারি জব করার। আমারও অবশ্য ব্যতিক্রম নয়। তাই তো এখনও ডিপ্লোমা শেষ না করে একটা ইন্টার্ভিউ দিলাম। আপনারা সবাই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সম্পর্কে জানেন। আকাশে উড়ার স্বপ্ন যেন সবার থাকে। আমি যেহেতু ডিপ্লোমাতে ইলেকট্রিক্যাল সাবজেক্ট নিয়ে পড়ছি। আর ডিপ্লোমাও তো শেষ। এখন শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাকি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে আবেদন করেছিলাম পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে। আমার এক ফ্রেন্ড বলেছিল বিমান বাহিনীতে সার্কুলার দিয়েছে। আবেদন করার জন্য বলে। যদিও আমার প্রথমে ইন্টারেস্ট ছিল না পরীক্ষা দেয়ার। বন্ধু তখন বলেছিল একসাথে দুজনে পরীক্ষা দিবো। আমি তখন ফোনেই আবেদন করে ফেলি। ফি হিসেবে ২০০ টাকা নিয়েছিল।

যাক, কিছুদিন পর ওয়েবসাইটে দেখলাম পরীক্ষা দেয়ার তারিখ দিয়েছে। আমার রোল খোঁজাখুঁজি করে জানতে পারলাম পরীক্ষা দেয়ার তারিখ পরেছে ০২ তারিখ সকাল আটটায়। আমার বন্ধু মেহেদী বলেছিল বিমান বাহিনী যথেষ্ট রোলস এন্ড রেগুলেশনের মধ্যে কাজগুলো করে থাকে। প্রয়োজনী যত কাগজপত্র আছে সব নিয়ে যেতে বলে। আমি বাড়ি থেকে আগেই কাগজপত্র নিয়ে এসেছিলাম। ফাইলে সবসময় কাগজগুলো থাকে। তবে ঝামেলা হলো সবগুলো সত্যায়িত করতে হয়। সার্টিফিকেট, মার্কশিট, জন্মসনদ, নাগরিকত্ব সনদ সবগুলো সত্যায়িত করতে হয়। ইউটিউব দেখে আরও কিছু দেখে নেয়। মেহেদী আমাকে বলেছিল ক্লাস দশম শ্রেণীর ফিজিক্স, গণিত, ইংরেজী থেকে প্রশ্ন করে থাকে। একটু পড়লেই পারা যায়। আমি একটু সাহস পেলাম। ইউটিউব এ কিছু ভিডিও দেখলাম। আপুর বাসায় ওয়াইফাই ছিল। এজন্য কিছু শিখে নিলাম। ক্লাস টেনের বই নেই। এজন্য কিছু বেসিক দেখে নিলাম। যাক, ২ তারিখ পরীক্ষা ছিল। সেটাও আবার সকাল আটটায়। আপুর বাসা গেন্ডারিয়া। আর যেখানে পরীক্ষা হয় সেটা হচ্ছে তেজগাঁও বিমান বাহিনীর তথ্য ও নির্বাচনী কেন্দ্রে। এখান থেকে বেশ ভালোই দূরে।

সকালে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। কিভাবে যাবো সেটায় ভাবতেছিলাম। ৬:৩০ টার দিকে বৃষ্টি একটু কমলো। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হয়ে পড়লাম। বাসায় ছাতাও ছিল না। আর সকাল সকাল যানবাহন তেমন পাওয়া যাবে না ভাবছিলাম। আর প্লেন করেছিলাম বাইক দিয়ে যাবো। বাইক দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে। কিন্তু ঝামেলা হলো বৃষ্টি তখনও টুপ টুপ করে পরছে। রেলগেইট এ সিএনজি বা বাইক পাওয়া যায়। কয়েকটা সিএনজিকে বললাম কিন্তু তারা যাবে না। যাও একটা সিএনজি পেয়েছিলাম ভাড়া চেয়ে বসল অনেক বেশি। একটু সামনে এগোতেই দেখলাম বাইকার দাড়িঁয়ে আছে। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তেজগাঁও বিমানবন্দর যাবে কি না! বাইকার রাজি হলো কিন্তু ভাড়া চেয়ে বসলো ২৫০ টাকা। এখান থেকে কাছেই তেজগাঁও,ভাড়াটা একটু বেশি চেয়ে বসলো। আমি তখন ২০০ টাকা বললাম। তারপর রাজি হয়ে গেল। আর বৃষ্টির মধ্যে যেতে হবে। শরীরে জ্বর ছিল। রাত থেকে ঠান্ডাও লেগেছিল। বাইকে গেলে তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে। আটটার আগে সেখানে থাকতে হবে। মাথায় হেলমেট লাগিয়ে বাইকে উঠে পড়লাম। সকাল সকাল বাতাসের সাথে বৃষ্টি। মাথায় বৃষ্টি পড়লে জ্বর আরও বেড়ে যাবে। তাই হাতের ফাইল মাথার উপরে রেখে রাখলাম। বাইকের স্পিডে বৃষ্টির পানি যেন শরীরে এসে পরছে। শার্ট প্রায় ভিজে যায়। তারপর সাড়ে সাতটার দিকে সেখানে পৌঁছে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অনেকেই এসেছে পরীক্ষা দেয়ার জন্য।

ভিতরে প্রবেশ করতেই আমাদেরকে বলে লাইনে দাড়াঁনোর জন্য। তারপর ফাইল থেকে আবেদন পত্র, এসএসসি সার্টিফিকেট, জন্মসনদ, নাগরিকত্ব সনদপত্র বের করতে বলে। আর যাদের কাছে এগুলোর মধ্যে যেকোন একটি কাগজ না থাকলে সামনে গিয়ে দাঁড়াতে বলে। ভাগ্য ভালো আমার কাছে সবগুলো কাগজ ছিল। আমার কাগজ চেক করে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়। তারপর ফোন একটি ড্রয়ারে রেখে দেয়। ড্রয়ারে লক লাগিয়ে চাবিটা পকেটে করে আমার সাথে নিয়ে যায়। উপরের দুতলায় পরীক্ষা হবে। প্রথমে হবে আইকিউ পরীক্ষা। আর সেটা ১০০ নাম্বারে হবে। টাইম দিবে ৫০ মিনিট। রুমে প্রবেশ করতেই একটি ওএমআর খাতা দেয়। সেখানে বৃত্ত ভরাট করার জন্য। প্রথমেই রোল, তারিখ, এন্ট্রি নাম্বারের জায়গায় বৃত্ত ভরাট করতে বলে। সঠিকভাবে সবগুলো বৃত্ত ভরাট করে নেয়। তারপর পরীক্ষা শুরু বলতেই বৃত্ত ভরাট করা শুরু করে দেয়। আইকিউ পরীক্ষা সহজ হয়েছিল। ২৫০ জনের মতো পরীক্ষা দিয়েছিল। সেখান থেকে নিবে ৪০-৫০ জনের মতো। আমি ধরেই নিয়েছিলাম আমার আইকিউ এ টিকতে পারতো। ফাইনালি আমি আইকিউ এ টিকে যায়। তারপর শুরু হয় ইংরেজি পরীক্ষা। সেটা আবার ৫০ নাম্বারে হবে। টাইম দেয়া হয়েছিল ২৫ মিনিট। ইংরেজিও সহজ হয়েছিল। এটাও টিকতে পেরেছিলাম। তারপর ফিজিক্স আর ম্যাথের পরীক্ষা শুরু। ফিজিক্স ২৫ নাম্বার ও ম্যাথ ২৫ নাম্বার করে টোটাল ৫০ নাম্বার। টাইম দেয়া হয়েছিল ২৫ মিনিট। ফিজিক্স একটু কঠিন লেগেছিল। ভেবেছিলাম এবার বাদ পড়ে যাবো। পরীক্ষা ভালো হয়নি।

ঠিক ২০ মিনিট পর রিচাল্ট দিলো। ফাইনালি আমি এটাও টিকতে পারলাম। আমার তো খুব ভালো লাগতেছিল। তিনটা ধাপ অতিক্রম করে আসতে পেরেছিলাম। তারপর নয়জনকে সিলেক্ট করা হয় মেডিকেল এর জন্য। তার মধ্যে আমি একজন ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেখানেই। মেডিকেল এ গিয়ে বাদ পড়ে গেলাম। কিছুটা মন খারাপ হয়েছিলাম। তবে দারুণ একটি এক্সপেরিয়েন্স তো হলো। সামনে আরও ভালো কিছু আছে এ কথাতেই নিজেকে যেন সান্তনা দিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে এসে পড়লাম। তবে আমার কাছে ভালো লেগেছিল যে, তিনটি ধাপ অতিক্রম করে মেডিকেল পর্যন্ত গিয়েছিলাম। যায়হোক, আপনারা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছেন আমার প্রথম চাকরির ইন্টার্ভিউ এর অভিজ্ঞতা কেমন হয়েছিল। আর বেশি কথা বাড়ালাম না। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম। আল্লাহ হাফেজ 🌼।



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

প্রথমবার চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে অনেকগুলো ধাপ পার করেছেন। সত্যি আমি অবাক হয়েছি আসলে মানসিকভাবে প্রস্তুতি থাকলে আর লেখাপড়া মোটামুটি করলে যে কোন চাকরির ক্ষেত্রে কোন একটা পজিশনে যাওয়া যায়। আপনার দক্ষতা এবং পরীক্ষা সবগুলি ভালো হয়েছে দুর্ভাগ্য মেডিকেলে গিয়ে বাদ পড়লেন। এটা খুবই দুঃখজনক ছিল আবার চেষ্টা চালিয়ে যান ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে ।

জি ভাইয়া আমি এক্সপেরিয়েন্স এর জন্য দিয়েছিলাম অবশ্য। সামনে আবার দিব দেখি।