গল্প পোস্ট
ক্লাস নাইনে পড়ার সময়, তখন ২০০৯ সাল। আমরা বেশ কয়েকজন বান্ধবী মিলে স্কুলে যাচ্ছিলাম। স্কুল যাওয়ার পথে স্কুল থেকে খানিকটা দূরে একটি জাম গাছ ছিল। তখন জাম পাকবে এমন একটা মুহূর্ত। আমরা খেয়াল করে দেখেছি হায়ড়ি জাম, কোরিয়ান জাম এবং খুজে জাম এমন তিন রকমের জাম হয়ে থাকে। তবে তার মধ্যে কোরিয়ান জামগুলো একটু আগেই পাকে। ওই জাম গাছটা ছিল কোরিয়ান জাম গাছ। তাই স্কুলে যাওয়ার সময় আমাদের ওই জাম গাছের দিকে চোখ পড়ে যেত কারণ সেটা একদম রাস্তার পাশে বড় একটি গাছ। গাছটা সুন্দরভাবে ঝাঁকড়া। যাহোক একদিন আমরা স্কুলে যাচ্ছিলাম। গাছের দিকে লক্ষ্য করতে দেখলাম গাছের মধ্যে একজন ছেলে আমাদের থেকে ৫/৭ বছরের বড় হতে পারে জাম পাড়ছে এবং খাচ্ছে। নিচে আর একজন ছোট বয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এই ছেলেটা আমাদের বয়সী। মূলত তারা দুইজন এসেছে জাম খেতে। গাছের দিকে আমাদের সবারই নজর পড়লো কিন্তু তার গাছে থাকা অবস্থা দেখে আমরা আর তাকালাম না। সে গাছের মধ্য থেকে বলল
পিয়ারা খাবে
কথাটার অর্থ বুঝতে পারলাম না আমরা কেউ চুপচাপ গাছের নিচ দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছিলাম। এরপর খেয়াল করলাম সে আরব ২-৩ বার বলল। তবে আমরা সবাই বলাবলি করলাম মানুষটার টাল নাকি। জাম গাছে উঠে জাম খাচ্ছে, আর বলছে পেয়ারা খাবে। ততক্ষণে আমাদের মাথায় খেলছিল না।যাইহোক আমরা আর কোন কিছু মনে করলাম না। এর পরের দিন একই টাইমে আমরা স্কুলের দিকে যাচ্ছি। আমরা বেশ কয়েকজন আটটা সাড়ে আটটার দিকে স্কুলে পৌঁছে যেতাম, ক্লাস শুরু হওয়ার আগে একটা প্রাইভেট পড়তাম। যাই হোক এই দিন আবার লক্ষ্য করে দেখলাম সেই মানুষটা গাছের মধ্যে জাম খাচ্ছে। আমাদের দেখি হঠাৎ বলল 'পেয়ারা খাবে'? আমরা সবাই হেসে পড়লাম। মানুষটা গাছের মধ্যে থেকে হঠাৎ করে বলল সোনারা হাসছো কেন? আমাদের মধ্য থেকে এক বান্ধবী বলল; আপনি কি টাল! জাম গাছে উঠে,পেয়ারা খাওয়ার কথা বলছেন? তখন মানুষটা কি যেন বলল। আমার মনে হল আস্তে আস্তে নোংরা ভাষায় কিছু বলছে, এমনটাই কানে আসলো। আমাদের বান্ধবীদের মধ্যে থেকে একজন বলল আপনি বেশি বেশি করে খান। আমরা সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম। সে গাছের থেকে আবার বলতে থাকলো পেয়ারা খাবে না? একাধিকবার বলতে থাকলো পেয়ারা খাবে না। তখন আমাদের বান্ধবীদের মধ্যে থেকে একজন বলল দেন। তাই বলে সে পিছিয়ে জাম গাছের দিকে এগিয়ে গেল। আমার খুব খারাপ লাগছিল।
আমি বললাম এই জাম খেতে হবে না। প্রাইভেট এর সময় হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে আরো একজন বলল আচ্ছা লোকটা পেড়ে দিচ্ছে, কিছু নিয়ে যায় সমস্যা কি। এরপর দুইজন মত গাছের দিকে এগিয়ে দাঁড়ালো। তখন লোকটা গাছের মধ্যে থেকে কিছু জাম পেড়ে দেওয়ার ভঙ্গি করল, আর বলতে থাকলো পেয়ারা জাম খাবে গো, রস রস জাম পেড়ে দেয়। ততক্ষণে আমরা বুঝে ফেললাম তার কথার ইঙ্গিত কি ছিল। আর এদিকে গাছের নিচে থাকা ছেলেটা এই দিনও সাথেই ছিল। সে হাসতে থাকলো। নিশ্চয়ই ছেলেটা আগে থেকেই জানে গাছে থাকা মানুষের চিন্তাধারা ও কথাবাত্রা। জাম গাছের কাছে যাওয়া দুই বান্ধবীকে বলতে থাকলাম, জাম খেতে হবে না চলে আয়। তারা দুই গাধা বুঝতে পারল না ছেলেটার মতিগতি। ছেলেটা গাছ থেকে বলল, আমি জাম দেবো। যে খেতে চাই, সে ক্যাচ ধরবে। আমার ওই দুই বান্ধবীর মধ্যে একজন আরেকজন ঠেলাঠেলি করে বলল আমি আগে ধরবো। ততক্ষণে বুঝতে পারছেন মেয়েরা দুই হাত উঁচা করলে ওড়না উচা হয়ে যায়, বুকের গোপন স্থান নজরে আসে। আর গাছ থেকে একজন ব্যক্তি ভালোভাবেই তা দেখতে পারে। মূলত এটাই ছিল সেই বেয়াদব ইভটিজিং কারী মানুষের লক্ষ্য। তবে আমার দুই বান্ধবী না বুঝতে পারলেও আমরা পিছনে যারা ছিলাম বুঝে ফেলেছিলাম। লোকটার চাহনি দেখে নিশ্চিত হয়ে গেছিলাম আমরা।
আমি তখন সাথে সাথে আমার বান্ধবী একাধিক বার ডাক দিলাম। বললাম তোদের জাম খেতে হবে না। আমি আমার ভাইয়াকে বলে আমাদের বাগান থেকে জাম পেড়ে এনে দেবো তোদের, যত লাগে খাবি। ততক্ষণে তারা আমার কথা শুনছিল না হাত উঁচু করেছে। আর সেই ছেলেটা লোভ দেখিয়ে একটা একটা করে দিতে থাকলো। ততক্ষণে তারা দুইজন হাত উঁচু করেছে, ওই মানুষ টার মনের যে চিন্তাধারা ছিল সেটা সুযোগ করে নিয়েছে। এতক্ষণে আমি আর থেমে ছিলাম না। দ্রুত গিয়ে। তাদের হাত ধরে টেনে আনার চেষ্টা করলাম। যখন ইভটিজিং কারী মানুষের বিষয়টা তারা বুঝতে পারছিল না, আমি এক বান্ধবীর গালের ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলাম। এরপর আমার সাথে যারা ছিল তারা ঐ দুজনাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে দ্রুত স্কুলের দিকে চলে আসলাম। ততক্ষণ এরা দুইজন তো আমাদের উপর রেগে আগুন। এরপর তাদেরকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে বললাম ওই লোকটার উদ্দেশ্য কি এবং কথার উদ্দেশ্য কি। তখন সবাই বুঝতে পারল, 'পিয়ারা খাবে' বলতে সে আমাদের ইঙ্গিত করে বোঝাচ্ছিল। আর তার ইচ্ছে ছিল প্রত্যেক জন যেন তার থেকে জাম ক্যাচ ধরি। আর ওই মুহূর্তে হাত উঁচা করার কারণে বুকের ওড়না উঠে যাবে, সে জাম গাছ থেকে আমাদের সবার বুকের দিকে লক্ষ্য করতে পারে। আর এটাই ছিল ওই খারাপ চিন্তা করা ইভটিজিং কারির মনোভাব। এরপর আমরা এই বিষয়টা ম্যাডামদের মাধ্যমে স্যারের কানে দেই। এরপর থেকে দেখা গেল স্যার কোনোভাবে ম্যানেজ করে নিয়েছে, তাই আর সেই ছেলেটা কোনদিন এভাবে গাছে আসেনি।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | অতীত ঘটনা |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s-50mp |
Photo editing app | PicsArt |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
কিছু কিছু বখাটে ছেলে আছে যার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মেয়েরা শিকার হচ্ছে।এটা সত্যি অনেক দুঃখজনক বিষয়। ওই ছেলেগুলো আপনাদের ইন্ডাইটেটলি বাজে কথা বলছিল এটা আমি বুঝতে পেরেছি যাইহোক ধন্যবাদ আপনাকে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে বাজে ছেলেরা এমনই করে। তবে আপনার দুই বান্ধবী তো জাম খাওয়ার নেশায় পড়ে ছেলেটার খারাপ ইঙ্গিতের কথা বুঝতে পারেনি। ছেলেটাকে কষিয়ে চড় দেওয়া উচিত ছিলো। যাইহোক ইভটিজিং এর সাথে আপোষ করা কখনোই উচিত নয়। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ভাইয়া বিষয়টা শেয়ার করেছি এই জন্য যে যেন অন্যরা সজাগ হতে পারে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit