গল্প: ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখার গল্প

in hive-129948 •  last month 


আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগে সকলকে স্বাগতম


IMG_20250120_153720.jpg

Photography device: Huawei P30 Pro-40mp


গল্প


আমি যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। তখন প্রত্যেক বৃহস্পতিবার আর শুক্রবারে বিটিভিতে ও একুশে টেলিভিশনে সিনেমা হতো। সাদাকালোর সেই সিনেমা গুলো দেখার জন্য আমরাও বেশ অধীর আগ্রহ করতাম। শুক্রবারে স্কুল ছুটি থাকলেও বৃহস্পতিবার এ হাফ স্কুল। ফোর ফাইভ এ ক্লাস ছুটি হতে দুইটা পার হয়ে যেত। এদিকে সিনেমা শুরু হয়ে যেত দেড়টার দিকে। ঠিক এমনই সিনেমার জন্য বেশ বদ অভ্যাস হয়ে গেছিল আমাদের অনেকের। স্কুলের পাশেই বেশ কয়েকটা বাড়িতে টিভি ছিল। বাড়িওয়ালারা ভালো সিনেমা শুরু হলে সাউন্ড জোরে দিত। অন্যান্য দিন একুশে টেলিভিশনে কখন জানি সিনেমা হতো, টিফিন টাইমে আমরা সিনেমা দেখার জন্য এক আন্টির কাছে উপস্থিত হতাম। সেই আন্টির মেয়েটা আমাদের এক ক্লাস নিচে পড়তো। তার দেখাদেখি আমরাও উপস্থিত হয়ে যেতাম। একদিন সিনেমা দেখতে উপস্থিত হয়েছি। খুব সুন্দর অ্যাকশনের সিনেমা হচ্ছে। সিনেমায় নায়ক ছিল জসিম। আমরা জানি জসিমের সিনেমা গুলো খুব অ্যাকশনের হত। জসিম থাকলেই শাবানা থাকবে। তাদের অনেক সুন্দর জুটি ছিল।

IMG_20250120_153710.jpg


সিনেমার নামটা আমার মনে নেই। তবে সিনেমার অভিনয়ের মধ্য দিয়ে হঠাৎ নায়িকার বিশেষ একটা কষ্টের অভিনয় সামনে আসে। যেখানে নায়িকা খুবই কষ্টে পড়ে যায়। বাপ মা মরে যায়, স্বামী জেলে চলে যায়। এমনই করুন একটা অভিনয় চলছিল। করুন অভিনয় দেখতে খুব কষ্ট লাগতো। নায়ক নায়িকা হারামীদের দ্বারা কষ্টের শিকার হলে খারাপ লাগতো। আর নায়ক নায়িকা যখন হারামিদের কাছে জিতে যেত, সেটা দেখে খুবই আনন্দ লাগতো। এমনই একটা করুন মুহূর্ত চলছে। করুন মুহূর্তটা দেখতে খুবই কষ্ট লাগছিল। একদম মন থেকে ফিল করছিলাম যেন বাস্তব। নায়িকার কান্না দেখে আমাদের ভেতরে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমরা তিন-চারজন বান্ধবী আর সে বাড়ির আন্টির মেয়েটা সহ আরো কয়েকজন মানুষ সিনেমা দেখছিলাম। এবার হঠাৎ করে আমার এক বান্ধবী মিরাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আরে সে তো আমাদের পাশেই ছিল। হঠাৎ করে গায়েব হলো কোথায়। হঠাৎ মনে হলো হয়তো হিসু করতে গেছে। তাই আর সেদিকে খেয়াল না করে আবারো আমরা সিনেমা দেখছি। এদিকে আমাদের হাতে কেসিও প্লাস্টিকের ঘড়ি লক্ষ্য করছি কয়টা বাজলো। কারণ এখনো ক্লাস বাকি আছে।

IMG_20250120_153643.jpg


আন্টি আন্টির বাড়ির লোকজন ও গেস্ট খাটের উপর বসে সিনেমা দেখছে। আর আমরা খাটের পাশে সানের উপর একটি খিলি পার্টিতে বসে। টিভিটা একটি শোকেসের উপর রাখা ছিল। সিনেমাই নায়িকার কান্না বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের কানে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। তখন আমরা সবাই লক্ষ্য করছি কান্না করছে কে এখন। কে বলল বিড়ালের শব্দ। কে বলল বাড়ির বাইরে স্কুলের কোন ছেলেমেয়েরা হয়তো মারামারি করেছে তারা কান্না করছে। কিন্তু অনুভব করা গেল কান্নার মাত্রা জোর পাচ্ছে। এদিকে মিরাকে দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ করে আন্টি বলল দেখতো খাটের নিচে কান্নার আওয়াজ। এরপর আমাদের মধ্যে বসে থাকা এক বড় আপু খাটের নিচে তাকিয়ে দেখলো, খাটের নিচে মীরা। মীরা খাটের নিচে ঢুকলো কেন, আর কান্না করছে বা কেন? তাকে দেখে বার করা হলো। তার কান্না যেন থামছে না। সে কেন কান্না করছে বলছে না। এরপর সে বড় আপু তাকে কোলে বসালো, বলতে থাকলে বাবু কি হয়েছে তুমি কান্না করছো কেন। আমরা প্রশ্ন করতে থাকলাম তুমি কান্না করছো কেন।

বেশ কিছুক্ষণ পর মীরা মুখ খুলল। তার কথাতে আমরা সব হেসে উঠলাম। কষ্ট আমাদেরও লেগেছিল। তবে কান্না করতে হবে এতটা সিরিয়াস হয়েছিলাম না। কিন্তু মেয়েরা আবেগ ধরে রাখতে পারছিল না। তাই সে কান্না করে ফেলেছে। আমরা দেখে ফেললে সে লজ্জা পাবে। তাই সে খাটের নিচে চলে গেছে। সেখান থেকে কান্নার বেগ চেপে রাখতে না পেরে আওয়াজ হয়ে গেছে জোরে। মূলত সিনেমায় নায়িকার কান্না আর কষ্ট দেখে মীরা বেশি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছিল। পরে তার কথা ছিল কেন নায়িকার বাবা-মা মারা গেল। কেন নায়িকার স্বামী জেলে গেল। সে বিষয়টাকে একদম একান্ত নিজের মতো করে ভেবে নিয়েছে। সত্যি সেই কথা মনে হলে মনে পড়ে আগেকার সিনেমা গুলো কত টাই না মনমুগ্ধকর ছিল। আর আগের মানুষেরা কতটা সহজ সরল ছিল। এখনকার বাচ্চারাও বোঝে এগুলো অভিনয়। তাই সেভাবে তারা মূল্যায়ন করতে জানে না। কিন্তু আগেকার সিনেমাগুলো স্কিন ফ্রেশ না হলেও অন্তরে জায়গা করে নিত। হয়তো এখন আর সে সমস্ত সিনেমার প্রতি টান নেই। কিন্তু একটা সময় ছিল এই সমস্ত সিনেমাগুলো ছিল আমাদের প্রাণকেন্দ্র। এক ঝলক সিনেমা দেখতে পারলে অনেক শান্তি পেতাম। এমনকি ক্লাসের স্যার এর মার খেয়েও সিনেমা দেখা বন্ধ করতাম না। টিফিনের ফাঁকে সুযোগ পেলে সিনেমা দেখতে চলে যেতাম স্কুলের পাশের আন্টিদের বাসায়। মাঝেমধ্যে তারা ডিভিডি দিয়েও সিনেমা দেখতে। বাড়ির পাশে স্কুল হওয়ায় আন্টির মেয়ে স্কুলে যেত না। আন্টি তাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে স্কুলে পাঠাত। বলতো টিফিনে খাওয়ার সময় তোকে সিনেমা দেখতে দেব। স্কুলে না গেলে ভালো রেজাল্ট না করলে দেখতে দেব না। তাই বিভিন্ন কারণে টিফিনের টাইম তাতে আমাদের অধিকার সুযোগ হয়ে যেত। জয় হোক আন্টি আন্টি দের সাথে থাকা অন্যান্য বড় মহিলারা মিরাকে বুঝালো। এরপর মীরা কান্না বন্ধ করে শান্ত হল।

PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png


পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ



received_434859771523295.gif


পোস্ট এর বিবরণ


বিষয়গল্প
ফটোগ্রাফি ডিভাইসHuawei P30 Pro-40mp
ক্রেডিট@jannatul01
দেশবাংলাদেশ
ব্লগারআমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি


আমার পরিচয়


আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।


2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif



99pyU5Ga1kwqSXWA2evTexn6YzPHotJF8R85JZsErvtTWXkFkcDg5ibdZCen8p3uDxVoV5q1NZLwPPeBug1jepgK3e2Zdtv5gFKAP1J8S7nez1ced4GsXM4bVpnBb88Np6.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমার আজকের কাজ সম্পন্ন

Screenshot_20250120_161549.jpg

Screenshot_20250120_161511.jpg

Screenshot_20250120_161434.jpg

অতীত স্মৃতি স্মরণ করতে আমারও খুব ভালো লাগে। ছোটবেলায় থেকে এভাবে আমিও টিভি দেখেছি। একদম আমার অতীতের কিছু স্মৃতি মনে করার সুযোগ হলো আপনার এই গল্প পড়ে। তবে আগের সিনেমা দেখার অনুভূতিগুলো বেশি তীব্র ছিল। আমার কাছেও মনে হতো একদম বাস্তব ঘটনা। এখন কিন্তু আর সেই ফিল নেই।

আপনার স্মৃতি স্মরণ করে দিতে পেরেছি জেনে ভালো লাগলো।

মেয়েটার এমন অনুভূতি জেনে সত্যি আমার মায়া লাগলো। ছোটবেলায় আমিও জসিমের সিনেমা গুলো দেখতাম এবং ভালো লাগতো। একটা সময় সিনেমা দেখার জন্য মানুষের বাড়িতে যেতাম। দেখতাম সেখানে অনেক মানুষ উপস্থিত হতো। আসলে আগে তো টিভি কম ছিল। সিনেমা কম হতো। তাই যে যার মত সুযোগ করে সিনেমা দেখতো। স্কুল থেকেও মনে হয় দেখেছি অনেকবার। বেশ ভালো লাগলো মীরার ঘটনা জেনে।

গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ

শৈশবে স্মৃতিগুলো আসলে খুবই মধুর হয়ে থাকে। স্কুলে পড়া অবস্থায় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখার খেলা করা সহ নানা রকম কাজ করতাম। ক্লাস ফাঁকি দেয়ার ভেতরে অন্যরকম মজা ছিলো। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপু ধন্যবাদ অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া

স্কুল জীবনে সিনেমা দেখার মজাই আলাদা। তবে স্কুল জীবনে আমরাও অনেক সময় সুযোগ পেলে টিভিতে সিনেমা দেখতাম। তবে বাড়িওয়ালা আংটি মনে হয় ভালো ছিল বেশি। তবে নায়ক জসিম এবং শাবানা ছবি খুব কমে দেখেছি। আর ছোটকালে যখন দেখতাম ছবিতে কষ্ট আসে তখন নিজের কাছে খারাপ লাগে। তবে ভালো লাগলো আপনার পোষ্টটি পড়ে।

অনেক অনেক ভালো লাগলো