ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের কুলের আঁটি মারার গল্প

in hive-129948 •  2 months ago 


আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগে সকলকে স্বাগতম

গল্প


IMG_20221217_120419_4.jpg

Photography device: Infinix Hot 11s-50mp


ক্লাস সেভেন, ২০০৭ সাল। বাংলা ক্লাস চলছে। আমাদের বাংলা টিচার ছিলেন বেশি ঘুমন্ত একজন মানুষ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে যে কোন মুহূর্তে ঘুমিয়ে যেতেন। ওই মুহূর্তে কি যেন একটা অসুখ হয়েছিল স্যারের, দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। যাই হোক স্যার আমাদের পড়তে দিলেন। আমরা শব্দার্থ আর কিছু প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে মুখস্ত করছিলাম। এ মুহূর্তে স্যার চেয়ার টেবিলে বসে হঠাৎ একটু ঘুম চলে এসেছে। প্রচন্ড গরমের দিন ছিল সেদিন। আমাদের স্কুল ঘরটা ছিল টিনের চালের ছায়া। এখনকার মতো ফ্যানের ব্যবস্থা ছিল না। হালকা হালকা বাতাস হচ্ছিল। ঘরের দরজা জানালা সব খুলে দেওয়া ছিল। আমাদের স্যারের একটা অভ্যাস ছিল একটা ছেলে তারপর একটা মেয়ে আবার একটা ছেলে তারপর একটা মেয়েকে পড়া ধরত। তাই সবাই পাঁচ মিনিটের জন্য ভালোভাবেই পড়ছে। স্যার কারো গায়ে হাত তুলতো না। পড়া না পারলে দাঁড় করিয়ে রাখত। যতক্ষণ পড়া মুখস্ত না হয় ততক্ষণ দাড় করে রেখে আবার পড়া ধরত, পারলে তারপর বসতে দিত।

যাই হোক স্যার নরম চরম ভালো মানুষ। আমাদের পড়তে দিয়ে স্যার হঠাৎ একটু ঝিমকিতে চলে এসেছেন। ঠিক এই ফাঁকে আমাদের ক্লাসে কয়েকজন বেয়াদব ছেলে ছিল তারা পকেটের মধ্যে কুল রেখেছিল। কুল খেয়ে আঁটি এর ওর গায়ে আওড়া মারছিল পড়ার ফাঁকে ফাঁকে। এ বিষয়টা কিন্তু খুবই খারাপ লাগছিল অনেকের। কারণ যারা ভালোভাবে পড়া মুখস্ত করেনি বা মনে নাই তাদের জন্য কেউ ঝামেলা হচ্ছিল কখন স্যার পড়া ধরে আবার গরমে দাড় করে রাখায়। কিন্তু তার মধ্য থেকে কয়েকজন যখন শয়তানি করে কুলের আঁটি গায় মারতে থাকল। অনেকেই এটা ইশারায় থামানোর চেষ্টা করল। কিন্তু স্যারের ঘুমানোর সুযোগে শয়তানে বাড়াতে থাকলো কয়েকজন। এবার কুলের আঁটি মেয়েদের গায়ের দিকে মারতে থাকল। এমন অবস্থায় কয়েকজন বান্ধবী খেপে গেলেন। কতক্ষণ বিরক্ত সহ্য করা যায়। বান্ধবীদের মধ্য থেকে একজন লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে স্যার বলে ডেকে উঠল এবং বললো স্যার কুলের আঁটি মারছে, পড়তে দিচ্ছে না। স্যার লাফ মেরে উঠে পড়লেন।

স্যার প্রশ্ন করলেন কে এমন বেয়াদবি করছে। কেউ মুখ খুললেন না। বেশ কয়েকজন মেয়ে বললেন আবারো মনোযোগ দিয়ে পড়ছে কিন্তু ছেলেদের ওদিক থেকে ওদের আঁটি মারছে আমাদের গায়ে। ছাড় তখন আরো রেগে গেলেন। ছেলেরা মেয়েদের গায়ে কুলের আঁটি মারছে এটা স্যারের কাছে আরো খারাপ লেগেছে। তখন ছেলেদের পানে স্যার চড়াও হলেন। একজন ছাত্রীকে বললেন অফিস রুম থেকে একটা কুঞ্চির নড়ি নিয়ে আসো। কয়েকজন বান্ধবীর সত্যিই খুবই ক্ষেপে গেছিল। কারণ পড়ার মাঝখানে বারবার বিরক্ত করেছিল তারা। তাদের সাথে কয়েকটা বান্ধবীরাও সংগতি দিয়ে এদিক থেকে কুলের আঁটি ছুড়ে মেরেছিল ছেলেদের দিকে। ছেলেরা বলল স্যার মেয়েরা মেরেছে। কিন্তু কে মেরেছে, কয়জন কুলের আঁটি নিয়ে এভাবে বেয়াদবি করছে প্রকাশ করল না কেউ। তারপর বান্ধবী স্যারের কথা মত নড়ি আনলো। স্যার সেটা হাতে নিয়ে বারবার বলতে থাকলো কে কে এই বেয়াদবি করেছ। কে মুখ খুলল না। যাদের গায়ে কুলের আঁটি লেগেছে তাদের প্রশ্ন করা হলো। কে কে তোমাদের গা পানে আঁটি আওড়া মেরেছে? এরাও যেন ভয়ের কিছু বলল না।

IMG_20221217_140335_185.jpg


স্যার রেগে গিয়ে বলল আমি পড়তে দিয়েছি। আমার শরীরটা ভাল না। আমার প্রচন্ড ঘুম হচ্ছে ওষুধ খাওয়ার কারণে। আর এর মাঝে তোমরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে শয়তানি শুরু করেছো। ঠিক করে নাম খুলে বল কে কে এই কাজ করেছে। নাই আমি সবাইকে মারবো। কেউ মুখ খুলল না। তখন স্যার সবাইকে হাত পেতে রাখতে বলল। ক্লাসে আমরা যতজন ছিলাম। সবার ডান হাতের তালুর উপরে নড়ে দিয়ে একটি করে সজোরে আঘাত করলেন। আমাদের সবার ডান হাতে তালুর উপরে নড়ির দাগ বসে গেল। এরপর স্যার ক্লাসের পড়া ধরলেন না বললেন আগামী দিন এই পড়ায় আমি ধরবো। যে পারবে না তার শাস্তি বেশি হবে। তখন আমার খেয়াল করলাম স্যারের শরীর সত্যি অনেক খারাপ। স্যার যখন কথা বলছিল মনে হচ্ছিল স্যারের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসবে। তখন আমরা বুঝতে পেরেছিলাম স্যার আমাদের মেরেছে রাগের আগে কিন্তু স্যার কষ্ট পেয়েছি অনেক। কারণ স্যার এতটা ভালো মানুষ ছিল কারো গায়ে হাত তুলত না। পড়া না পারলে বেয়াদবি করলে উনি গায়ে হাত না তুলে। বিভিন্ন রকমের শাস্তি দিতেন। বেঞ্চের উপর দাঁড় করে রেখে বা কান ধরে দাঁড় করে রেখে অথবা টেবিলের নিচে মাথা রেখে দিয়ে দাড় করে রেখে, যেন লজ্জা হয়। সেদিন বুঝতে পারলাম শিক্ষকরা ছাত্রদের লেখাপড়া শিখাতে গিয়ে অনেকটা বাবা-মায়ের মতো মায়া মমতা গড়ে তোলে মনের মধ্যে। স্যার ছাত্র-ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলতে কষ্ট পান। পরবর্তীতে আমরা সবাই সেই স্যারের কাছে মাফ চেয়ে নিয়েছিলাম। যারা বেয়াদবি করেছিল তারা স্যারের হাত ধরেছিল। তখন স্যার বলেছিল তোদের মধ্যে পারিবারিক শিক্ষা নৈতিক শিক্ষা আছে তাই তোরা তোদের ভুল বুঝতে পেরেছিস। কারণ আমরা সবাই বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের ভুল হয়েছে এবং স্যারের মন-মানসিকতা অনেক ভালো। কিন্তু এখন দেখি স্যাররা একটু ভুল করলে বা ছাত্রর গায়ে হাত তুললে ছাত্র অভিভাবকেরা স্যারকে মারার জন্য কত কি করে বসে।

PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png


পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ



received_434859771523295.gif


পোস্ট এর বিবরণ


বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
ক্রেডিট@jannatul01
W3w locationsource
দেশবাংলাদেশ
ব্লগারআমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি


আমার পরিচয়


আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।


2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1NfxyQcRUrHnbvGAuDxuMioMRjoG74XpZyTRDsUp566Bu2ZZHRsryAWmeAqnTe9T6zT4X1bZ8DTXHHYrr.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!