ভূতের গল্প

in hive-129948 •  4 months ago 


আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগে সকলকে স্বাগতম

ভূতের গল্প


IMG_20240629_091248_421.jpg

Photography device: Infinix Hot 11s-50mp


আগেকার দিনে মানুষজন ভোর রাতে উঠে বিলে মাছ ধরতে যেত। শীতকাল আসার পূর্বে বিলের পানি শুকাতে শুরু করে। তাই যারা মাছ ধরতে যায়, তারা চেষ্টা করত রাতে জোৎস্নার আলোতে আলোতে বাগান পেরিয়ে বিলের দিকে যেতে। আগে মানুষের ছিল অনেক অভাব। তাই হারিকেনের তেল কেনার সাধ্য কম ছিল। মাছ ধরে বাড়ি ফেরার পথে হারিকেন নিয়ে আসাটাও ছিল দুষ্কর। তাই সবাই জোৎনা রাতে চাঁদের আলোটাকে বেশি নির্ভর করতেন। ঠিক এমনই একটা ঘটনা আমাদের এক দাদার জীবনে।

আমাদের সেই দাদা এভাবে জোৎস্না রাতে বিলে মাছ ধরতে যেতেন। উনি একলা মাছ ধরতে যাইতেন না,সাথে উনার এক বন্ধু মাছ ধরতে যেতেন। একদিন গভীর রাতে হঠাৎ তার বন্ধু তাকে এসে ডাকাডাকি শুরু করলো মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য। সে গভীর ঘুমেঘুমিয়ে রয়েছে। এর আগের অন্যান্য দিনগুলোতে দেখা যায় আমাদের দাদায় তাকে ডেকে নিয়ে মাছ ধরতে যেত। কিন্তু ঐদিন উল্টা হলো তার বন্ধু এসেছে তাকে ডাকতে। এদিকে তার ঘুম ভাঙ্গে নাই। তার ঘুম থেকে উঠতে মন চাচ্ছে না। মনে হচ্ছিল এখনো ঘুমানো প্রয়োজন। তার কেমন যেন মনে হচ্ছিল এত দ্রুত সে ঘুম থেকে উঠে ডাকতে আসলো কিভাবে। হয়তো ক্লান্ত শরীর,যায় হোক কোন রকমে সে উঠে পড়ল এবং প্রয়োজনীয় মাছ ধরার জিনিসগুলো বের করে নিলো। দাদার বন্ধু তাকে বারবার করে বলতে থাকলো দ্রুত চল, রাত আর নেই অন্যরা মাছ ধরে ফেলবে। দাদা তাকে বলে দিল আমি জিনিসগুলা রেডি করে নিয়ে মুখ চোখ ধুয়ে হাঁটছি তুই আগে হাট। এরপর দাদা বন্ধুর পিছু পিছু হাঁটা শুরু করল।

আগে ঘনবসতি খুব কম ছিল মানুষজনের সংখ্যা কম ছিল, বেশিরভাগ ছিল বন জঙ্গল আর বাগান। দাদার সেই বন্ধু আগে আগে চলে যাচ্ছে। দাদা পিছু পিছু ঘুমের ঢুলতে ঢুলতে। কেমন জানি দাদার বন্ধু আগের রাতের মত সাথে সাথে চলছে না গল্প বলছে না। বাগানের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে দাদার মনে কেমন জানি সন্দেহ হতে থাকলো। কারন সে সময় জিন পরীর একটা ভয় ছিল। বাগানের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে দাদা হঠাৎ চোখ মেলে লক্ষ্য করে দেখল তার বন্ধু খুব দ্রুত চলছে, কিন্তু কথা কম বলছে। দাদা যেন তার সাথে হেঁটেই পারছে না। যতই বলছে ধীরে যেতে সে বলছে রাত আর বেশি নেই অন্যরা মাছ ধরে ফেলবে, জোরে চল। এভাবে বেশ অর্ধেক পথ চলে গেছে। চাঁদের আলোয় দাদা খেয়াল করে দেখল তার বন্ধু চলছে ঠিকই, কিন্তু সে বন্ধুর পা দুটো দেখা যাচ্ছে না। তার পিছন থেকে মাথা পর্যন্ত মোটামুটি ভালই বোঝা যাচ্ছে কিন্তু তার নিচের অংশ নেই। এরপর সে একটু খাবড়িয়ে গেল এবং তার পিছু পিছু ধীরে চলা শুরু করল। তারপর আরো চাঁদের আলো স্পষ্ট দেখতে পারলো তার কোন পা নেই,আর সে চলছে একদম অন্যরকম ভাবে। তখনই বুঝে গেল এটা কোন একটা জিন।

এরপর দাদা থেমে গেল। তার হাতের লোহার একটা জিনিস ছিল। মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য বেশ অনেক কিছু সাথে থাকে। সে অন্যান্য জিনিসগুলো হাত থেকে ধীরে ধীরে নামিয়ে মাটিতে রাখল। এরপর তার কোমর থেকে বিড়ি বের করল। বিড়ি ধরালো। বিড়ি মুখে দিয়ে উল্টাপথে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করল। কিন্তু তার সেই বন্ধু আর পিছন ফিরে তাকালো না তাকে আর বলল না, কেন উল্টা পথে যাচ্ছিস মাছ ধরতে চল। বেশি দ্রুত দাদা বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে এরপর পিছন দিকে তাকিয়ে তার বন্ধুর কোন দেখা নেই। কোথায় অন্ধকারে যেন সে বন্ধু হারিয়ে গেল। এরপর রাতে বাড়িতে চলে আসে। দেখা যাচ্ছে ফজরের আজানের আগ মুহূর্ত এমন একটা সময়ে তার বন্ধু আবার ডাকছে।

তারপর আমাদের সেই দাদা তার বন্ধুর কাছে বলল বিস্তারিত। তার বন্ধু বেশ ভয় পেয়ে গেল। সে বলল আমি আবার কখন আসলাম। তুই ঘর থেকে বের হচ্ছিস না। আমার কখন ঘুম ভেঙ্গে গেছে। ভাবছিলাম তুই আসবি ডাকবি একসাথে যাব। তুই আসছিস না তাই তোকে আবার ডাকতে আসলাম আমি, এর আগে তো কখনো আসিনি। তখনই বুঝে ফেলল দাদাকে জিনে এভাবেই বন্ধু সেজে ডেকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন দাদার বন্ধু বলল তাহলে আজকে আর মাছ ধরতে যাওয়ার কোন দরকার নেই। হয়তো সে বাগানে থাকতে পারে আমাদের ক্ষতি করবে। এরপর দাদা এবং দাদার বন্ধু আর মাছ ধরতে গেল না ঐদিন।

IMG_20231212_140129_436.jpg



PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png


পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ



received_434859771523295.gif


পোস্ট এর বিবরণ


বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s-50mp
ক্রেডিট@jannatul01
দেশবাংলাদেশ
ব্লগারআমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি


আমার পরিচয়


আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।


2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1NfxyQcRUrHnbvGAuDxuMioMRjoG74XpZyTRDsUp566Bu2ZZHRsryAWmeAqnTe9T6zT4X1bZ8DTXHHYrr.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো আপু আপনার গল্পটি পড়ে।আগের দিনে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছিলো।জিনের উপদ্রব ছিলো খুব।বেশি ভাগ মাছ ধরতে যাওয়া মানুষকে টার্গেট করতো এবং ডেকে নিয়ে গিয়ে না কি বিলে চুবিয়ে মেরে ফেলতো।আপনার দাদা খুব ভালো বেঁচে গেছে। ধন্যবাদ পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

হ্যাঁ এমন ঘটনা অনেকগুলো জানে

ভূতের গল্প পড়তে আমার অনেক ভয় করে। তারপর আপনার গল্পটা পড়লাম। আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনার দাদা দেখছি অনেক চালাক মানুষ সে টের পেয়ে পিঁছে ফিরে এসেছে। যাইহোক পরবর্তীতে তার বন্ধুর কাছে সব ঘটনা খুলে বলেছে। সেদিন মাছ ধরতে যায়নি জেনে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।

এ যুগে ভাই বলে কিছু আছে

ভূতের গল্প পড়তে আমার কাছে খুবই ভালো লাগে যদিও ভূতের গল্পটি কাল্পনিক। অনেকের মুখে আমি এ ধরনের গল্প শুনেছি কিন্তু বাস্তবে আমার সাথে এমনটা কখনো হয়নি। আপনার দাদা বুদ্ধিমান হওয়ার কারণে বেঁচে গেছে না হলে হয়তো অনেক বিপদে পড়তো। ধন্যবাদ আপু অনেক সুন্দর ভৌতিক গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। তবে শুনেছি বাস্তব ঘটনা তাদের।

আপু যদি ঘটনা সত্যিও হয় তবে সেটা ভূত না সেটা হয়তো জ্বীনের কাজ হতে পারে। আসলে ভূত বলে কিছুই হয় না। আশা করি বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন।

আপনার লেখা আজকের এই ভূতের গল্পটা পড়ে তো অনেক বেশি ভয় লেগেছে আমার কাছে। আপনার দাদার সাথে তো দেখছি অনেক ভয়ানক একটা ঘটনা ঘটেছে। তবে আপনার দাদা কিছুটা সাহসী ছিল। ওনার বন্ধুর জায়গায় দেখছি উনাকে জিন নিয়ে যাচ্ছিল। যদি চলে যেত তাহলে হয়তো আপনার দাদার অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলত ওই জিনটা। এরকম ভুতুড়ে ঘটনাগুলো আগে অনেক বেশি দেখা যেতো এবং শোনা যেতো। যাই হোক ভয় লাগার পাশাপাশি ভালোই লেগেছে পুরো গল্পটা পড়তে।।

হ্যাঁ এভাবে মানুষের ক্ষতি করতো আগে

জ্বিনের অস্তিত্বে আমি বিশ্বাসী।কারণ আমার পরিবারের সাথে ঘটেছিল।আপনার দাদা সেদিন বেঁচে গিয়েছিল।আসলে আগেকার দিনে এই ঘটনা অহরহ দেখা যেত।বিলে গিয়ে বিভিন্ন কিছু দেখা।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

হ্যাঁ এই সমস্ত বাস্তব ঘটনা গুলো আগে বেশি হত।