অনেকদিন পরে বাসায় ফেরা

in hive-129948 •  2 months ago 

আজ--২৯ ভাদ্র| ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |শুক্রবার | শরৎকাল|



আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।


আজ আমি আপনাদের মাঝে অনেকদিন পরে নিজের এলাকায় ফেরার অনুভূতি আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো, আশা করছি আমার এই পোস্ট আপনাদের সবার ভালো লাগবে।



  • প্রিয় কমিউনিটি,আমার বাংলা ব্লগ
  • অনেকদিন পরে বাসায় ফেরা।
  • আজ--২৯ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • শুক্রবার


তো চলুন শুরু করা যাক...!


শুভ সকাল সবাইকে......!!


Picsart_24-09-12_15-15-19-194.jpg

কভার ফটো তৈরিতে--@jibon47



আমরা যারা লেখাপড়া এবং চাকরি বাকরি করার জন্য নিজের গ্রাম অথবা নিজের এলাকার বাহিরে থাকি একমাত্র তারাই বুঝতে পারি যে নিজের এলাকায় যাওয়ার অনুভূতিটা আসলে কেমন। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি এই অনুভূতি আসলে কখনো বর্ণনা বা ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। লেখাপড়ার কারণে অথবা চাকরি বাকরীর কারণে যারা বাহিরে থাকে এই মানুষগুলো সবসময়ই নিজের এলাকাতে ফিরতে অনেক রকমের বাহানা খোঁজে। সত্যি বলতে নিজের এলাকা বা নিজ গ্রামের প্রতি এতটা মায়া এবং ভালোবাসা কাজ করে যে সেটা কখনোই বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ছোটবেলা থেকেই একটা জায়গায় বড় হওয়া সেখানেই নিজের শৈশব কাটানো কোন একটা কারণে হয়তোবা নিজের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয় শহরে। এই অনুভূতিটা আসলে আপনাদের কার কাছে কেমন সেটা আমি জানি না তবে গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমানোটা আমার কাছে অনেকটাই কষ্টের আর এই কষ্টটা কখনো আমি আসলে অন্য কাউকে বলে বোঝাতে পারি না। যাইহোক অনেকদিন শহরে থাকার পরে যখন নিজের এলাকায় ফেরার সম্ভাবনা হয় তখন নিজের মনের মধ্যে এক অন্যরকম ভালো লাগা বা ভালোবাসা কাজ করে সবসময়ই। কোরবানির ঈদের পরে ঢাকায় চলে এসেছিলাম এরপরে আর নিজের গ্রামে ফেরা হয়নি অনেকটাই ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেছিলাম। অনেকদিন ধরেই বাসায় যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছিলাম কিন্তু চাকুরী এবং ভার্সিটির পরীক্ষার কারণে যেতে পারেনি।

যেহেতু ভার্সিটির পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে তাই আমি পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগেই জানিয়েছিলাম যে নির্দিষ্ট একটা তারিখের মধ্যেই আমি বাসায় যাব প্রথম অবস্থাতে কর্তৃপক্ষ হ্যাঁ সম্মতি দিলেও পরবর্তীতে যখন অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে তাদের কাছে গিয়েছিলাম তারা তখন বলছিল যে কয়েকদিন পরে বাসায় যাও। কিন্তু পরীক্ষার শেষ হবার আগে থেকেই বাসায় যাওয়ার জন্য আমার মনটা উতলা হয়েছিল যখন তারা যেতে নিষেধ করল তখন মনটা আপনা আপনি খারাপ হয়ে গেল। মন খারাপ খারাপ দেখে সিনিয়র ম্যানেজার বলল ঠিক আছে বুঝতে পেরেছি মনটা অনেক বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছে আচ্ছা বেশি দিনের ছুটি দিতে পারব না তিন দিনের ছুটি দিতে পারব এই তিন দিনের ছুটি নিয়েই তোমাকে বাসায় যেতে হবে। এরপরে স্যারকে বলে তিন দিনের ছুটি কনফার্ম করলাম গতকাল ছুটি কনফার্ম করেই সেটা টাইম সেকশনে জমা দিয়ে এসেছিলাম। প্রথমে বাসে করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম বাসে করে বাসায় যেতে অনেক ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে করে চলে গিয়েছিলাম গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে একটা রিকশা নিয়ে চলে গিয়েছিলাম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে।

যদিও ট্রেনের টিকিট আগে কাটা হয়নি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের টিকেট কাটবো। আমার ট্রেন ছিল রাত্রি ১০:৩০ যথারীতি টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট নিয়ে বসেছিলাম অনেকটা সময়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আমি অনেক আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম কারণ রাস্তায় অনেক বেশি যানজট থাকে যার কারণে আমি অনেকটা সময় নিয়েই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। বসে থাকতে থাকতে অনেকটাই খারাপ লাগছিল তবে বাসায় যাব অনেকদিন পরে এটা ভেবেই সমস্ত রকমের খারাপ লাগা এবং ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে। মনের মধ্যে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছিল। আর আমি আপনাদেরকে আগেই বলেছি বাসায় ফেরার আনন্দটা আসলে কখনো বর্ণনা করা যায় না।

IMG20240909185151.jpg

IMG20240909185155.jpg

IMG20240909192139.jpg

IMG20240909210610.jpg

IMG20240909210614.jpg

যাইহোক দীর্ঘ অপেক্ষার পরে অবশেষে ১১:৪৫ মিনিটে ট্রেন ছাড়লো কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে। ট্রেনের টিকিট দেখে যথারীতি ছিটে গিয়ে বসলাম। তবে রীতিমতো অবাক হয়েছিলাম যে এত রাত্রেও ট্রেনের মধ্যে প্রচন্ড রকমের ভিড় প্রথমে ভেবেছিলাম যেহেতু অনেক রাতে বাসায় যাচ্ছি আর এত রাতে হয়তোবা টেনে খুব একটা বেশি ভীর হবে না কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো ট্রেনের মধ্যে প্রচন্ড রকমের ভিড় ছিল। সে যাই হোক জানালার পাশে একটা সিট নিয়েছিলাম কারণ যেহেতু অনেকটা পথ জার্নি করতে হবে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা ঘুম হবে কিনা সেটা জানা ছিল না তবে ঘুম যে হবে না সেটা অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলাম। যার কারণেই জানালার পাশে সিট নিয়ে বাহিরের দৃশ্যটা দেখছিলাম অপলক দৃষ্টিতে। মনে হচ্ছিল দূরের ওই প্রান্তর গুলো হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে এবং চারি দিকটা কেমন যেন ঘুরছে যখন ট্রেন পদ্মা সেতুর উপরে উঠলো তখন মনের মধ্যে আরো বেশি ভালো লাগা কাজ করছিল কারণ পদ্মা হওয়ায় আমাদের বাসায় যাতায়াতে অনেকটাই সুবিধা হয়েছে এটা বলতেই হবে। এর মাঝে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম সেটা বুঝতেই পারেনি হয়তোবা কয়েক ঘন্টার ঘুম হয়েছিল ঘুম থেকে উঠে দেখি রাত্রি দেড়টা বাজে।

ঘুম ভাঙ্গার পরে বুঝতে পারছিলাম না আমি আসলে কোথায় আছি পাশে কারো কাছে যে জিজ্ঞেস করবো সে রকম ও কোন অবস্থা ছিল না কারণ আমার পাশে যে ছিল দেখছি সে গভীর ঘুমের নিমজ্জিত। যার কারনে গুগল লোকেশনে চলে যায় লোকেশনে গিয়ে দেখতে পারি ট্রেন সবেমাত্র রাজবাড়ী এসে পৌঁছেছে। এরপরে বুঝতে পারলাম খোকসা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন পৌঁছাতে আরো প্রায় ঘন্টা দের এক মত সময় লাগবে। এরপরে আর ঘুমাইনি ফোনে ভিডিও দেখছিলাম গান শুনছিলাম মাঝে মাঝে ট্রেনের মধ্যে থাকার টিটি এবং পুলিশ এসে সবকিছু দেখাশোনা করছিল। এরপরে হঠাৎ দেখি ট্রেনের মধ্যে কফি বিক্রি হচ্ছে, সেখান থেকে ৩৫ টাকা দিয়ে এক কাপ কফি কিনেছিলাম। গভীর রাতে কফিতে চুমুক দেওয়ার পরে মনে হচ্ছিল সমস্ত রকমের ক্লান্তি এক নিমিষেই দূর হয়ে গিয়েছে। অনেকটা সময় নিয়ে সেই কফিটা খেয়েছিলাম বেশ ভালই লাগছিল ইতোমধ্যে ঘুমটাও হারিয়ে গিয়েছে। জেগে জেগেই অনেকটা সময় অতিবাহিত করেছিলাম এরপরে চলে যাই খোকসা রেলওয়ে স্টেশনে। খোকসা রেলওয়ে স্টেশন এ গিয়ে যখন পৌঁছায় তখন প্রায় রাত্রি তিনটার কাছাকাছি।

IMG20240909235712.jpg

IMG20240909235722.jpg

IMG20240910000204.jpg

IMG20240909235736.jpg

IMG20240910012129.jpg

IMG20240910012139.jpg

বড় ভাইকে আগেই বলে রেখেছিলাম বড় ভাই দেখি দুটো বাইক নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনে বসে আছে সেখানে গিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে মতবিনিময় করলাম অনেকটা সময় সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই গল্প করেছিলাম কারণ অনেকদিন পরে আমাদের দেখা। সেই কোরবানি ঈদে দেখা হয়েছিল তারপর থেকে আর এখন পর্যন্ত দেখা নেই তার মানে বুঝতেই পারছেন, এরপরে চলে যাই একটা টং দোকানে অনেক রাতে স্টেশনের পাশে টং দোকান খোলা ছিল সেখানে গিয়ে চা খেয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যদিও তখন আর সকাল হতে বেশি সময় নেই বুঝতে পারছিলাম বাসায় গিয়ে হয়তো বা খুব একটা বেশি ঘুমাতে পারবো না। প্রায় ৩০-৪০ মিনিট পরে চলে যাই বাসায় গিয়ে দেখি আব্বু আম্মু নামাজ পড়ে আমার রুমে বিছানার উপর বসে আছে। অনেকদিন পরে ফ্যামিলির সকলের সঙ্গে দেখা ভীষণ ভালো লাগা কাজ করছিল এটা আর এক অনুভূতি।

যাই হোক রাত্রি সাড়ে দশটা থেকে সারারাত জার্নি করে বাসায় এসে পরিবারের সঙ্গে সকালের নাস্তা খাওয়ার অনুভূতিটা আসলে অন্যরকম। জানি অনেক বেশি ক্লান্ত ছিলাম তবে একটুও ঘুমাইনি সকালের নাস্তা করেই আবার বড় ভাইদের সঙ্গে বের হয়েছিলাম অজানা উদ্দেশ্যে অনেকটা ঘোরাঘুরি হয়েছিল বাসায় থাকবো হয়তোবা তিনদিন এই তিন দিনে যতটুকু পারবো ভালো সময় কাটানোর চেষ্টা করব আর ভালো সময় গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করার চেষ্টা করব। আজ আর নয় এখানেই শেষ করছি, সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে...!!



সমাপ্ত


আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্ট খুবই ভালো লেগেছে। আমার এই পোস্ট পরে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা রাখি। আপনার সুন্দর মন্তব্যই আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা

বিবরণ
বিভাগজেনারেল রাইটিং
বিষয়অনেকদিন পরে বাসায় ফেরা
পোস্ট এর কারিগর@jibon47
অবস্থান[সংযুক্তি]source


এটাই আমি..!!

IMG_5290-01.jpeg

আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নেম @jibon47। আমি মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমিকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আব্বু আম্মু আর ছোট বোনকে নিয়েই আমার পরিবার। এই তিনজন মানুষকে কেন্দ্র করেই আমার পৃথিবী।একসাথে সবাইকে খুশি করা তো সম্ভব নয়, তারপরও আমি চেষ্টা করি পরিবারের সবাইকে খুশি রাখার। আমি হৃদয় থেকে ভালবাসি সৃষ্টিকর্তা ও তার সকল সৃষ্টিকে।আমি বর্তমানে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং লেখাপড়া করছি। আমি গান গাইতে, কবিতা লিখতে, এবং ভাই ব্রাদারের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে অনেক বেশি ভালোবাসি। সত্যি বলতে আমি প্রচন্ড রকমের অভিমানী, হতে পারে এটা আমার একটা বদ অভ্যাস। "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব,"আমার বাংলা ব্লগ" আমার ভালোবাসা। আমার নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে "আমার বাংলা ব্লগে" আমার আগমন। এই স্বল্প মানব জীবনের প্রতিটা ক্ষণ আমার কাছে উপভোগ্য। আমি মনে করি, পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি।



সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
@jibon47



VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমরা যারা বাইরে থাকি তারা সবাই আপনার অনুভুতিগুলো শতভাগ বুঝতে পেরেছি। অনেকদিন পর পরিবার পরিজনের কাছে যাওয়ার অনুভুতি আর দ্বিতীয়টি হয় না।

শুধু তিন দিন থেকে কি আর মন ভরবে, ভাই?

আপনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া বাইরে থাকলে বুঝা যায় জীবন কতটা কঠিন। অনেক দিন পরে বাড়িতে গিয়ে সবার সাথে সকালের নাস্তা করেছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো। আসলে ভাইয়া পরিবারের সবার সাথে খাওয়া দাওয়া করার আনন্দই অন্য রকম। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মূহুর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।