হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই,আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে একটি হৃদয়বিদায়ক ঘটনা শেয়ার করবো। আশা করি গল্পটি পড়লে মানুষের মন মানুষিকতার বিষয়ে কিছুটা ধারনা পাবেন।
আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশের বাড়ির মুর্শিদ দাদার চার ছেলে এক মেয়ে। বাড়িটা মোটামুটি অনেক বড়। বিলের মধ্যে কিছু জমি জমাও রয়েছে। বড় ছেলে বিয়ে করেছে। সবাই এক সাথেই থাকে। মুর্শিদ দাদা চিন্তা করলেন তার এক দুইজন ছেলেকে বিদেশ পাঠাবেন। বড় ছেলে বিয়ে করেছে,সে বিদেশ যাবে না। সে বাবা মার সাথে গ্রামেই থাকতে চায়। আর দ্বিতীয় ছেলেটা এলাকার পাতি নেতাদের সাথে ঘোরাঘুরি করে,তেমন কাজ কাম করে না,অলস টাইপের মানুষ। তাকে বিদেশ পাঠানোর ভরসা পাচ্ছে না। অনেক চিন্তা করে তিন নাম্বার ছেলে আনোয়ার হোসেনকে বিদেশ পাঠানোর সিন্ধান্ত নেয়। বিলের অল্প একটু জমি বিক্রয় করে তৃতীয় নাম্বার ছেলেকে সৌদিআরব পাঠায়। সে মোটামুটি ভালো অবস্থানেই আছে।
চতুর্থ নাম্বার ছেলে ফারুক হোসেন টেইলার্সের কাজ শিখে বাড়িতেই কাজ করে। একদিন ফারুক হোসেন তার দুই নাম্বার ভাই আমজাদ হোসেনের সাথে ঘুমানোর জায়গা নিয়ে জগড়া লাগে। সেই কারনে বাবা আর দুই ভাই মিলে ফারুক হোসেনকে প্রচুর মারে। আমি নিজ চোখে সেই দৃশ্য দেখেছি। আমি তখন গ্রামেই ছিলাম। মানুষ পাষান হলে গরুকে যেভাবে মারে,ফারুক হোসেনকে সেই ভাবেই মেরেছে। কিছুদিন পরে ফারুক হোসেন তার দোকানটা বাড়ি থেকে সরিয়ে গ্রামের বাজারের নিকেট নিয়ে যায়। তারপর বিদেশে থাকা বড় ভাই আনোয়ার হোসেনকে কেঁধে কেঁধে বলে সে আর গ্রামে থাকবে না। সেও সৌদিআরব চলে যাবে।
আনোয়ার হোসেন ছোট ভাইয়ের কান্না জড়িত কথা আর ফেলতে পারেনি। তাই অনেক কষ্ট করে একটি ভিসার ব্যবস্থা করে ফারুক হোসেনকেও সৌদি আরবে নিয়ে যায়। তারপর থেকে মুর্শিদ চাচার সুদিন ফিরে আসে। গ্রামের ভিতরের বাড়ি বিক্রয় করে মহাসরকের পাশে জমি কিনে নতুন বাড়ি করেছে। সেখানে তিনটি আলাদা আলাদা ঘর করে। একটি ঘরে মুর্শিদ দাদা ও তার বউ থাকে। আর দ্বিতীয় ঘরে বড় ছেলে তার বউ বাচ্ছা ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকে। আর তৃতীয় ঘরে ঘুরে ফিরে খাওয়া আমজাদ হোসেন থাকে। সৌদিআরব থেকে টাকা আসে আর গ্রামে তারা ভালোই জীবন অতিবাহিত করছে। পাশা পাশি কিছু জায়গা জমিও কিনেছে। বড় ভাই ছবির হোসেন আর আমজাদ হোসেন বুদ্ধি করে সমস্ত জায়গা জমি তাদের বাবার নামে দলিল করে রাখে। যেন জায়গা জমি ভাগ বন্টন করার সময় তারা যেন বাদ না যায়। খুব বুদ্ধি করেই সব কিছু করছে।
প্রায় এক যুগ পরে আনোয়ার হোসেন বাড়ি আসার কথা বলে। তখন গ্রামে থাকা বাবা এবং দুই ভাই বলে আরো কিছুদিন পরে আসতে। কারন তারা জানে আনোয়ার বাড়িতে চলে আসলে তাদের টাকা আসাও বন্ধ হয়ে যাবে। এর এক বছর পরেই একটি দুঃসংবাদ আসে। আনোয়ার হোসেন আর পৃথিবীতে বেঁচে নেই। তাদের বাড়ির একজন সদস্য মারা গেছে অথচ তাদের ভিতর তেমন কোন চিহৃ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি আনোয়ারের মা-বাবার মধ্যেও তেমন কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়নি। বাবা তার ছোট ছেলে ফারুক হোসেনকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে,সে যেন গার্জিয়ান হয়ে আনোয়ার হোসেনের শেষ কাজ সমাধান করে ফেলে। আনোয়ারের লাশ বাড়িতে পাঠানোর দরকার নেই। চিন্তা করেন মানুষের মন মানুষিকতা কেমন।
তারপর ফারুক নিজের ভাইয়ের শেষ কাজ নিজ হাতে সমাধান করলেন। সৌদিআরবেই ভাইকে কবর দিয়ে দিলেন। এখন শুধু ফারুক হোসেন একা টাকা পাঠায়। আর টাকার অংকটাও কমে গেছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ভাই আমজাদ হোসন বিয়ে করে ফেলেছে। বিদেশে থাকা দুই ভাইয়ের মধ্যে কেউ জানতেও পারেনি। যদিও ফারুক হোসেন বড় ভাই বাবার সাথে রাগ তারপরেও টাকা পাঠায় প্রতি মাসে। হঠাৎ করে একদিন হার্ট এটার্ক করে ফারুক হোসেনও মারা যায়। দেশে থাকা বাবা ও ভাইয়েরা তার লাশ ও দেশে আনতে নিষেধ করে দেয়। সৌদিআরবে থাকা ফারুকের ভগ্নিপতীকে ফারুক হোসেনের লাশ কবর দিয়ে দিতে বলে। অবশেষে টাকা পাঠানোর দু্ইটি মেশিনই নষ্ট হয়ে সৌদিআরবের মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়।
আনোয়ার হোসেন ও আমজাদ হোসেনের লাশ কিন্তুু কোম্পানি নিজ খরচে বাংলাদেশের পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তুু গ্রামে থাকা বাবা ও ভাইয়েরা তাদের লাশ গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানায়। যার ফলে সেখানেই কবর দেওয়া হয়। তবে কোম্পানি থেকে ক্ষতিপুরন বাবদ কিছু টাকা দিয়েছে। সে গুলো ঠিকই গ্রহন করেছে। এই হলো আমাদের মানুষের মন-মানুষিকতা। আমরা কতটা নিষ্ঠুর,নিমুহারাম,স্বার্থপর এই ঘটনাটি তার প্রমান।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার লেখাটি পড়ে কষ্ট পেলাম ভাইয়া। মানুষ এত অমানবিক আর নিষ্ঠুর হতে পারে আমার জানা ছিলনা। প্রবাসীদের রক্ত ঝরা টাকায় পরিবারের লোক আরাম আয়েশ করে কাটায় ,সেটা জানা ছিল। পোস্টটিতে আমাদের সমাজের বর্তমান চিত্র ফুটিয়ে উঠেছে। একদম ঠিক বলেছেন, প্রবাসি দুই ভাই ছিল টাকা পাঠানোর মেশিন।ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি শেয়ার দেয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জী আপু পরিবারের অন্য মানুষরা যদি জানতো বিদেশে তারা কি করে,তাহলে হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা বুঝতে পারতো। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে বেশ খারাপ লেগেছে । কিভাবে মানুষ এত নির্মম নিষ্ঠুর হতে পারে। ভাইদের কথা বাদই দিলাম মা-বাবাও কিভাবে দুটি সন্তানকে এভাবে ভুলে যেতে পারলো। দেশের মাটিতে মাটি পর্যন্ত দিতে আনলো না। আসলে এ ধরনের ঘটনাগুলো খুবই করুন যা পড়ে আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে। পোস্টটি তো শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাবা মাও তাদের বড় সন্তানদের কথা শুনে,অন্যরার সাথে বেইমানে করেছে। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সবথেকে বড় বিষয় আপনি যে ঘটনাটা বললেন মানুষ তার থেকেও নির্মম আর নিষ্ঠুর। টাকার জন্য মানুষ কি না করতে পারে? যারা পরিবারের জন্য পরিশ্রম করে তাদের মূল্যায়ন করা হয় তার টাকার পরিমাণের উপর। এই ঘটনাটা ভীষণ নির্মম এবং এধরনের ঘটনা বর্তমানে অহরহ দেখা যাচ্ছে। উপর ওয়ালা এধরনের নির্মম হৃদয়ের মানুষগুলোকে হেদায়েত দান করুন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জী ভাইয়া ঐ পরিবারের সদস্য গুলো কতটা নির্মম আর নিষ্ঠুর কল্পনা করা যায় না। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
খুবই দুঃখজনক শেষটা,আপনার টাইটেলের তাৎপর্য অনেক যদিও অনেকেই প্রথমে বুঝতে পারবে না।যাইহোক লেখা গল্প পড়ে অবশ্য পরে বুঝে যাবে।আসলেই টাকা না থাকলে আপনজনও গুরুত্ব দিতে চায় না।বর্তমান খুবই নিষ্ঠুর, ধন্যবাদ ভাইয়া।ভালো লিখেছেন👌
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জী আপু বর্তমানে মানুষের মূল্য আসে টাকার উপরে। টাকা নাই দামও নাই। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে ভাইয়া ফারুক আর আনোয়ারের শেষ মুখটাও তার মা-বাবা ভাইরা দেখতে চায়নি। তাহলে কতটাই না নিষ্ঠুর মানুষ আমি ওটাই চিন্তা করতেছি। আসলে আমাদের সমাজে এরকম প্রায় ঘটনা ঘটে থাকে টাকা পাঠালে সবাই বেশ খুশি কিন্তু টাকা বন্ধ হয়ে গেলে নিজের মা-বাবাও কথা তুলে খোটা দিতে ছাড়ে না। যেখানে নিজের মা বাবা ভাই বোন যায় ভালোবাসে না সেখানে অন্য কেউ আর কিভাবে ভালবাসবে কাউকে। আসলেই কোম্পানি ভালো ছিল বলেই ওদেরকে ওখানে কবর দিয়ে দিল কিন্তু তাদের নিজের মা-বাবাও এতটা পাষাণ হয়ে গেল। আসলে গল্পটি পড়ার সময় বেশ খারাপ লেগেছিল আমার নিজের কাছেও। কি আর করব বলেন আমাদের সমাজটাই এমন নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বুঝে না কেউ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জী আপু চিন্তা করেন তাদের বাবা-মাও তাদের সন্তানের মুখ গুলো দেখতে চাইনি। অথচ তাদের টাকা ঠিকই ভোগ করেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আজকে আপনার কাছ থেকে এই পোস্ট পড়ে খুব খারাপ লাগলো। আসলে আমি আগেও এরকম ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলাম। টাকার মেশিন যখন নষ্ট হয়ে যায়, তখন আপনজনরাও আর আগ্রহ দেখায় না৷ এত নিষ্ঠুর মা-বাবা তারা,তাদের সন্তানকে দেশের মাটিতেও আনার প্রয়োজন মনে করল না। আসলে মানুষের ভিতর থেকে মানবতা বলতে কিছুই এখন আর নেই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মা-বাবা ভাই বোন সবাই টাকার উপর সম্মান করে। টাকা নাই,সম্মানও নাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit