আলী হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচনে জয় হলেও ভাগ্যের কাছে পরাজয় বরণ করেছেন।।

in hive-129948 •  last month 

আমার বাংলা ব্লগ
বাংলা ভাষার মাধ্যমে শেয়ার করো তোমার মনের অনুভূতি

cube-1655118_1280 (1).jpg
Image Source

ভাগ্য বা নিয়তি এমন একটি বিষয়, যার খবর কেউ জানে না। ভাগ্য বা নিয়তির মধ্যে কি আছে ,সেটা কেউ বলতে পারে না। আমাদের জন্য যেমন জন্ম সত্য ঠিক তেমনি আমাদের মৃত্যুও সত্য। এই দুইটার কোনটিকে আমরা অস্বীকার করতে পারবো না। আবার ঠিক তেমনিভাবে আমাদের ভাগ্য বলে কিছু একটা আছে। সেটাও আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। কারণ আমরা সমাজে দেখতে পায় কেউ না চেয়েও অনেক কিছু পেয়ে যাই, আবার কেউ শত চেষ্টা করে, চেয়েও অনেক কিছু পায় না। আবার অনেক সময় দেখা যায় আমাদেরকে ভাগ্যের কাছে পরাজিত হতে হয়। আজকের গল্পে আলী হোসেন চেয়ারম্যান কার কাছে পরাজিত হয়েছে সেটা আপনারাই বলতে পারবেন।

২০১৪ সালের ঘটনা। আমি তখন উচ্চমাধ্যমিকে পড়তেছি। আমি আমাদের গ্রাম থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অন্য একটি গ্রামে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ওই গ্রামের এক সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়িতে থেকে আমি পড়াশোনা করেছিলাম। আমি যে বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবো, সে বৎসর ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়েছিল। আমি যে বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছি, সেই আঙ্কেল ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিল। এখানে উল্লেখ্য যে আমি যে বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছি, তিনির দাদা চেয়ারম্যান ছিল তারপর তিনির বাবাও চেয়ারম্যান ছিল। তিনিও একবার চেয়ারম্যান হয়েছেন। যার ফলে এই বাড়িটি চেয়ারম্যান বাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল।

আমি যে গ্রামের কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম, সেই গ্রামের দুটো গ্রাম পরে একটি গ্রামের নাম ছিল নুরপুর। ঐ নুরপুর গ্রামে বসবাস করতো আলী হোসেন সাহেব। উনার ইতিহাস সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি যে উনি উনার ৩০ বছর বয়স থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে যাচ্ছেন। কিন্তু কোন সময় তিনি বিজয় হতে পারে নাই। তিনি যেহেতু প্রতিবারই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে সেজন্য সবাই তাকে আলী হোসেন চেয়ারম্যান হিসেবেই ডেকে থাকে।

শুনেছি বৃটিশ আমল থেকেই উনার বাবার নাকি অনেক ধনসম্পদ ছিল। তিনি যখন নির্বাচন করতেন তখন প্রত্যেকবার বাবার সম্পত্তি বিক্রয় করে নির্বাচন করেছেন। তিনি টানা তিনবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে হেরেছেন। অবশেষে চতুর্থবারের জন্য তিনি আবার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করেন। ঐ বছর ঐ ইউনিয়নের প্রত্যেকটা মানুষ উনাকে ভোট দেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। যেহেতু লোকটা এত বছর ধরে চেষ্টা করতেছে সবাই তাকে একবার চান্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। আমি যে বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেছি, সেই বাড়ি থেকেও আংকেল চেয়ারম্যান পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করেছেন।

আলী হোসেন চতুর্থবার নির্বাচনের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঢাকা অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে নির্বাচনের ১৫/২০ দিন আগে উনার এলাকায় ফেরত যান। আবার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে। ওই বছর ভাগ্যক্রমে আলী হোসেন প্রতিক হিসেবে চেয়ার মার্কা পেয়েছিল। এই মার্কাটা উনার খুব পছন্দের ছিল। চতুর্থবারের নির্বাচনে গিয়ে চেয়ার মার্কা পেয়ে তিনি খুবই খুশি হয়েছেন। ইউনিয়নের প্রত্যেকটা গ্রামে, প্রত্যেকটা পাড়া মহল্লায়, আলী হোসেনের চেয়ার মার্কার আলাপ আলোচনা হতে লাগলো। আবার বাবার সম্পত্তি বিক্রয় করে টাকা খরচ করতে লাগলো। এ বছর সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আলী হোসেন এর সাথে মিলিত হলো।

দেখতে দেখতে নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আসতে লাগলো আলী হোসেন ও চেয়ার মার্কা নিয়ে এ গ্রাম থেকে ওই গ্রামে, এই বাজার থেকে ওই বাজারে, স্কুলে কলেজে মাঠে, স্টেশেনে চড়ে বেড়াতে লাগলেন। অবশেষে নির্বাচনের তারিখ সন্নিকটে চলে আসলো। নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টা আগে সব প্রার্থীদের পচার প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস নির্বাচনের আগের দিন রাতের বেলা আলী হোসেন আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। জরুরী ভিত্তিতে এম্বুলেন্সের মাধ্যমে আলী হোসেনকে ঢাকায় ল্যাবএইড হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে আলী হোসেন হাসপাতালে বেডে শুয়ে আছে অন্যদিকে নির্বাচন চলমান রয়েছে।

নির্বাচনের দিন আলী হোসেনের কোন জ্ঞান ছিল না। সব ডাক্তাররা মিলে যথা সম্ভব আলী হোসেনকে সুস্থ করার চেষ্টা করছে। নির্বাচন খুব সুন্দর ভাবেই পরিচালিত হলো। আলী হোসেন অসুস্থ এটা নিটক আত্বীয় স্বজন ছাড়া আর কেউ জানে না। রাত দশটার দিকে উপজেলা থেকে ঘোষণা হলো আলী হোসেন চেয়ার মার্কা নিয়ে বিপুল ভোটে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। আলী হোসেনের দুই ছেলে গ্রামে ছিল। উনার ছোট ছেলে এবং দুই ছেলের বউ উনার সাথে ঢাকায় হসপিটালে ছিল।

আলী হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে সেই খুশির খবর নিয়ে আলী হোসেনের দুই ছেলে দ্রুত ঢাকায় আসে। রাত দেড়টার সময় আলী হোসেনের দুই ছেলে দুই পাশে দাঁড়িয়ে। অনেক চেষ্টার পরে রাত চারটার সময় আলী হোসেনের জ্ঞান ফিরে আসে। আলী হোসেনের বড় ছেলে ধীরে ধীরে তার বাবার কানে বলতে থাকে, বাবা আপনার কষ্ট বিফলে যায়নি, আপনার কষ্ট সফল হয়েছে। আপনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছেন। এই সংবাদ শুনে আলী হোসেন কোন কথা বলতে পারলেন না। অঝোরে দুই চোখ দিয়ে পানি আসতে লাগলো। তিনি কান্না করতে লাগলেন।

হসপিটালে রুমে কারো মুখে কোন আওয়াজ নেই। এত বড় খুশির খবর পেয়েও সবার মন খারাপ। কারো মুখে কোন খুশির ছোঁয়া নেই। সবাই আলী হোসেন এর চিন্তায় চিন্তিত হয়ে নির্ঘুম রাত অতিক্রম করছেন। রাত তখন প্রায় শেষের দিকে। আলী হোসেন ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে ফেললেন। ছেলেরা তখনও জেগে আছে দ্রুত ডাক্তারকে ডেকে আনা হলো। ডাক্তার এসে সবকিছু চেকআপ করে আলী হোসেনের ছেলেদেরকে সরি বলে চলে গেল। ডাক্তার সাহেবের নিশ্চুপে চলে যাওয়া দেখে সবাই বুঝে গেল। আলী হোসেন আর বেঁচে নেই। সাথে সাথে কান্নার রুল পড়ে গেল।

পরের দিন দুপুরে আলী হোসেন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এসেছেন। কিন্তু তিনি জীবিত অবস্থায় আসতে পারেননি। লাশ হয়ে আলী হোসেন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে শুয়ে রইলেন। আজকে তিনি চেয়ারম্যান, কিন্তু তার চেয়ারে বসার ক্ষমতা নেই। আজকে উনাকে সবাই চেয়ারম্যান বলে ডাকতেছে, কিন্তু উনার শোনার ক্ষমতা নেই। সবাই বিজয়ের মিছিল নিয়ে আসলেও, আলী হোসেন সেই আওয়াজ শুনতে পান না। তিনি চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। তবে আলী হোসেন সবাইকে এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে বিজয় হলেও, মৃত্যুর কাছে পরাজয় বরণ করেছেন। এখানে তিনি নির্বাচনে জয়ী হলেও ভাগ্যের কাছে পরাজিত হয়েছেন।

সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।

2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSj1ATxRsaEvyH89EyziiK3D1ksn1tTDvDwLCveqrhctVcDnDqtNbsqFMtuqD1RetzrgjG.png

JvFFVmatwWHRfvmtd53nmEJ94xpKydwmbSC5H5svBACH7xbS7ungTbMjNMsQ7fPnm8uUBT2bU8Azf8zCDQrq3tkzHjjCFyraxJQeY79tPTN45w8XxU9wtvaFmWRaLhgHSy5GYKQ6bg.png

IMG_20190907_175336_618.JPG

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।

FNeY1coMNUL9WkErUPeUKmtGszS37qoEdLJEhh8bj8LkMZg4ZnLbSCPtsqdFwbPFaU6vxamfJRhKsAXwWBZmAwtf2KFjktn9asDsnKpUF6cbBcNYFzwcTbFb5dfFf7N5Lt5j8KUqpB64Bhu5yFCR9Qn5uG4sQo8t4PYbc7VJq37PW7258mLRbFTrsBTtbAnos9AJnU46Lv3HqXsN7s.gif

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9uuNWjCEgJj5LnknUa3pWA9yop6dT9GDfEUZtz2oDgA9ocMHrCEtkFpngXowo13q8Mn1YvzEMh5bSRg1SNaKSZwbsLwb3YA.png

KNoz79cGRt58XHcjM3shjWsSEtKgRtxoVdChppmw4FvW2CQtZxVJGen4yBCeRMj2Y2h9ttHevCs9rtWncvn3FXAHo5MrkNBCbLay5LtH7wgCA27mBRvWM5GDKNQKzJk62Dz8KRvqdiFsZ66guzvyhyBYqJu6KB21dLiPDmtFGR2yvqBCtUPp3Rscm37PwtDEWYMtuKM5v3qhNod24L.png

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6JTrGU8e1FPUaNdHG5vjXyg2xthV78bDEmEVvKCQpyzX1kq8gAVzGsPp9GqJVRWxb6T9y35PZmQehnLjELdKKmnhdxQjDuny4.png

Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন

HNWT6DgoBc14riaEeLCzGYopkqYBKxpGKqfNWfgr368M9VRjuxKSTKuNvqEk1nfiYiKKnHbcTuABq9Fu2qE77V9BjGsoqkb23ngKUAk2mCBmjpG3wz3go7Vd2YW.png

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WP87ckB6VoL3UD42BtkosJzLXYjuCC4ws3sxuihZ3nhDfd815qMJiiETpWAiutfN7bjurhaBbivMFVTYEDiv.png

download-03.png

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য

download-044.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP

RGgukq5E6HBM2jscGd4Sszpv94XxHH2uqxMY9z21vaqHt1rDaeRdtDvsXGmDbuRg1s1soomTEddbTFxfMMYzob4oRFK8fTZQyYP8LbQ4tbMTAd2enV3Wq9Ze3N8TTU2.png

Click Here For Join Heroism Discord Server

cyxkEVqiiLy2ofdgrJNxeZC3WCHPBwR7MjUDzY4kBNr81R73dHAE6Ew3WjyveXn6UfQ8ahESLfvvdHjthdnPNKJby2matSBUDur7QMrVroCpwxQmohTSZHpBAXjQT9ZkpEa.png

image.png

image.png

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3Ce9mzjKNKmBKDNB5bPjytfpGcNzZvsf4kqDNjsgbD5sqJcQmA1hgTqT9wQbCkTa3KEsqrYDBjB.gif

456.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আসলে ভাই আপনার পোস্টটি পড়ে বেশ আপ্লুত হয়ে গেলাম। মানুষের জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী কিন্তু মানুষ আশা করে সেই অনেকদিন বেঁচে থাকবে। আলী হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচনে জয় হলেও ভাগ্যের কাছে পরাজয় বরণ করেছেন সত্যি। আলী হোসেন চেয়ারম্যান হয়েছে কিন্তু সেই চেয়ারে বসতে পারে নি। মানুষ কখন কোন মুহূর্তে মারা যাবে তা কখনো কেউ বলতে পারে না। পোস্টটি থেকে অনেক শিক্ষা গ্রহণ করার আছে। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

যে ভাই আলী হোসেন চেয়ারম্যানের ভাগ্যটা খুবই খারাপ। এত বছর পরে চেয়ারম্যান হলো, অথচ চেয়ারেও বাসতে পারল না।