একুশের সত্তা আমরা কতটা বুকে ধরে রাখতে পেরেছি? কিছু কথা।

in hive-129948 •  2 days ago 

একুশের সত্তা আমরা কতটা ধরে রাখতে পেরেছি?

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


IMG_20240227_181244_984.jpg

আমার ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি


আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। এই দিনটি এমন একটি দিন যার সঙ্গে মিশে আছে বাঙালি জাতির আত্মা। আসলে বাঙালি বলতে আমরা গর্ববোধ করি যে সকল কারণে তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হল এই একুশে ফেব্রুয়ারি। অতুলপ্রসাদ সেন বলেছিলেন -

মোদের গরব মোদের আশা
আ মরি বাংলা ভাষা

সেই লাইনগুলির সূত্র ধরেই বলতে হয় বাংলা ভাষা মোদের প্রাণ, বাংলা ভাষা মোদের ধ্যানের মন্ত্র, আর বাংলা ভাষা মোদের আবেগ। সেই আবেগের সঙ্গে জড়িত বাঙালির সমস্ত কিছুর মধ্যে আজকের এই একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি শেষ হবে জড়িয়ে আছে।

সারা বাংলাদেশ জুড়ে যখন বাংলা ভাষার উপর এক তীব্র আঘাত নেমে আসে, তখন এই বাঙালি জাতির ভাইয়েরা মিলে প্রতিরোধ তৈরি করেছিল সেই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী দিনটির ঘটনা আমরা সকলে জানি। তাই সেই ইতিহাস নিয়ে নতুন করে আর চর্বিতচর্বণ করলাম না। কিন্তু যে বিষয়গুলি না বললেই নয় তা হল, এই প্রায় ৭৩ বছর ধরে আমরা কতটা ধরে রাখতে পেরেছি একুশে ফেব্রুয়ারির সেই মাহেন্দ্রক্ষণটিকে। আজ নিজেদের দিকেই প্রশ্নের আঙুল তোলার দিন এসে গেছে। বাঙালির হৃদয় জুড়ে বাংলা ভাষা, বাঙালির অন্তর জুড়ে অমর একুশে। কিন্তু আজকের বাঙালি যেন অদ্ভুতভাবে এক বিকৃত বাঙালির সারসংক্ষিপ্ত রূপ। আজকের প্রজন্ম ঠিক কতটা বাংলা ভাষাকে বুকে ধারণ করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক কলকাতা শহর বাঙালির একটি প্রাণের শহর। প্যারিস যেরকম ফরাসিদের একান্ত আপন, কলকাতা তেমন বাঙালির, এবং একান্তভাবে বাঙালিরই। কিন্তু সেখানে আজ হিন্দি এবং ইংরেজি আগ্রাসন যেমাত্রায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা কি আমাদের মনে আশঙ্কার সৃষ্টি করে না? আমরা জানি ভাষা হল এমন একটি মাধ্যম যার সাহায্যে নিজেদের মনের ভাবকে নিজের মতো করে প্রকাশ করতে পারি। আমরা যতই ডিজিটাল কমিউনিকেশনে পারদর্শী হয়ে উঠি না কেন, মুখের ভাষার বিকল্প আজও কি আবিষ্কার হয়েছে? তাই সামাজিক মাধ্যমে কোনো কিছু লিখে প্রকাশ করা এবং মুখে বলে নিজের ভাব প্রকাশ করার মধ্যে আজও ফারাক রয়েছে অনেক।

একুশ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে যায়। একুশ আমাদেরকে বাঙালি হতে শেখায়। বাংলার মাটিতে বাঙালি মায়ের কোলে জন্মালেই যদি আদর্শ বাঙালি হওয়া যেত তবে ভাষা নিয়ে আজ আমাদেরকে লড়াই করতে হতো না। ১৯৫২ সালে যে লড়াইটা রফিক, জব্বার বা শফিউররা তৈরি করেছিলেন, তারই সংশোধিত এবং পরিবর্তিত রূপ কেন আমাদের কাঁধে এসে চেপেছে? কিন্তু আমরা ভাষাকে রক্ষা করবার সেই গুরুদায়িত্ব কাঁধে বয়ে নিয়ে যাবার যোগ্য কি? প্রশ্ন উঠছে সেখানেই৷ অন্তরাত্মা যখন আপনার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করবে, যে আপনার মাতৃভাষার নাম কী? আপনি কি তাকে মুখ বেঁকিয়ে সপাটে উত্তর দেবেন - বেঙ্গলি! একবার ভেবে দেখুন তো। ইতিহাস আমাদের কি শিখিয়েছে? কলকাতার শপিং মলে গিয়ে টুক টুক করে অর্ধশিক্ষিতের মত ইংরেজি বললেই যদি সাহেব হওয়া যেত, তবে তো বলতে হয় এই বাংলা আজ বিলেত সেজে নিতো। কিন্তু আমাদের বিলেত সাজবার প্রয়োজনটাই বা কী? কলকাতাকে লন্ডন বানিয়ে আমরা আদপে এই শহরের নিজস্বতাকে নষ্ট করতে চাইছি কি? এই প্রশ্নগুলো আজ নিজের দিকে ছোঁড়বার সময় এসেছে।

আচ্ছা আপনি কখনো ইংরেজিতে স্বপ্ন দেখেছেন? মানে ধরুন সম্পূর্ণ স্বপ্নটি হল স্পোকেন ইংলিশের একটি আদ্যোপান্ত কোর্স। হয়েছে এমন? না দেখবেন না। কারণ শপিং মল আর স্বপ্নের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য আছে। আসলে স্বপ্নের মধ্যে লোক দেখানো বিষয়টি থাকে না। আর একুশের অহংকার আমাদের যেমন স্বপ্ন দেখতে শেখায়, তেমন নিজেকে একবার হলেও অবচেতনে আয়নায় দাঁড় করাতেও শেখায়। বিদ্যাসাগরের বাংলায় বর্ণপরিচয়ের পাতায় ঝালমুড়ি মাখা হবে, এ কথা কস্মিনকালেও আপনি চিন্তা করেন নি তাই তো? সে আপনি তো অনেক কিছুই চিন্তা করেননি। হাওড়া স্টেশন যে এত তাড়াতাড়ি কানপুর বা মুঘলসরাই স্টেশনে পরিণত হবে, তাও তো আপনি ভেবেছিলেন? কিন্তু ওই হিন্দি বলা মুখগুলোর মুখোশটা সরিয়ে কখনো দেখেছেন? বেশিরভাগটাই বাঙালি বেরিয়ে পড়ছে না তো? বিষয়টি কিন্তু যথেষ্ট চিন্তার। কলকাতার মাটিতে দাঁড়িয়ে বাঙালি যদি হিন্দি বলা শুরু করে, আর শপিং মলে গিয়ে ইংরাজি, তবে আর বাঙালি সেজে পাড়ার মোড়ে পাঁইয়া-উড়ে বলে সারা ভারতকে খিস্তি করে লাভ আছে? ভাবুন ভাবুন। হাতে যথেষ্ট সময় আছে। এখনও নিজের বাঙালি সত্তাকে টেনে বের করে আনতে চাইলে আনতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন, বাঙালিসত্তা বের করতে গিয়ে অযথা মানুষজনকে কামড়ে খিমচে দেবেন না। তার চেয়ে বরং ধীরে ধীরে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ডটা পড়ার অভ্যাস করুন। বাঙালি হতে গেলে ধুতি পাঞ্জাবি পড়তে হবে এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। নিদেনপক্ষে নিজের মায়ের ভাষাকে প্রান্তিক মানুষের কথ্য মাধ্যম ভেবে ফেলার অভ্যাসটা কাটানো খুব জরুরী। তারপর আর 'বেঙ্গলি' বলে নিজেকে পরিচয় দিতে হবে না। দেখবেন আপনা থেকেই বলতে ইচ্ছা হবে যে "আমি বাঙালি"।


🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

First_Memecoin_On_Steemit_Platform.png

hjh.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Daily tasks-

Screenshot_20250221-235817.jpg

Screenshot_20250221-235756.jpg