🙏🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏🙏

দক্ষিণেশ্বর মন্দির তার যশ প্রতিপত্তি এবং নিজস্বতা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বছরের পর বছর। কিন্তু আমরা কজন জানি ভবতারিণী মূর্তি নির্মাতা নবীনচন্দ্র ভাস্করের কথা? সেযুগের উজ্জ্বল ভাস্কর নবীনচন্দ্র ১৮৩৫ সালে 'ভাণ্ডারী' পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ধমান জেলার দাঁইহাট গ্রামে তাঁর পিতৃপুরুষের ভিটে। নবীনচন্দ্রের আদিপুরুষ কেনারাম ভাণ্ডারী ছিলেন পাথরবাটি বিক্রেতা। কেনারামের পুত্র রামধন ১৮৫০ সালে কলকাতায় 'ওরিয়েন্টাল স্টোন ওয়ার্কস' নামে একটি পাথর খোদাইয়ের কারখানাও করেন। তাঁরই পুত্র ছিলেন নবীনচন্দ্র। পিতার কাছে অনুশীলন করে নবীনচন্দ্র অল্প বয়সেই দক্ষ কারিগর হিসাবে পরিচিত হয়েছিলেন। মূলত তাঁর খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী ও ক্ষীরগ্রামের যোগদ্যা নির্মাণ করার পর। সেকালে তিনিই কেবল অষ্টধাতু মিশিয়ে নিখুঁত প্রতিমা নির্মাণ করতে পারতেন। কথামৃততে শ্রীম বলছেন, 'শ্রীমূর্তি দর্শন করিয়া ভূধরের দাদা বলিতেছেন 'শুনেছি নবীন ভাস্করের নির্মাণ'। ঠাকুর বলিতেছেন - 'তা জানি না - জানি ইনি চিন্ময়ী'। শ্রীম আরো বলছেন, 'ঠাকুরের মুখে শুনেছি নবীন ভাস্কর সারাদিনে বেলা তিনটের সময় একবার মাত্র হবিষ্যান্ন ভোজন করতেন। অত সংযত হয়ে অত তপস্যা করে তবে দক্ষিণেশ্বরের মা কালীকে বানিয়েছিলেন। তাইতো অত জীবন্ত।'

ঠাকুর নির্মাণকালে রাণী রাসমণিও জানবাজারের বাড়িতে আচার, নিষ্ঠা ও কঠোর ব্রত নিয়ে দিন কাটাতেন। সেই দিনগুলোয় ত্রিসন্ধ্যা স্নান, হবিষ্যান্ন ভোজন, মাটিতে শয়ন ও জপ পুজোর মধ্যে নিজেকে মিশিয়ে রাখতেন দোর্দণ্ডপ্রতাপী রাণীমা, যাঁকে স্ময়ং কোম্পানী বাহাদুরও সমঝে চলতেন সময়ে অসময়ে। নির্মাণের পরে চিন্ময়ী মায়ের নাম দেওয়া হয় 'ভবতারিণী'। যদিও রাণী রাসমণি মৃত্যুর আগে তাঁর দক্ষিণেশ্বরের দেবত্তর উইলে দেবীকে 'শ্রী শ্রী জগদীশ্বরী কালীঠাকুরাণী' বলে উল্লেখ করেছেন। কারও মতে রাণীমার গুরুদেব নবদ্বীপের পোড়া মা তলায় সাধন ভজন করতেন ও নিকটবর্তী ভবতারিণী মন্দিরে প্রসাদগ্রহণ করতেন। তাই তিনিই রাণীমার দেবীমূর্তিকে 'ভবতারিণী' নামে সম্বোধন করেন। আবার অনেকের মতে যুগপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব মায়ের এই নামটি রেখেছিলেন। তবে যাই হোক, দেবীর মূর্তি নির্মাণে অসামান্য যে দক্ষতা নবীন ভাস্কর দেখিয়েছিলেন তা আজও সাধারণ চর্মচোখেই ধরা পড়ে। দক্ষিণেশ্বর ছাড়াও তিনি আরো বহু প্রতিমা নির্মাণ করেছেন যা আজও বাংলার বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে ভক্তিভরে পূজিত হয়ে আসছে৷ তাঁর খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর বর্ধমান, লালগোলা, নাটোর, রংপুর, কাশিমবাজার ও আরো বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোক আসতে থাকে তাঁর কাছে। এমনকি এমনও শোনা যায় তিনি জামালপুরে আস্ত একটি পাহাড়ও কিনেছিলেন কষ্টিপাথর সংগ্রহের জন্য। যেসকল মূর্তি ভাস্কর নবীনচন্দ্রকে অমরত্ব দিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সিউড়ির ভবতারিণী, শেওড়াফুলির নিস্তারিণী, বক্রেশ্বরের কালীমূর্তি, উদ্ধারণপুরের কালাগ্নিরুদ্র, বর্ধমান রাজবাড়ির গোপাল, কালীমূর্তি, নাটোর রাজবাড়ির আনন্দকালী ইত্যাদি। দক্ষিণেশ্বরে রাণী রাসমণির স্নেহধন্য অদ্বিতীয় এই শিল্পী ১৯০৮ সালে ৭৩ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন। দুঃখের বিষয় দক্ষিণেশ্বরে ভ্রমণরত বাঙালি খুব তাড়াতাড়িই এই যুগভাস্করকে নিজেদের বিস্মরণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এমনকি বলাই বাহুল্য তাঁর পুত্ররাও আজ আর কলকাতায় 'ওরিয়েন্টাল স্টোন ওরার্কস'কে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন নি। দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণীমূর্তি ছাড়াও তিনি আজও বেঁচে রয়েছেন বাংলার আনাচেকানাচে অসংখ্য মৃন্ময়ী মূর্তিতে। তিনি রয়ে গেছেন শ্রীম রচিত শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃততে।

---

চিত্রগ্রহণ	ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন	৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস	আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক	কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন	দক্ষিণেশ্বর, পশ্চিমবঙ্গ
কভার ছবি এডিটিং সৌজন্য	অণুলিপি

---

---

🙏 ধন্যবাদ 🙏

---

(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)

---

---

---

---

--লেখক পরিচিতি--

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

---

---

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

---