ওয়ারেন হেস্টিংস সাহেবের ব্যবহার করা চেয়ার এবং টেবিল।
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
আজ আপনাদের একটি ঐতিহাসিক জিনিসের দর্শন করাবো। ইতিহাস ভালবাসি বলে মাঝে মাঝে ইতিহাসের সন্ধানে বেরোই। ঠিক তেমনভাবেই পৌঁছে গিয়েছিলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের একেবারে অন্দরমহলে। সেখানে গিয়ে একটি জিনিস দেখে প্রায় চমকে উঠলাম। যে জিনিসটি বহু পুরনো হলেও এখনো একেবারে নতুনের মত পরিচর্যা হয়ে আসছে। আসুন প্রথম এই পরিচয় করি জিনিসটির সঙ্গে। দেখতে অতি সাধারণ একটি চেয়ার এবং ছোট টেবিল মনে হলেও আসলে এই চেয়ার ও ছোট টেবিলের গুরুত্ব অপরিসীম। আর যদি এই চেয়ার টেবিল গুলি বিক্রি করা হয় তবে কত কোটি টাকায় যে বিক্রি হবে তা না আপনি জানেন না আমি জানি। তার কারণ এই চেয়ারটি হলো স্বয়ং ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এর ব্যবহৃত। কি চমকে উঠলেন তো? চমকে ওঠার মতই বিষয়। আমিও চমকে উঠেছিলাম চেয়ারটি চোখের সামনে দেখে। যে চেয়ার আমি চোখের সামনে দেখছি তা যে একসময় ওয়ারেন্ট হেস্টিংস সাহেব ব্যবহার করতেন, তার জন্য বিশ্বাসই হয় না। কিন্তু ঘটনাটি একেবারে সত্য। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল কর্তৃপক্ষ বহুদিন ধরে এই চেয়ারটি সংরক্ষণ করছেন অত্যন্ত যত্ন সহকারে।
এবার আসুন চেয়ারটির একটি বৈশিষ্ট্য জেনে নিই। কি কোন কাঠ বা পাথরের তৈরি নয়। চেয়ারটি আসলে একেবারে আসল হাতির দাঁতে তৈরি। আপনারা সকলেই জানেন যে হাতির দাঁতে তৈরি জিনিসের মূল্য অপরিসীম। আর তার সঙ্গে ঐতিহাসিক ভ্যালু তো আছেই৷ আসলে এই ধরনের হাতির দাঁতের তৈরি জিনিসপত্র আজকাল আর দেখাই যায় না। অতি পুরনো দিনে রাজাদের দরবারে এই ধরনের হাতির দাঁত ব্যবহার করা হতো। আর এই হাতির দাঁতের মূল্য ছিল অগাধ। আপনারা যে চেয়ারটি দেখছেন সেটির ঐতিহাসিক মূল্য এত বেশি কেন? আসলে এই চেয়ার এবং ছোট টেবিলটি ওয়ারেন হেস্টিংস সাহেবকে উপহার দিয়েছিলেন বাংলার প্রথম পরাধীন নবাব মীরজাফর আলী খানের স্ত্রী মুন্নি বেগম। মুন্নি বেগম ওয়ারেন্ট হেস্টিংস এর যেন খাস ব্যক্তিতে পরিণত হন। সাহেব কোম্পানির থেকে ত্রি একটি মাসোহারাও পেতেন। আর সেই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ হেস্টিং সাহেবকে বেগম হাতির দাঁতের তৈরি এই চেয়ার উপহার দেন। আর আজও সেই চেয়ার এবং টেবিল শোভা পাচ্ছে ভিক্টোরিয়ার অভ্যন্তর ভাগে অবস্থিত মিউজিয়ামে। আপনারা ভিক্টোরিয়ার হল বেড়াতে গেলে অবশ্যই ভেতরে ঢুকে দেখবেন। সেখানে এমন কিছু জিনিস আপনাদের চোখে পড়বে চা এক কথায় অসাধারণ। এইসব জিনিসপত্রের ঐতিহাসিক মূল্য টাকায় মাপা সম্ভব নয়।
বলাই বাহুল্য চেয়ার এবং টেবিলটি। কিন্তু ইতিহাস বলছে এদের বয়স নয় নয় করে প্রায় ৩০০ বছরের কাছে। এই চেয়ারটি দেখতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। চেয়ারটির ডিজাইন এক কথায় অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। চারদিক থেকে একেবারে রাজকীয় ডিজাইন বেশ চোখে পড়বার মতন। সামনে একটি ছোট্ট টেবিল সেখানে অনায়াসে একটি পাত্রকে রাখা যায়। সব মিলিয়ে এই চেয়ার এবং টেবিলের ঐতিহাসিক মূল্য বলে বোঝানোর মত নয়।
স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংস এর ব্যবহার করা চেয়ার এবং টেবিল আপনাদের ভাল লাগলে মন্তব্য করে নিশ্চয়ই আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1868734302047125611?t=1ha7eqtt7h1Q2Smdwc8G8w&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
$PUSS promotion-
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
যদিও মীরজাফরের স্ত্রী ওয়ারেন্ট হেস্টিংকে এই হাতির দাঁতের তৈরি এই চেয়ার ও টেবিল উপহার দিয়েছিল। দেখতে কিন্তু সুন্দর। মীরজাফরের জন্যই আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ এতটা পিছিয়ে রয়েছে। তা নাহলে আমরাও ইউরোপ আমেরিকার থেকে কোন অংশে কম থাকতাম না। ধন্যবাদ নতুন তথ্য শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ভাই। ওই জন্য বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরকে কেউ হজম করতে পারেনা। কিন্তু একা সে নয়। তার সঙ্গে আরো অনেকে এই সেই বিশ্বাসঘাতকতায় নাম লিখিয়েছিল। মন্তব্য করবার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit