🙏🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏🙏

আমাদের বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অ্যাকাডেমিক এক্সপো ২০২৪। প্রতিবছর ঠিক এই সময়ে বিদ্যালয় অনুষ্ঠিত হয় এই বিশাল ইভেন্টটি। সব থেকে বড় কথা হল এই বছর এই জায়েন্ট ইভেন্টে আমি ছিলাম স্কুলের টিচার ইনচার্জ। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন বিগত কয়েকটা দিন কী ভীষণ ব্যস্ততায় কেটেছে আমার। প্রায় খাওয়া দাওয়া ভুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মডেল তৈরি এবং সমস্ত ব্যবস্থাপনায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে হয়েছিল। সম্পূর্ণ দায়িত্ব মাথার উপর থাকলে একটা চাপ ভীষণভাবে এসে বসে মাথায়। তবে সেই দায়িত্ব সফলভাবে পালিত হলে পরে নিজের একটা তৃপ্তি কাজ তো করেই।

অ্যাকাডেমিক এক্সপো এমন একটি ইভেন্ট যেখানে স্কুলের প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর সকল ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ের উপর মডেল এবং চার্ট তৈরি করে তা দর্শকদের সামনে উপস্থাপনা করেছে। সারা স্কুলে প্রায় ৩৫০ টি মডেল প্রদর্শিত হয়েছে এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে। বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং কলা বিভাগের তরফে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই এক্সপো বা প্রদর্শনী। কিন্তু মূল বিষয়গুলি ছাড়াও ক্রীড়া, গান বাজনা বা স্কাউটের তরফে আলাদা করে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাই সম্পূর্ণ দিনটি আমার শুধু ছোটাছুটি করেই কেটে গেল। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের বানানো মডেল গুলি এতটাই সুন্দর ছিল যা দেখে আমার সমস্ত ক্লান্তি এক ধাক্কায় দূরে চলে গেল। বিভিন্ন কার্যকরী মডেল বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কাজকর্মের নমুনা প্রদর্শন করছিল।

এবার তবে আসুন ছাত্রদের বানানো কিছু মডেলের ছবি দেখে নিই আমরা। সাথে বিভিন্ন বিভাগ থেকে আয়োজিত ও পরিচালিত এই এক্সপোতে বিভিন্ন মডেল ও তার বিবরণী সম্পর্কে একটু আলোচনা করা যাক।

💐 আহ্বান 💐

আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা এভাবেই অনুষ্ঠানের শুরুতে সকল অতিথি এবং অভ্যাগতদের আহ্বান জানিয়েছিল। এরপর শুরু হয় মূল এক্সপোর প্রদর্শন। চারিদিক থেকে বহু মানুষ ছুটে এসেছিল এই অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকতে। আর সারাদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে প্রায় দু হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন আমাদেরকে অবাক করে।

💐 উদ্বোধন 💐

প্রথমেই অতিথির উপস্থিতিতে আমাদের এক্সপো শুরু হয় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষিকা এবং সহকারি প্রধান শিক্ষিকা মহাশয়। আমি যেহেতু ব্যবস্থাপক হিসাবে ছবি তোলার দায়িত্ব নিয়েছিলাম তাই এই ছবিতে আমায় দেখা যাচ্ছে না।

💐 মডেল ১ 💐

এই মডেলটি একটি এমন গাছ যেখান থেকে বিভিন্ন নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। নবম শ্রেণীর এক পড়ুয়া সম্পূর্ণ নিজের হাতে এই মডেল গাছটি তৈরি করেছে। গাছটিতে নোবেল বিজয়ীদের ছবি সমেত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা লেখা আছে।

💐 মডেল ২ 💐

এটি একটি এটিএম মেশিনের মডেল। এই শিশুটি শিক্ষকের সহযোগিতায় এই মডেলটি তৈরি করেছে। সব থেকে বড় কথা এতে একটি কার্ড প্রবেশ করালে বিভিন্ন মূল্যের নকল টাকা বাইরে বেরিয়ে আসে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই মেশিনটি ভীষণ প্রাসঙ্গিক এবং অত্যাধুনিক একটি মডেল।

💐 মডেল ৩ 💐

আমাদের হারিয়ে যাওয়া শিশু বেলা নিয়ে কয়েকজন ছাত্রী উপরিউক্ত এই মডেলটি তৈরি করেছে। এখানে একটি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে যেখানে বিভিন্ন কার্টুন ক্যারেক্টার রয়েছে। সম্পূর্ণ বাড়িটি ভীষণ দক্ষতার সঙ্গে আলো দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মডেলটি ভীষণ আকর্ষণীয় একটি রূপ পেয়েছে।

💐 মডেল ৪ 💐

এখন দেখা যাচ্ছে একটি লাইভ জিওমেট্রি মডেল। এখানে বিভিন্ন ধরনের জ্যামিতিক আকারগুলিকে বাস্তবিক আকারদান করা হয়েছে। দুজন ছাত্র সম্পূর্ণ নিজের হাতে এই মডেলটির রূপদান করেছে। চোখের সামনে থেকে এটি দেখতে অভাবনীয় সুন্দর এবং গাণিতিক দিক থেকে ভীষণ প্রাসঙ্গিক।

💐 মডেল ৫ 💐

এই মডেলটিতে কত সুন্দর করে গঙ্গার উপনদী এবং শাখানদীগুলিকে দেখানো হয়েছে দেখুন। সব থেকে বড় কথা এখানে যে জলটি দেখছেন সেট কিন্তু আসলেই প্রবাহিত। চোখের সামনে থেকে শিশুদের বানানো এমন মডেল দেখতে পাওয়া সত্যিই এক আলাদা অনুভূতির বিষয়।

💐 মডেল ৬ 💐

দেখুন তো চিনতে পারছেন কিনা। আমাদের স্কুলের শিশুরা কত আন্তরিকতার সহিত ঢাকার ভাষা শহীদ মিনার নির্মাণ করেছে। কে বলে এখন বাংলা ভাষার দাম নেই? আজকের প্রজন্মও এই ভাষাকে ভালবাসতে শিখছে। তাইজন্যই এত আন্তরিকতায় নিখুঁত ভাবে তারা শহীদ মিনার বানাতে সক্ষম হয়েছে।

💐 মডেল ৭ 💐

দেখুন কত ছোট ছোট শিশুরা নিজ হাতে জগন্নাথের রথ নির্মাণ করেছে। প্রত্যেকটি রথ তার নির্মাণশৈলীতে একে অপরকে টেক্কা দেয়। ভীষণ সুন্দরভাবে এই রথগুলি বানিয়ে তারা এক্সপোতে অংশগ্রহণ করেছিল।

💐 মডেল ৮ 💐

দেখুন কত সুন্দর করে হিমালয় পর্বত তৈরি করেছে স্কুলের বাচ্চারা। একেবারে নিখুঁত কারুকার্য করে তারা চেষ্টা করেছে বরফে ঢাকা পর্বত শৃঙ্গ তৈরি করতে। সামনে থেকে এই মডেলটি ভীষণ সুন্দর দেখতে লাগছিল। আমি তখনই এর ছবি মোবাইলে ক্যাপচার করি।

💐 মডেল ৯ 💐

এবার দেখুন অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীর বানানো দেবী সরস্বতীর মূর্তি। একদম ছোট আকারে মাটি দিয়ে এত সুন্দর সৌন্দর্য সমেত যে সরস্বতী নির্মাণ করা যায় তার শিশুটি দেখিয়ে দিল। মূর্তিটি দেখার পর আমি রীতিমতো অবাক হয়ে গেছিলাম। এত সুন্দর হাতের কাজ নিশ্চয়ই ওকে একদিন সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছে দেবে।

💐 মডেল ১০ 💐

শিশুরা ভীষণ যত্ন করে সম্রাট অশোকের নির্মিত সারনাথ, সাঁচি স্তুপ নির্মাণ করেছে। বিহারে অবস্থিত স্তুপ গুলি সারা পৃথিবীর সম্পদ। আর একদম ছোট আকারে তারা কত নিখুঁতভাবে সেই স্থাপত্যগুলো বাস্তবে নির্মাণ করল।

💐 মডেল ১১ 💐

এবার দেখুন ভারতের মুম্বাইতে অবস্থিত গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার ছবি। আরব সাগরের ধারে এই স্থাপত্য ভারতবর্ষের এক উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যের মধ্যে পড়ে। দুজন শিশু কয়েকদিনের প্রচেষ্টায় এত সুন্দর সেই মডেলটি তৈরি করতে পেরেছে।

💐 মডেল ১২ 💐

জঙ্গলের প্রাণী হিসেবে এই কুমিরটি সাজানো ছিল স্কুলের একটি ঘরে। ভীষণ সুন্দর করে ডিমের ট্রে দিয়ে তারা এই কুমিরটি নির্মাণ করেছে। দুজন ছাত্র তাদের অভিনব ভাবনা থেকে ফুটিয়ে তুলেছে এই কুমিরের মডেলটি। আশা করি এটিও আপনাদের ভালো লেগেছে।

💐 মডেল ১৩ 💐

এবার দেখছেন ছোট্ট পরিসরে বানানো পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মডেল। জগন্নাথ মন্দিরে যেসব নাট মন্দির রয়েছে সেগুলি এখানেও নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি মন্দিরের চূড়াটিও খুব যত্ন করে বানিয়েছে তারা। সামনে থেকে এত সুন্দর মডেল দেখার অভিজ্ঞতা সত্যিই এক প্রাপ্তি।

💐 রঙ্গোলি 💐

এবার দেখুন একটি রঙ্গোলির ছবি। ভীষণ যত্ন করে এবং অতি কম সময়ে এই রঙ্গোলি তৈরি করা হয়েছে। দশম শ্রেণীর দুজন ছাত্রী তাদের অভিনব শিল্প সত্তায় ফুটিয়ে তুলেছে এই রঙ্গোলিটি।

💐 খানাপিনা 💐

সর্বশেষে দেখাচ্ছি আমাদের একমাত্র ফুড স্টলের ছবি। তিনজন ছাত্র-ছাত্রী মিলে বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করে এই ফুড স্টলটির ব্যবস্থা করেছিল। তারা আমাকে অনেকদিন ধরেই বলছিল তারা স্টল দিতে চায়। কিন্তু আমি তাদের কথাকে খুব একটা আমল দিতে চাইনি। কিন্তু শেষে কিছুটা বাধ্য হয়েই তাদেরকে পারমিশন দিই স্টল বসাবার। অতঃপর তারা আমাকে অবাক করে দেয় তাদের স্থলে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের আয়োজন করে। মাংসের ঘুগনি, মোমো থেকে শুরু করে চিলি চিকেন, ফুচকা পর্যন্ত প্রায় সব কিছুরই আয়োজন ছিল সেখানে। বলাই বাহুল্য, তাদের বিক্রি বাট্টাও বেশ ভালোই হয়েছে।

আশা করি স্কুলের এক্স পো এবং তার সমগ্র ব্যবস্থাপনা আপনাদের বেশ ভালো লেগেছে। এখন আপনারাও সবাই এইসব সৃজনশীল শিশুদের আশীর্বাদ করুন যাতে তারা জীবনে সাফল্যের চূড়ায় উঠতে পারে এবং দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে পারে।

---

চিত্রগ্রহণ	ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন	৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস	আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক	কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন	সোদপুর, পশ্চিমবঙ্গ
কভার ছবি এডিটিং সৌজন্য	ক্যানভা ও অণুলিপি

---

---

🙏 ধন্যবাদ 🙏

---

(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)

---

---

---

---

--লেখক পরিচিতি--

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

---

---

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

---