নন্তন চত্বরে কিছুক্ষণ
🙏 সকলকে স্বাগতম্ 🙏
কলকাতা শহর পশ্চিম বাংলার রাজধানী। এই শহর সারা ভারতের মধ্যে এক অন্যতম মেট্রোপলিটন হিসেবে বিখ্যাত। অন্যদিকে কলকাতাকে বলা হয় ভারতের কালচারাল ক্যাপিটাল। অর্থাৎ বিনোদন এবং তথ্য সংস্কৃতির দিক থেকে কলকাতা শহর ভারতের মধ্যে সেরা শহর। কলকাতা শহরে এই তথ্য সংস্কৃতি এবং সমস্ত সাংস্কৃতিক কাজকর্মের কেন্দ্রবিন্দু যে জায়গাটা, তার সম্বন্ধে আজ আপনাদের সঙ্গে কয়েকটি কথা বলব। সঙ্গে নিয়ে এসেছি কিছু ছবি। আমি যে জায়গাটিতে নিয়মিত যেতে পছন্দ করি তা হল কলকাতা শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত নন্দন চত্ত্বর। এই অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে গিয়ে দুদণ্ড বসতে খুব ভালো লাগে। এখানে সব সময় সাংস্কৃতিক মিলন মেলার এক উৎসব যেন লেগেই রয়েছে। গেলে কখনো না কখনো পরিচিত কবি সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিমনস্ক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। আর সেখান থেকে যেন বেরোতে ইচ্ছা করে না। আজও একটি একটি বই প্রকাশ উপলক্ষে সেই স্থানে উপস্থিত হয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে কিছু ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছি। আসুন একে একে সেই ছবিগুলো দেখে নিই আর আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই কলকাতার সাংস্কৃতিক তীর্থস্থান নন্দনের সঙ্গে।
নন্দন নামটি উচ্চারণ করলেই যে মানুষটির কথা প্রথম মনে পড়ে তিনি হলেন বিখ্যাত বাঙালি সত্যজিৎ রায়। এই প্রেক্ষাগৃহের সামনে যে নন্দন লেখার ডিজাইনটি দেখতে পাচ্ছেন সেটিও তাঁরই পরিকল্পিত। সেরা বাঙালি বললে যে সকল মানুষদের কথা মনে পড়ে তার মধ্যে অন্যতম সত্যজিৎ রায়। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় চলচ্চিত্রের বিস্তার এবং প্রচারের উদ্দেশ্যে সরকার ১৯৫৮ সালের ২রা সেপ্টেম্বর এই হলের দারোদ্ঘাটন করেন। সেদিন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়।
নন্দনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গ তথা পূর্ব ভারতে সারা পৃথিবীর চলচ্চিত্রকে মানুষের সামনে নিয়ে আসা এবং প্রচার ঘটানো। এই উদ্দেশ্য নিয়ে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রেক্ষাগৃহটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে রবীন্দ্র সদন থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি বা শিশির মঞ্চ সমেত আরো একাধিক প্রেক্ষাগৃহ এই চত্বরেই অবস্থিত।
শোনা যায় নন্দনকে আকাশ থেকে দেখলে নাকি মাছের মত দেখায়। এই নন্দনের চারপাশে রয়েছে জলের পরিখা। অসাধারণ সুন্দর এই পিক্যাগ্রিয় বাঙালির আড্ডার একটি প্রধান জায়গা হিসেবে চিহ্নিত। চারপাশের ঝলমলে আবহাওয়া এবং পরিবেশ যেন বাঙালিকে সংস্কৃতি মুখর করে রাখে। সন্ধ্যাবেলা এখানে যাওয়ার আনন্দই আলাদা। নন্দনের সামনে বসে এক কাপ লেবু চা যে না খেয়েছে সে অনেক কিছুই আনন্দ থেকে এখনো বঞ্চিত।
সব থেকে ভালো লাগে নন্দনের আশেপাশের পরিবেশ। চারদিকে রঙিন ফোয়ারা এবং তার মাঝখানে ঝলমলে নন্দন যেন বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়। এই যে ফোয়ারার ছবিটি দেখছেন এটি একেবারে নন্দনের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এর চারপাশে বসে মানুষ আড্ডা দেয় নিজের সঙ্গীকে সঙ্গে করে। কলকাতা প্রেমের শহর, ভালোবাসার শহর। আর তার প্রধান একটি প্রাণকেন্দ্র হল এই নন্দন ও রবীন্দ্র সদন চত্বর।
এই ফোয়ার আর পিছন দিকে দুটি স্থাপত্য আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। একটি ঐতিহ্যময় এবং আরেকটি আধুনিকতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বাঁদিকে দেখতে পাচ্ছেন কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্য ক্যাথিড্রাল চার্চ। কলকাতায় যতগুলি পুরনো গির্জা আছে তারমধ্যে এটি অন্যতম। আর ডানদিকে দেখতে পাচ্ছেন কলকাতা তথা পূর্ব ভারতের সর্বাপেক্ষা উচ্চতম বিল্ডিং 'দ্য ৪২'। এই বাড়িটি মোট ৬৫ তলা। এমন উঁচু বাড়ি পূর্ব ভারতে আর কোথাও নেই। ছবিতে দেখেই বুঝতে পারছেন বাড়িটি কেমন আকাশচুম্বী এবং মেঘের দেশ ছুঁয়ে ফেলেছে অনায়াসে।
আশা করছি নন্দন এবং লাগয়া চত্বর বিষয়ক এই পোস্ট আপনাদের কাছে তথ্যবহুল লেগেছে। যদি এই পোস্ট ভালো লেগে থাকে নিশ্চয়ই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1862916397577519304?t=YjZxFC6tliKGkBNLSka4BA&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আজকের টাস্ক -
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার নন্দন চত্বরে ঘুরাঘুরি আর চমৎকার বিবরণী নন্দন চত্বরে যাওয়ার আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে৷ এমন পোস্ট আরও দেখতে চাই। ধন্যবাদ এত সুন্দরভাবে শেয়ার করার জন্য
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কলকাতা এলে অবশ্যই আসুন। এই অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করলে মন ভালো হয়ে যায়। কলকাতার সংস্কৃতিক পীঠস্থান হিসেবে এই জায়গা বিখ্যাত। খুব ভালো লাগলো এমন সুন্দর কমেন্ট করলেন বলে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit