।পুরনো কলকাতার গলিপথ।
আজ একটি বিশেষ ফটোগ্রাফি পোস্ট আপনাদের সামনে নিয়ে এলাম। ব্রিটিশ জমানার পুরনো শহর কলকাতা। আশপাশে অনেক বাড়িঘর। কথায় বলে প্রাসাদ নগরী। আর এই প্রাসাদ নগরীতে আজও টিকে রয়েছে কয়েক শতাব্দী প্রাচীন বিভিন্ন ঘরবাড়ি। সেই বাড়িগুলি এতই পরস্পরের নিকটস্থ যে মাঝখানে গলির প্রস্থ অত্যন্ত সংকীর্ণ। উত্তর কলকাতাই আসলে পুরনো কলকাতা। ইংরেজরা আসার পর এই অঞ্চলই ছিল ব্ল্যাক টাউন বা নেটিভ টাউন। আর দক্ষিনে বাস করত অভিজাত সাহেবরা। অর্থাৎ হোয়াইট টাউন। আজও উত্তর কলকাতায় সেই পুরনো ছাপ অব্যাহত। প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ি শতাব্দী প্রাচীন। আর বিখ্যাত হল উত্তর কলকাতার গলিগুলি। অনেকে একে কাশীর গলির সঙ্গেও তুলনা করে। উত্তর কলকাতা গেলেই আমি চেষ্টা করি এইসব গলিগুলির ভেতর দিয়ে হেঁটে ছবি সংগ্রহ করতে। চারিদিকে মিউনিসিপ্যালিটির পোস্টারে লেখা বিপজ্জনক বাড়ি। আজ এই ছবির অ্যালবামে এমনই কিছু ভাঙা বাড়ির মাঝখানের গলিপথের ছবি তুলে আনলাম। অ্যালবামটি হয়তো একটু ভিন্নধর্মী। হয়ত সুন্দর সুন্দর ফুলের ছবি নেই, বা মনোরোগ পরিবেশ নেই। কিন্তু যা আছে তা হল ইতিহাস। আর এইসব আঁকড়েই আজকের কলকাতা শহর। আশা করি আপনাদেরও ভালো লাগবে। কলকাতা শহরকে চিনতে গেলে এই শহরের এই গলিগুলোয় ঘুরে বেড়ানো খুব জরুরী। আসুন তবে যাওয়া যাক সেই সংকীর্ণ গলিগুলোয়।
💐প্রথম ছবি💐
ছবিটি বাগবাজারের একটি গলির। দুপাশ থেকে পুরনো বাড়িগুলি যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে গলির উপর। সব থেকে বড় বিষয় হল আজ গলিগুলো সব পিচের তৈরি এবং পরিচ্ছন্ন।
💐দ্বিতীয় ছবি💐
এই গলিটিও সোজা চলে গেছে বাগবাজার গঙ্গার ঘাটের দিকে। মধ্যিখানে সরু গলি দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রচুর মানুষ চলাফেরা করে রোজ।।
💐তৃতীয় ছবি💐
এই গলিটি খুব সরু হলেও প্রচুর মানুষ এখান দিয়ে চলাফেরা করে। অনেক ঘুরে গঙ্গাস্নানে না গিয়ে মানুষ এইগুলি ব্যবহার করে সরাসরি পৌঁছে যায় গঙ্গার ঘাটে।
💐চতুর্থ ছবি💐
আগের গলিটির আরও একটু বৃহত্তর অংশ ছবির মাধ্যমে দিলাম। গলিটি সরু হলেও এই রাস্তায় প্রচুর মানুষ স্নান করতে আসেন। কারণ ঠিক এর পাশেই একটি পুরনো পাম্প কল আছে যেখানে গঙ্গা থেকে প্রতিনিয়ত জল ওঠে।
💐পঞ্চম ছবি💐
এই গলিটি সরু হলেও বহুল ব্যবহার্য। এর ভেতর দিয়ে গেলে যেন দিনে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। কিন্তু এখানে প্রচুর মানুষের বাস। আসলে এইসব গলিপথ একসময় তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করা হতো।
কলকাতার এই জায়গাই এক সময়ের নেটিভ টাউন। সাহেবরা ভুলেও উঁকি মারতেন না এসব জায়গাতে। অসংখ্য মানুষ কলেরা এবং ম্যালেরিয়ার কবলে পড়ে প্রাণ হারাতেন প্রতিদিন। তারপর ধীরে ধীরে পেশা অনুযায়ী আলাদা হলো জায়গা। যেমন আহিরিটলা, কলুটলা, কুমোরটুলি ইত্যাদি। দিন যত এগোতে থাকলো এদেশীয় মানুষেরাও তাদের পেশাকে আঁকড়ে ধরল। মৃত্যুর হার কমলো। কিন্তু উত্তর কলকাতার সেই ঘিঞ্জি জনবসতি আজও পরিবর্তন হয়নি। তাই মানুষ সেই ভাবে বাঁচতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আজ চেষ্টা করলাম সেই সব কানাগলির ছবি তুলে আপনাদের দেখাতে। দেখে ভালো লাগলে অবশ্যই মন্তব্য করে পাশে থাকবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1855844095400259728?t=WtHSZaY5-SckgIIgMY_cRw&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পুরানো কলিকাতার সুন্দর ফটোগ্রাফি আজ আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন। আপনার শেয়ার করা আজকের ফটো্গ্রাফিগুলো দেখে কিন্তু দেশে বসে কলিকাতা কে দেখে নিলাম। যাই হোক বেশ দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ দাদা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার তোলা ফটোগ্রাফি গুলো আপনার ভালো লেগেছে শুনে আনন্দ পেলাম আপু। সুন্দর মন্তব্য করে পাশে রইলেন বলে ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
উত্তর কলকাতা মানে পুরনো কলকাতার এবং নগর পত্তনের স্বাদ খুজে পাওয়া। তুমি যে রাস্তায় বেরিয়ে বেশ সুন্দর ফটোগ্রাফি করো তা বোঝা যাচ্ছে। এই গলি গুলোর ছবি কবে তোলা? আমার হোস্টেলের পাশের গলি গুলো আরো ঘিঞ্জি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদিন শোভাবাজার গেছিলাম না, সেই দিন লঞ্চ ঘাটে আসার সময় তোলা। ছবিগুলি দেখে প্রশংসা করলি বলে ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাদের কলকাতার সবচাইতে বিতর্কিত দুইটা বিষয় সম্ভবত মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল এবং নর্থ কলকাতা সাউথ কলকাতা। তবে এই পুরাতন কলকাতা আমার ভালো লাগে। গলি গুলো যেন এক একটা ইতিহাস বহন করে। দেখলেই নকশাল আন্দোলনের কথা মনে পড়ে যায়। চমৎকার ছিল আপনার ফটোগ্রাফি গুলো ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit