আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।
আজ - ৪ঠা অগ্রহায়ণ | ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | মঙ্গলবার | হেমন্ত-কাল |
আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।
কদম মিয়া হঠাৎ তার বড় সন্তানকে আর খুঁজে পায় না। এদিক সেদিক খোঁজ করতে থাকে আসলে তার বড় সন্তান কোথায় হারিয়ে গেল। আবার নিজের মনের কাছে প্রশ্ন করছিল এত বড় একটা মানুষ হারিয়ে যাবে কিভাবে কোথাও হয়তো গিয়েছে। নিজেদের মধ্যে টেনশন শুরু হয়ে গেল কিভাবে তাদের এই অবস্থার পরিত্রাণ ঘটবে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো। তবে কদম মিয়ার টেনশন কোনমতেই দূর হচ্ছিল না দেখতে দেখতে তিনদিন পার হয়ে গেল তবুও তার বড় সন্তানের কোনো খোঁজ মিলল না আসলে কদম মিয়ার বড় সন্তান কিছু না বলে ঢাকা চলে গিয়েছে কারণ কদম মিয়ার বড় সন্তান তৃতীয় লিঙ্গ ছিল যার কারণে আশপাশের মানুষের কথা সহ্য করতে না পেরে সে বাড়ি থেকে ঢাকা চলে যায়। চতুর্থ দিন কদম মিয়ার বাড়িতে একটা চিঠি আসে তবে পদমিয়া ছিল অশিক্ষিত পড়তে পারত না তাই চিঠিও আর মাধ্যমেই চিঠিটা পড়ে শুনলো। চিঠি পড়তে গিয়ে কেঁদে ফেলল তখন কদম মিয়ার অবস্থা কেমন হতে পারে একটু চিন্তা করে দেখেছেন।
কদম মিয়া কাজ ছিল আর বলছিল আমার সন্তান আমার কাছে স্বর্ণের টুকরা কতটা কষ্ট কতটা খুব নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে আমি সেটা বুঝতে পারছি এই বলে হাউ মাউ করে আবার কান্না শুরু করে দিল। চিঠির ঘটনা সারা এলাকা ছড়িয়ে পড়ল যারা কদম মিয়ার বড় সন্তানকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করত তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারল আসলে একজন মানুষ তৃতীয় লিঙ্গ হলেও সে তো একটা মানুষ। কদম মিয়া সিদ্ধান্ত নিল সবকিছু রেখে ঢাকা গিয়ে তার সন্তানকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে তবে তখনও কদম মিয়ার সংসারের দরিদ্রতা কাটেনি অন্যদিকে কদম মিয়ার বাড়িতে আর কোন মানুষ নেই তার স্ত্রীকে রেখে কিভাবে যাবে ছোট্ট একটি মেয়ে সন্তান আছে তাদেরকে ফেলে রেখে যেতেও দ্বিধাবোধ করছিল। কদম মিয়ার বাড়ির পাশের কয়েকজন লোক এই বিপদে কদম মিয়ার পাশে দাঁড়ালো। তারা নিজেরাই ঢাকা শহরে গিয়ে কদম মিয়ার বড় সন্তানকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিল।
যে ঠিকানা থেকে চিঠি এসেছিল সেই ঠিকানায় গিয়ে বিস্তারিত খোঁজ করার পরে তার পাশের এলাকায় গিয়ে কদম মেয়র বড় সন্তানকে খুঁজে পাওয়া গেল। আসলে কদম মিয়ার বড় সন্তান কখনো চায়নি সে তার বাবা মা বোনকে ফেলে রেখে ঢাকায় গিয়ে একা একা থাকবে কিন্তু এলাকার লোকের এমন ব্যবহারের কারণে সে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। পাশের বাড়ি থেকে যে সমস্ত লোক গিয়েছিল তারা কদম মিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির কথা বলল চিঠি পাওয়ার পরবর্তীতে কদম মিয়ার ভেঙে পড়ার কথা বলার পরে কদম মিয়ার সন্তান বলল আমি বাড়িতে ফিরে যাব আমি আমার মা-বাবার কাছে আবার ঠিকানায় ফিরে যাব যে যত কথাই বলুক না কেন আমি কারো কথা কোন কান দিব না। কদম মিয়ার বড় সন্তানের এমন কাতর দেখে এলাকার লোকজন যারা ঢাকায় কদম মিয়ার বড় সন্তান কে আনতে গিয়েছিল তারাও কেঁদে ফেলল। কদম মিয়ার বড় সন্তান এলাকার লোকজনকে বলছিল চাচা সবাই আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে আমাকে নিয়ে অবহেলা করে আমিও তো একটা মানুষ বলেন আমারও তো ধৈর্যশীমমা আছে। আপনাদের ঘরে যদি আমার মত কেউ একজন জন্ম নিতো আপনারা কি তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতেন তাকে সব সময় মজার পাত্র হিসেবে দেখতেন?? তখন লোকগুলো বলছিল আসলে আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি তুমি এখন আমাদের সঙ্গে গ্রামে চলে আসো তোমার বাবা-মা তোমার জন্য সবসময় কান্নাকাটি করছে।
অবশেষে এলাকার লোকজনের সাথে বাড়ি আসতে রাজি হয়। পরবর্তী দিন সকালের বাসে ঢাকা থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দুপুরবেলায় কদম মিয়ার বড় সন্তান গ্রামে চলে আসে আর কদম মিয়া তার সন্তানকে দেখে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। কদম মিয়ার স্ত্রী ও ঠিক একইভাবে তার সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। সে হোক তৃতীয় লিঙ্গ কিন্তু কদম মিয়ার সন্তান তো। তার ছোট বোন তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে সেটা দেখে কদমে আর বড় সন্তান আরো বেশি ভেঙে পড়ে সে বলতে থাকে এলাকার মানুষজন আমাকে আর যতই কথা বলুক না কেন আমি আর আমার বাবা-মা বোনকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। এমন আকুতি মিনতি শুনে এলাকার লোকজন বলতে থাকে আমরা আর তোমাকে নিয়ে কোন হাসি ঠাট্টা করব না তুমি আজকে থেকে স্বাভাবিকভাবে আমাদের সাথে চলাফেরা করবে।
সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় কদম মিয়ার সংসারে আবার সুখ চলে আসে তার বড় সন্তান বেশ ভালো কাজ শিখে যায় কাজের মাধ্যমে যে টাকা রোজগার করে সেটা দিয়ে তার ছোট বোনের বিয়ের গহনা তৈরি করে। কদম মিয়ার ছোট মেয়ে বড় হতে থাকে আর তাদের সংসারে সুখের বাতাস বইতে থাকে এভাবেই তাদের সংসার দিনের পর দিন উন্নতি হয়।
সারসংক্ষেপে যদি এই গল্পটার কিছু কথা উল্লেখ করতে চাই তাহলে আমি বলব আমাদের সমাজের যারা তৃতীয় লিঙ্গ আছে তাদেরকে অবহেলা না করে হাসি-ঠাট্টার পাত্র হিসেবে না দেখে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ করে দেওয়া উচিত কারণ তারাও কোন বাবা-মায়ের সন্তান তারাও সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি তাদেরকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা মোটেই উচিত না। তারা নিজেরাও একটা স্বাভাবিক জীবন যাপন পরিচালনার অধিকার রাখে।
এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।
সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan
আমার পরিচয়
আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
👍
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit